Translate

Saturday 23 January 2016

ড. মোহাম্মদ আমীন বহুমাত্রিক লেখক / ড. জোবায়ের আহমদ

. মোহাম্মদ আমীন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া গ্রামে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন  তাঁর পিতা প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ পিরে কামেল ইসলামি সংস্কৃতির বিশিষ্ট পুরোধা হযরতুল আলামা সৈয়দ মৌলানা নুরুল
ইসলাম মাতার নাম সকিনা খাতুন চৌধুরানী, মাতামহের নাম আবিদুর রহমান এবং মাতামহীর নাম বজলি বেগম চৌধুরানী  পিতামহ প্রখ্যাত আধ্যাত্বিক সাধক পিরে কামেল হযরতুল আলামা মৌলানা সৈয়দ গোলাম শরীফ যিনি বড় হুজুর নামে সমধিক পরিচিত তার প্রথম সন্তান এস এম আবীর চৌধুরী মীম বাংলা সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ লেখক মাত্র বছর বয়সে তার লেখা রূপকথার গল্পদুধবুড়িপ্রকাশিত হয় সে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত শিশুশিল্পী
বাড়িতে পিতামহের কাছে আরবি, উর্দু ও ফারসি এবং মায়ের কাছে বাংলা শেখার মাধ্যমে মোহাম্মদ আমীনের হাতেখড়ি। অতঃপর বাড়ির পাশে অবস্থিত দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ওই বিদ্যালয় হতে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে গাছবাড়ীয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র বহুমুখী উচ্চ
বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পাশ করে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজে আইএসসি ক্লাশে ভর্তি হন। ওই কলেজ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে গমন করেন এবং চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়নকারীন তিনি ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে বিএসসি (অনার্স) ক্লাশে ভর্তি হন এবং পরিসংখ্যানে বিএসসি (অনার্স) জনমিতি বিজ্ঞানে থিসিস গ্রুপে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনিমাসিক সাধারণ জ্ঞাননামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি ছিল তৎকালীন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা। ছাত্রজীবন হতে তাঁর লেখালেখি শুরু। উচ্চবিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন চট্টগ্রাম শহরের কাজী নজরুল ইসলাম রোড হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বনভূমি পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটির নাম ছিল স্বাধীনতা। কবিতাটির জন্য চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র তাকে এক হাজার টাকা এবং একটি দামি কলম পুরষ্কার দেন।  পুরষ্কার তাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করে  
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক আজকের কাগজ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ দৈনিক নয়াবাংলা প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তার লেখাপড়ার খরচের সিংহভাগ লেখালেখি হতে আসত।
অধিকন্তু তিনি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রিলেন্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। তার প্রথম গ্রন্থ সমাজচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র কমিটি কর্তৃক ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।এ সমাজ ছিল মূলত একটি ছড়া গ্রন্থ। গ্রন্থে সমাজ ব্যবস্থার স্বরূপ, তৎকালীন রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের ভূমিকা, সামরিক আইন একনায়কতন্ত্রের প্রতি ঘৃণা, ধর্মান্ধ কুসংস্কার হতে মুক্ত থেকে মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত থাকার জয়গান ধ্বনিত হয়েছে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের বছরই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসাবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তার প্রথম পোস্টিং ছিল কুড়িগ্রাম। চাকরিতে যোগদানের পরও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। 
বান্দরবানে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরিকালীন বিধি আইন সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি সমস্যায় পড়েন।  পার্বত্য চট্টগ্রাম হিলট্র্যক্টস ম্যানুয়াল-১৯০০ অনুযায়ী পরিচালিত। এখানকার আইন দেশের সমতল অঞ্চলের আইন হতে ভিন্ন। কিন্তু আইন  বিধিগুলো ছিল সব ইংরেজিতে এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত। তাই প্রয়োজনের সময় প্রশাসক বিচারকদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হতো প্রশাসনকে অবস্থা হতে রার করার লক্ষ্যে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত সকল বিধিগুলো বাংলায় অনুবাদ করেপার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইন শিরোনামে’ একটি আইন গ্রন্থ প্রকাশ
করেন। প্রকাশক ছিল বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। গ্রন্থটি তিন পার্বত্য জেলায় এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে ত্রিশ হাজার কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। এরপর আরও বিশ হাজার কপি বিক্রি হয়। পঞ্চাশ হাজার কপি বই বিক্রি করে তিনি একটা মোটা অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় করতে সম হন।ফলে চাকরি জীবনের অর্থকষ্ট টানাটানি অনেকটা দূরীভূত হয়। সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি লেখালেখিতে আরও নিবিড় একাত্ম হয়ে যান 
 চাকরিতে থাকাকালীন তিনি সরকারের অনুমতি নিয়ে এলএলবি কাশে ভর্তি হন এবং গোল্ডেন প্লাস নিয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণা সন্দর্ভ- ওয়ার ক্রাইম: ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল ডেভলাপমেনট এন্ড লিগ্যাল প্র্যাকটিস। উল্লেখ্য ওয়ার ক্রাইমের উপর বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।তাঁর গবেষণা কর্মটি বেশ বিস্তৃত তথ্যবহুল। এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর গ্রন্থ হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। গবেষণায় এটি প্রতিভাত, যুদ্ধপরাধীদের শাস্তি বিধানের লক্ষ্যে গঠিত আদালতের কাজ যেমন কঠিন তেমিন গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধপরাধীদের অপরাধের প্রমাণ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকে। সুতরাং তাদের শাস্তির জন্য সাধারণ বিচারের মত সাক্ষ্যগ্রহণ তেমন গুরুত্ব বহন করে না 
 শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি ভেদরগঞ্জ শিশুমঞ্চ নামের উন্নতমানের একটি শিশু শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি মহালছড়ি শিশুমঞ্চ নামের আর একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেনআহমদ হোসেন বীর প্রতীকের জবানিতে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ’ . মোহাম্মদ আমীনের একটি বিখ্যাত প্রামাণ্য গ্রন্থ। তার পিতামহ বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন বীর প্রতীকের যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে যুদ্ধকালীন ডায়েরি ছায়াবলম্বনে গ্রন্থটি রচিত
হয়েছে। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় রচিত গ্রন্থটি জয়পরাজয় বা চাওয়া-পাওয়া নয়; যুদ্ধের ভয়াবহতাকে অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিতে তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য বাঙালির আকুতির সাথে মানবতার বিভিন্ন দ্বন্দ্বও গ্রন্থে পরিস্ফুট। ছোটগল্প, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ইতিহাস, জীবনীগ্রন্থ ছড়াসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার সতত বিচরণ থাকলেও তিনি মূলত একজন গবেষক হিসেবে পরিচিত। Relation Between Magistrate and Police, Meet Bandarban. Rules of Extra Judiciary Organs to ensure effective Judiciary system, বাংলা বানানে ভুল: কারণ প্রতিকার, এক নজরে বাংলা সাহিত্য ভাষা আন্দোলন, সহজ বাংলা উচ্চারণ, আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, বাংলা সাহিত্যের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা, বন মামলা দায়ের পরিচালনার কৌশল, ম্যাজিস্ট্রেসি আদেশনামা, জামিন তত্ত্ব রায়, বাংলা বানান শব্দ চয়ন, ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ, মামলা আইনি হয়রানি হতে নিষ্কৃতির উপায়, তুচ্ছ হলেও উচ্চ, অভয়নগর প্রোফাইল, বাংলা বানান ও শব্দচয়ন, জেলা উপজেলা নদনদীর নামকরণের ইতিহাস, ইত্যাদি . মোহাম্মদ আমীনের গবেষণামূলক গ্রন্থ 
 জনাব মোহাম্মদ আমীনের প্রথম উপন্যাস জল দুনিয়ার মানুষ। এটি তিনি অভয়নগর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর কেশবপুর এবং খুলনা জেলার দীঘলীয়া উপজেলাব্যাপী প্রতিক্রিয়ারত ভবদহ এলাকার জলবন্দি মানুষের জীবনের প্রাত্যাহিক কর্মকাণ্ড, সমস্যা, সুখ-দুঃখ সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে রচনা করেন। নন্দিত কান্না নিন্দিত হাসি জনাব আমীনের একটি গবেষণামূলক উপন্যাসধর্মী রচনা। গ্রন্থটি রচনার জন্য তিনি দুই মাস ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষা করেছেন। গ্রন্থের জন্য তিনি আইইআই পুরষ্কার লাভ করেন। তার দ্বিতীয় উপন্যাসবহ্নিবিভুক্ষ  উপন্যাসে দাম্পত্য জীবনের দ্বন্দ্ব বিবাহিত জীবনের স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছে। তার তৃতীয় উপন্যাসস্বপ্ন জড়ানো পাহাড় এটি পাবর্ত্য এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালি সম্পর্ক এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ের উপর বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত। রাজকীয় জীবন শারমেয় মরণ . আমীনের লেখা একটি রম্য উপন্যাস। উপন্যাসে বিবাহিত অবিবাহিত জীবনের সুবিধা অসুবিধাগুলো বিস্তৃত হয়েছে 
 রমণীয় পাঁচালী তার প্রথম রম্য রচনা। তার লেখা অন্যান্য রম্যরচনাগুলো হচ্ছে নন্দলালের তীর্থযাত্রা, উল্টোদেশে নন্দঘোষ, গদাই বাবুর তীর্থযাত্রা, নিমকহারাম রাজকুমারী, খরগোশ খচ্ছপ, বাংলা সাহিত্যে পুলিশের ভূমিকা, অফিসে আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম, দাপ্তরিক প্রমিত বানান নির্দেশিকা, বাংলা শব্দের পৌরানিক উৎস, বাংলা সাহিত্যে প্রশাসক, শুদ্ধ বানান
চর্চা, রঙ্গরসে বাংলা বানান, আন্তর্জাতিক দিবস, বিড়ম্বনা, প্রশাসনের ভাইরাস, মোহনীয় নরক, সময়ের পরশ পাথর, হাসতে হাসতে বাংলা শেখা, জর্জ ওয়াশিংটন হতে বারাক ওবামা, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ১৯০১-২০১২, সহজ বাংলা উচ্চারণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।  খরগোশ খচ্ছপ. ড. আমীনের একটি অনন্যসাধারণ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে কল্পিত ইসপের দৌড় প্রতিযোগিতায় যেখানে খরগোশকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে . আমীনের গ্রন্থে খরগোশকে জয়ী করা হয়েছে এবং কচ্ছপ কারচুপির মাধ্যমে জিতেছে বলে তার হাতপা ভেঙে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর শিশুতোষ গ্রন্থমানুষই সেরাহাসতে হাসতে বাংলা শেখা, টাকা ছোট পয়সা বড়, ছোটদের আন্তর্জাতিক দিবস ছোটদের বাংলা উচ্চারণ, বদল বাড়ির ভূত, ভূত অঙ্কের জিরো থিয়োরি, বেত ভূতের ইন্তেকাল, সায়েন্স ফিকশন কিউপ্রিট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য 
 আঞ্চলিক ইতিহাসের উপর জনাব আমীনের ঝোঁক লেখালেখির প্রথম হতে লক্ষণীয়। হাতিয়ায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থতিলোত্তমা হাতিয়া: ইতিহাস ঐতিহ্যপ্রকাশিত হয়। বইটির জন্য . আমীন হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম হাতিয়া শিা  গবেষণা সমিতি কর্তৃক পুরষ্কারে ভূষিত হয়। তার অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে অভয়নগরের ইতিহাস, চকরিয়ার ইতিহাস, ভেদরগঞ্জের ইতিহাস এবং জেলা, উপজেলা নদনদীর নামকরণ
ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। জীবনীগ্রন্থ রচনাতেও তিনি সমানভাবে সফল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা, জর্জ ওয়াশিংটন হতে বারাক ওবামা, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক; ১৯০১-২০১১ , ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ইত্যাদি . আমীনের লেখা উল্লেখযোগ্য জীবনী গ্রন্থ।। প্রথমোক্ত গ্রন্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতার জীবনী, জাতির  পিতা হিসেবে তাদের বেড়ে উঠা ইত্যাদি পরিবেশিত 
বহ্নিবিবুক্ষ, জল দুনিয়ার মানুষ স্বপ্ন জড়ানো পাহাড় তার লেখা তিনটি বিখ্যাত উপন্যাস। বহ্নিবিবুক্ষ উপন্যাসে নারীপুরুষ স্বামীস্ত্রীর স্বরূপ বিবর্ধনে সংসারের প্রকৃত অবস্থার জীবন্ত কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থের প্লট পাবর্ত্য এলাকা। লেখক পার্বত্য এলাকায় চাকরি করেছেন। অধিকন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সন্তু লারমার বড় ভাই মানবেন্দ্র লারমার একটি সাক্ষৎকার গ্রহণ করেছিলেন। যা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সে ভিত্তিতে তিনি উপন্যাসে পাহাড়ি বাঙ্গালি সম্পর্ক, পার্বত্য এলাকায় কর্মরত অফিসারগণের প্রতি সাধারণ্যের দৃষ্টিভঙ্গী  
জেলা, উপজেলা নদনদীর নামকরণের ইতিহাস: এটি ২০১২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। চারশ পৃষ্ঠার গ্রন্থটিতে বাংলাদেশের সকল জেলা, উপজেলা, বিখ্যাত গ্রাম বিখ্যাত নদনদীসমূহের নামকরণের ইতিহাস তথ্যসহ বর্ণনা করা হয়েছে। জেলা উপজেলা নদনদীর রঙ্গীন ছবিও রয়েছে। বইটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নামকরণের সাথে স্থানীয় ইতিহাসের সূত্র, ঐতিহ্য
এবং নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ।ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক, কৃষ্টির ধারক। স্মারক ধারকের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর বিকাশ, রাজনীতিক প্রত্যয়, সাংস্কৃতিক কৃতিত্ব, ধর্মীয় অনুভব, আর্থিক উন্নতি স্বকীয় মাধুর্যের প্রকাশ ঘটে। মানুষের যেমন পোশাক জাতির তেমন ইতিহাস। স্থানিক নাম ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অন্যতম একটি উৎস। এর মাধ্যমে প্রাচীন জনবসতির আর্থসামাজিক ধর্মীয় মূল্যবোধ, আচার-আচরণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের গ্রহণযোগ্য অনেক উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। স্থানের নাম জনবসতির সামগ্রিক চরিত্র প্রকৃতির সাথে প্রায়শ সম্পৃক্ত থাকে বলে এটি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের নির্ভরযোগ্য সূত্র। গ্রন্থটিতে সূত্রসমূহ অনবদ্য উপাত্তে বিধৃত  
সিঙ্গাপুর আইসিটি সম্মেলনে সৈয়দ আবুল হোসেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ। গ্রন্থে আইসিটি মিনিস্ট্রিয়াল ফোরাম, ২০১২ বাংলাদেশের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন অংশগ্রহণ করেন। তিনি সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে যে ভূমিকা রাখেন তা ছিল যেমন ব্যাপক তেমনি আকর্ষণীয়। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সৈয়দ আবুল হোসেনের ভূমিকা,
বক্তব্য,আচরণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হন। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সম্মেলণে সংগতকারণে বাংলাদেশই অলিখিত নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়। গ্রন্থে সম্মেলণের বিবরণ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নৃতত্ত্ব, জনমিতি, ব্যবসায় ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থটি জুলাই, ২০১২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
অর্জিত পুরষ্কারের মধ্যে হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি পুরষ্কার, হাতিয়া সাহিত্য গবেষণা পুরষ্কার, ভেদরগঞ্জ ফাউন্ডেশন পুরষ্কার, সচেতন সাহিত্য পুরষ্কার, আইইই পদক, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম পদক, নিউইয়র্ক হতে প্রাপ্ত  ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাওয়ার্ড, মেসিডোনিয়া হতে প্রাপ্ত ইন্টারন্যাশনাল রেজিওনাল হিস্ট্রি কাউন্সিল প্রদত্ত ‘হেরিডোটাস, ফাদার অব দ্যা হিস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড, ভারত হতে প্রাপ্ত রাজা রামমোহন রায় অ্যাওয়ার্ড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।ড. আমীন বাংলা একাডেমী, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস সমিতি, আইএআরএইচ প্রভৃতি জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য। তিনি এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।

No comments:

Post a Comment