Translate

Wednesday, 21 August 2013

বিড়ম্বনা / ড. মোহাম্মদ আমীন






বিড়ম্বনা

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব

 

প্রথম পর্ব

বিখ্যাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ। অনেকদিন পর গ্রামে গেছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম। বিদ্যুৎ নেই। গাছপালা ঢাকা পরিবেশে। জ্যোস্নার আলোও ঢুকতে পারে না সহজে।
বাড়ির কয়েকশ গজ দূরে মেঠোপথের পাশে সুপারি গাছের টুল। গ্রামের লোকেরা এখানে বসে আড্ডা মারেন, বিশ্রাম করেন। কেউ কেউ চাঁদনি রাতে শুয়ে চোখ বুজে বাতাস টানেন, কেউ টানেন ধুয়া।
সিগারেটের নেশায় ধরেছে আসিফের। অনেক্ষণ টানতে পারেনি।
বাড়িতে বাবা আছেন। চাচা আছেন। মা আছেন। তাদের সমানে সিগারেট খাওয়া যায় না। কারণটা কী এখনও সে বের করতে পারেনি। অথচ সে বাবার ছুড়ে দেয়া সিগারেটের অংশ থেকে ধুয়ার স্বাদ পেয়েছে। বাবা এখনও সিগারেট টানে। তবে বাসায় নয়, মা পছন্দ করে না। মায়ের কথা: বিষ খাও তো বাইরে গিয়ে খাও। তোমার বমি বিষ কেন আমার ছেলেমেয়েদের ফুসফুস কানা করে দেবে!
আসিফের মনটা উসখুস। 
নেশা ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বাবা পাশের রুমে আকবর হোসেনের ‘দুদিনের খেলাঘরে পড়ছেন’। মা আর অন্যরা জিটিভির নাটকে।

আশিফ দরজা টানতে  মা সজাগ হয়ে উঠেন: কে?
 আমি।
কোথায় যাচ্ছো?
 উঠোনে একটু হাটবো- মা।
মা: সাবধান। চারিদিক অন্ধকার। সাপজোঁক থাকতে পারে। দুদিনআগে কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে। ছাদরটা জড়িয়ে নাও।

কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। সিগারেট তাকে ডাকছে। যেমন ডাকে ঋতৃস্বা। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এক বছর জুনিয়র। ঋতৃস্বার সাথে সিগারেটের কিছুটা পার্থ্ক্য রয়েছে। 
সিগারেট যে কোন সময় পাওয়া যায় কিন্তু ঋতৃস্বাকে সবসময় পাওয়া যায় না। সিগারেটের নেশার বিকল্প নেই, ঋতৃস্বার বিকল্প আছে।
ঋতৃস্বার কথা ভাবতে ভাবতে আসিফ টুলের সামনে চলে আসে। দেখা যায় না, আবছা অনুমান। অন্ধকারে নাকি নিজের ছায়াটাও চলে যায়। কী অদ্ভুদ পৃথিবী, কী অদ্ভুদ মানুষ।
টুলে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। কত বার বসেছে এ টুলে, কতভাবে। দাদার কথা মনে পড়ে, তিনি কোলে নিয়ে চলে আসতেন টুলে। বাতাস খাবেন। আদর করে ডাকতেন ‘আসি’।
এগার বার চেষ্টা করে সিগারেট জ্বালায় আসিফ। অসহনীয় বাতাস।
বাতাস মাঝে মাঝে বড় বিরক্তিকর মনে হয়। আসলে, নেশা সব সুন্দরকে আড়াল করে দিতে চায়। এমন একরোখা প্রেমিকা আর হয় না। ম্যাচের সব কাঠি শেষ। 
খালি বক্সটা পেছনে পুকুরের দিকে ছুড়ে দেয়। জলে পড়েনি। বাতাস আবার তার সামনে নিয়ে আসে।
সিগারেট টানতে শুরু করেছে আসিফ। আহ্ কী মধুর, কী অপূর্ব!!
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। লোকজনের আনাগোনা কম।
একজন লোক এদিকে আসছে। আসুক, খোলা জায়গায় টের পাবে না কী টানছে আসিফ। সিগারেট কে না টানে!

যে-ই হোক বাবা না হলে হলো। গ্রামে বাবা-মা ছাড়া সবার সামনে সে সিগারেট টানে।
আশার কথা- বাবা এখন বের হবেন না। 
আকবর হোসেন মগ্ন।
লোকটা আরও এগিয়ে আসছে। আসিফ বুঝতে পারছেন না, চিনতে পারছে না। 
 টুলের কাছে এসে বলল : ভাই একটু আগুন দেন তো?
আসিফ: কীসের আগুন।
সিগারেটের আগুন।
আসিফ: আমার কাছে সিগারেট নেই।

তো কী টানছেন?
আসিফ: বুইল্যা। 

ওটা থেকে দেন?
আসিফ: এটার পাছা থেকে আগুন নেয়া যায় না। ঝরে যায়। আঁশ বড় চিকন।
বুইল্যা আবার কী?
আসিফ: গাঁজা।
কী বললে? কী বললে?
চমকে উঠে আসিফ। নেশা কেটে যায়। কণ্ঠ পরিষ্কার। রাতের আধারেও চেনা যাচ্ছে।  লোকটা কেউ নয়, তার বাপ আজমত উল্লাহ পাটোয়ারী। যার
ওহ মাই গড!!

সান্তনা একটাই- এর কাছ থেকে আসিফ সিগারেট টানা শিখেছে। 
গাঁজা ঢাকায় বন্ধুদের পাল্লায়। 

বিড়ম্বনা দ্বিতীয় পর্ব

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদ আলীগড় লাইব্রেরিতে বই দেখছেন। ঢাকায় এলে বই কেনে। যদিও অফিসারেরা এখন তেমন বই পড়ে না, সময়ের ওজুহাত দেয়।
বই কেনে না, অর্থের দোহাই দেয়। তবে বাচ্চাদের জন্য বিদেশে খেলনা কেনার টাকার অভাব হয় না। হামিদ আলী একটু ব্যতিক্রম। তিনি বই পড়েন, বই কেনেন। 
জাফর সাহেব এক সময় খুব বই পড়তেন, এখন পড়েন না। বউ পছন্দ করেন না। বই আর বউ পরস্পর সতিনের আচরণ করে। দুটোর বানানেই ‘ব’।
মোবাইল বেজে উঠে হামিদের।
হামিদের বন্ধু, রংপুরের এডিশনাল এসপি জামান। 
এ পর্যন্ত তিন বার রিং করেছে।
জামানের ছোট ভাই সাজ্জাদ সাতক্ষীরার সহকারী কমিশনার। তার বদলির তদ্বির নিয়ে আলাপ করবে জামান। ঢাকায় আসার ব্যাপারে এটিও অনতম কারণ।
সকালে সচিবালয়ে কয়েক জনের সাথে কথা বলেছেন হামিদ।
 তারা আস্বস্ত করেছেন। বদলি হয়ে যাবে।
জামান: কী দোস্ত. আমার ভাইয়ের বদলির কী হলো?
হামিদ: হয়ে যাবে। কোন চিন্তা করিস না।
জামান: কীভাবে হবে?
হামিদ: আমি আধঘণ্টা আগে সংস্থাপন (বর্তমান জনপ্রশাসন) সচিবের সাথে কথা বলেছি। তাঁর রুমে বসে চা খেয়েছি। গল্প করেছি। তিনি তো আমার বন্ধুর মত। আমি স্যারকে বলে দিয়েছি। স্যার রাজি হয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে বদলি হয়ে যাবে।
কথা শেষ করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকানোর আগে কাঁধে স্পর্শ পান হামিদ। 

পেছনে ফেরেন। 
একজন পৌঢ়। তিনিও  বই দেখছিলেন।
ভদ্রলোক: আপনি কী আমাকে চেনেন?
হামিদ: জ্বী না।
ভদ্রলোক: তাহলে আপনি যে বললেন আধঘণ্টা আগে সংস্থাপন সচিবের সাথে কথা বলেছেন।
হামিদ: আপনি কে?
ভদ্রলোক: আমিই তো সংস্থাপন সচিব। আধ ঘণ্টা আগে আপনি যার রুমে গিয়েছেন, কথা বলেছেন, চা খেয়েছেন- - -। কিন্তু বাবা, তুমি কে?
হতভম্ব হামিদ আমি! আমি!! - - -বলেই ভো দৌড়।
বাইরে এসে হাঁফ ছাড়ে।
ইস্, পরিচয় জানতে পারলে খবর ছিল।