Translate

Thursday, 23 November 2017

বিচিন্তকথন / ড. হায়াৎ মামুদ

বিচিন্তকথন

বিচিন্তকথন, . মোহাম্মদ আমীনের লেখা একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। প্রকাশক পুথিনিলয়, প্রচ্ছদ
করেছেন, মামুন হোসাইন।মূল্য একশত বিশ টাকা। একুশটি ছোটো ছোটো প্রবন্ধ নিয়ে গ্রন্থটি সজ্জিত।প্রবন্ধগুলি হচ্ছে যথাক্রমে : ভালোবাসা, উন্নয়ন দুর্নীতি, জাত অজাত, দাম্পত্য জীবন, ব্যক্তি ব্যক্তিত্ব, স্বজনপ্রীতি দেশপ্রেম, অহংকার পতনের মূল কথাটা ভুল, সত্য জানার কৌশল, বিবেচক অতিথি, রূপ গুণ, শেখ সাদী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কুকুর, স্বাধীনতা, স্বপ্ন কল্পনা, আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা, সুখ শান্তি কষ্ট, নিয়ন্ত্রণ, ধর্ম, বিশ্বাস জ্ঞান, ধারণা বিশ্বাস, মানুষ, ব্যক্তি নাম এবং বউ বস সঙ্গী। 
 প্রবন্ধ সাধারণত তথ্য ভারি ভারি কথার ভারে ন্যুজ্ব থাকে। কিন্তু গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধের প্রতিটি বাক্য কত সাবলীল আকর্ষণীয় তা না-পড়লে অনুধাবন করা যায় না। প্রবন্ধের মতো নিরস সাহিত্যকর্মওউপস্থাপনার গুণে কত হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারে- তা এই বইটি না-পড়লে জানা যাবে না। কোনো অনুকরণ বা অনুসরণ নয়, লেখক নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে অনুধাবিত ধারণারাশিকে এই গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন।
পাণ্ডুলিপিটি পাওয়ার পর পুরোটাই একবসায় পড়ে নিতে বাধ্য হলাম। প্রতিটি বাক্যই যেন এক একটা অমিয় কোরক। অনুভবে তাড়না আনে ভাবনার। প্রবন্ধকে এমন মুগ্ধকর করে তোলা প্রায় অসাধ্য। . আমীন এই অসাধ্য কাজটা করেছেন। এমন লেখা যে কারো প্রশংসার দাবি রাখে।
আমার ইচ্ছে করছে, পাঠকের জন্য পুরো বইটা তুলে ধরতে, কিন্তু স্বল্প পরিসরে তা সম্ভব নয়। আমি কয়েকটি প্রবন্ধ থেকে অল্প কিছু নিচে তুলে ধরলাম :কেউ বঞ্চিত হতে চায় না কিন্তু সবাইকে বঞ্চিত হতে হয়। কেউ দুর্নীতি রাখতে চায় না কিন্তু দুর্নীতি থেকেই যায়, রাখতে হয়। সবাই শোষণ করতে চায় এবং শোষণ করতে গিয়ে সবাই শোষিত হয়ে যায়।
যার জাত আছে সে আবার জাত খুঁজতে যাবে কেন? বরং যার জাত নেই সে- তো জাত খুঁজবে। এমন অমানবিক বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়েছে নিন্দনীয় জাতপ্রথা।
যে দাম্পত্য জীবন সুখের সেটি দাম্পত্য জীবন নয়, ওয়েটিং রুম। তাই শুধু ছেড়ে যেতে মন চায়। কলহ দাম্পত্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কলহ না থাকলে বুঝতে হবে দম্পতি নয় তারা, লিভিং টুগেদার।
বিয়ের সময় অনেকে সমমনা পাত্র-পাত্রী খুঁজেন। বিপরীত লিঙ্গের বিবাহে সমমনা সঙ্গী পাওয়া কখনও সম্ভব নয়। তাই এমন প্রত্যাশা হাস্যকর। জন্মকালেই নারীপুরুষ ভিন্ন মন ভিন্ন শরীর নিয়ে জন্মায়। জন্মের পরও ভিন্ন পরিবেশে গড়ে ওঠে। অবস্থায় যারা সমমন খুঁজে তারা নিতান্তই অজ্ঞ।
স্বজনপ্রীতিই মানুষকে পরিবার দিয়েছে, সমাজ দিয়েছে রাষ্ট্র দিয়েছে, শান্তির বার্তা দিয়েছে। সর্বোপরি মায়ের ভালোবাসায় উৎসরিত হওয়ার আনন্দ দিয়েছে। এই স্বজনপ্রীতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে দেশপ্রীতি। দেশপ্রীতি হতে এসেছে বিশ্বপ্রীতি, বিশ্বভ্রাতৃত্ব। পশুর মধ্যেও স্বজনপ্রীতি দেখা যায়। যার কাছে স্বজনপ্রীতি নেই তার মধ্যে দেশপ্রেমও নেই।  
যারা কোনো বিষয়কে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চায় তাদের উদ্দেশ্য এবং মতাদর্শে বাস্তবতা থাকার সম্ভাবনা থাকে না। যারা বিশ্বাসকে পূর্ব হতে অকাট্য হিসেবে নির্ধারিত করে রাখে, তাদের কাছে যুক্তিতর্ক মূল্যহীন।
গুণের স্বরূপ দেখতে হলে ভেতরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হয়। অপেক্ষা সাধারণত বিরল। তাই, সাধারণত রূপই দৃশ্যমান গুণ হয়ে আকর্ষণের সূচনা ঘটায়। স্বাধীনতার বড়ো শর্ত অন্যের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য নিজের ইচ্ছাকে প্রতিহত করার চেষ্টায় নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখা। সব মানুষ যখন এমন অবস্থায় উপনীত হবে, তখন যে জগৎটি হবে সেটিই হবে স্বাধীন জগৎ।
কল্পনা কখনও বাস্তবতাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না কিন্তু অনেক সময় কল্পনাও
বাস্তবতাকে ছড়িয়ে যায়। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির হেলিকপ্টার চিত্র এক সময় ছিল কল্পনা, এখন নির্জলা বাস্তবতা। বিজ্ঞানের বর্তমান আবিষ্কারগুলোর অধিকাংশ মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। এখন কল্পনা নয়, বাস্তবতা। কল্পনাকে মানুষ শ্রম, মেধা আর মনের মাধুরী বাস্তবে নিয়ে এসেছে। এজন্য বলা হয় মানুষের পক্ষে কোনো কিছু অসম্ভব নয়।
কল্পনা কখনও বাস্তবতাকে অতিক্রম করে যেতে পারে না কিন্তু অনেক সময় কল্পনাও বাস্তবতাকে ছড়িয়ে যায়। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির হেলিকপ্টার চিত্র এক সময় ছিল কল্পনা, এখন নির্জলা বাস্তবতা। বিজ্ঞানের বর্তমান আবিষ্কারগুলোর অধিকাংশ মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। এখন কল্পনা নয়, বাস্তবতা। কল্পনাকে মানুষ শ্রম, মেধা আর মনের মাধুরী বাস্তবে নিয়ে এসেছে। এজন্য বলা হয় মানুষের পক্ষে কোনো কিছু অসম্ভব নয়।
সবাই স্বর্গে যেতে চায় কিন্তু কেউ মরতে চায় না। কত বৈপরীত্য মানুষে। মানুষের মনন আর বাস্তবতায়
অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুটি শক্ত হাতের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি হাতই যথেষ্ট। এই দুটি হাতের একটি হচ্ছে মূল্যবোধ এবং অন্যটি বিচক্ষণতা-প্রসূত ধৈর্য।
পশুর পেট একটি। একটি পশুর একটি পেট। মানুষের পেট অসংখ্য। একটি মানুষের শরীরে একটি পেট। বাইরে অসংখ্য। তাই পুরো পৃথিবী নিয়েও একজন মানুষের প্রাপ্তি-ইচ্ছা মরে না। আরও জেগে উঠে সহিংস উল্লাসে।
পশুর পেট একটি। একটি পশুর একটি পেট। মানুষের পেট অসংখ্য। একটি মানুষের শরীরে একটি পেট। বাইরে অসংখ্য। তাই পুরো পৃথিবী নিয়েও একজন মানুষের প্রাপ্তি-ইচ্ছা মরে না। আরও জেগে উঠে সহিংস উল্লাসে।
বিশ্বাস ধারণার আদিপর্ব। অন্য কথায় জ্ঞানপূর্ব ধারণা। যেটি কখনও প্রমাণ করা যায় না আবার অপ্রমাণ করাও তত সহজ নয়। মূলত এটিই বিশ্বাস। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে বিশ্বাসের হেতু? ধর্মে এর বিকল্প নেই। বিশ্বাস না করলে ধর্মমতে অধার্মিক। বিশ্বাস ধর্মের শ্বাস।লোকে বলে- কাল হয়েছে গত, কালের মুখে মোত। জনপ্রিয়তা বলে, কাল হয়েছে গত, আসবে শত শত। জনপ্রিয়তার কাছে শত শত কাল অনেক ব্যক্তি চির বর্তমান হয়ে থাকে।
বউ আর বস উভয়ে সর্বোত্তম প্রত্যয়, আদর্শের কান্ডারি, কল্যাণের সাগর। যা কিছু উত্তম, যা কিছু মানবীয়, যা কিছু যৌক্তিক তা বউ এবং বস। বউ আর বসের সবকিছু অসাধারণ তুলনীহীন এবং গর্বিত প্রকাশ। এর কোন তুলনা নেই। তাই বউ এবং বসের কাছে সব সময় ছোট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। স্বামী যত উদার, বউ তত অনুদার। স্বামী যত বোকা বউ তত চালাক। এজন্য একজন অন্যজনের হদিস ঠিকভাবে কখনও পায় না।  

No comments:

Post a Comment