Translate

Tuesday 19 December 2017

স্যমন্তক/ মুশাররফ খান


প্রসঙ্গ স্যমন্তক ,   
লেখক :  মুশাররফ খান 
প্রদায়ক : প্রমিতা দাস লাবণী 
স্যমন্তক উপন্যাসের মাধ্যাকর্ষণ প্রফেসর রচনা, যিনি লেখকের অনুপম ভালোবাসার শ্যামল ছায়ায়,
মুশাররফ খান
সুনিপুণ নির্মাণ শৈলীর পুর কৌশলে বস্তির দুর্বহ দারিদ্র্য পীড়িত জীবন থেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বর্নাঢ্য পাদপ্রদীপের নিচে পৌঁছে যাওয়ার এক অসাধারণ অকল্পনীয় দুরূহ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। লেখক তাঁর অপরূপ সৃষ্টি শৈলীর নিবেদনে তিলে তিলে নির্মান করেছেন একজন রচনাকে যিনি তুখোর মেধাবী, দুর্বিনীত বাগ্মী, সর্বাঙ্গে চৌকস, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার প্রতিভূ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের সফল 
শিক্ষক। সেই মেয়েই কিনা আবার কখনো জল-কাদার মত নরম, একটুখানি ভালোবাসার কাঙ্গালিনী, শিশুর মতো ছিচকাঁদুনে ক্রাই-বেবি! আবার কখনো তাঁর নির্মাতার শুভ্র পায়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য  নিবেদনের মুগ্ধ পূজারী।
স্যমন্তক উপন্যাসের পরতে পরতে সাজানো মনিমুক্তা হীরা-পান্নার অফুরান ভাণ্ডার। সেখান থেকে অবলীলায় সংগ্রহের ঝাঁপি পূর্ণ করে ঘরে ফিরুন। স্যমন্তকের পাতায় পাতায় জীবনের কত না নিগুঢ় সত্যের অনুপম সম্ভার। স্যমন্তক পাঠ শেষে বোধন ও অভিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে অনুরণনে আপ্লুত হতে হতে মনে হবে বুঝি অনেক কাল পর এক দুর্লভ পঠন-পর্যটনের পরিপূর্ণ প্রাপ্তি ঝুলিতে ভরে ঘরে ফিরছেন। 
স্যমন্তক পড়তে পড়তে মনে হয়েছে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের কিছু খণ্ডচিত্র ছাড়া প্রফেসর রচনাকে বুঝি তেমন পাওয়াই হলো না। স্যমন্তক পাঠকবৃন্দ প্রফেসর রচনাকে আরও বর্ধিত কলেবরে, আরও বিচিত্র পরিসরে পাওয়ার দাবিদার একটু হতেই পারেন। স্যমন্তকের একটা সিকুয়েলের দাবি তাই তারা করতেই পারেন। 
স্যমন্তক রচিয়তার পরিবেশিত প্রতিবেশ এবং কথোপকথন থেকে ধারনা পাই, যাপিত জীবনের যাবতীয় অনুষঙ্গ, কাল যাপনের পরিপ্রেক্ষিতকে তিনি দেখেন নানা দৃষ্টিকোণ, নানা ভাবনা, নানা আলো, নানা
স্যামন্তকের লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন
ছন্দের অণুবীক্ষণের নিচে।তার ভাবনায় নিখাদ সত্য কিংবা নির্জলা মিথ্যা - এমন ধ্রুব কিছু নেই। এটা শুধু দেখার কিংবা অনুভবের ভিন্নতার ব্যাপার। যে কোনো অভিদর্শন, বক্তব্য, মন্তব্যকে তিনি অবলীলায় ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ভিন্ন দিগন্ত, ভিন্ন আঙ্গিক এবং ভিন্ন রঙে ঢঙে দৃঢ় স্তম্ভে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তিনি আপাত দৃশ্যমান সত্যকে কুশলী মিথ্যের মোড়কে পেশ করার, আর মিথ্যের গায়ে সত্যের চাদর মুড়ে দেওয়ার ভেল্কি জানেন। মিথ্যাকে তিনি জানেন অল্টারনেটিভ ট্রুথ, আর সত্যকে মিথ্যার ক্যামোফ্লাজ।পরিবেশনার এই মুগ্ধকর শৈল্পিক রূপময়তার চমৎকারিত্বে মুগ্ধতায় ভরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকেনা।ভেবে পাই না কোন কামরূপ কামাখ্যা থেকে তিনি শিখে এসেছেন এই সম্মোহনী যাদুবিদ্যা! 
স্যমন্তক কি সত্যের নিরেট পরিসংখ্যান পরিবেশন, নাকি সত্যের উপর ভাব ভাবনা ছন্দ রং তুলির কারুকাজ, লেখককে এই প্রশ্ন করার ঔদ্ধত্য আমার নেই। এখানে এসে আমি শুধু বাল্মিকীর আশ্রয় নিতে পারি। বাল্মিকী বলেছেন : 
“নারদ কহিলা হাসি, সেই সত্য যা রচিবে তুমি ,  
ঘটে যা তা সব সত্য নহে । 
কবি , তব মনোভূমি রামের জন্মস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেন।” 
স্যমন্তকের স্রষ্টা কথকতার নিপুন মাকড়সা। শব্দ ছন্দ ভাব ভাবনার হাটে তিনি ধনী মহাজন।সুনিবিড় নৈপুণ্যে তিনি গড়েছেন স্যমন্তক হেন আঁঠালো ওয়েব, একবার পা দিয়েছেন তো গেলেন আটকে। অতঃপর এক নিঃশ্বাসে প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিরামহীন পর্যটন হবে আপনার অমোঘ নিয়তি। 
স্যমন্তক প্রথম পাঠ আমার টেষ্ট রান। স্যমন্তক আমাকে লোভী করে তুলেছে। স্যমন্তক থেকে আমার আরও মনি মুক্তা আহরণ করা চাই। স্যমন্তকের অতলান্তিক গভীরে ডুব দিতে হবে আমাকে আরও একবার। 
জয়তু স্যমন্তক!

Monday 4 December 2017

টিউশনি এবং ভালোবাসা / ড. মোহাম্মদ আমীন


           টিউশনি এবং ভালোবাসা         

: একটা টিউশনি করবে?
: কোথায়?
: ষোলশহর।
: ছাত্র না ছাত্রী?
: ছাত্র। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
: ছাত্র পড়াব না।
: বিরাট পুলিশ অফিসারের ছেলে। বাবা ডিআইজি। ভালো বেতন দেবে। ভালো নাস্তা পাবে। আরে এতো বড়ো পুলিশের ঝাড়ুদার হতে পারাও ভাগ্যের। সুপারিশে চাকরিও হয়ে যেতে পারে। দুদিন পর আইজিপি হবেন।
টিউশনি শুধু টাকা নয়, টাকার চেয়ে বড়ো কিছু। এটি বিসিএস-প্রস্তুতির একটি মোক্ষম কৌশল, টাকা তো আছেই। রাজি হয়ে যাই রাজীবের প্রস্তাবে।
রাজীব বলল : বেতন মাসে আটশ টাকা।
ঊনিশশ ছিয়াশি, সে সময় আটশ অনেক মোটা অঙ্কের টাকা। এত আকর্ষণীয় বেতনের টিউশনিটা রাজীব নিজে না-করে কেন যে আমাকে দিচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। কিছু সমস্যা তো আছেই!
: তুমি করছ না কেন?
: আমার সময় নেই।
ডিআইজি সাহেবের ছেলের নাম ওমর। ফর্সা, তবে ধবধবে নয় কিন্তু বেশ মায়াময়। বিশাল বাসা, বারান্দায় দামি ফুলের টব। চারিদিকে সমৃদ্ধির ছড়াছড়ি। রাজীব আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেল।
ওমর সালাম দিয়ে বলল : স্যার, বিড়াল প্রথম রাতেই মেরে ফেলা উচিত। আমার কথা নয়, আমার ডিআইজি বাবার কথা, ঠিক না?
: ঠিক। কিন্তু বিড়াল কোথায়?
: আছে স্যার, আছে। অনেক বড়ো বিড়াল।
: আমি বিড়াল মারব কেন?
: আপনাকে মারতে হবে না। আমি মারব। একটা কথা বলব?
: বল।
: আগের কথা আগে বলে দেওয়া ভালো। রাখলে আমারও লাভ আপনারও লাভ। নইলে দুজনেরই ক্ষতি। আমি চাই না আপনার ক্ষতি হোক।
: কী কথা বলে ফেল।
ওমর বলল : আপনার বেতনের চল্লিশ পার্সেন্ট আমাকে দিয়ে দিতে হবে। আপনার বেতন আটশ টাকা। চল্লিশ পার্সেন্টে হয় তিনশ বিশ টাকা। তবে আমাকে তিনশ টাকা দিলেই হবে, বিশ টাকা আপনার বখশিস। কী বলেন স্যার?
প্রথমে মাথাটা ঝিম ঝিম করে ওঠে। ইচ্ছে করছিল ঘুরিয়ে একটা চড় দিই। হাত এগিয়ে নিয়েই থামিয়ে ফেলি। মুহূর্তের মধ্যে স্বাভাবিক করে ফেলি আমাকে। তারপর সহজ গলায় আদর মেখে বললাম : কম নেবে কেন বাবা?
: এমনি।
: না, আমি পুরো তিনশ বিশ টাকাই দেব।
: তাহলে স্যার ভাংতি দিতে হবে। আমি একশ টাকার নিচে ভাংতি রাখি না।
: তাই হবে।
বিচিত্র অভিজ্ঞতার আশায় আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। মজার হবে টিউশনিটা, দেখি কতদূর যেতে পারে ওমর। মাস শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে আমি একটি খামে করে তিনশ বিশ টাকা ওমরের হাতে তুলে দিই।
ওমর যথাসময়ে টাকা পেয়ে খুশি।
হাসি দিয়ে বলল : স্যার, আপনি খুব ভালো মানুষ।
আমি বললাম : তুমি আমার কাছ থেকে শিখছ আর আমি শিখছি তোমার কাছ থেকে। পরস্পরের বেতন যথাসময়ে দিয়ে দেওয়া উচিত। তাহলে শ্রমের মর্যাদা মাসের প্রথমদিকে হাসার সুযোগ পায়।
ওমর বলল : থ্যাংক ইউ স্যার। সব মানুষ যদি আপনার মতো হতো!
চার মাস পর ডিআইজি সাহেব পড়ার রুমে এলেন। এতদিন তাকে একবারও দেখিনি, বেশ গম্ভীর চেহারা, দেখলে সমীহ আসে। চোখের চশমায়, দামটা পুলিশের পোশাকের মতো ঝিলিক মারছে, হাতের ঘড়িতে আরও বেশি।তিনি ওমরের একটি খাতা হাতে তুলে নিয়ে দেখতে দেখতে বললেন : মাস্টার সাহেব, আপনার বেতন চারশ টাকা বাড়িয়ে দিলাম।
: কেন স্যার?
আমরা পুলিশের লোক। গুণীর কদর করতে জানি। এ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক আমার ছেলের কাছে দুই মাসের বেশি টিকেনি। প্রত্যেকে আমার ছেলেটাকে বকা দিয়েছে, মেরেছে, অশ্রাব্য কথা বলেছে। ছেলে কেবল আপনারই প্রশংসা করেছে। আপনি নাকি অনেক ভালো পড়ান।
তিনি একটা কলম ও একটা ডায়েরি আমার হাতে দিয়ে বলেন : এগুলোর আপনার উপহার।
: থ্যাংক ইউ।
কলমটা ছিল সম্ভবত পার্কার। তখন তো আর মোবাইল ছিল না, ওই সময় পার্কার ছিল আমাদের কাছে স্মার্ট ফোনের মতো লোভনীয়।
ডিআইজি সাহেবে চলে যেতে ওমর বলল : স্যার।
: তুমি কী কলম আর ডায়েরি হতেও ভাগ চাইছ?
ওমর হেসে বলল : না স্যার। বস্তুতে আমার আগ্রহ নেই। টাকা হলে সব বস্তু পাওয়া যায়।
: তবে?
: আমার পাওনা এখন চারশ আশি টাকা। আমি আশি টাকা নেব না, একশ টাকা নেব। তার মানে পাঁচশ টাকা।
: ঠিক আছে। খুব বেশি না হলে আমার বেশি দিতে কষ্ট লাগে না। তুমি আমার শিক্ষক, তোমাকে বিশ টাকা বেশি দিতে না-পারলে আমার জ্ঞান অর্জন হবে কীভাবে?
ওমরের হাসিটা আরও বিস্তৃত হলো। কমিশন নিলেও পড়াপাড়ি বেশ ভালোই হচ্ছে।আরও তিন মাস কেটে গেলে। এরমধ্যে, আমার বেতন আরও দুইশ টাকা বেড়ে গেছে। ওমরকে এখন টাকা দিতে কষ্ট হচ্ছে না। জীবনে প্রথম শেখলাম-- দেওয়া- নেওয়ার মাহাত্ম্য। ওমর একটা জীবন্ত স্মার্ট ফোন।
সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। ওমরকে অন্যদিনের চেয়ে বেশ আনমনা মনে হচ্ছে।
বললাম : কী হয়েছে?
: স্যার, আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে।
: কী কাজ?
: একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
: চিঠি তো লিখেই দিই।গতকালও দিয়েছিলাম।
: স্কুলের চিঠি নয়।
: কোন চিঠি?
: আমার প্রেমিকা; সরি স্যার, বান্ধবীকে দেওয়ার জন্য।
: কী লিখব?
: আপনার মতো করে আপনি লিখে দেবেন। আমি তাকে ভালোবাসি। তাকে না- দেখলে বুকটা কেমন মোচড় খায়। ধকধক করে কলিজা, কিছু ভালো লাগে না। সে খুব সুন্দর ইত্যাদি।
চিঠি লিখে দিলাম গভীর ভাষায়, প্রেমের মমতায়।
রাস্তায় এসে ইচ্ছেমতো হাসলাম। ওমর আর রেহাই পাচ্ছে না। বাসে উঠতে গিয়ে দেখি, ফারহাদ। আমার সতীর্থ এমদাদের ছোটো ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। সাবজেক্টটা ঠিক মনে পড়ছে না।
আমাকে সালাম দিয়ে বলল : ভাইজান, আমাকে একটা লজিং দেবেন?
: আমি তো লজিং নিয়ে থাকি না। এমদাদের কাছে অনেকগুলো লজিং আছে। আমাকেও বলেছে, কাউকে পেলে খবর দেওয়ার জন্য। তাকে গিয়ে বলো।
: বলেছিলাম, দেবে না।
: কেন?
: আমাকে আগে শিবিরের সদস্য ফরমে স্বাক্ষর করতে হবে। আমি শিবির করব না, সেও আমাকে লজিং দেবে না। লজিংগুলির মালিক নাকি শিবির।
ফরহাদকে বিদায় করে নিজের রুমে চলে যাই। শুক্রবার বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যাবার কথা কিন্তু যাওয়া হলো না। ওমর খবর পাঠিয়েছে, শুক্রবার তাদের বাড়ি যেতে হবে। তার শুভ জন্মদিন।
কী নিয়ে যাই?
অনেক চিন্তাভাবনা করে ওমরের বান্ধবী নিহা নিশিতাকে দেওয়ার জন্য একটা চিঠি লিখি। ওমর চিঠি পড়ে এত খুশি হয় যে, সে মাসের পুরো কমিশনটাই আমাকে ফেরত দিয়ে দিল।
অবাক হয়ে বললাম : ফেরত দিলে যে?
ওমর আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে বলল : আপনার লেখার সম্মানি। স্যার, চিঠিটা একদম ফাটাফাটি হয়েছে।
লেখার সম্মানি! আমি চমকে উঠি। লেখার প্রথম আয়, এ তো বিশাল কারবার! তাহলে কেন এতদিন লিখিনি! ওমরের উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে পত্রিকায় লেখা শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে লেখা আমার নেশা হয়ে যায়।
যতই গল্প করি, যতই প্রেমপত্র লিখে দিই না কেন, লেখপড়ায় ওমরকে এমন কৌশলে ব্যস্ত রাখি যে, সে ধীরে ধীরে বইয়ে ঝুঁকে পড়ে। তার সব আনন্দ অন্যান্য জায়গা হতে বইয়ের পাতায় এসে ভীড় করতে শুরু করে। আগে তার বাবাকে বলত চকলেটের কথা, এখন বলে বইয়ের কথা। আগে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীতে আলমিরা ছিল ভর্তি; এখন সেখানে ঠাঁই পেয়েছে এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিট্রানিকা, পৃথিবীর বিখ্যাত লেখকদের নানা বই। আমার কাছ থেকে নাম নিয়ে যায় বইয়ের, নিয়ে আসে তার বাবাকে দিয়ে। দেশে না পেলে বিদেশ থেকে। কত দামি দামি বই, আমার কাছে মনে হতো -- সামর্থ্যবানদের ইচ্ছাই প্রাপ্তি।
আরও তিন মাস পর আমার বেতন হয় পনেরশ টাকা। বিশাল অঙ্ক, অনেক সরকারি অফিসারও তখন এত বেতন পেতেন না। এখন ওমরের পাওনা গিয়ে দাঁড়ায় ছয়শ টাকায়।
মাসের শেষদিন ওমরকে ছয়শ টাকা দিতে যাই। লজ্জায় চোখটা নিচু করে ফেলে সে। আগের মতো দ্রুত হাত এগিয়ে দিচ্ছে না : সরি স্যার।
: নাও তোমার টাকা।
: লাগবে না স্যার।
: আরে নাও। আমি অত টাকা দিয়ে কী করব?
: স্যার, একমাসে যতটাকা আপনাকে দিই, আমি একদিনে তার চেয়ে অনেক বেশি দামের চকলেট খাই। একটা চকলেটের দাম একশটাকা, দিনে বিশটা চকলেট আমি একাই খাই। বাবার হুকুমে সুইজারল্যান্ড থেকে আসে। আপনার বেতন মাসে মাত্র দেড় হাজার টাকা।
তারপরও আমি বললাম : নাও।
: লাগবে না স্যার।
: আগে লাগত কেন?
তাস খেলতাম, নিহা নিশাতকে দিতাম। এখন তাস খেলা, সময় নষ্ট মনে হয়। তার পরিবর্তে বই পড়ি। নিহা নিশাতকে যতক্ষণ দিই ততক্ষণ খুশী থাকে, শুধু চায় আর চায়। বই শুধু দিয়ে যায়, কিছুই চায় না।
আমি সাফল্যের হাসি নিয়ে বের হয়ে আসি।
বার্ষিক পরীক্ষার পর ওমরদের বাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ডিআইজি সাহেব বলেছেন এক মাস পর থেকে আবার পড়ানো শুরু করতে। আমার মতো ভালো মাস্টারকে তিনি ছাড়বেন না। বদলি হলে সেখানে নিয়ে যাবেন।পনের কী বিশদিন পর দেখি আমার মেস-বাসার সামনে একটা বিরাট গাড়ি দাঁড়িয়ে। দেখলে বোঝা যায় বড়ো পুলিশ অফিসারের গাড়ি।
হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসি।
ওমর আর তার বাবা গাড়ি হতে নামছেন।
ডিআইজি সাহেব বললেন : মাস্টার সাহেব, আমার ছেলে বার্ষিক পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছে। এর আগে কোনোদিন পঞ্চাশেও ছিল না। এক বছরের মধ্যে আপনি আমার ছেলেটাকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। এটি আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়।
প্রশংসা আমার মনে অদ্ভুত এক আনন্দ বইয়ে দিল।
ডিআইজি সাহেব আমার হাতে একটা ঘড়ি তুলে দিয়ে বললেন : আমার ছোট ভাই আমার জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে এনেছেন। আপনাকে দিলাম। এটি কোনো বিনিময় নয়, উপহার; ভালোবাসার নিদর্শন।
আনন্দে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এমনভাবে কেউ আমাকে কোনোদিন এমন উপহার দেননি।
ওমর আমার পায়ে ধরে সালাম করে বলল : স্যার, আপনি আমাকে বদলে দিয়েছেনে।
ডিআইজি সাহেব ওমরের এমন আচরণে আবেগপ্রবণ হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন : মাস্টার সাহেব, ওমর আমাকেও পাত্তা দিত না। এ পিচ্চি ছেলের কাছে আমি ছিলাম কেবল টাকার-ঝুড়ি। আপনি তাকে জানোয়ার থেকে মানুষ করে দিয়েছেন। বলুন কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
বললাম : ভালোবাসা, শুধুই ভালোবাসা।
: আপনি আমার কাছ থেকে কী চান?
: ভালোবাসা, শুধুই ভালোবাসা।
-------------------------------------------------------------------------------------------
সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, ‘শেখা সাদির বোকামি’ গল্পগ্রন্থের একটি আত্মচরিতমূলক গল্প।
ঈষৎ সংক্ষেপিত।
[এই গল্পটি নিয়ে একটি কিশোর উপন্যাস লেখা হয়েছে। নাম ‘ তিনে দুয়ে দশ’। প্রকাশক পুথিনিলয়, পাবেন আগামী একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়ের স্টলে।]

Friday 24 November 2017

বাঙালির বাংলা হাসি / প্রমিতা দাস লাবণী

 বাঙালির বাংলা হাসি ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি ভিন্নধর্মী কৌতুকগ্রন্থ। বাংলা বানান, বাংলা
ব্যাকরণ, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা ভাষা নিয়ে লিখিত কৌতুকগ্রন্থের কৌতুকগুলি পড়লে শুধু হাসি নয়, হাসির সঙ্গে বাংলা ভাষা সম্পর্কে নতুন অভিজ্ঞান সৃষ্টি হবে। প্রায় দুইশ ছোটো ছোটো কৌতুক নিয়ে রচিত এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে কৌতুকের জগতে অনবদ্য একটি সংযোজন হিসেবে অভিহিত হবে। বাংলা সাহিত্যে পুরো বাংলা নিয়ে এমন একক গ্রন্থ ইতোঃপূর্বে রচিত হয়নি। বইটির কৌতুকগুলি থেকে কয়েকটি কৌতুক আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো। এই কৌতুকগুলি পড়ে বইটি সম্পর্কে আপনাদের একটি ধারণা হবে। বইটির প্রকাশক পুথিনিলয়, পাবেন ২১০৮ খ্রিষ্টাব্দের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পুথিনিলয়ের স্টলে। প্রচ্ছদ করেছেন মামুন হোসাইন।
 কৌতুক নম্বর : ১২২
কবি আবদুস সাত্তার সাপ্তাহিক বিক্রম পত্রিকায় কাজ করতেন। ‘বিক্রম’-এর এক সংখ্যয় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটা লেখা প্রকাশিত হলো। সদ্য-প্রকাশিত পত্রিকার একটা কপি নিয়ে কবি আবদুস সাত্তার খুশিতে ডগমগ হয়ে ড. শহীদুল্লাহ্র কাছে গেলেন।
ড. শহীদুল্লাহ্ পত্রিকার দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে বললেন, সাত্তার, জায়নামাজে আমি
কখন পাদকর্ম করলাম?
আবদুস সাত্তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শহীদুল্লাহ্র দিকে তাকিয়ে বিনীত কণ্ঠে বললেন, কিছুই তো বুঝতে পারলাম না স্যার।ড. শহীদুল্লাহ বললেন, আমি লিখেছিলাম, জায়নামাজে যখন পা
দিলাম ...। আর তোমরা ছাপিয়েছ, জায়নামাজে যখন পাদিলাম...। পাদকর্ম, তা-ও আবার জায়নামাজে। তোমরা কী ছাইপাশ ছাপও এসব?কবি আবদুস সাত্তার অপরাধীর কণ্ঠে বললেন, কম্পোজিটরের ভুলে ‘পা-এর সঙ্গে ‘দিলাম’ যুক্ত হয়ে গেছে।ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বললেন, ‘পা’ এর সঙ্গে দিলাম যুক্ত হয়ে গিয়েছে ঠিক আছে, কিন্তু আমার উপর কেন এমন দোষটা চাপিয়ে দিলে?পরদিন পত্রিকা সংশোধন দিল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জায়নামাজে পাদেন নি। তিনি পাদিয়েছিলেন।এবার পা আর দিয়েছিলেন যুক্ত হয়ে গেল।ড. শহীদুল্লাহ্ লেখা দেখে হায়! হায়! করে ওঠলেন।

কৌতুক বানান কৌতুক


বিখ্যাত একটি পত্রিকার হেডলাইন : “পুলিশের গু খেয়ে ডাকাতের মৃত্যু”
শিরোনাম দেখে জনগণ হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অবিশ্বাস্য, রীতিমতো শিহরন জাগানো
প্রমিতা দাস লাবণী
একটি সংবাদ। পাঠক এমন খবরই পড়তে চায়। তবে পুরো ঘটনা পড়ে সবাই হতাশ। পত্রিকা ভুল করেছে।
পরদিন পত্রিকা খবরটির সংশুদ্ধি দিল : “পুলিশের গুলি খেয়ে ডাকাতের মৃত্যু। গু খেয়ে কেউ মরেনি। আমরা দুঃখিত, গতকাল আমাদের পাছায় কিছু চুল ছিল।” আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ে পাঠক। এ তো আরও মজার খবর! সংশুদ্ধিটি পড়ে পাঠক বুঝতে পারল আসল বিষয়। পত্রিকা আবারও ভুল করেছে।
পরদিন পত্রিকা পুনরায় সংশুদ্ধি দিল : “আসলে গতকাল আমাদের কারো পাছায় কোনো চুল ছিল না। ছাপায় কিছু ভুল ছিল।”

কাকতালীয় কৌতুক

ছাত্র : কাকতালীয় মানে কী স্যার?
শিক্ষক : কার্যকারণহীন দুটি ঘটনা আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া। এটি একটি বাগধারা। কাক ও তাল থেকে এটির উৎপত্তি।
ছাত্র : কাক ও তাল কেন স্যার?
শিক্ষক : একটি কাক তাল গাছে বসল এবং বসামাত্র টুপ করে একটা তাল
ড. আমীনের কয়েকটি বইয়ের কভার।
মাটিতে পড়ে গেল। কাকটি না-বসলেও তালটি পড়ত, হয়তো তালটি না-পড়লেও কাকটি বসত। কাকের মতো ছোট একটা পাখির তাল গাছে বসার সঙ্গে তাল-পড়ার কোনও যোগসূত্র ছিল না। কিন্তু ঘটনাচক্রে তালের পতন ও কাকের বসা দুটো একসঙ্গে ঘটে গেল। এটাই কাকতালীয়। এবার তুমি কাকতালীয় ঘটনার একটা উদাহরণ দাও।
ছাত্র : আমার বাবার বিয়ে হল, সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের বিয়েও! এমন কাকতালীয় আর দেখিনি স্যার, আপনি দেখেছেন?
শিক্ষক : দেখেছি।
ছাত্র : কোথায়?
শিক্ষক : তুমি জন্মগ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে একজন পুরুষ বাবা এবং একজন নারী মা হয়ে গেল।
সূত্র : শব্দচয়নকৌতুকী, ড. মোহাম্মদ আমীন।

Thursday 23 November 2017

বিচিন্তকথন / ড. হায়াৎ মামুদ

বিচিন্তকথন

বিচিন্তকথন, . মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। প্রকাশক পুথিনিলয়, প্রচ্ছদ
করেছেন, মামুন হোসাইন।মূল্য একশত বিশ টাকা। একুশটি ছোটো ছোটো প্রবন্ধ নিয়ে গ্রন্থটি সজ্জিত।প্রবন্ধগুলি হচ্ছে যথাক্রমে : ভালোবাসা, উন্নয়ন দুর্নীতি, জাত অজাত, দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তি ব্যক্তিত্ব, স্বজনপ্রীতি দেশপ্রেম, অহংকার পতনের মূল কথাটা ভুল, সত্য জানার কৌশল, বিবেচক অতিথি, রূপ গুণ, শেখ সাদী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কুকুর, স্বাধীনতা, স্বপ্ন কল্পনা, আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা, সুখ শান্তি কষ্ট, নিয়ন্ত্রণ, ধর্ম, বিশ্বাস জ্ঞান, ধারণা বিশ্বাস, মানুষ, ব্যক্তি নাম এবং বউ বস সঙ্গী। 
 প্রবন্ধ সাধারণত তথ্য ভারি ভারি কথার ভারে ন্যুজ্ব থাকে। কিন্তু গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধের প্রতিটি বাক্য কত সাবলীল আকর্ষণীয় তা না-পড়লে অনুধাবন করা যায় না। প্রবন্ধের মতো নিরস সাহিত্যকর্মওউপস্থাপনার গুণে কত হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারে- তা এই বইটি না-পড়লে জানা যাবে না। কোনো অনুকরণ বা অনুসরণ নয়, লেখক নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে অনুধাবিত ধারণারাশিকে এই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন।
পাণ্ডুলিপিটি পাওয়ার পর পুরোটাই একবসায় পড়ে নিতে বাধ্য হলাম। প্রতিটি বাক্যই যেন এক একটা অমিয় কোরক। অনুভবে তাড়না আনে ভাবনার। প্রবন্ধকে এমন মুগ্ধকর করে তোলা প্রায় অসাধ্য। . আমীন এই অসাধ্য কাজটা করেছেন। এমন লেখা যে কারো প্রশংসার দাবি রাখে।
আমার ইচ্ছে করছে, পাঠকের জন্য পুরো বইটা তুলে ধরতে, কিন্তু স্বল্প পরিসরে তা সম্ভব নয়। আমি কয়েকটি প্রবন্ধ থেকে অল্প কিছু নিচে তুলে ধরলাম :কেউ বঞ্চিত হতে চায় না কিন্তু সবাইকে বঞ্চিত হতে হয়। কেউ দুর্নীতি রাখতে চায় না কিন্তু দুর্নীতি থেকেই যায়, রাখতে হয়। সবাই শোষণ করতে চায় এবং শোষণ করতে গিয়ে সবাই শোষিত হয়ে যায়।
যার জাত আছে সে আবার জাত খুঁজতে যাবে কেন? বরং যার জাত নেই সে- তো জাত খুঁজবে। এমন অমানবিক বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়েছে নিন্দনীয় জাতপ্রথা।
যে দাম্পত্য জীবন সুখের সেটি দাম্পত্য জীবন নয়, ওয়েটিং রুম। তাই শুধু ছেড়ে যেতে মন চায়। কলহ দাম্পত্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কলহ না থাকলে বুঝতে হবে দম্পতি নয় তারা, লিভিং টুগেদার।
বিয়ের সময় অনেকে সমমনা পাত্র-পাত্রী খুঁজেন। বিপরীত লিঙ্গের বিবাহে সমমনা সঙ্গী পাওয়া কখনও সম্ভব নয়। তাই এমন প্রত্যাশা হাস্যকর। জন্মকালেই নারীপুরুষ ভিন্ন মন ভিন্ন শরীর নিয়ে জন্মায়। জন্মের পরও ভিন্ন পরিবেশে গড়ে ওঠে। অবস্থায় যারা সমমন খুঁজে তারা নিতান্তই অজ্ঞ।
স্বজনপ্রীতিই মানুষকে পরিবার দিয়েছে, সমাজ দিয়েছে রাষ্ট্র দিয়েছে, শান্তির বার্তা দিয়েছে। সর্বোপরি মায়ের ভালোবাসায় উৎসরিত হওয়ার আনন্দ দিয়েছে। এই স্বজনপ্রীতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে দেশপ্রীতি। দেশপ্রীতি হতে এসেছে বিশ্বপ্রীতি, বিশ্বভ্রাতৃত্ব। পশুর মধ্যেও স্বজনপ্রীতি দেখা যায়। যার কাছে স্বজনপ্রীতি নেই তার মধ্যে দেশপ্রেমও নেই।  
যারা কোনো বিষয়কে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চায় তাদের উদ্দেশ্য এবং মতাদর্শে বাস্তবতা থাকার সম্ভাবনা থাকে না। যারা বিশ্বাসকে পূর্ব হতে অকাট্য হিসেবে নির্ধারিত করে রাখে, তাদের কাছে যুক্তিতর্ক মূল্যহীন।
গুণের স্বরূপ দেখতে হলে ভেতরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হয়। অপেক্ষা সাধারণত বিরল। তাই, সাধারণত রূপই দৃশ্যমান গুণ হয়ে আকর্ষণের সূচনা ঘটায়। স্বাধীনতার বড়ো শর্ত অন্যের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য নিজের ইচ্ছাকে প্রতিহত করার চেষ্টায় নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখা। সব মানুষ যখন এমন অবস্থায় উপনীত হবে, তখন যে জগৎটি হবে সেটিই হবে স্বাধীন জগৎ।
কল্পনা কখনও বাস্তবতাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না কিন্তু অনেক সময় কল্পনাও
বাস্তবতাকে ছড়িয়ে যায়। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির হেলিকপ্টার চিত্র এক সময় ছিল কল্পনা, এখন নির্জলা বাস্তবতা। বিজ্ঞানের বর্তমান আবিষ্কারগুলোর অধিকাংশ মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। এখন কল্পনা নয়, বাস্তবতা। কল্পনাকে মানুষ শ্রম, মেধা আর মনের মাধুরী বাস্তবে নিয়ে এসেছে। এজন্য বলা হয় মানুষের পক্ষে কোনো কিছু অসম্ভব নয়।
কল্পনা কখনও বাস্তবতাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না কিন্তু অনেক সময় কল্পনাও বাস্তবতাকে ছড়িয়ে যায়। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির হেলিকপ্টার চিত্র এক সময় ছিল কল্পনা, এখন নির্জলা বাস্তবতা। বিজ্ঞানের বর্তমান আবিষ্কারগুলোর অধিকাংশ মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। এখন কল্পনা নয়, বাস্তবতা। কল্পনাকে মানুষ শ্রম, মেধা আর মনের মাধুরী বাস্তবে নিয়ে এসেছে। এজন্য বলা হয় মানুষের পক্ষে কোনো কিছু অসম্ভব নয়।
সবাই স্বর্গে যেতে চায় কিন্তু কেউ মরতে চায় না। কত বৈপরীত্য মানুষে। মানুষের মনন আর বাস্তবতায়
অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুটি শক্ত হাতের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি হাতই যথেষ্ট। এই দুটি হাতের একটি হচ্ছে মূল্যবোধ এবং অন্যটি বিচক্ষণতা-প্রসূত ধৈর্য।
পশুর পেট একটি। একটি পশুর একটি পেট। মানুষের পেট অসংখ্য। একটি মানুষের শরীরে একটি পেট। বাইরে অসংখ্য। তাই পুরো পৃথিবী নিয়েও একজন মানুষের প্রাপ্তি-ইচ্ছা মরে না। আরও জেগে উঠে সহিংস উল্লাসে।
পশুর পেট একটি। একটি পশুর একটি পেট। মানুষের পেট অসংখ্য। একটি মানুষের শরীরে একটি পেট। বাইরে অসংখ্য। তাই পুরো পৃথিবী নিয়েও একজন মানুষের প্রাপ্তি-ইচ্ছা মরে না। আরও জেগে উঠে সহিংস উল্লাসে।
বিশ্বাস ধারণার আদিপর্ব। অন্য কথায় জ্ঞানপূর্ব ধারণা। যেটি কখনও প্রমাণ করা যায় না আবার অপ্রমাণ করাও তত সহজ নয়। মূলত এটিই বিশ্বাস। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে বিশ্বাসের হেতু? ধর্মে এর বিকল্প নেই। বিশ্বাস না করলে ধর্মমতে অধার্মিক। বিশ্বাস ধর্মের শ্বাস।লোকে বলে- কাল হয়েছে গত, কালের মুখে মোত। জনপ্রিয়তা বলে, কাল হয়েছে গত, আসবে শত শত। জনপ্রিয়তার কাছে শত শত কাল অনেক ব্যক্তি চির বর্তমান হয়ে থাকে।
বউ আর বস উভয়ে সর্বোত্তম প্রত্যয়, আদর্শের কান্ডারি, কল্যাণের সাগর। যা কিছু উত্তম, যা কিছু মানবীয়, যা কিছু যৌক্তিক তা বউ এবং বস। বউ আর বসের সবকিছু অসাধারণ তুলনীহীন এবং গর্বিত প্রকাশ। এর কোন তুলনা নেই। তাই বউ এবং বসের কাছে সব সময় ছোট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্বামী যত উদার, বউ তত অনুদার। স্বামী যত বোকা বউ তত চালাক। এজন্য একজন অন্যজনের হদিস ঠিকভাবে কখনও পায় না।