Translate

Friday 7 August 2015

Dr. Mohammed Amin At a glance/ Dr. Fauzia Khan Misa



Dr. Mohammed Amin was born in 31st December, 1964 at Chanadanish Upazilla of Chittagong in Bangladesh. Among five brothers and three sisters Dr. Mohammed Amin is eldest. His village name is Syed Mohammed Para. The village, Syed Mohammed Para was very legendary for its religiousness  and cultural activities. As a member of noble family Dr. Amin got immense opportunity to make himself as a liberal and clued-up from his boyhood, even though his intimates were Islamic scholars and religious researchers, but none of them were rigid with religious dogma. -

 His father Moulana Syed Nurul Islam was a prominent Islamic thinker, educationist and social worker with enormous experience in numerous fields. He established a vast library with the valuable books of the world famous writers in different countries and language. He knew everything. For this people called him Jack of all trades. He was a poet, writer, social reformer, artist, columnist and teacher. Hazrat Moulana Nurul Islam died 11 December in the year of 1991.

Moulana Syed Golam Sharif, grandfather of Dr. Mohammed Amin was a great man and very highly respected saint and spiritual guide with inspirational superiority. He was the teacher of Calcutta Alia Madrasha and first Islamic scholar with highest degree in Holy Quran and Hadith in south Chittagong. People known him holy man with godly bliss and well-known as great Huzur (highly honored person) than his name. He spends his life to expand education. Subedar Major Ahmed Hossain Bir Protik, valiant freedom fighter is the younger brother of Golam Sarif. 

Golam Sarif died at 15th July in the year  1971, still thousands of people go to his shrine getting earthy and unearthly happiness. They believe that Great Hozur is beneficent, enriched with heavenly power and can do the whole lot. Sakina Begum Chouwdhurany, mother of Dr. Amin was a erudite and encouraging women, respected by all. She was the daughter of Mr. Abidur Rahman, the prestigious member of BADAL family. That day BADAL family was the very deferential clan in Chandanish Police Station, Now Sub-District. Sakina Begum died in 2012.
 
His grandfather Hazrat Moulana Golam Sharif was a man who believed in the Islamic style of life. He had no faith in western education and never thought of giving Dr. Amin modern education. He thought modern education would destroy religious faith. So he arranged Dr. Amin’s education in the old traditional manner. His grandfather had him taught at home. There was a madrasa near their house but he did not send Dr. Amin to the Madrasa as his grandfather did not have high opinion about it. At first Moulana Golam Sharif taught Dr. Amin at home, subject was Arabic, Urdu, Persia, Bengali and Mathematics. He decided that after few years Dr. Amin would be sent to a good Madrasa in Chittagong. But his father Moulana Nurul Islam was an outstanding and farsighted man with modern thought. He decided Amin would be sent to school, not Madrasha. 

 In this situation Dr. Amins grandfather relaxed his decision and Dr. Amin was sent to nearby Primary School, named South Gasbaria Pre-Primary School. In that time there was no KG school.
Chayanika Jahan Chowdhury, wife of Dr. Mohammed Amin is an ideal woman. She comes from a respected family. Her father was a professor and famous philosopher. He is blessed with two children, eldest one is Abeer Chowdhury Meem and Anusynthia Jahan Chowdhury.

Abeer is the national Children Artist and awarded with national prize by Honorable Prime Minister Bangavaban for his matchless attainment. He is also brilliant as academic carrier and student. He has been securing first place from the beginning of formal study. Abeer is also a famous artist. He get Asia artist prize. He is the proud writer of three books and now studying class seven in BIAM Laboratory School.
After completing primary level Dr. Amin admitted Gasbaria NG High School. From this school Dr. Amin passed S.S.C and then admitted to Gasbaria Government College in science. He secured his H.Sc in this college and admitted to Chittagong Engineering College. Then he admitted to Chittagong University and secured BSc (Hons) and M.Sc. Then he appointed as Assistant Commissioner as the proud member of Administration Cadre. In-service, he get LLB and LLM degree and PhD from Edward University, USA. He is famous not as an officer, but writer. His uncle famous writer, poet, philosopher, journalist, social reformer, singer, essayist Ahmed Sofa was his mentor of writings. 
 
This is the Society is his first Published book. A magazine, named Monthly General Knowledge, the first periodic of General Knowledge introduced by Dr. Amin. Then he was student. It was the first such Magazine in Bangladesh as book size. Daily Naya Bangla awarded him honored prize for published this magazine.

Mr. Khaled, Famous editor of Daily Azadi of Chittagong also honored him for this. Dr. Amin was a famous columnist. His writings were regularly published in the Daly Naya Bangla, the Daily Purbokone, the Daily Azadi, the Daily Sangbad, the Daily Ittefaque, in a words all the national daily of Bangladesh as sub-editorial. All published column were research. He never disagree the indispensability of politics, however, hate it; because of its runners, especially in the context of Bangladesh.

He was first posted in the Kurigram district, a poverty stricken area of Bangladesh. Here he enriched himself about the real character of human being and understood, there is no far difference between man and beast. When men is educated he is the best creature but uneducated man is lower the hyena, cruel animal. Then, why is the human being called best creature? Because of little man is not beast. Dr. Amin’s this thinking is expressed his famous book- Virus of Administration. The number of his published books are now more than 61.

Saturday 1 August 2015

বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস ড. মোহাম্মদ আমীনের অনবদ্য একটি গ্রন্থ / হায়াৎ মামুদ


বইয়ের নাম ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’। নাম দেখে আগ্রহটা বেড়ে গেল। পাতা উল্টাতে উল্টাতে পুরো পা-ুলিপিটাই পড়ে নিলাম, বলা যায় পড়তে বাধ্য হলাম। একটি নতুন ধারণা। বাংলা ভাষায় অনেক পৌরাণিক শব্দ রয়েছে। যা আমরা প্রায়শ ব্যবহার করে থাকি। সে শব্দগুলোর উৎস-কাহিনি সাহিত্যরস সমৃদ্ধ সৌকর্যে প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটা ভুক্তি যেন এক একটা অণুগল্প। একটি পড়লে আর একটি পড়ার আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। নামটি দেখে পাঠক যাই ধারণা করুন না কেন, পড়ার পর বুঝতে পারবেন লেখক কী যতœসহকারে বাংলা শব্দের উৎপত্তি ও বিকাশ  নানা জানা-অজানা তথ্য দিয়ে গল্পচ্ছলে তুলে ধরেছেন। অনেকগুলো বেশ রোমাঞ্চকর ও আনন্দদায়ক। আমি মনে করি বইটি শুধু বয়স্কদের নয়, শিশু-কিশোরদেরও আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

শব্দের পরিবর্তন কেন এবং কীভাবে হয় তা লেখক প্রায় প্রত্যেকটি ভুক্তিতে যুক্তিসহকারে বর্ণনা করেছেন। মন্তব্যগুলো যেমন আগ্রহোদ্দীপক তেমন ঐতিহাসিক তথ্যে ভরপুর। শুধু ভারতীয় পুরাণ নয়, ল্যাটিন, চীনা, আরবীয়, মিশরীয়, গ্রিক, রোমান, ফারসি, পর্তুগিজ, ইংরেজ, আফ্রিকান এমনকি মার্কিন ও অস্ট্রেলীয় পুরাণেরও এমন অনেক শব্দের উৎস-বিবরণ বইটিতে  দেওয়া হয়েছে যেগুলো আমরা প্রাত্যহিক নানা কাজে হরদম ব্যবহার করি। সে হিসাবে গবেষকদেরও বইটি কাজে লাগবে।

ড. মোহাম্মদ আমীন বাংলা বানান ও বাংলা শব্দ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করছেন। বাংলা বানান নিয়ে তাঁর একাধিক গ্রন্থ আছে। ইতোপূর্বে তার বেশ কয়েকটা বই আমি পড়েছি। এরমধ্যে ‘রঙ্গ রসে বাংলা বানান’ বইটির কথা না-বললেই নয়। এ গ্রন্থে তিনি বাংলা বানানের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও খুঁটিনাট দিক হাস্যরসের অফুরন্ত খোড়াকসহ তুলে ধরেছেন। এ গ্রন্থেও লেখকের সে রসপ্রিয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। অনেকে বই কিনেন শুধু সংগ্রহের জন্য। তবে ‘বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস’ নিলে ক্রেতা শুধু সংগ্রহ করে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। দু-একটা ভুক্তি পড়লে পুরোটা পড়ার আগ্রহ জাগবে। আমি মনে করি বইটি বাংলাভাষী প্রত্যেক পাঠকের কাছে একটি আকর্ষণীয় সংগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে। আমি বইটির বহুল প্রচার ও লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করি।


Sunday 26 July 2015

প্রথম প্রেম/ ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রথম প্রেম

উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর শরীরটা কেমন জানি বোয়াল মাছের মতো লাফাতে শুরু করে। প্রথম দিনই সহপাঠী তাহেরা আলোড়ন তুলে। সে সময় প্রেম ছিল ঘৃণার, সাংঘাতিক জঘন্য। চুরি-ডাকাতির মত লজ্জাকর। ক্লাশে অনেক সুন্দরি মেয়ে থাকলেও দৈহিক গড়নের জন্য আমাকে তাহেরার প্রেমে পড়তে হয়। সে ছাড়া অন্য মেয়েরা ছিল কাতাল মাছের মত চ্যাপ্টা, নাদুসনুদস; পেটগুলো পাঙ্গাস মাছের মত চর্বি-টুম্বর।
ছাত্রীরা টিচারের পেছনে পেছনে ক্লাশে আসত। ক্লাশ শেষে আবার চলে যেত।
আকতার বলতো: ছাত্রীরা মুরগির বাচ্চা, আমরা শেয়াল। যার পেছনে ছাত্রীরা আসেন তিনি কুকুর। শেয়াল মুরগির বাচ্চা খেয়ে ফেলবে তাই কুকুর পাহারা।
ছাত্রীদের সাথে কথা বলা যেতো না। ভালভাবে তাকানোও ছিল অপরাধ। চিন্তাভাবনা করে তাহেরার প্রেমে পড়েছি। তবে এক বাক্য কথা বলার সুযোগ হয়নি। অভিসার শব্দটাকে কত বার কতভাবে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। পোঁড়া কপাল সম্ভব হয়নি। বালিকারা সুন্দরী কিন্তু অধরা। স্কুল কম্পাউন্ডে কোন ছাত্রীর সাথে কথা বলার সুযোগ ছিল না। সুযোগ নিলে পথে নিতে হতো। তাহেরা আর আমার আসা-যাওয়ার পথ ছিল ভিন্ন- দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে।
আমার প্রেম ছিল প্লাটোনিক। দূর হতে কায়া দেখে মায়া নিতাম। উদাস সুখে শিউরে উঠতাম কাঁপুনে ভালবাসার বায়বীয় রোমাঞ্চে। মোবাইল নামের যন্ত্রটা কল্পনাতেও ছিল না। চিঠিই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কীভাবে চিঠি দেই? যদি প্রত্যাখ্যান করে; অভিযোগ জানায়?
কী হবে তখন?
ভয়ে প্রেম মন মড়া কেচোর মতো কুঁচকে যেতো।
তাহেরা সামনের টুলে উত্তর কোণে বসতো। প্রতিদিন না হলেও প্রায় সময়। অনেকদিন গবেষণা করে এটা আবিষ্কার করেছি। একদিন সবার আগে স্কুলে আসি। কেউ নেই। আমি চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাই। তারপর তাহেরার সিটের কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। টুলের দুই তক্তা পেরেক মেরে আটকে রাখা হয়েছে। ফাঁক আছে। ছফা চাচা বলতেন, স্বামী-স্ত্রী টুলের দুই তক্তার মতো। পেরেক গেঁতে জোর করে একসাথে রাখা হয়। তবু রাখা যায় না। আস্তে আস্তে ফাঁক হয়ে যায়।
ফাঁকে একটা চিঠি এমনভাবে গুঁজে দেই যাতে সহজে তাহেরার চোখে পড়ে।
চিঠি দিয়েছি; নাম দেইনি। উড়োচিঠি। মেয়েদের বিশ্বাস নেই। এরা ক্রিকেট বলকে কথার তোড়ে দুই মিনিটে ফুটবল বানিয়ে দিতে পারে। বাবার কানে গেলে ডান হাতের আঙ্গুল একটাও রাখবে না। স্কুল দূরে থাক, কলমও ধরতে পারবো না। তবু সাহস পাই। প্রেম ভীরুকে সাহস দেয়। এ বয়সে রবীন্দ্রনাথও প্রেম করেছেন, পত্র দিয়েছেন। নজরুলও করেছেন। আমি পারবো না কেন?
চিঠির নিচে বিঃ দ্রঃ দিয়ে লিখেছিলাম:
আমার সহিত প্রেম করিতে রাজি যদি হও রাণী,
বাথরুমের সানসেটে রাখিও উত্তরখানি।
পত্র দিলে তবেই আমার দিব পরিচয়
প্রেমের লীলা খেলে খেলে করবো তোমায় জয়।
সাধুচলিত মিশ্রণ। তাতে কিছু যায় আসে না। রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতায় সাধুচলিত মিশ্রণ আছে।
ক্লাশমেট আলমাস রাজিয়াকে চিঠি দিতো। বিদ্যালয়ের পেছনে পেঁপে গাছের আড়ালে একটা ইটের নিচে প্রত্যুত্তর রাখার জন্য বিঃদ্রঃ দিয়েছিলো। আলমাস প্রতিদিন গভীর আবেগে ইট দুটো দেখতো। একদিন ইট উল্টে দেখে গু। কে যেন পায়খানা করে চাপা দিয়েছে। প্রেম পয়েন্টে গু। স্বর্গে যাবার পথে এমন আকামটা কে করলো! রাজিয়া দেয়নি তো?
আলমাসের গু-কেলেঙ্কারির পর আমি সানসেট বেছে নেই। নিরাপত্তার কোন বিকল্প নেই। সানসেটে হাগা সম্ভব নয়। গু-কেলেঙ্কারি পর আলমাসের নাম হয় গু-আলমাস। আস্তে আস্তে গুয়ালামাছ। স্যারেরাও ঐ নামে ডাকত।
ক্লাশ করছিলাম।
দফতরি কাশেম ক্লাশে ঢুকে টিচারকে কী জানি বলল। টিচার আমার নাম ধরে ডাক দেন: হেড স্যার তোমাকে ডেকেছেন।
চোরের মন পুলিশ-পুলিশ। হাত পা অবশ। হেড স্যার আমাকে কেন ডাকবেন? আমি ক্যাপ্টেন নই। ছাত্র হিসেবেও ভালো নই। এমন কোন প্রভাবশালী লোকের ছেলেও নই যে, ডেকে একটু খাতির করবে। আমার মনে টুলের ফাঁকের চিঠির বাজনা। বুকটা ধড়ফর করছে। প্রেম-টেম সেকেন্ডের মধ্যে উধাও। প্রভু; এবারের মতো রক্ষা করো।
প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকার পর সনৎ স্যার আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেন। যা ভেবেছি তাই। তাহেরাকে লেখা চিঠি।
এটা কী তোর লেখা?
আমি নিশ্চুপ।
সনৎ স্যার: চোরের দশ গৃহস্থের এক।
কী লেখেছো?
কী লিখেছিলাম এতদিন পর মনে পড়ছে না। তবে প্রতিটা অক্ষর ছিল কিশোর চেতনার মত অবিকশিত। যেমন কাঁচা তেমন অশোভন।
আমি কাঁপছি। চোখ একবার হেড স্যারের দিকে আর একবার সনৎ স্যারের দিকে। লজ্জায় মিলিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইস্ এ মুহূর্তে যদি অন্ধ হয়ে যেতাম! পুরো স্কুল ঘর ভেঙ্গে যেতো ভূমিকম্পে! কিন্তু অন্ধ হলে কী প্রলয় বন্ধ হয়! আমার প্রলয় আমার উপর দিয়ে যাবে।
হায় খোদা, প্রেম দিলে তো; এতো কষ্ট রাখলে কেন?
হেড স্যার: কুঠারের চেয়ে হাতল বড়ো হয়ে গেছে। একটু চেছে দেন তো সনৎ বাবু।
হেড স্যারের কথা শেষ হতে না হতে সনৎ স্যার আমাকে মারতে শুরু করেন। প্রচ- মার। আমি ব্যাথায় লাফাচ্ছি। সনৎ স্যার চুলের মুটি ধরে চিকন বেত দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছেন।
টুলে একটা চিঠি গুঁজে রাখার অপরাধ কতো মারাত্মক সেদিন আমি বুঝতে পেরেছি। কে চিঠিটা দিয়েছে? তাহেরা নাকি শিক্ষক নিজে পেয়েছেন?
মার খাওয়ার পর প্রেমোৎসাহে ভাটা পড়ে। তবে মার আমাকে বিখ্যাত করে দেয়। আমি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাই।
প্রেমের মড়া জলে ডুবে না- বন্ধুরা দেখলে টিটকিরি দিয়ে গেয়ে উঠতো। কিছু দিন পর সনৎ স্যারের পিটুনির কথা ভুলে যাই। মনে আবার জ্বলে উঠে তাহেরা।
কিন্তু তাহেরা দ্রুত নাদুস-নুদুস হয়ে উঠছে।
সে যত নাদুসনুদুস হচ্ছিল আমার মনটা তত খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। মোটা মেয়ে দু চোখের বিষ। দাদি বলতেন: মেয়ের বাড়ন লাউয়ের ডগা, পুরুষ বেটা কানী বগা। আমি প্রার্থনা করতাম, তাহেরা যেন মোটা না হয়। প্রার্থনা সফল হয়নি। ঈশ্বর বিশ্বাসে চিড় ধরে। সে থাকলে আমার এমন নিবেদিত প্রার্থনা রাখবে না কেন? এ তো এমন বেশি কিছু চাওয়া নয়।
কয়েক মাস পর এসএসসি পরীক্ষা। সবাই প্রস্তুতি-ছুটিতে। অনেকদিন তাহেরাকে দেখি না। সাত্তার আর তাহেরার বাড়ি পাশপাশি। সেও প্রেম করতো।
কোচিং শেষে ছাত্তারকে বললাম: তুই যদি তাহেরাকে আমার চিঠিখানা দিতে পারিস তো তোকে একটা চিঠি লিখে দেবো। এমন ভাষা দেবো, তোর প্রেমিকার দাদি-নানি হতে আরম্ভ করে মা-চাচি পর্যন্ত উন্মাদ হয়ে যাবে।
ছাত্তার রাজি।
সে আমার পত্রখানা তাহেরাকে না দিয়ে বাসার কাজের ছেলের হাতে দেয়। কাজের ছেলে তাহেরাকে না পেয়ে পত্রখানা তাহেরার মায়ের হাতে তুলে দেয়।
তাহেরার মা চিঠিখানা তুলে দেয় তাহেরার বাবার হাতে।
ইতিহাস শুরু হয়ে যায়।
কাজের ছেলের কাছে প্রেরকের পরিচয় পেয়ে তাহেরার মা-বাবা রেগে আগুন। ভাতিজিকে প্রেমপত্র! ছাত্তার আর তাহেরার দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ। তাহেরার বাবা সাত্তারের পরিবারকে ঘায়েল করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে। এমন সুযোগ আর ছাড়া যায় না।
ছাত্তার মুলপত্র প্রেরক হিসেবে আমার নাম বলে দেয়।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো উপজেলা সয়লাব।
আমার মা-বাবা তাহেরার মা-বাবার চেয়েও বেশি ক্ষুব্ধ। আমি লজ্জায় ভেঙ্গে পড়ি। ছাত্তারকে বাড়ি হতে বের করে দিয়েছে, আমাকেও।
সন্ধ্যায় ছাত্তার এবং আমি স্কুলের পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে মিলিত হই।
কী করবো?
ছাত্তার: এসো পালিয়ে যাই।
এমন সময় গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে সনৎ স্যারের গল: পালাতে হবে না। তোমাদের জন্য কবর খোড়া হচ্ছে।

মারাত্মক বিড়ম্বনা / ড. মোহাম্মদ আমীন


পত্রিকার জন্য লেখাটা শেষ করতে চারটা বেজে বিশ। রাত আর বেশি নেই।
না ঘুমোলেও চলত তবু ঘুমোতে হবে।
মাথাটা মাথার চেয়ে অনেক ভারি হয়ে গেছে।
এটি ভাল লক্ষণ নয়।
এমন হলে ঘুমোতে হয়। শরীর বিজ্ঞান কাউকে ক্ষমা করে না।
নিজাম ঘুমোতে যান আরও দশ মিনিট পর।
মানে চারটা ত্রিশ।
বিছানায় এপাশ ওপাশ হলো কমপক্ষে বিশ মিনিট।
সাতটার আগে রিং। বিরক্ত হয়ে মোবাইলে হাত দেয়।
পর্দায় চোখ দিয়ে চ্যাত্।
মন্ত্রী মহোদয়। এক্ষুণি যেতে হবে। জরুরি কাজ।
লেখার তোড়ে কাজের কথা মনেই ছিল না। প্রতিবেদনটা রাতেই করে রাখা উচিত ছিল।
লেখকরা ভুলো মনের হয়।
নিজাম বিছানা হতে সোজা বাথরুম। চোখে ঘুম এখনও প্রথম চুমোর থুথুর মত লেফটে।
চোখ খুলতে পৃথিবী জড়িয়ে আসে।
ডান হাতে সেভিংক্রিম বাম হাতে টুথপেস্ট।
মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে জনালায় চোখ দেয়।
প্রচ- কুয়াশা।
এমন কুয়াশায় লেফে লেফটে থাকার মজাই আলাদা। কেন যে চাকরি করতে গেলাম- -
টুথব্রাশ মুখে দিয়ে নাড়তে থাকে নিজাম।
কেমন যেন লাগছে, অন্য রকম স্বাদ।
আয়নায় চোখ রেখে দাঁতগুলো ফাঁক করে।
ভুল হয়ে গেছে।
শেভলন টুথব্রাসে বসিয়ে মুখে ফুরে দিয়েছে।
গোলামের বাচ্চার মত কাজ হয়েছে। বউয়ের গালি।
জিহবা জ্বলছে।
শালার, তাড়াতাড়ি করতে গেলে সবসময় ঝামেলা হয়। এজন্য কখনও তাড়াতাড়ি করতে নেই।
স্লো এন্ড স্টেডি উইনস দ্যা রেইজ। এখানে কিন্তু এ প্রবাদ সত্য নয়।
এটি কেবল খরগোশ আর কচ্ছপের জন্য সত্য। মন্ত্রী ডাকলে প্রবাদ-টবাদ সব এলোমেলো হয়ে যায়।
আবার রিং করেন মন্ত্রী।
তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
তাড়াতাড়ি যেতে হলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না।
তাড়াতাড়ি যাবার জন্য নিজাম তাড়াতাড়ি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি না করে পারছে না।
আবার রিং করেন মন্ত্রী মহোদয়।
মুখে হাত দেন নিজাম।
আঠা-আঠা ভাব; মানে টুথপেস্ট।
গালেরটা দাঁতে, দাঁতেরটা গালে; এগুলো কী হচ্ছে!
কী হচ্ছে এগুলো! গালে চড় দিতে ইচ্ছে করছে। গালে চর দিলে নাকি আক্কেল খুলে যায়।
এখন চর দেয়ার সময় এবং সুযোগ কোনটা নেই।
ভুল শুধরে রেজর চালাতে গিয়ে ঘ্যাচাং।
জামির নিচে কেটে গেছে।
রক্ত পড়ছে। বউ দেখলে চিল্লাচিল্লি শুরু করবে।
আফটার শেভ দিয়ে ক্ষত চেপে ধরে নিজাম।
তিন মিনিটের অধিক চলে যায় এভাবে। এক সেকেন্ড যেখানে নেই সেখানে একশ আশি সেকেন্ড।
এমনটি হতো না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উটকো ঝামেলায় পড়তে হল।
কোন রকমে গোসলটা করে বেরিয়ে পড়ে নিজাম।
নাস্তা, বউয়ে প্রভাতগালি কোনটা থামাতে পারে না।
ভোরে তেমন যানজট নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যায় সচিবালয়।
লিফটে উঠে লিফটময়। একটা দারুন জায়গা লিফট।
এত অল্প পরিসরে স্বল্প সময়ের জন্য খুব কাছাকাছি এত মানুষের অবস্থান আর কোথাও দেখা যায় না।
একটা মহিলাও আছে।
লিফটের দর্শনই আলাদা। মেয়ে থাকলে আকর্ষণটা চাপা লজ্জায় পরিণত হয়। বুদ্ধিমান পুরুষেরা এমনভাবে দাঁড়ায় যাতে আয়নার মেয়েটার চেহারা দেখা যায়। বুদ্ধিমানেরা নিচের দিকে চোখ রেখে মেয়েদের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল চাটে।
বৃদ্ধাঙ্গুল নাকি শরীরের পুরো অবয়বের সারাংশ।
কী লজ্জা, তিনবার সুরা ইখলাস।
পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখে বলে দেয়া যায় পরিসংখ্যান।
চুলের রঙ, দাঁতের ফাঁক, ঠোঁটের কম্পন, বুকের সাইজ।
নিজাম আয়নার দিকে নয়, নিচের দিকে মহিলার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে।
হঠাৎ চোখ যায় নিজের জুতোর দিকে।
দুই পায়ে দুটো জুতো।
ওহ মাই গড।
মন্ত্রীর সাথে মিটিং করতে হবে, আন্তর্জাতিক চুক্তি হবে, অনেক বিদেশি থাকবে।
লিফট থেকে নেমে ড্রাইভারকে ফোন দেয় নিজাম: তাড়াতাড়ি জুতো নিয়ে এসো।
তারপর সোজা মন্ত্রীর কক্ষে। তিনি একগাদা কাগজে ডুবে। চোখ না তুলে সালামের জবাব দিলেন: তাড়াতাড়ি প্রতিবেদনটা নিয়ে এসো।
এক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদনটা তৈরি করে ফেলেন। লেখকদের এ একটা সুবিধা।
যতই ভুলো মনের হোক না, কাজ ঠিক সময়ই তুলে দিতে পারে।
মিটিং শুরু হয়ে গেছে।
নিজাম মন্ত্রীর কাছাকাছি।
অনেকে তার দিকে চেয়ে। ব্যাচম্যাটরা মুচকি হাসছে। জুনিয়র এমন কি সিনিয়রদের চোখেও কৌতুক।
সবার চোখ তার দিকে।
কী ব্যাপার?
গালে হাত দেয় নিজাম। ক্ষতস্থানের তুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।
এমনটি সবার হতে পারে। হাসার কী হল। আপন মনে সান্তনা খুঁজে নিজাম।
কিছুক্ষণ পর মন্ত্রী মহোদয় কাছে ডাকেন।
এগিয়ে যায় নিজাম।
কানে মুখ রাখেন মন্ত্রী: তুমি কিন্তু উল্টো জামা পড়েছো।
লজ্জায় চোখ দুটো ঢাকতে গিয়ে আরও লজ্জা পেয়ে যায়। এত বড় সভায় চোখ ঢাকার লজ্জা আরও বেশি।
তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে জামাটা সোজা করে বেরিয়ে আসতে কপাল দেয়ালে লেগে যায়। টাস।
ঝিম ঝিম করে উঠে শরীর।
আয়নায় চোখ দিয়ে বিমূঢ়। কপালে বিরাট আম।
কপালে আম, গালে ক্ষত, চোখে ঘুমহীনতার লালাভতা।
আবার পায়ে চোখ যায়। জুতো দুটো যমজ নয়। পরস্পরকে উপহাস করছে।
পাগল হয়ে গেল নাকি নিজাম!
এখন কী করি? কীভাবে সভায় যাই এত বড় আম নিয়ে- নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে নিজাম।
মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।
বাথরুম হতে এসে চেয়ারে বসে। আলোচনা এখন চরমে।
এ সময় এক পাটি জুতো নিয়ে ঢুকে ড্রাইভার।
নিজাম সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে সবাই হেসে উঠে।
সভার চোখ নিজামের পায়ে, বিদেশিরাও তাকিয়ে।
তুমি জুতোও উল্টো পড়ে এসেছো!
মন্ত্রীর কথা কানে যেন গরম মধু ঢেলে দেয়। এর মিষ্টতা ঈশ্বরের জাহান্নাম।
আরো বধ্বিস্ত হয়ে পড়ে নজিাম।
বধ্বিস্ত নিজাম লজ্জার আগুনে ঘেমে ঘেমে একাকার।

ছি / ড. মোহাম্মদ আমীন

ছি
=
আমার মায়ের বয়স যখন ছয় মাস তখন আমার নানি মারা যান।
নানি মারা যাবার দুই মাস পর নানা আবার বিয়ে করেন।
নানার দ্বিতীয় বউ ছিল খুব ফুটফুটে। সবাই ডাকত ফুটফুটি। চার ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম দেয়ার পর ফুটফুটি নানি রোগে আক্রান্ত হন।
মায়ের বিয়ে হয় কম বয়সে। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা নানার ছিল না কিন্তু সৎ মায়ের অত্যাচার হতে কন্যাকে রেহাই দেয়ার জন্য বিয়ে ছাড়া অন্য বিকল্পও ছিল না।
ফুটফুটি নানির রোগ দিন দিন বেড়ে চলে।
কয়েক মাসের মধ্যে তিনি চলৎ শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
মূল বাড়ি হতে বিচ্ছিন্ন একটি বেড়ার ঘরে মাটির মেঝে ফুটফুটি নানী গু-মুতের উপর শুয়ে থাকতেন। মাথার সামনে একটা ভাঙ্গা থালা। ওটাতে ভাত-তরকারি, পানি খেতে দেয়া হতো। গন্ধে খালা-মামারা ওই বাড়ির কাছে ঘেষতেন না। মামাদের দেখলে কাছে ডাকতেন। কেউ যেতো না। আট হাত লম্বা বাঁশের মাথায় থালা বেঁধে কাজের বুয়া জরিনা আচল দিয়ে নাকমুখ ঢেকে ফুটফুটি নানির ঘরের থালায় ভাত ঢেলে দিত। জরিনার হাতে বাঁশ দেখলে ফুটফুটি নানির চোখেমুখে একটা হাসি খেলে যেতো। এত কষ্টময় জীবন, তবু বেঁচে থাকার কী আনন্দ!
ফুটফুটী নানির অসুখের অজুহতে নানা মামাদের কাছ থেকে আবার বিয়ের সম্মতি আদায় করে নেয়।
আমি নানার প্রথম নাতি। বড় মেয়ের ছেলে হিসেবে আমার প্রতি ছিলেন অসম্ভব দুর্বল। আমি ছিলাম নানার প্রথম ভালবাসা, দ্বিতীয় হুকো। সারাদিন তিনি হুকো টানতেন। বাজারে যাবার সময়ও হুকো থাকতো হাতে।
একদিন নানা আদুরে গলায় বললেন: চৌদোলায় চড়েছিস?
না।
বিমানে?
দাদুর সাথে করাচি। খুব মজা। নিচে তাকালে সব খেলনা মনে হয়।
চৌদোলায় চড়া বিমানের চেয়েও মজা।
সত্যি?
যারা হুকো টানে তারা মিথ্যা বলে না।
আমি চৌদোলায় চড়ার লোভে হুকোর মাথায় কল্কে পরিয়ে নানার কোলে বসে পড়ি। নানা আমাকে জড়িয়ে ধরে মুখে চুমো দেয়। মুখ তামাকের গন্ধে ভরা। খারাপ লাগে না। অমন চুমো প্রতিদিন খাই। অভ্যেস হয়ে গেছে।
নানার চুমো আমার সিগারেটের প্রথম কাহিনী।
সত্যি আমাকে চৌদোলায় চড়াবে?
চড়াব মানে? অবশ্যই চড়াবো।
কখন?
বিয়ে ছাড়া চৌদলায় চড়া যায় না। শরিয়তের নিষেধ আছে।
শরিয়ত কে?
শরিয়ত কোন মানুষ নয়। ইসলামের কথা। তোর দাদুর কাছে জিজ্ঞাসা করিস। কামেল মানুষ; তিনি ভালো জানেন।
ইসলাম কে?
আরে নানু, ইসলাম হচ্ছে ধর্ম।
নানা আমাকে শেরওয়ানি কিনে দিয়েছিল, শেরওয়ানির সাথে প্যান্ট। দুটোই ঢিলে হয়েছে। শেরওয়ানি কোন রকমে মানিয়ে গেলেও প্যান্ট কোমড়ের চেয়ে ঢের বড়। মা চেষ্টা করছিল বেল্ট দিয়ে বেঁধে দিতে। আমরা তখন বেল্ট ছাড়া হাফ ফ্যান্ট পড়তাম, দরজি কোমড় ঠিক করে বানিয়ে দিত।
নানা বলল: প্যন্ট টাইট করা লাগবে না। সে তো আর হাটছে না। আমার কোলের উপর বসে থাকবে।
মা বলল: যদি বিয়ে বাড়ি দেখতে চায়?
বশর মামা বলল: আমি কোলে করে নিয়ে যাব।
বিয়ের দিন নানাও শেরওয়ানি পড়েছিল। কেনা নয়, ভাড়া। বিয়ের সময় শেরওয়ানি ভাড়া করে আনা হত।
বিয়ের দিন সকাল হতে শেরওয়ানি গায়ে দিয়ে বরযাত্রার অপেক্ষা করছিলাম। নিজেকে দুলহান-দুলহান মনে হচ্ছিল। চৌদোলা সাজানো হয়ে গেছে। নানা সেরওয়ানি পরে প্রস্তুত। কলসি ভরা পানিতে আমের ডাল ঢুকিয়ে নানার ভাবিরা জল ছেটানোর অপেক্ষায়।
আমি সেরওয়ানির ভাঁজগুলো ঠিক আছে কিনা দেখে হাত দিয়ে প্যান্টটা চেপে ধরে ধীরপদে চৌদোলায় গিয়ে বসে পড়ি।
পাঁচ মিনিট পড়ে আসেন নানা।
আল্লাহু আকবর বলে বাহকরা চৌদোলা কাঁধে তুলে নেয়।
নানা উসখুস করছিল। শেরওয়ানি ও পাগড়ি উসখুসের কারণ। নানার নতুন শ্বশড় বাড়ি শোভনদণ্ডি। কম হলে চার কিলো। এতটুক পথ চৌদোলায় যেতে পারব। আমি তালি দিয়ে উঠি।
কয়েক শ গজ আসার পর নানা পাগড়ি খুলে আমার মাথায় পড়িয়ে দেয়।
পাগড়ি আমার গলা পর্যন্ত ঢেকে। কিছুক্ষণ পর আমারও চুলকাতে শুরু করে, মাথা নয় গলা। তবু নামাই না, পাগড়ি পড়ার শখ বহুদিনের, চুলকালেও বেশ লাগছে। আয়না থাকলে দেখে নিতাম।
মনে হচ্ছিল নানা নয়, আমিই বিয়ে করতে যাচ্ছি।
চৌদালায় দুলতে দুলতে কিছুক্ষণের মধ্যে স্বভাবকবি নানা আবিদুর রহমানের ঘুম এসে যায়।
হুকোর নলটা হাত থেকে পড়ে, আস্তে করে মুখে লাগাই। এ প্রথম মুখ দিয়ে ধোঁয়া ঢুকে শরীরে। মগজটা শির শির করে উঠে। কাশি আসার চেষ্টা করছিল। চেপে রাখি, নানার ঘুম ভেঙ্গে গেলে ভেঞ্চারটা মাটি হয়ে যাবে। তামাকের ধোঁয়া খারাপ লাগে না। শরীরটা কাঁপছে। কেউ টের পায়নি তো! নানার দিকে তাকাই।
নানা ঘুমিয়ে।
বুড়ো বরগণ শুধু ঘুমায়।
বিয়ের বাড়ির বাজনা শুনা যাচ্ছে।
চৌদোলা মাটিতে বসানোর সাথে সাথে আমি পাগড়িসহ নিচে নেমে আসি।
চারিদিকে লোক। আমি উদ্বেল।
চৌদোলা হতে একটা বালক নেমে আসতে দেখে চারিদিকে হাসির রোল। আমার কোনদিকে খেয়াল নেই।
হবু নানীর মহিলা বান্ধবীরা আমাকে ঘিরে ধরে:
বর এসেছে বর,
পালিয়ে যাবে ধর।
এক মহিলা আমাকে কোলে নিয়ে চুমোতে শুরু করে। মুখে দুর্গন্ধ। লাফ দিয়ে নেমে ভো দৌঁড়। কে একজন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে:
ছোট্ট বরের নরম তনু,
হাতিয়ে দেখি ঘুমিয়ে নুনু।
একটু ধরে লাগাও নাড়া
দেখবে কেমন হয় সে খাড়া।।
আমি ভয় পেয়ে যাই। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে।
কী হয়েছে?
অবাক হয়ে দেখি আমার ঘিয়ে রঙের প্যান্টটা এক মহিলার হাতে।
কী করি?
প্যান্ট আনতে দৌঁড় দেয়ার আগে নানা চৌদোলা হতে নেমে আমাকে টেনে নিয়ে আবার চৌদোলায় ঢুকে যায়।
নানা : তোর প্যান্ট কয়?
ভয়ে ভয়ে বাইরে তাকাই: ঐ যে।
ওখানে কীভাবে গেল?
জানি না।
আমার চোখে জল, মুখে লজ্জা, বুকে রাগ-
ছি!

হিন্দু-মুসলিম / ড. মোহাম্মদ আমীন

হিন্দু-মুসলিম
=====
 নিয়োগ পরীক্ষা শেষ। এবার উত্তরপত্র যাছাই।
একুশ জন বিসিএস অফিসার উত্তরপত্র নীরিক্ষায় আমন্ত্রিত।
সার্বিক দায়িত্বে জনাব আবু তাহের, কমিশনার। নিজেই প্রশ্ন-পত্র করেছেন।
উত্তরপত্র সামনে নিয়ে সবাই কমিশনার সাহেবের অপেক্ষায়।
মুখে এক সমুদ্র অহঙ্কার নিয়ে রুমে ঢুকেন তাহের সাহেব: অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রশ্ন-পত্রটা করেছি। দু রাত ঘুমোতে পারিনি। তোমরা হলে দু মাস ঘুমোতে পারতে না। আনসার স্ক্রিপ্ট করেছি। আনসার-স্ক্রিপ্ট ছাড়া তোমরা উত্তরপত্র যাছাই করতে পারবে না বলে এত কষ্ট করতে হয়েছে। আমি বিসিএস অফিসারদের দৌঁড় জানি, এক লাইনে চৌদ্দটি ভুল করো। সিএসপি পরীক্ষা দিলে বুঝতে কত রসে কত গুড়, কত চুল কাটে ক্ষুর।
সিএসপিদের এ একটা বড় দোষ। তারা ছাড়া বাকিরা গণ্ডমূর্খ।
আজাদের ভাষায় সিএসপি মিনস- কন্ট্রাকচুয়্যাল সার্ভিস বাই পাম্প। মুনীর চৌধুরীর ভাষায়: কাম সার্ভ এন্ড পাম্প। শামীমেরটা আরও যৌক্তিক: ক্রিমিনাল সাপ্লাইয়ার্স টু দ্যা পলিটিশিয়ানস্।
তাহের সাহেব নিজে হেটে হেটে সবার হাতে আনসার স্ক্রিপ্ট দিচ্ছেন।
জাকিরের ভাগে বাংলা সাহিত্য ও সাধারণ জ্ঞান।
আনসার স্ক্রিপ্টের একটি লাইনে এসে জাকিরের চোখ আটকে- “নীলদর্পণ নাটকের রচয়িতা মীর মোশাররফ হোসেন।”
হোয়াট? মনে মনে প্রশ্ন করে জিবে কামড় দেয় জাকির।
‘নীলদর্পণ’ নাটকের রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্র। লেখা হয়েছে মীর মোশাররফ হোসেন। বাংলা সাহিত্যে নীলদর্পণ পিরিয়ডে মীর মোশাররফ হোসেন বলে কোন সাহিত্যিক ছিল না। ‘জমিদার দর্পণ’ নামের একটি নাটক আছে। রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, মীর মোশাররফ হোসেন নয়।
সম্ভবত প্রিন্টিং মিস্টেক।
টু এরর ইজ হিউম্যান। ভুল শোধরে দেয়া কৃতিত্বের কাজ, কর্তব্যও বটে।
জাকির দাঁড়িয়ে দৃষ্টি টানেন তাহের সাহেবের: স্যার, সাত নম্বর প্রশ্নের উত্তরটা আনসার-স্ক্রিপ্টে ভুল লেখা হয়েছে। সম্ভবত কারণিক ভূল।
আঁতকে উঠেন আবু তাহের: কী বললে? তুমি কী আমাকে কেরানি মনে করো? জানো, আমি কেরানিদের সাথে কথাও বলি না! আমি নিজে আনসার স্ক্রিপ্ট করেছি, তুমি আমাকে কেরানি বানিয়ে ছাড়লে। আমার উত্তরে ভুল, অসম্ভব!
জ্বী স্যার, ভুল।
হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু সে?
আরেকটু উত্তপ্ত হন আবু তাহের।
জাকির: নীলদর্পণ নাটকের রচয়িতা মীর মোশাররফ হোসেন নয়, দীনবন্ধু মিত্র। মীর মোশাররফ বলে কোন লেখক তৎকালে ছিল না। থাকলেও তিনি নীলদর্পণ লিখেননি।
আবু তাহের: তুমি কোন্ ব্যাচের?
ভয় পেলেও সাহস হারাননি জাকির। যারা জানেন তারা সহজে সাহস হারান না। অজ্ঞতা ভীরুতার ফ্ল্যাটফরম,ঋদ্ধতা সাহসের আধার। জ্ঞান সাহসীদের কান্ডারি। জাকির ভুল ধরেছে, ভয়ের কিছু নেই। কারও বালখিল্য হুমকি জ্ঞানীদের এট বেস্ট হাসায়- ভোগায়; তার বেশি নয়।
তাহের সাহেব জাকিরের উত্তরের তোয়াক্কা না করে বলে যেতে থাকে: তোমার চেয়ে অনেক সিনিয়র, অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি দিয়ে আনসার-স্ক্রিপ্ট করা হয়েছে। আমি ভেবে পাচ্ছি না তুমি বিসিএস পাশ করলে কীভাবে? মীর মোশাররফ হোসেনকে চেন না! এমন একটি গর্দভ বিসিএস ক্যাডারের সদস্য, ভাবতেও আমার লজ্জা হচ্ছে। ‘বিষাদসিন্ধু’ কী তোমার বাপে লিখেছে? নাকি তাও জানো না?
জাকির: ‘বিষাদসিন্ধুর লেখক মীর মশাররফ হোসেন, মীর মোশাররফ হোসেন নয়। ‘মো’ আর ‘ম’ এক নয়; যেমন এক নয় গরু আর গুরু।
তাহের সাহেব লাফ দিয়ে উঠেন: এ ছেলে তো গন্ডমূর্খ। জাহাঙ্গীর নগর ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে এসো, মীর মোশাররফ হোসেন হল।
তাঁরা ভুল করেছেন।
আবু তাহের: না জেনে শাখামৃগের মত তর্ক করে সময় নষ্ট করো না। কাজ করো। তোমার শাস্তি পরে হবে। দেখি তোমার চাকুরি কোন শালা বাঁচায়।
জাকির : আমি স্যার জেনেই বলছি।
আবু তাহের: আমাকে শেখানোর চেষ্টা করো না, আমি যতটি বই পড়েছি তুমি ততটি বাক্যও পড়োনি?
অভিব্যক্তিতে সব অফিসার জাকিরের দিকে, কিন্তু কারও প্রতিবাদ নেই। প্রতিবাদ মানে প্রতিঘাত, চাকরের অত সাহস থাকে না। হোক ডিসি, এসপি, জজ-ব্যারিস্টার, সচিব, কমিশনার সবাই চাকর।
ডেপুটি কমিশনার পুলিন বিহারী দেব এতক্ষণ পর মুখ খুলেন: স্যার, জাকিরের কথাই ঠিক, দীনবন্ধু মিত্রই ‘নীলদর্পণ’ লিখেছেন।
আবু তাহের: তুমি হিন্দু মানুষ, তাই হিন্দুদের প্রতি টান।
পুলিন: না স্যার, আমি অসাম্প্রদায়িক মানুষ।
আবু তাহের: তোমরা এখানে কয়জন?
পুলিন বিহারী: একুশ ।
কয় জেলার দায়িত্বে?
এক জেলার।
আমি কয়জন?
একজন।
কয় জেলার দায়িত্বে?
সতের।
তোমরা একুশ জন আমি একজনের সমান। ‘নীলদর্পণ’ নাটকের রচয়িতা মীর মোশাররফ। কোন্ ইডিয়ট বলেছে দীনবন্ধু? আমার চেয়ে বেশি জানলে তোমরাও কমিশনার হতে। আন্ডারস্ট্যান্ড?
জ্বী, বলে কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ে পুলিন বাবু।
জাকির : স্যার, আমার কাছে বইটা আছে, নিয়ে আসি?
জাকিরের কথায় আবু তাহের আরও রেগে। এবার তেলে-বেগুনে তপ্ত কড়াই: আমি কমিশনার বলছি বিশ্বাস হয় না, আর কোন্ বইয়ে কী লেখা আছে, কোথাকার কোন নচ্ছার কী লিখেছে তা নিয়ে তুমি আমার সাথে তর্ক করে যাচ্ছো, বেয়াদব!
লক্ষণ ভালো নয়।
জাকিরকে থামাতে হবে। পুলিন বাবু মরিয়া। তিনি ধীরে ধীরে জাকিরের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
কানে মুখ নিয়ে বলেন: জাকির, তুই আমার বাপ, তোর পায়ে পড়ি যাদু, একটু থাম্। ‘নীলদর্পণ’ কেউ না, তুমিই লিখেছ, প্রয়োজনে আমি তোমার নামে অফিস আদেশ করে দেব, আমাকে রেহাই দাও। নিয়োগটা ভণ্ডুল করে দিও না।
সহকারী কমিশনার মোনায়েম রাগে এতক্ষণ হুলো বিড়ালের মত ফুসছিল। তবু ডিসি সাহেবের বিগলিত বিনয় তার সহানুভূতি টানে।
জাকিরকে লক্ষ্য করে বলল: স্যার,কমিশনার স্যার যা বলছেন তাই ঠিক। দুমাস আগে এ কক্ষেই এক সেক্রেটারি কালিদাসের বিখ্যাত উক্তি, “সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নেই”-চরণকে রবীন্দ্রনাথের বলে চালিয়ে দিয়েছিলেন। দুজন মন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। কেউ প্রতিবাদ করেননি। আপনি কেন অযথা বিপদে পড়তে যাবেন।
কী ব্যাপার, এত তর্ক কিসের? দরজার দিকে সবার চোখ যায়।
ধবধবে জামায় আবৃত একজন লম্বা লোক ধীর পায়ে রুমে ঢুকেন।
কাতেবুর। জয়েন্ট সেক্রেটারি।
তাকে দেখে আবু তাহের সাহেবের বগলে জোয়ার আসে। কাছে গিয়ে তাহের সাহেব অনেকটা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন: “নীলদর্পণ” নাকি মীর মোশাররফ হোসেনের লেখা নয়, দীনবন্ধু লিখেছে।
কাতেবুর : কে বলেছে? কোন বানচুত? দেখিয়ে দাও, দুটো লাথি মারি দুগালে।
আবু তাহের: গণ্ডমুর্খ জাকির।
লাথির ভাষা হারিয়ে ফেলেন কাতেব, তার চোখে আফশোসের কালো রাগ।
জাকিরকে তিনি চেনেন। আস্ত বেয়াদব।
পিয়ন কাতেবুরের দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দেয়। চেয়ারের বসতে বসতে কাতেবুর সাহেব বললেন: আমি বুঝি না, আজকালকার ছেলেগুলো সব ক্রেডিট কেন হিন্দুদের দিয়ে দিতে চায়।
আবু তাহের: এজন্যই তো আজ মুসলমানদের এ দুর্দশা।
কাতেবুর: আই এ্যাম সিউর, ‘নীলদর্পণ’ মীর মোশাররফ হোসেন লিখেছেন, দীনবন্ধু নয়। মোশাররফ সাহেব আমার পাশের বাড়ির লোক। তার সাথে আমার অনেক বার দেখা হয়েছে। ভদ্রলোক খুব জ্ঞানী। আমাকে খুব স্নেহ করেন। এ তো কিছুদিন আগেও টেলিফোনে আলাপ হয়েছে।
কাতেব সাহেবের কথায় আবু তাহের লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে জাকিরের উপর চোখ রাখেন।
কাতেবুরের সেদিকে খেয়াল নেই, তিনি বলেই যাচ্ছেন: নীলদর্পণ নিয়ে এত তর্ক করে লাভ কী ? বেলজিয়ামের দর্পণই সবচেয়ে ভাল। মোশাররফের দর্পণ কিংবা দীনবন্ধুর দর্পণ দিয়ে ঈদানীং চলে না, ব্যাকড্যাটেড, সহজে নষ্ট হয়ে যায়। জার্মানির দর্পণের উপর কোন দর্পণ নেই। আছে কি?

ভণ্ডামী / ড. মোহাম্মদ আমীন

ভণ্ডামি
অনেক কষ্টে রাজশাহী থেকে উঠে আসতে পেরেছি। তাও মন্ত্রীর তদ্বিরে। চট্টগ্রামে যাদের বাড়ি তাদের জন্য রাজশাহী অনেক দূর। চাকুরি জীবনের প্রথম পদায়ন কাছাকাছি হওয়া উচিত, তখন শেকড় মুলের কাছাকাছি থাকে।
চাকুরির বয়স বাড়ার সাথে সাথে পিছুটান কমে যেতে থাকে।
তখন দূরে পোস্টিং দিলেও সমস্যা হয় না।
কচুর লতির মত শেকড়গুলো ছড়িয়ে পড়ে।
সংস্থাপন সচিবকে বলেছিলাম: স্যার আমি চট্টগ্রাম বদলি চাই। বাবা নেই। মা অসুস্থ।
তোমার বাড়ি চট্টগ্রাম। নিজ জেলায় পোস্টিং দিলে প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা।
আমি সহকারী কমিশনার। আমাকে নিজ জেলায় পোস্টিং দিলে প্রভাবিত হব। তাহলে কমিশনার কীভাবে নিজ বিভাগে, প্রধান বিচারপতি, প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী কীভাবে নিজ দেশে দায়িত্ব পান?
মনের প্রশ্ন মনে রেখে দেই। সবসময় সত্য কথা বলা যায় না।
সংস্থাপন সচিব আমাকে বদলি করেননি।
তাই তদ্বির, তাই মন্ত্রী।
বাংলাদেশে তদ্বির ছাড়া প্রত্যাশিত কিছু পাওয়া দুষ্কর। ব্যতিক্রম আছে, Exception can not be Example.
কুমিল্লা যাবো। কুমিল্লা ভাল শহর। দুটি বিভাগীয় শহরের মাঝখানে। একদিকে ঢাকা, আরেকদিকে চাঁটগা।
ইচ্ছা হলে হবে না, মুরোদ চাই। কুমিল্লা বদলি হতেও তদ্বির লাগে।
আবার মন্ত্রী। একই গ্রামের লোক, তবে যোগাযোগ রাখতাম না। চাকরিতে মন্ত্রী প্রয়োজন, যোগত্যা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা - এমনটি বুঝার পর মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ শুরু করি।
সিনিয়রগণ এমন পরামর্শই দিয়েছেন।
এমন অভিজ্ঞতাই অর্জিত হচ্ছে প্রতিদিন।
মন্ত্রীর সামনে অনেক লোক।
আমাকে দেখে কাছে যাবার ইশার দিলেন।
এনি প্রবলেম?
আমি কুমিল্লা বদিল হব।
কুমিল্লা যাবে কেন? ঢাকায় থাকো।
কুমিল্লা বাড়ির কাছাকাছি। কমিশনারকে বলে দেন।
আগামীকাল কমিশনারের সাথে দেখা করো। বলে দেবো।
পরদিন কমিশনারের কাছে যাইনি। ক্ষমতাবান মন্ত্রীর তদ্বির, এক মাস পড়ে গেলেও হবে। তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই।
ঢাকায় কয়েকদিন ঘুরলাম, দেখলাম। এমন সুযোগ সবসময় পাওয়া যায় না।
পাঁচ দিন পর কমিশনার সাহেবের কাছে যাই।
খুব নাকি কড়া লোক, এমন সুনাম শুনা যায়। বদনামও কম নয়।
সুনাম এবং বদনাম মল আর শরীরের মত অবিচ্ছেদ্য। দুটো থাকা চাই।
মলটাকে কে কত যত্নে গোপন রাখতে পারে তার উপর সুনামের প্রকাশ, বিস্তৃতি আর সৌন্দর্য্য নির্ভর করে।
মন্ত্রীর ভরসা নিয়ে সরাসরি কমিশনার সাহেবের কক্ষে ঢুকে পড়ি।
তার সামনে তিন জন ভদ্র লোক।
সালামের শব্দে কমিশনার সাহেব চোখ তুলেন।
কে আপনি?
বিনীতভঙ্গীতে বললাম: সহকারী কমিশনার।
দুহাতে চেয়ারের হাতল ধরে লাফিয়ে উঠেন তিনি। হিংস্র বাঘ, চোখেমুখে ক্রোধ। আমি ভয় পেয়ে যাই।
চিৎকারে দিয়ে উঠেন কমিশনার: কী বললে?
সহকারী কমিশনার।
তোর কোন্ সহকারী কমিশনার হয়ে কমিশনারের রুমে ঢুকে পড়লি। শালা বানচোত, কুত্তার বাচ্চা কুত্তা। তোর এমন সাহস হলো কী করে? বল্ তোর আইডি নাম্বর কতো। বলদের বাচ্চা বলদ, কোন্ শালা তোকে চাকরি দিয়েছে!
অল্প বয়স, নতুন চাকরি, এক বছরও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ধ এখনও সারা শরীর ঘিরে।
কমিশনার সাহেবের অশালীন ব্যবহারে মেজাজ বিগড়ে।
মাথায় আগুন। শরীর কাঁপছে।
অপমানগুলো চড় হয়ে উঠতে চাইছে।
আমি আমাকে ভুলে যাই: আপনি এমন অশালীন আচরণ করছেন কেন?
এ বাঁন্দরের বাচ্চা বাঁন্দর, জানিস আমি কে?
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসে এমন আচরণ, লজ্জা করে না আপনার?
আমার কথা শেষ হবার আগে প্রচণ্ড জোরে চীৎকার দিয়ে উঠেন: তোর নাম কি? বল্। দেখি কেমন করে তোর চাকরি থাকে। তোকে আমি পুলিশে দেব, তোর চাকুরি খাবো। হারামজাদা, শুধু তোর না, তোর বাপ দাদার চাকরিসহ খাবো। শালা, সহকারী কমিশনারের বাচ্চা সহকারী কমিশনার। বেয়াদবের বাচ্চা বেয়াদব!!
রাগে গড়গড় করতে করতে লোক তিনজনের দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করেন: ফকিন্নির পোলারা চাকরিতে ঢুকে ক্যাডারের সর্বনাশ করে ছাড়ছে। খবর নিলে দেখবা শালার পুতের বাপ মেথর।
কী বললেন?
আমার চীৎকারে কিছুট ভড়কে যান কমিশনার: তোর নাম কী হারামজাদা?
শামীম।
নাম শুনে চমকে উঠেন কমিশনার: কী নাম বললে?
শামীম।
কমিশনার সাহেব চেয়ার ছেড়ে লাফ দেন। ভদ্র লাফ, আগের মত পাশবিক নয়।
ধীরপদে আমার মুখের সমানে এসে বুকের কাছাকাছি থামেন। তারপর,
তারপর আমার ডান হাতটা টেনে নিয়ে আদুরে গলায় বললেন: তোমার নাম শামীম!
জ্বী।
মন্ত্রী বাহাদুর পাঠিয়েছেন তো?
জ্বী।
হায়! হায়!! আগে বলবে না? আমি একদম বাজে হয়ে গেছি। বেয়াদব হয়ে গেছি। ইস্! নিজের বাপকে পর্যন্ত চিনতে পারছি না। নিজের গালে নিজেকে চড় দিতে ইচ্ছে করছে।
কমিশনার সাহেব দুহাত দিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
আহা! যেন কলিজার টুকরো।
কানে কানে বললেন: এতক্ষণ কলজেটা জ্বলছিল। তোমার সাথে বুক লাগাতে পেরে বড় শান্তি পেলাম।
কোলাকোলি শেষ করে সামনে বসা ভদ্রলোকদের লক্ষ্য করে বললেন: আমার বাবা এসেছে। বসতে দে তাকে।
স্বল্প সময়ে এত অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় তিনজনই বিমূঢ়।
তারা কমিশনার সাহেবের সাথে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল। এখনও দাঁড়িয়ে।
কমিশনারের বাপ এসেছেন, আর থাকা যাবে না।
মলিনভাবে তিনজনই আমার দিকে তাকিয়ে, কমিশনারের বাপ এত কম বয়সের হয় কীভাবে!
তিনজনই বেড়িয়ে যান।
তারপর আসল নাটক।
কমিশনার সাহেব আমার ডান হাত টেনে নিয়ে নতুন প্রেমিকের মতো আঙ্গুল টিপছেন।
বড় আরাম, বড় নরম, অতীতে আর পাইনি।
বাবা শামীম আমি কিন্তু আপন ভেবে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করেছি। তোমাকে পরীক্ষা করেছি। অফিসার হবার যোগ্যতা আছে কিনা। দেখলাম, তোমাতে আগুন আছে, জেদ আছে। তুমি অনেক বড় হবে। বুঝলে?
বুঝলাম।
মন্ত্রী মহোদয়কে এসব কিছু বলিও না।
একজন কমিশনারের এমন আচরণে আমার মন চাকরির প্রতি বিষিয়ে।
ছি! এমন লোকের অধিনে চাকরি করতে হবে!!
তাকে প্রথম দেখেছিলাম কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মাহফিলে সভাপতিত্ব করছিলেন। তখন তিনি জেলাপ্রশাসক, আমি ছাত্র।
তিনি সিএসপি,
তিনি ধার্মিক;
তিনি স্বনামধন্য।
তিনি সাঈদীর মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন।
অনেক সুনাম-
গভীরভাবে কমিশনার সাহেবকে লক্ষ্য করছি-
শ্যামলা, খাটো কিন্তু চ্যাপ্টা, মোটা পেট, ছোট ছোট দাড়ি বড় হবার অপেক্ষায়, রুক্ষ চেহারায় হিংস্রতার ঝড়;
চোখে অহঙ্কারের পুকুর, অন্তরে অতৃপ্তির সাগর।
সাধারণ্যে তিনি সৎ এবং ধার্মিক।
তবে ভুক্তভোগীদের কাছে জঘন্য।
তিনি শাক্ত,
স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতা-তোষণে দক্ষ।
অন্যান্য সিএসপিদের মতো তিনিও পাম্প দিলে বলের মত লাথি খাবার উপযুক্ততা অর্জনের জন্য ফুলে যান।
বাবা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো তো।
কীসের ক্ষমা! কমিশনারের প্রশ্নের পিঠে আমি প্রশ্ন ছড়িয়ে দেই। আর বিনয়ী থাকার প্রশ্নই আসে না।
মন্ত্রীকে কিন্তু কিছু বলবে না। বলবে না তো?
ন্যাকামি দেখে হাসি চেপে রাখা গেল না। হেসে দেই, হাসি নাকি রাগের মরণ।
বলবো না।
খুশী হলাম, বড় খুশি হলাম। কী খাবে?
কলিং বিলে টিপ দেন কমিশনার। পিয়ন দরজা খুলে।
আমার বাপের জন্য ফান্টা, কেক, পরোটা আর মাংস নিয়ে এসো।
আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
কুমিল্লা যাবে তো?
আমি কোথায় যাবো মন্ত্রী আপনাকে বলেননি?
বলেছেন, বলেছেন; কুমিল্লা। এক্ষুণি আদেশ করে দিচ্ছি। বাপ, রাগ করিস না। আমার ভয় হয়, হার্টের রোগি।
কুমিল্লা যাবার আগে কমিশনার সাহেবের সাথে দেখা করতে যাই। আমার ছেলে।
বাপ, কী খাবে?
কুমিল্লা কোথায় থাকবো?
জেলাপ্রশাসককে টেলিফোন করেন: আমার বাপ যাচ্ছে, খেয়াল রেখো। সে সার্কিট হাউজে থাকবে। ব্যাচেলর মানুষ।
কয়েক মাস পরের ঘটনা।
রাত অনুমান এগারটা, আমার রুমের দরজায় টক টক।
সার্কিট হাউজের পিয়ন।
কী ব্যাপার?
আগের কমিশনার স্যার এসেছেন।
কোথায়?
গেস্ট রুমে। আপনাকে সালাম দিয়েছেন।
পাঠক, পূর্ব বর্ণিত কমিশনার এখন প্রাক্তন। সপ্তাহ খানেক আগে বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। একটা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। কয়েক ঘণ্টা আগে বর্তমান কমিশনার শফিক সাহেব এসেছেন।
তিনি ভিআইপি এক নম্বর কক্ষে আছেন।
প্রাক্তন কমিশনার আমাকে দেখে বললেন: কেমন আছো বাপ?
ভালো।
এনডিসিকে রিং করেছি, সে আসছে। চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম, প্রচণ্ড যানজট। রাতটা এখানে থেকে যাবো।
কিছুক্ষণ পর এনডিসি আসেন, চোখে ঘুমের ধুম, পিট পিট করে তাকাচ্ছেন।
প্রাক্তন কমিশনার: ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে প্রচণ্ড যানজট, কোথায় নাকি গাড়ি উল্টে গেছে। ভিআইপি ওয়ান কক্ষটা দাও।
এনডিসি বিনীতভাবে বললেন: স্যার, নতুন কমিশনার ভি.আইপি ওয়ানে। ভিআইপি টু খালি আছে।
আমি ভিআইপি টুতে থাকব না। ভিআইপি ওয়ান দেবে।
স্যার, একটু অপেক্ষা করুন।
অপেক্ষা করতে পারব না। এক্ষুণি দাও। আমিই তোমাকে এখানে পদায়ন করেছি। নিমক হারামি করো না।
বিপদে পড়ে যান এনডিসি।
বিগলিত স্বরে বললেন: কমিশনার স্যার ঘুমিয়ে পড়েছেন। আপনি ভিআইপি টুতে রেস্ট নিন, ততক্ষণে স্যারকে ডেকে তুলছি।
আমি এক সেকেন্ডের জন্যও ভিআইপি টুতে উঠবো না। ভিআইপি ওয়ানে যে আছে সে আমার জুনিয়র।
ভিআইপি ওয়ানই দেবো স্যার। কমিশনার মহোদয়কে এত রাতে জাগানো কী ঠিক হবে? কাল সকালে - - -
তাকে তুমি বের করে দাও।
এটা কী স্যার উচিত হবে?
তুমি আমাকে ভিআইপি ওয়ান দিতে পারবে না। তোমার মুরোদ আমার জানা হয়ে গেছে। আমি এক নম্বর মানুষ, কোনো দিন দুই নম্বর কক্ষে থাকিনি। জুনিয়র হয়ে সে থাকবে ওয়ানে আর আমি টুতে, এমন হতে পারে না। এক জঙ্গলে দুই বাঘের বাস অসম্ভব। চললাম, পেশ্রাব করি তোর সার্কিট হাউজে।
আমি বললাম: সার্কিট হাউস ব্যবহার বিধি অনুযায়ী বর্তমান কমিশনার ভিআইপি ওয়ান পান। আপনি নন।
বাপ, ‍তুমি বলে বেঁচে গেলে। আমি বিধিপিধি বুঝি না। সোজা কথা আমি থাকবো না। রাস্তায় কিছু হলে দায়িত্ব এনডিসিকে নিতে হবে। তুমি সাক্ষি রইলে বাপ।
প্রাক্তন কমিশনারের গাড়ি বেরিয়ে যেতে এনডিসি হেসে উঠেন: পাগল, আস্ত পাগল।
মনে মনে বললাম: পেছনে পাগল সামনে বাপ, দুরে গেলে লাথি সামনে এলে লাফ।
মন্তব্য: বর্ণিত ঘটনাদ্বয়ের নায়ক সবসময় নিজেকে সৎ বলে প্রচার করতেন। তার দাবি তিনি নির্লোভ। শুধু নিজের অন্ধ অহমিকার বশে সম-সুযোগ সম্পন্ন কক্ষ থাকা সত্ত্বেও রাত এগারটায় যিনি অন্য একজন সহকর্মীকে কক্ষ হতে বিধি উপেক্ষা করে করে দেয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন তিনি কোন্ ধরনের সৎ আমি জানি না। অহংবোধে অন্ধ মানুষ কখনো সৎ হতে পারে না। অহংকার মানুষের সমস্ত মানবিক গুণাবলী ধ্বংস করে দেয়, ভণ্ড বানিয়ে ছাড়ে।
[পুনশ্চ: আমার একজন সিনিয়র ও শ্রদ্ধাষ্পদ সহকর্মীর পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কমিশনার সাহেবের নাম উহ্য রাখলাম। তবে তিনি কে তা চিনতে অনেকের কষ্ট হবে না। কারণ এমন ঘটনা কে করতে পারেন তা অনেকে জানেন।]

বগল তত্ত্ব/ ড. মোহাম্মদ আমীন

 বগল তত্ত্ব

New Lords, new laws
সাব-অর্ডিনেটরা উদ্বিগ্ন,
কেমন হবেন হুমায়ুন কবির,
নতুন বস।
যোগদানের দুদিনের মধে তিনি অফিসারদের বায়োডাটা কালেকশন করে নিয়েছেন।
মেধাবীরা খুশি।
বাংলাদেশে মেধার মূল্যায়ন হয় না,
এবার হবে। মেধা গুরুত্ব পাবে। দিন বদলাতে শুরু করেছে।
হুমায়ুন: নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য যোগ্য অফিসার রাখব। মেয়ে হলে ভাল হত, গাদ্দাফির মত।
জগদীশ, সেকেন্ড ইন কমান্ড বললেন হাসলেন: সেদিন বলেছিলেন মেয়ে বস ভাল না, বিদায় বেলা কোলাকোলি করা যায় না।
ন্ডমায়ুন: মেয়ে বস ভাল না হলেও সাবঅর্ডিনেট ভাল। বউয়ের চেয়ে শালীর রূপ, ইচ্ছে করে দিতে ডুব।
হোসেন, থার্ড ইন কমান্ড, আফসোসের গলায় বললেন: এ রকম যোগ্য অফিসার কি স্যার পাওয়া যাবে?
হমায়ুন: বের করে নেব। একজনই এনাফ, নতুবা খালি। গাভি একটা যদি তিনটার দুধ দেয় তো অযথা তিনটা পুষবো কেন?
পরীক্ষা শুরু করে দুদিন পর।
প্রথমে ঢুকেন কবির।
স্মার্ট অফিসার। যেমন কথা তেমন কাজ; বেশ চোস্ত।
হুমায়ুন: জামা খোল, বগল দেখাও
আদেশ শুনে কবিরের চোখ ছানাবড়া। তবু আদেশ পালন করে। চাকরের কাজ আদেশ পালন করা।
বগল দেখে হুমায়ুন কবির অবাক। চকচকে, কেশের চিহ্নমাত্র নেই।
হুমায়ুন নাক সিট্কে হুলো বিড়ালের আওয়াজ দেন: তুমি কাজ করো কখন? বগলে যদি এত সময় দাও!
কবির: কাজের সময় কাজ।
ন্ডমায়ন: বশি স্মাট ভাল না। যাও, জামালকে পাঠাও।
জামাল বসার আগে হোসেন আদেশ দেন: জামা খোল, স্যার বগল দেখবেন।
জামা খুলে জামাল।
ছিমছাম শরীর। পাকা আপেলের মত চকচকে মুখে নিঁখুত রেখা। হুমায়ুন সাহেব জামালের বগলে চোখ রাখেন-
কেশ আছে তবে চিমটা ছাড়া ধরা সম্ভব নয়। গতকাল নয় তো পরশু পরিস্কার করেছে।
হুমায়ুন সাহেব চশমা মুছে চোখে আবার চোখে লাগান: সপ্তাহে কয়বার বগল কাটো?
কাটি না স্যার।
কী করো?
কাটাই।
কারে দিয়ে কাটাও।
নাপিত।
সপ্তাহে কয়দিন?
একবার।
কোনদিন?
শুক্রবার।
ঠিক আছে, যাও।
জামালের পর মোজাম্মেল।
কালো চোখ, সুঠাম গঠন, শক্তির আভাস। বসার আগে বলে উঠেন হুমায়ুন: বসতে হবে না, বগলটা দেখাও। উর্বরতা দেখি।
বোতাম খুলতে শুরু করে মোজাম্মেল।
থেতে উঠে হুমায়ুন: তাড়াতাড়ি কর। সময় কম। তোমাদের মত খচ্চরদের জন্য এক সেকে- সময় নষ্ট করতেও কষ্ট হয়।
ফটাফট জামা খুলে হাত দুটো উপরে তুলে মোজাম্মেল।
বগলের কেশ মোটামোটি লম্বা, তবে সবগুলো সমান নয়।
কী ব্যাপার? বগল-কেশের সাইজে এত হেরফের কেন? সবগুলো কি এক দিনে কাটো না?
মোজাম্মেল: দু-এক টানের বেশি দেই না। সময় কই স্যার!
কিন্তু কাটো তো এক সাথে, তো বড় ছোট কেন?
একই দিন জন্ম নিলেও সবার সাইজ সমান হয় না, স্যার।
যাও।
মোজাম্মেলের পর কাশেম, তারপর আরও কয়েক জন।
হুমায়ুন সাহেবের চেহারা মলিন হতে মলিনতর।
তিনি কি যেন খুজছিলেন। না পেয়ে ক্রমশ হতাশ, ক্ষুব্ধ।
সবার শেষে সারওয়ার।
ছয় ফুট।
দেখলে মনে হয় বলদ, কাজেও অমন;
শুধু গলদ।
বগল দেখাও, বিরক্তি নিয়ে বলে উঠেন হুমায়ুন সাহেব।
পারলে লাথি মারেন। লাথি দেয়ার জন্য তার পা দুটো উসখুস করছে।
জামা খুলে সরোয়ার, ভটকা গন্ধে চারিদিক মুচড়ে।
নাকে হাত রাখেন হোসেন, রুমাল রাখেন জগদীশ। হিন্দুদের কাজই আলাদা।
গন্ধে হুমায়ুন সাহেব উদ্বেল।
চেয়ার হতে লাফ দিয়ে সোজা সারওয়ারের বগলে।
গাভীর পিছ কল্লায় যেন বৃষের বদন, লম্বা শ্বাস নিয়ে আকাশে উগড়ে দিচ্ছে তৃপ্তি।
আহ্ কী শান্তি, কী শান্তি!!
সাড়ে সাত ইঞ্চি কেশ, নিশার চেয়েও গভীর। মনে হয় গত তিন বছর নিংড়োয়নি।
হুমায়ুন : ইউ আর রাইট,পারফেক্ট, এক্সেক্ট, সিরিয়াস, ইংরেজি আর বাংলা সাহিত্যের সবগুলো বিশেষণ তোমাকে দিলাম।
একগাল হাসিতে বগলের গন্ধ ছড়িয়ে বেরিয়ে যায় সারওয়ার।
বগলের মাহাত্ম্য দেখে জগদীশ ছানাবড়া।
হোসেন আক্ষেপে মলিন।
ইস! তার যদি অমন বগল থাকত তো এক্ষুণি জামা খুলে দেখাত। যতদিন হুমায়ুন স্যার থাকবেন ততদিন আর কাটবে না।
হোসেন: আমার কাছেও সারওয়ার বেস্ট। তবে আপনি কেন সারওয়ারকে বেস্ট ওয়ান হিসেবে চিহ্নিত করলেন স্যার?
উপহাসের কণ্ঠে জগদীশ বললেন: গ্রেট ম্যান থিংক্স এলাইক।
হুমায়ুন: সারওয়ার কাজের জন্য বগল কাটার সময় পায়নি। সরকারি চাকুরেদের বগল কেশহীন থাকতে পারে না। যাদের বগল পরিস্কার তারা ফাঁকিবাজ, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। অনুর্বরতার লক্ষণও বটে।
হোসেন: ঠিক বলেছেন স্যার।
হুমায়ুন: গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো সারাওয়ার এবং মোজাম্মেলকে দেয়ার ব্যবস্থা কর।
বাকিরা?
দেখি, তাদের বগল কতদিন পরিষ্কার থাকে। এ ক্লিন স্টোন ডাজ নট গেদার এনি ময়েশ্চ।
জগদীশ বাবু এতক্ষণ হুমায়ুন সাহেবের কা- দেখছিলেন। এমন পাগলামো কখনও দেখেননি।
বললেন: সারওয়ার তো লেখা পড়ায় অক্কা। তাকে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া কী ঠিক হবে?
হুমায়ুন: আমার জ্ঞানের দরকার নেই, দরকার কাজের। সে নবীন। তোমার রবীন্দ্রন্থাই তো বলে গেছেন, “ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা, আধ-মড়াদের ঘা দিয়ে তুই বাঁচা।” তুমি হিন্দু হয়ে রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করছ? এমন রাজাকার হিন্দু তো দেখিনি!
মরিয়া হয়ে উঠেন জগদীশ: সরোয়ার যেমন বোকা তেমন অজ্ঞ।
হুমায়ুন: কেউ চায় না কাজের ছেলেটা চালাক হোক। হবে হাবাগোবা, যা বলব তা-ই করবে। সারওয়ার তেমন একজন, বগল দেখে বুঝেছি।
একটু থেমে কলিং বেলে চাপ দেন হুমায়ুন।
জগদীশ : সারওয়ার একটা ভাল ড্রাফটও করতে পারবে না, কাজ চলবে কীভাবে?
হুমায়ুন: যত সমস্যা সব ভাল ড্রাফটে। ভাল ড্রাফটে চিঠি লিখবে প্রেমিকাকে, বউ-বসকে নয়। বসকে লিখতে হয় কাজের ড্রাফটে। বসেরা চিঠি পড়ে না, কেরানিরা পড়ে। অফিসারদের কয়জনই বা ভাল ড্রাফট করতে পারে শুনি?
হোসেন: ঠিক বলেছেন স্যার।
হুমায়ুন: যে অফিসার চিঠি লেখায় দক্ষ তাদের দিয়ে লেখানো উচিত না। তুমি লিখলে ঠিক আছে, কিন্তু তোমার বস যদি না বুঝে! যে কেরানি ফাইল শুরু করে তিনি যদি না বুঝে!
হোসেন: আমার এক কলিগ ছুটির দরখাস্তে লিখেছিলেন “কেলিকুঞ্চিকাকে নিয়ে দ্বারিকালয়ে যাওয়ার নিমিত্ত ছুটির প্রার্থনা”। কেলিকুঞ্চিকা আর দ্বারিকালয় শব্দের অর্থ বুঝানোর জন্য তাকে সচিবালয় পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। আর কোন দিন এমন লিখলে বিভাগীয় মামলা শুরুর হুমকি দিয়েছিলেন সচিব স্যার।
জগদীশ: প্রচ- বৃষ্টিতে এলাকা পানির নিচে। ক্যাবিনেট বন্যার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। শাহাদাত লিখলেন, “প্রচ- বারিপাতে পথঘাট ডুবে গেছে।” স্যার বারিপাত কেটে লিখে দেন, ‘বাড়িপথ’। নাক সিটকে বলেছিলেন: বারিপাত বলে কোন শব্দ অভিধানে নেই, আছে বাড়িপথ। এমন ভুল আর কর না। প্রতিবাদ করেনি শাহাদাত; বলেছিলেন, “জ্বী স্যার।”
ন্ডমায়ুন: বুঝেও না বুঝার ভান করছ কেন?
জগদীশ: আপনাকে স্যার পাবলিক ফাংশানে বক্তব্য দিতে হবে, তখন কী করবেন?
হুমায়ুন: তখন ভাল ড্রাফটারদের একজনকে দিয়ে লিখিয়ে নেব। ঘি ভাল, কিন্তু সবসময় না। বুড়ো বয়সে তো একদম নিষিদ্ধ। পুরানো ক্যাডারগুলো এখন বুড়ো। ভাল ছেলেরা জয়েন করলে প্রতিদিন ঘি খাওয়ার মত অবস্থা হবে।
হোসেন: আমারও স্যার একই কথা।
হুমায়ুন: আজিরদ্দিন, নাম শুনেছো?
হোসেন: জ্বী স্যার।
হুমায়ুন: কোন স্মার্ট লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও কাঁপতেন। তিনিও কমিশনার হয়েছিলেন।
জগদীশ আর যুক্তি খুঁজে পান না।
হুমায়ুন: বিডিএস কী জানো?
জগদীশ: জানি না স্যার।
বগল দাবা সিস্টেম। বগলে ফাইল নিয়ে ছুটোছুটি।
হোসেন: বুঝেছি স্যার।
হুমায়ুন: কলা বুঝেছেন। বগলে কেশ না থাকলে ফাইলের ঘষায় ঘা হয়ে যেতে পারে। তাই লম্বা কেশ প্রয়োজন। সিংহের কেশর অফিসারের বগল কেশ।
জগদীশ: কিন্তু গন্ধ?
হুমায়ুন: জগদীশ, তোমার যোগ্যতা দেখে আমি হতাশ। শাসক অফিসারদের শুধু বাঘ হলে চলে না। এট দ্যা সেইম টাইম শিয়ালের মত ধুর্ত হতে হয়। কুকুর তাড়ালে শিয়াল দৌঁড় দেয়, ধরা পড়ার পূর্বমুহূর্তে গন্ধ ছেড়ে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য বগলে গন্ধ প্রয়োজন।
হুমায়ুন সাহেব বলে চলছেন: সরকারি চাকুরিতে অধিক মেধাবীরা অডম্যান। তারা কাকের দলে কোকিল।
জ্ঞানী হলে অসুবিধাটা কী? জানতে চান জগদীশ বাবু।
জ্ঞানীকে ট্যাকল করতে হলে অধিকতর জ্ঞানী হওয়া প্রয়োজন। তোমাকে ট্যাকল করতে হলে আমার তোমার চেয়ে অধিক মেধা প্রয়োজন, অতএব তুমি যাও। যে দেশে কাতেব-অজিরের মত লোক কমিশনার হন সে দেশের অফিসারদের বুঝতে তোমার বাকি থাকার কথা নয়।
জগদীশ চুপ
বগলতত্ত্ব অল্প সময়ে চারিদিকে ছড়িয়ে।
শুরু হয় বগল কেশ লম্বা করার প্রতিযোগিতা।
আগের বসকে খুশি করার জন্য যারা টুপি পড়তেন এখন তাদের মাথার টুপি উধাও।
টুপি ছেড়ে তারা বগল কেশের যত্নে নেমে পড়ে।

চেঙ্গিস খান ও বাংলা ব্যাকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন

চেঙ্গিস খান ও বাংলা ব্যাকরণ শহিদুল নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন, তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৩।
ছোট চাকুরি।
চাকুরি ছোট হলেও মনন ও চিন্তায় ঈশানচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়।
সাহিত্য মহলে বেশ পরিচিত মুখ।
পদবি কী বুঝানোর জন্য আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের উদারহণ টানা যায়।
পদে নয়, মস্তক ও প্রজ্ঞাতেও শহিদুল সাহিত্য বিশারদ। লিখেন ভালো,খুব ভালো।
ঈদানীং বড় চাকুরির চেয়ে ছোট চাকুরির মর্যাদা বেড়ে। বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারের অবস্থা রীতিমত তথৈবচ।
সবাই পদোন্নতি চায় এবং অনেকে পেয়ে যায়। পদোন্নতি পাওয়ার পরও থেকে যেতে হয় পূর্বের স্থানে। পদ হয় কিন্তু হাঁটার শক্তি থাকে না।
কী উদ্ভট!
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া মানে যদি পিএইচডি ডিগ্রির নিশ্চয়তা হয় তো প্রথম শ্রেণি আর ডক্টরেট ডিগ্রির পার্থক্য কী!
সহকারী সচিব হিসেবে চাকুরিতে যোগদান এখন সচিব হবার নিশ্চয়তা যেন।
সবাই বড় হয়ে গেলে প্রকৃতপক্ষে কেউ বড় থাকে না।
তার মানে কী?
সহকারী সচিব মানে উপ-সচিব, উপসচিব মানে যুগ্ম-সচিব এবং যুগ্মসচিব মানে অতিরিক্ত-সচিব - - -।
বলা হয়, সচিবালয়ে কেউ যদি চোখ বন্ধ করে একটা ঢিল ছুড়ে, সেটি কোন যুগ্ম-সচিব বা অতিরিক্ত-সচিবের মাথায় গিয়ে পড়বে।
মন্ত্রণালয়ে একজন যুগ্ম-সচিবের অধিনে একজন উপ-সচিব, একজন সিনিয়র সহকারী সচিব ও তার অধিনে একজন প্রাশাসনিক কর্মকর্তা।
তা হলে কে বড়?
হিসাবটা গোলেমেলে, তবে কঠিন নয়।
শহিদুলের কথায় চলে আসি।
শহিদুলের অসাধারণ প্রতিভা।
ছন্দে সত্যেন্দ্রনাথ, বর্ণনায় মোহিতলাল।
ছোট ছোট বাক্যে সাবলীল ছন্দ, দ্যোতনায় অনুপ্রাস বিবর্ধন; সত্যি অনবদ্য;
সত্যি মুগ্ধকর।
জনপ্রিয়তায় হয়ত হুমায়ুন আহমেদ নন, অবশ্য তিনি তার মতো অত সাধারণমানের লেখা লিখতেও পারবেন না। লজ্জায় কলম থেমে যাবে।
জনপ্রিয় হতে হলে নিম্নমানের লেখা লিখতে হয়, ছটিন্যাস।
সস্তা জনপ্রিয়তায় তার প্রবল অনীহা, সস্তার তিন অবস্থা।
শহিদুলের লেখার মান যেমন গবেষণাধর্মী তেমনি আকর্ষণীয়। তাই বোদ্ধামহলে বেশ মর্যাদা তার।
নতুন বসের নাম মো: ছরোয়ার হোসেন।
পদবি ইউএনও। তবে ইউনাইটেড নেশনস্ অর্গানাইজেশন নয়, আবার উপজেলা নাথিং অফিসারও নয়।
নাদুস-নুদুস চেহারা ছরোয়ারের। নন্দলাল নন্দলাল বদন;
দেখতে হ্যান্ডসাম, কোর্ট-প্যান্ট পড়লে তো বলিহারি!
শহিদুল বসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,
হাতে স্বরচিত তিনটা বই।
শহিদুল : স্যার, আমার লেখা তিনটা বই। আপনার সমীপে উপহার।
বই দেখে আর শহিদুলের কথা শুনে ছরোয়ারের চাঁদবদন কুঁচকে, চোখে বিতৃষ্ণা।
ছরোয়ার : আমি কবি-সাহিত্যিকদের একদম পছন্দ করি না।
শহিদুলের মুখ বসের কথায় ফ্যাকাশে হয় যাবার কথা, হয়নি; বরং করুণায় সিক্ত হয়ে উঠে।
এ কেমন বর্বর যিনি বই পছন্দ করেন না!
চেঙ্গিস খান নয় তো!
ছারোয়ার এমএসসি, এমএ, এমকম, এমএসএস, এমবিএ এবং এমএড।
কবি সাহিত্যিকদের পছন্দ না করলে এতগুলো ডিগ্রি কীভাবে নিলেন?
মনে পড়ে ডিগ্রি-বাণিজ্যের কথা, শতশত প্রতিষ্ঠান টাকায় ডিগ্রি দেয়।
বলতে ইচ্ছে করছিল শহিদুলের। বলা যাবে না। তিনি বস; এসব বলতে নেই।
এবার কর্কশ গলায় কড়কড় করে উঠেন ছরোয়ার : কি বলছি বুঝছেন?
সিক্ততা থেকে রিক্ততায় ফিরে আসে শহিদুল : স্যার!
ছরোয়ার : আমার এখানে কোন সাহিত্যচর্চা চলবে না।
এবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শহিদুল। তবে মনে মনে : স্যার, তা আর বলতে হবে না। এখানে যোগদান করেই বুঝতে পেরেছি, আপনি এসব পছন্দ করেন না। মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপনের জন্য লেখা ছোট্ট একটা আমন্ত্রণপত্রে আটটি বানান ভুল। আপনার ডিগ্রি মানে তাপমাত্রা, জ্ঞানমাত্রা নয়।
মনের কথা মনে মিউট করে রাখেন শহিদুল। বসের সামনে মিউট থাকাই কিউট।
চাকর শব্দ হতে চাকুরি।
চাকুরি চলে গেলে খাবে কী? সাহিত্য-কর্মে তো পেট ভরে না! নইলে কখন এ চাকুরি ছেড়ে দিত!!
শহিদুল সাহেব! বসের কণ্ঠে সম্বিৎ ফিরে পান শহিদুল।
স্যার।
দেখুন, আমি আপনার বই রাখলাম বটে কিন্তু পড়ব না। বই পড়ার সময় আমার নেই। আমি শুধু কাজ পছন্দ করি।
শহিদুল মনে মনে হেসে উঠেন : যারা বই পড়েন না কিন্তু রাখেন তারা গর্দভ। তাদের বইগুলো গর্দভের পিটে বয়ে বেড়ান বোঝার মতো নিরন্তর কষ্ট। জনাব ছরোয়ার হয়ত গাধার মতো এ কাজটির কথাই বলেছেন। শহিদুল আবার মনে মনে আওড়ায়: গাধাও কাজ করে, বাবুই পাখিও। শ্রমিকও কাজ করে শিক্ষকও; সব কী অভিন্ন! তা হলে রিক্সাওয়ালা আর পাইলটের মর্যাদা সমান নয় কেন?
বইগুলো টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে আসেন শহিদুল।
মনটা খুব ফুরফুরে, কষ্টের মাঝেও আনন্দ।
তার চেয়েও অজ্ঞ লোক দেশে আছে।
ফাইল উল্টে শহিদুল বিমূঢ়।
চিঠির লাইনে লাইনে ভুল
অক্ষরে অক্ষরে কষ্ট
মাই গড!
এমন লোকের অধিনে কাজ করতে হবে তাকে।
শহিদুল এখন ছরোয়ারের চক্ষুশূল।
বসের অপছন্দের জিনিস বই তার পছন্দ, শত্রুর বন্ধু শত্রুই।
কাজ না থাকলে শহিদুল বই পড়েন, এটি তার আবাল্য অভ্যেস।
সেদিনও বই পড়ছিলেন। হঠাৎ কক্ষে ঢুকেন ছরোয়ার সাহেব।
কী পড়ছেন? বলেই অকস্মাৎ প্রবল জোরে হাত থেকে বইটা কেড়ে নেন জনাব ছরোয়ার।
শহিদুল : ব্যাকরণ পড়ছিলাম, বাংলা ব্যাকরণ স্যার।
নাম শুনে ঘৃণাভরে বইটা প্রচণ্ড জোরে মেঝে ছুড়ে দেন।
শহিদুল : স্যার, বাংলা ব্যাকরণ, আমার মাতৃভাষার নিয়মনীতি।
ছরোয়ার : গুষ্ঠি মারেন ওসব ফালতু ব্যাকরণ-ট্যাকরণ।
শহিদুল দৌঁড়ে গিয়ে বইটা তুলে নেন।
ছরোয়ার : আবারও সতর্ক করছি, আমার অফিসে এসব বই-টই পড়া চলবে না।
মনে মনে আঁতকে উঠেন শহিদুল, এ তো অফিসার নয়, রীতিমত অবিচার।
শহিদুল : অবসর সময়ে কী করবো স্যার
ছরোয়ার : ঘুমোবেন, ঘুম শক্তির উৎস।
বাহ্ কী আনন্দ, এখন শুধু ঘুম। শহিদুল আনন্দে একটা ছড়া কেটে ফেলেন।
কুম্ভকর্ণ শহিদুল,
বইপড়া বড় ভুল।
ছরোয়ারের আহবান
বই ছুড়ে চেঙ্গিস খান।
ইস্, ছরোয়ার সাহেব যদি জানতেন সাহিত্য বিশারদ, ঈশানচন্দ্র কিংবা শহিদুলের মতো
একজন সাহিত্যিক কারণিকের কাছে তার মতো সহস্র অফিসার পিঁপড়ে;
আজ মরলে কাল ফিনিশ।
[শুবাচ-সদস্য শাহিদুল হকের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনাবলম্বনে রচিত]

Friday 17 July 2015

ভূত, মরতে হবে লেখক / অনুসিন্থিয়া জাহান চৌধুরী

 ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি’ গ্রন্থের ভূমিকাটা পড়ুন। বইয়ের এমন ভূমিকা কী আর কখনও পড়েছেন? এমন ব্যতিক্রমী ভূমিকা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ভূমিকাটি তুলে দিলাম।

আমার এক স্যারকে ভূমিকা লেখার জন্য পা-ুলিপিটা পড়তে দিই। স্যার প্রথিতযশা শিক্ষক। নাম বলব? থাক, এমন খ্যাতিমান ব্যক্তির নাম সব ঘটনায় বলা ঠিক না। স্যার ভালো লেখক, ভালো গাল্পিক। ভূতের বইও লিখেছেন ডজন কয়েক। কথা ছিল তিন দিন পর ভূমিকা লিখে ফেরত দেবেন। হাতে একটা সাদা খামে যৎসামান্য সম্মানি দিয়ে চলে আসি। অবসরকালে সামান্য সম্মানিই অনেক।

দুদিন পর ভোরে স্যার্গিন্নী, মানে সারের স্ত্রী ফোন করে বললেন: “পা-ুলিপি পড়ে আপনার স্যার আতঙ্কে বোবা। দুই দিন যাবত বিছানায় বিমূঢ় হয়ে পড়ে আছেন। নাওয়া-খাওয়া সব বন্ধ। ডাকতে গিয়ে দেখি পেটের উপর আপনার পা-ুলিপিটা নিয়ে আবোল-তাবোল বকে যাচ্ছেন। মুখের দুপাশে লালার ¯্রােত, চোখ দুটো কোটর হতে বের হয়ে আসার জন্য ছটফট করছে। তেল ঢাললাম, পানি ঢাললাম। কিছুতেই হুশ
ফেরে না। আমার বড় ছেলে বড় ডাক্তার। সে আপনার পা-ুলিপিটা পড়ার জন্য তার কক্ষে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত। ছেলে আমার ঘরের দরজা খোলে না। রাতে খাওয়ার জন্য ডাকতে গিয়ে হতবাক। আমার বিলেত-ফেরত-ডাক্তার-ছেলে পাগলের মতো প্রলাপ বকছে। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করলাম। মুখে কোনো কথা নেই। অনামিকার ইশারায় পা-ুলিপিটা দেখিয়ে দিয়ে পাগলের মতো বিড়বিড় করে বলল: ভূতভূত অদ্ভুদ, ঘরভূত বাহিরভূত, আমিভূত তুমিভূত, বাবাভূত মাভূত, সবভূত সবভূত। কিছুক্ষণ পর পর হাসছে আর ভূত ভূত করে ভয়ে আতঁকে উঠে নাচছে। বাপ-পুত দুজনেই এখন ভূত।”
ঘণ্টাখানেক পর স্যারের স্ত্রী নিজেই আমার বাসায় এসে পা-ুলিপিটা ফেরত দিতে দিতে বললেন: এমন বই আর দেবেন না। সম্মানিটাও রেখে গেলাম।
আমি বললাম: স্যার তো এর চেয়েও ভয়ঙ্কর বই লিখেছেন।
কিন্তু আপনার ভূত আমার ঘরের সব জিনিস ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ছেলের স্টেথস্কোপ জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে দিয়েছে। আমার প্রিয় শাড়িগুলো কেটে গোল গোল ফুল বানিয়ে সারা মেঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ সব দেখে  আমার নাতির পুতুলটা পর্যন্ত ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিল।
এখন উপায়?
আমার একছাত্র ভালো লেখক। সে-ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাকে ফোন করে ডেকে এনে বললাম: পা-ুলিপিটা পড়ে একটা ভূমিকা লিখে দিও। খুশি মনে সে পা-ুলিপিটা বাসায় নিয়ে গেল। পরদিন উস্কুখুস্কো শরীর নিয়ে এসে আমার দু-হাত জড়িয়ে ধরে বলল: স্যার, আমাকে মাপ করে দেবেন।
কী হয়েছে?
ছাত্র বলল: পা-ুলিপি পড়ে ভয়ে আমার পোয়াতি বধূ মেঘের মতো চীৎকার দিয়ে উঠে। তার মাথার চুলসমগ্র স্ট্যাচু অব লিবার্টির মাথার কাঁটার মতো দাঁড়িয়ে। দৌড়ে আসে আমার মা। দেখেÑ পা-ুলিপি থেকে লাখলাখ ভূত, কোটিকোটি প্রেত, মিলিয়ন মিলিয়ন রাক্ষস, বিলিয়ন বিলিয়ন খোক্ষস, লাল-নীল পরি আর ঢলঢলে জিন মশালনৃত্য করছে। ভয়ে আমার মা পা-ুলিপিটা বালতির পানিতে ডুবিয়ে ছিড়ে টুকরো-টুকরো করে ফেলে।
এত কষ্টের পা-ুলিপির এমন করুণ পরিণতির কথা শুনে আমিও ভয়ে কাঁপতে শুরু করি। ভূত-প্রেতদের পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়েছে। এটি তারা সহ্য করবে না। দেখি তাদের উদ্ধার করা যায় কি না।
বললাম: তুমি বালতিটা এক্ষুণি নিয়ে আস।
ছাত্র বলল: আমি গিয়ে দেখি, বালতির পানিতে লাখ লাখ ভূতের কোটি কোটি বাচ্চা সাঁতার কাটছে। ভয়ে বালতির পানি, ছেড়া-পা-ুলিপিসহ সিটি কর্পোরেশনের নালায় ঢেলে দিয়েছি।
আমি বললাম: হায়! হায়! তুমি কী করলে? আমার বইয়ের ভূতেরা তো শহরের সব ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙে বের হয়ে আসবে। রাক্ষস-খোক্ষসরা রাস্তাঘাট উপড়ে ফেলবে, চাদাবাজি করবে, খুনা-খারাবি করবে। প্রেতাত্মারা নানারূপ ধারণ করে দুর্ঘটনা ঘটাবে। তারা শহরের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে চুরমার করে দেবে। যানজট আর জলজটে শহর বাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
ছাত্র বলল: অমন অকা- শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরো শহরের ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা, রাস্তা ভাঙা, যানজট আর জলজটে শহর থমকে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, শুরু হয়েছে ভীষণ চাদবাজি। এখন কী করব স্যার? পুলিশ জানতে পারলে তো আমাকে ছাড়বে না।
হতাশ হয়ে বললাম: আমি তো কোনো উপায় দেখছি না। আচ্ছা, তুমি যাও। দেখি কী করতে পারি।
আমার অপরূণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। কী আর করা, আবার লেখা শুরু করলাম। যতটুকু মনে আসছিল সবভূতকে আগের বইয়ের মতো এটাতেও ঢুকানোর চেষ্টা করি। যদি ক্ষতি কমান যায়। কিন্তু মানুষের স্মৃতি বড় দুর্বল, সব আনতে পেরেছি কিনা জানি না। লেখা শেষ করার পর ঘুমোতে গেলাম।
গভীর রাতে ঘুমোতে ঘুমোতে ভাবলাম, ছাত্রের মা আমার অনেক বড় উপকার করেছেন। সে যদি পা-ুলিপিটা নষ্ট না-করত, তো বইটা প্রকাশ হতো। তখন হাজার হাজার পাঠকের অবস্থা কী হতো? আমার স্যারের মতো হতো। ছাত্রের বউয়ের মতো হতো। পাঠক পাগল হয়ে যেত।  আমার একশ বছর জেল হতো। আসলে, ভূত যা করে ভালোর জন্যই করে। ভূতকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে ছাত্রকে ল্যান্ডফেনে রিং দিলাম: আবার নতুন একটা বই লিখেছি। তুমি একটা ভূমিকা লিখে দাও।
ছাত্র বলল: আপনার পায়ে পড়ি স্যার। আমি আর কোনো ভূমিকা লিখব না।  যদি প্রয়োজন হয় টাকা দিয়ে অন্য কারও ভূমিকা নিয়ে আসব। আপনি বরং ভূমিকার বদলে কী ঘটনা ঘটেছে তাই লিখে দিন। লিখে দিন, আপনার বইয়ের ভূতেরা কি কা- ঘটিয়েছে।
বললাম: আমি লিখলে কেউ তো বিশ্বাস করবে না। তুমিই না-হয় কী হয়েছে ঘটনাটা লিখে দাও।
লাইন কেটে যায়। আবার রিং করি, যায় না। আনরিচএবল। তাহলে এতক্ষণ কীভাবে গেল? এ তো আর মোবাইল নয় যে চার্জ চলে যাবে। স্যারের কথা মনে পড়ছে। আমার পা-ুলিপির জন্য স্যারের সংসারে এত বিপদ। দেখে আসা উচিত। সকাল সকাল স্যারের বাসায় যাই। স্যার দিব্যি চেয়ারে বসে লিখছেন। আমাকে দেখে খুশি হয়ে বললেন: তোমার ভূতের বইটার সে-রকম একটা ভূমিকা লিখে দিয়েছি। পছন্দ হয়েছে?
আমার মস্তকে যুদ্ধ খেলে গেল। যদি বলি পাইনি, তো কেমন দেখায়!
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললাম: ভাবী কোথায়?
স্যার বললেন: গত ছয়মাস হতে ছেলের সঙ্গে লন্ডনে।
আপনার ছেলে দেশে নেই!
তুমি জানো না? সে তো পাঁচ বছর যাবত লন্ডনে বসবাস করছে।
আমি পাগল হবার যোগাড়। স্যারের বাসা থেকে বের হয়ে ছাত্রকে রিং করলাম: তুমি একটু আমার বাসায় এস। কিছু জরুরি কথা আছে।
স্যার, আমি তো আপনার বাসায় গিয়েছিলাম।
কেন?
দাওয়াত দিতে। চৌদ্দ তারিখ আমার বিয়ে।
তুমি বিয়ে করোনি?
না স্যার।
তাহলে সেদিন যে আমাকে রিং করে বললে আমার পা-ুলিপি পড়ে তোমার পোয়াতি বউ পাগল হয় গেছে।
কোন পা-ুলিপি পড়ে স্যার?
ভূমিকা লিখতে যেটা দিয়েছিলাম।
আপনি তো স্যার আমাকে কোনো পা-ুলিপি দেননি।
কেন? পরশু আমি তোমাকে রিং করে আসতে বলেছিলাম। তুমি আমার বাসায় এসে নিয়ে গেলে। নিজের হাতে তোমাকে দিয়েছি।
আমি তো স্যার গত সপ্তাহে দেশেই ছিলাম না। আজ ভোরে এসেছি।
কিন্তু তুমি আমার পা-ুলিপি নিলে, তারপর তোমার বউ নাকি ছিড়ে ফেলেছে।  তোমার মা নালায় ফেলে দিয়েছে। এসে আমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলে!
ছাত্র বলল: কী আবোলতাবোল বকছেন স্যার।
আমি আমতা আমতা করে বললাম: কিন্তু গতরাতে তো তোমাকে ল্যান্ড ফোনে রিং করলাম। নতুন পা-ুলিপিটা নিয়ে যেতে। তুমি বললে আগের পা-ুলিপিটা  পড়ে যে বিপদ হয়েছে তা সামলাতে পারছি না, আবার নতুন- - -।
ছাত্র বলল: আসলে স্যার আপনি পাগলই হয়ে গেছেন। আমি তো আজ ভোরে দেশে ফিরলাম। তাছাড়া আমার বাসার ল্যান্ডফোন চার মাস যাবত ডেড। ভূতের বই লিখতে লিখতে আপনি নিজেই ভূত হয়ে গেছেন।
লজ্জায় মনটা ছোট হয়ে যায়। ছাত্রের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে কারই বা ভালো লাগে। বাসায় এসে স্যার্গিন্নীর দেওয়া খামটা খুললাম। কোনো টাকা নেই। একটা চিরকুট। ভৌতিক হাতে লেখা: এ বই প্রকাশ করলে মরতে হবে।
এতক্ষণ পর বুঝলাম, সব ইউরোভূতের কা-। আমি বইতে ইউরোভূতদের বন্দি করে ফেলেছি। এজন্য তারা চাইছে না বইটি প্রকাশ হোক। কিন্তু সম্মানির টাকাগুলো কোথায়?
স্যারকে রিং করে বললাম: স্যার, আমার খামটা পেয়েছেন?
ওটা তো হারিয়ে ফেলেছি। অনেক খুজেছি পাইনি। মনে হয় কোনো বইয়ের ভেতর ঢুকে আছে।
ভূত, চিরকুট দিয়েছে কিন্তু টাকাগুলো ঠিকই মেরে দিয়েছে। ভূতও টাকা চিনে।
পাঠক আমার কথা যদি বিশ্বাস না-হয় তো, ঢাকা শহরের দিকে তাকান।

Thursday 16 July 2015

ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি: কল্পকাহিনির নতুন ধারা / হায়াৎ মামুদ

ড. মোহাম্মদ আমীনের ভূত-অ্যাকশন ও সায়েন্স ফিকশন গ্রন্থ ‘ ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি’ গ্রন্থে হায়াৎ মামুদের মন্তব্য ও  আলোচনা।
কল্পকাহিনি কল্পনার মতো মধুর, স্বপ্নের মতো চমৎকার। তাই কল্পকাহিনি কম-বেশি সবাইকে আকর্ষণ করে। আমি নিজেও একসময় কল্পকাহিনির ভক্ত ছিলাম। দেশ-বিদেশের অনেক কল্পকাহিনি পড়েছি এবং অভিভূত হয়ে অনেক কাহিনি অনুবাদও করেছি। তবে কল্প-বৈচিত্র্যের বহুমুখী অনুধ্যানের কারণে ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘ভূত-অঙ্কের জিরো থিউরি’ বইটি কল্পকাহিনির ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা হিসাবে বিবেচিত হবে।

বইটিতে ভূতসমাজের ভৌতিক অদ্ভুত ও উদ্ভট কর্মপরিক্রমার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির প্রত্যাশিত অনেক বিষয়কে নিপুণ বিস্ময়ে তুলে ধরা হয়েছে। তাই এটি শুধু
ভৈৗতিক কাহিনি নয়, বরং ভৌতিকতার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য আবেশে জড়িয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিও বটে।  শধু ভূত নয়, ভূতের সঙ্গে আছে জিন-পরি, দৈত্য-দানব, রাক্ষস-খোক্ষস এবং যন্ত্র ও মানুষ। অধিকন্তু গ্রন্থটিতে দেশপ্রেম, শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবেশ-দূষণ, রাজনীতি, মানবীয় প্রেম, ব্রহ্মা--রহস্য, বৈশ্বিক-প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান, জীবনবোধ, কুসংস্কার, ধর্মীয়-গোঁড়ামি, আধুনিক সভ্যতার সুফল-কুফল, সময়, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, জড়বস্তুর সঙ্গে জীবের সম্পর্ক, পুনর্জন্ম, পার্থিব জগতের সঙ্গে অপার্থিব জগতের সেতবন্ধন প্রভৃতিসহ মানুষ ও বিশ্বব্রহ্মা-ের প্রাত্যহিক ক্রিয়াকলাপের বিবিধ বিষয় বাস্তবতার আলোকে কল্পনার নিশানে লোমহর্ষক বিবরণে তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিবেচনায় আমি মনে করি এটি কথাসাহিত্যে একটি নতুন সংযোজন।

গ্রন্থটির নায়ক ম্যানপি বাংলাদেশের এক তরুণ বিজ্ঞানী। সে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিভূ। ম্যানপি তার অপরিমেয় মেধাশক্তি ও বিচক্ষণতা দিয়ে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে একই সময়ে এনে তিন কালের মানুষের সমন্বয়ে জ্ঞানের মহাসমুদ্রকে জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তার আবিষ্কার মানুষকে দিয়েছে আলোর চেয়ে অধিক গতিসম্পন্ন যান। জন্মের পূর্বে ভূতের নিকট হতে এবং যারা জন্মগ্রহণ করেনি তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যজ্ঞানের তথ্য নিয়ে ম্যানপি বিশ্ববহ্মা-কে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ফলে ইউরোপ-আমেরিকাসহ সমগ্রবিশ্ব উন্নয়নশীল বিশ্বের আনুগত্য স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে।

বইটি পড়লে রোমাঞ্চ আর আকর্ষণ দুটোই একসঙ্গে পাঠকের মনকে  ঘিরে ধরবে। ‘ভূত-ভূমিকা, মরতে হবে’ শিরোনামে লেখকের উপক্রমণিকা পড়লেও শিউরে উঠতে হয়। এমন উপক্রমনিকা আমি আর কোনো বইতে দেখিনি।

বইটি অনবদ্য। আমার বিশ্বাস এটি কল্পকাহিনির ইতিহাসে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।

Saturday 27 June 2015

মমতা/ ড. মোহাম্মদ আমীন

মমতা

‘মমতা’ শব্দের অর্থ : মায়া, স্নেহ, দরদ, ভালবাসা, প্রেম, প্রীতি, সহানুভূতি প্রভৃতি। প্রকৃতপক্ষে মম শব্দ
হতে মমতা শব্দের উৎপত্তি। ‘মম’ শব্দের অর্থ আমার, নিজের। সাধুভাষায় যার অর্থ মদীয়। সে হিসাবে
মমতা শব্দের মূল অর্থ: ‘এটা আমার’। আমার ছাড়া আর কারও নয় বোঝাতে ‘মমতা’ শব্দটি
ব্যবহার করা হতো। শব্দটা সে অর্থে একটু স্বার্থপর শোনালেও আসলে এটাই ঠিক। যেটা
মমতার, আদরের, স্নেহের এবং ভালবাসার সেটি কেউ হাতছাড়া করতে
চায় না। নিজেই একান্তভাবে নিজের করে রাখতে চায়। কারও ভালবাসার পাত্র
বা পাত্রীকে অন্যে দখল করলে কেমন হয় তা রোমে হেলেন এবং ভারতে
সীতার অপহরণের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মানুষ
ভালবাসার প্রতি অন্ধ আবেগ ‘এটা আমার’ 
শুধু উচ্চারণে
সীমাবদ্ধ রাখেনি। তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঘটিয়েছে
লঙ্কাকাণ্ড। তাই সংস্কৃত ‘এটা আমার’
বাংলায় মমতা হয়ে ভালবাসা, স্নেহ ও
প্রেমপ্রীতিকে আরও অর্থবহ
করে দিয়েছে।
==============================================================
সূত্র: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলা বাজার, ঢাকা।

Friday 26 June 2015

ধান / ড. মোহাম্মদ আমীন

ধান

‘ধান’ এক প্রকার খাদ্যশস্য। বাংলাভাষী সবার কাছে এটি অতি পরিচিত ও প্রিয় একটি শস্য। পৃথিবীর সবদেশে সব মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘ধান’ নামক এ শস্যটি সৃষ্টির সূচনা হতে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে অবিচ্ছেদ অনুপমতায় জড়িয়ে। তবে ধান শব্দটি বাংলা নয়। সংস্কৃত ‘ধান্য’ শব্দ হতে বাংলা ‘ধান’ শব্দের উৎপত্তি। সংস্কৃতে ‘ধান্য’ শব্দের অর্থ যাহা পোষণ করে। সে অর্থে যে সকল শস্য দেহ পোষণ করে সেগুলো ধান্য। সংস্কৃত ‘ধান্য’ শব্দের এ অর্থ বিবেচনায় গম, যব, ভুট্টা প্রভৃতিও ধান্য। কিন্তু বাংলায় ‘ধান’ বলতে কেবল যার থেকে চাল বের করা হয় সেটাকে বোঝায়। সংস্কৃত ভাষায় ধান্যকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : শালি, ব্রীহি, শূক, শিম্বি ও ক্ষুদ্র। শালি হলো সে-ই শস্যদানা বাংলা ভাষায় যাকে ধান বলা হয়। এ শস্যদানা সতুষ অবস্থায় ধান, নিষ্তুষ করলে চাল এবং সিদ্ধ করলে ভাত হয়। ব্রীহিধান্য হলো : তিল; শূকধান্য হলো যব ও গম; শিম্বিধান্য হলো কলাই এবং ক্ষুদ্র ধান্য হল কাউন। সংস্কৃত ভাষায় ধান্য বলতে যা-ই বুঝান হোক না কেন, বাংলা ভাষায় ধান বলতে কেবল শালিধান্যকে বোঝায়। যার থেকে চাল বের করে সিদ্ধ করলে ভাত হয়। এটিই আমরা তরি-তরকারি দিয়ে মনের সুখে খাই।
====================
সূত্র :পৌরাণিক শব্দের বাংলা উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন

নাকানিচুবানি / ড. মোহাম্মদ আমীন

নাকানিচুবানি

অসহায়ভাবে অপমানিত হওয়া, লাঞ্ছিত হওয়া বা করা। নাকানি ও চুবানি শব্দ দুটোর
সংযোগে নাকানিচুবানি শব্দের উৎপত্তি। নাক পর্যন্ত যে পানি তার এককথায় প্রকাশ
হল নাকপানি। অন্যদিকে চুবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে পানিতে ডোবানো ও ভাসানো।
সুতরাং নাকানিচুবান শব্দের অর্থ হচ্ছে নাক পর্যন্ত পানিতে ডোবানো ও ভাসানো।
নাক পর্যন্ত কাউকে পানিতে ডুবালে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।
আবার ভাসালে সে নিঃশ্বাস নিতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার নাক পর্যন্ত
ডোবালে আবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এভাবে কাউকে
বারবার পানিতে নাক পর্যন্ত ডোবান ও ভাসান হলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত
কষ্টে তার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। এটি খুব কষ্টকর অবস্থা।
ব্যক্তি জীবনে মানুষ যখন কোনও কারণে এমন
কষ্টকর অবস্থায় পড়ে সেটি প্রকাশের
জন্য নাকানিচুবানি বাগভঙ্গি
ব্যবহার করা হয়।
====================
সূত্র :পৌরাণিক শব্দের বাংলা উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন

নাক উঁচু / ড. মোহাম্মদ আমীন

নাক উঁচু
====
নাক উঁচু কথাটির আভিধানিক অর্থ গর্বিত, আত্মাভিমানী, অসহ্য রকমের পছন্দপ্রবণ।
তবে এর ব্যাকরণগত অর্থ অন্যরকম। নাক ও উঁচু শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে নাক
উঁচু বাগধারটির সৃষ্টি। ঘটনাচক্রে নাকের একটি অনৈচ্ছিক আচরণ
থেকে কথাটির উৎপত্তি। কোনও কিছু দেখে অবজ্ঞায় নাক
সিঁটকালে নাকের ডগার দুপাশ সামান্য উঁচু হয়ে যায়।
নাকের এ বিকৃত উঁচু-ভাবটাই বাংলা বাগভঙ্গিতে
নাক উঁচু কথায়
স্থান করে
নিয়েছে।

 ------------------------------------------------------
সূত্র : পৌরাণিক উৎসে বাংলা শব্দ, ড. মোহাম্মদ আমীন

Wednesday 24 June 2015

ক্রিকেট-জরিপ (বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে ক্রিকেট জরিপ-২০১৫) / ড. মোহাম্মদ আমীন

এ মাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে ক্রিকেট জরিপ-২০১৫ ও তার বিশ্লেষণ। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজে ভারত ২-১ ম্যাচে হেরেছে। এ বিষয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে।  ১১৭ জন বাংলাদেশিকে  জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের কেউ মুসলিম নন, তবে একই ধর্মাবলম্বী। কৌশলে তাদের অভিমত জানার চেষ্টা করা হয়েছে, এটি যে জরিপ এমনটি তাদের কাউকে বুঝতে দেওয়া হয়নি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে ১০৩ জন ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। বাকিরা স্বল্পশিক্ষিত, তবে ধনী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেবল ৯ জন লোক ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় খুশি হয়েছেন। ১১ জন  কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। হেসে এড়িয়ে দিয়েয়েছেন। বাকি ৯৭ জনের প্রত্যাশা ছিল ভারতের জয়।

Saturday 20 June 2015

ফয়জুর রহমান আহমেদ : বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎসপুরুষ / ড. মোহাম্মদ আমীন

ফয়জুর রহমান আহমেদ : বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎসপুরুষ

পুলিশ অফিসার, কথাসাহিত্যিক ও বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎস-পুরুষ ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম আয়েশা আখতার খাতুন। ফয়জুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের পিতা। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ
পুলিশ বিভাগের অনেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তবে ফয়জুর রহমানের অবদান যেমন সুদূরপ্রসারী ছিল তেমনি পরবর্তীকালে তা অত্যন্ত কার্যকর প্রতীয়মান হয়েছেন। তিনি সাহিত্যকর্মে জড়িত থাকলেও তেমন বিস্তৃতি পরিসরে যাওয়ার আগে শহীদ হন। কিন্তু তিনি তাঁর সন্তানদের যেভাবে গড়ে তুলেছেন এবং সন্তানগণ যেভাবে গড়ে উঠেছেন তা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য সম্ভারে এনে দিয়েছে নতুন এক জনপ্রিয় ধারা।

পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে পাকিস্তানি হানাদারেরা পিরোজপুরের মহকুমা পুলিশের প্রধান ফয়জুর রহমান আহমেদকে হত্যা করে। হত্যার পর তার লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে দাফন করা হয়। অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুর মহকুমায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও তিনি প্রচুর সময় ব্যয় করতেন। মূলত তাঁকে হত্যা করার বিষয়ে হানাদার বাহিনীর এটি অন্যতম কারণ ছিল। হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয় হওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত দীর্ঘদিন ফয়জুর রহমানের কবর নিয়ে তেমন কেউ মাথা ঘামায়নি। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বহু বছর পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বাবার কবর দেখতে যান। এরপর তাঁর কবর ব্যাপকভাবে জনসমক্ষে আসে।

ফয়জুর রহমান আহমেদ
ফয়জুর রহমান আহদে ও তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ দুজনেই ছিলেন সাহিত্যিক। পারিবারিক পরিম-লে সাহিত্য-সংস্কৃতি-চর্চার অনুকূল আবহে তঁঅর সন্তানগণের  শৈশব জীবন অতিবাহিত হয়। ফয়জুর রহমানের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি সমকালীন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বগুড়ায় অবস্থানকালে ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর স্বদেশ ভাবনা ও আর্থসামাজিক বিষয়গুলো দার্শনিক নান্দনিকতায় তুলে ধরেছেন।

ফয়জুর রহমান আহমেদ নিজে সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি সন্তানদের সাহিত্যচর্চায় জন্য উৎসাহ দিতেন। তাঁর প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ, দি¦তীয় সন্তান মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কনিষ্ঠ সন্তান আহসান হাবীব খ্যাতিমান রম্যলেখক ও কার্টুন ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক। তাঁদের মা আয়েশা ফয়েজও লেখালেখি করতেন।  ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ‘জীবন  যে রকম’ নামে তাঁর একটি আত্মজীবনমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ফয়জুর রহমানের ঐকান্তিক পরিচর্যা ও আগ্রহ তিন ভাইকে লেখার জগতেই শুধু আনেননি, স্থায়ীই করে দিয়েছেন চিরকালের কোলে সাহিত্যের নির্মেঘ মহিমায়। পুলিশ অফিসার পিতার পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ না-থাকলে হয়তো বাংলা সাহিত্য এ তিনরত্নের বিরল সাহিত্যকর্ম হতে বঞ্চিত হতো- এমনটি বলা অযৌক্তিক হবে না। এ হিসাবে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে নবধারার প্রতিষ্ঠাতা তিন দিকপালের স্রষ্টা বলা যায়। ফয়জুর রহমান আহমেদের এ ভূমিকা ও অবদান বঙ্কিমচন্দ্র চেট্টোপাধ্যায়ের পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনীয়।
পিরোজপুর মহকুমায় চাকরিকালীন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে একজন লোক এসে এসডিপি ফয়জুর রহমান আহমেদকে স্থানীয় মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বলে।  তিনি সরল বিশ্বাসে মিলিটারি ক্যাম্পে যান। এরপর তাঁকে আর কেউ জীবিত দেখেননি। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। পিরোজপুরেই  শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদকে দাফন করা হয়। তাঁর সমাধি ফলকে লেখা আছে :
‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে’
ফয়জুর রহমান আহমেদ
(মহকুমা পুলিশ প্রধান)


Friday 19 June 2015

লেখক পরিচিতি : ড. মোহাম্মদ আমীন



লখেক পরচিতিি : ড. মোহাম্মদ আমীন
ড. মোহাম্মদ আমীনরে জন্ম ১৯৬৪ খ্রস্টিাব্দে চট্টগ্রাম জলোর চন্দনাইশ থানার চন্দনাইশ পৌরসভার অর্ন্তগত চন্দনাইশ গ্রাম।ে তাঁর পতিার নাম নুরুল ইসলাম, মায়রে নাম সকনিা বগেম। দক্ষণি গাছবাড়ীয়া প্রাথমকি বদ্যিালয়ে তার আনুষ্ঠানকি অধ্যয়নরে সূচনা। অতঃপর গাছবাড়ীয় নত্যিানন্দ গৌরচন্দ্র বহুমুখী উচ্চ বদ্যিালয় ও গাছবাড়ীয়া সরকারি কলজে হয়ে চট্টগ্রাম বশ্বিবদ্যিালয়। চট্টগ্রাম বশ্বিবদ্যিালয় হতে পরসিংখ্যান বভিাগে ব.িএসস(িঅর্নাস) ও মার্স্টাস ডগ্রিি র্অজন করনে। ১৯৯১ খ্রস্টিাব্দে বসিএিস(প্রশাসন) ক্যাডাররে সদস্য হসিবেে সহকারী কমশিনার ও ম্যাজস্ট্রিটে পদে সরকারি চাকুরতিে যোগদানরে মাধ্যমে র্কমজীবনরে সূচনা। চাকুরতিে প্রবশেরে পর এলএলবি ও এলএলএম ডগ্রিি র্অজন করনে। তনিি র্মাকনি যুক্তরাষ্ট্ররে অ্যাডওর্য়াড ইউনভর্িাসটিি থকে২ে০০৮ খ্রস্টিাব্দে পএিইচ.ডি ডগ্রিি র্অজন করনে। উপন্যাস, রম্যরচনা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গবষেণা, জীবনী, শশিুসাহত্যি, ইতহিাস প্রভৃতি তাঁর সাহত্যির্কমরে বচিরণ ক্ষত্রে। এ র্পযন্ত তাঁর লখো গ্রন্থরে সংখ্যা ৫৪। তন্মধ্যে নচিে কয়কেটরি নাম দওেয়া হলো:
১.    র্জজ ওয়াশংিটন হতে বারাক ওবামা;
২.    পৃথবিীর বভিন্নি দশেরে জাতরি পতিা;
৩.    ঠাকুরগাঁওয়রে মুক্তযিুদ্ধ ;
৪.    হাসতে হাসতে বাংলা শখো ;
৫.    বাংলা সাহত্যি ও ভাষা আন্দোলনরে সংক্ষপ্তি ইতহিাস ;
৬.    বাংলা বানান ও শব্দ চয়ন,
৭.    সহজ বাংলা উচ্চারণ;
৮.    বাংলা সাহত্যিরে অ আ ক খ;
৯.    রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনরে কথা;
১০.    আহমদ ছফার চোখে বাংলাদশেরে বুদ্ধজিীবী;
১১.    নন্দতি কান্না নন্দিতি হাসি ;
১২.    দুই রাজকুমারী ;
১৩.    রমণীয় পাঁচালী;
১৪.    খরগোশ ও কচ্ছপ;
১৫.    বদল বাড়রি ভূত;
১৬.    মানুষই সরো;
১৭.    আর্ন্তজাতকি দবিস ;
১৮.    অভয়নগররে ইতহিাস ;
১৯.    তলিোত্তমা হাতয়িা: ইতহিাস ও ঐতহ্যি;
২০.    চকরয়িার ইতহিাস;
২১.    ম্যাজস্ট্রিসেি ও আদশেনামা;
২২.    বন মামলা দায়রে ও পরচিালনার কৌশল;
২৩.    র্পাবত্য চট্টগ্রাম বষিয়ক আইন;
২৪.    জল দুনয়িার মানুষ;
২৫.    বাংলা বানান : ভুল কারণ ও প্রতকিার
২৬.    সময়রে পরশ পাথর;
২৭.     মোহনীয় নরক;
২৮.    জলো, উপজলো ও নদ-নদীর নামকরণরে ইতহিাস;
২৯.    বাংলা সাহত্যিে প্রশাসকদরে ভূমকিা;
৩০.    রঙ্গরসে বাংলা বানান
৩১.    বড়িম্বনা
৩২.    রঙ্গরসে বাংলা বানান
৩৩.    অফসি আদালতে বাংলা লখোর নয়িম
৩৪.    বড়িম্বনা
৩৫. বাংলা বানান কোথায় কী লখিবনে
৩৬. মানুষ ও বড়িাল
৩৭. বাংলা শব্দরে পৌরাণকি উৎস
৩৮. বাংলা সাহত্যিে পুলশিরে ‍ভূমকিা
৩৯. ভূতঅঙ্করে জরিো থয়িোরি
৪০. দাপ্তরকি প্রমতি বাংলা বান্না