Translate

Friday 24 April 2015

সর্বজনীন ও সার্বজনীন / ড. মোহাম্মদ আমীন

সর্বজনীনসার্বজনীনউভয় শব্দ শুদ্ধ কিন্তু অর্থ ভিন্ন তাই দুটো শব্দকে অভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা সমীচীন নয় অনেকেসর্বজনীনঅর্থেসার্বজনীনলিখে থাকেন শব্দ দুটোর আভিধানিক অর্থ না-জানার জন্য এমন ভুল হয়ে থাকে
সর্বজনীনশব্দের অর্থ, সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত, বারোয়ারি, সকলের জন্য মঙ্গলকর বা কল্যাণকর, সবার হিত বা কল্যাণ বা সকলের মঙ্গলের জন্য কৃত বা সকলের জন্য উদ্দিষ্ট। যেমন : ‘মানবাধিকার সর্বজনীন অধিকার হিসেব স্বীকৃত।
সার্বজনীনশব্দের অর্থসবার মধ্যে প্রবীণ, জ্যেষ্ঠ যেমন: ‘নেলসন মেন্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার সার্বজনীন নেতা।অবশ্য প্রবীণ অর্থে শ্রেষ্ঠ প্রকাশ করলে তখন অর্থ আরও সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু এমন করা সমীচীন নয়। কারণ আমাদের বিকল্প শব্দ রয়েছে 
সার্বজনীন দুর্গাপূজায় আপনাকে স্বাগত এর অর্থ সবার মধ্যে প্রবীন বা সবার মধ্যে জ্যেষ্ঠ দুর্গাপূজায় আপনাকে স্বাগত। কথাটির যৌক্তিকতা কতটুকু তা পরের বিষয়। তবে এখানেসার্বজনীনবলার চেয়ে সর্বজনীন বলাটা উত্তম - একথা স্বীকার করতে হয়। সুতরাংসবার হিতের জন্যঅর্থেসকলের মধ্যে প্রবীণ বা জ্যেষ্ঠবলা বিধেয় নয়। অনেকে মনে করেনসার্বজনীনশব্দটি ভুল কিন্তু এটি ভুল নয়। তবেসর্বজনীনঅর্থে সার্বজনীনশব্দের ব্যবহার করা ভুল

Friday 3 April 2015

নির্দেশ ও নির্দেশনা/ শাসন ও অনুশাসন , ড. মোহাম্মদ আমীন



নির্দেশ ও নির্দেশনা/ শাসন ও অনুশাসন

নির্দেশ আর নির্দেশনার মধ্যে অর্থগত কোনও পার্থক্য নেই তবে প্রায়োগিক পার্থক্য রয়েছে। নির্দেশ সাধারণ বিষয়ের উপর সাধারণত সামগ্রিকভাবে প্রদান করা হয় কিন্তু ‘নির্দেশনা’ নির্দেশের ক্ষুদ্রতম কিন্তু মার্জিত বা আপাত-অস্পষ্ট অংশ। নির্দেশের যে অংশ বা যে বিষয় পরিষ্কারভাবে বিধৃত হয় না কিংবা হলেও ব্যক্তিবিশেষের কাছে সংশয় সৃষ্টি করে সেটিই নির্দেশনা। নির্দেশনা শুধু নির্দেশের আংশিক বা ক্ষুদ্ররূপ নয়, নির্দেশের চেয়ে নির্দেশনা অনেক নরম, শোভনীয়, অমায়িক এবং প্রাঞ্জল কিন্তু বিশেষক্ষেত্রে প্রায়োগিক অস্পষ্টতার কারণে তা পুনরায় বিশ্লেষণের দাবি রাখে। নির্দেশে যেমন কঠোরতা থাকে নির্দেশনায় তেমন কঠোরতা থাকে না। তাই অনেকে মনে করেন, নির্দেশের যে অংশ মার্জিত শোভনীয় কিন্তু অস্পষ্টÑ  সেটিই নির্দেশনা। নির্দেশনা প্রদান করা যায় আবার চাওয়াও যায় কিন্তু নির্দেশণা চাওয়া যায় না, এটি সাধারণত উপর থেকে নেমে আসে। নির্দেশনা অপেক্ষাকৃত ছোট, মার্জিত, নরম, শোভনীয় এবং কঠোর নয়। তাই এর প্রবাহ উপর থেকে নিচে কিংবা নিচ থেকে উপরে দু-দিকে সাবলীল গতিতে বাহিত হতে পারে। বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ রয়েছে যা কেবল স্বরচিহ্ন পরিবর্তন করে দিয়ে বৃহৎ বা ক্ষুদ্র-জ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়। নিচের শব্দজোড়া সমূহের প্রথমবন্ধনিভুক্ত শব্দ সংশ্লিষ্ট বন্ধনির বাইরের শব্দের ক্ষুদ্রতর রূপ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। কলস(কলসি), কোঠা (কুঠি), ঘট(ঘটি), ছাঁকনা(ছাঁকনি), ডিঙ্গা(ডিঙ্গি), নোড়া(নুড়ি), পোঁটলা(পুটলি) ইত্যাদি। তেমনি আমাদের আলোচ্য  নির্দেশ(নির্দেশনা)
 
শাসন থেকে অনুশাসন ‘শাসন’ শব্দের পূর্বে ‘অনু’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘অনুশাসন’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। আভিধানিক বিবেচনায় অনুশাসনও একপ্রকার নির্দেশ, বিধি বা বিধান; কিন্তু প্রায়োগিক বিবেচনায় অনুশাসন, নির্দেশ, নির্দেশনা এবং বিধি-বিধানের কিছুটা তফাত আছে। যেমন : যিনি শাসন করেন  আদেশ যেমন কোনও ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর উপর জারি করা হয় শাসন কিন্তু ঠিক তেমনÑ এমনটি বলা যাবে না। শাসন সবার জন্য সাংবিধানিক আলেখ্যের অপরিহার্য ও প্রয়োজনীয় বিষয়, যা শাসকগোষ্ঠী প্রচলন করতে ইচ্ছুক। শাসক হিসাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ যখন শাসন নয় কিন্তু শাসনের অনুরূপ এমন সাধারণ কোনও নির্দেশনা কোনও গোষ্ঠী বা ব্যক্তিসমষ্টির উপর নির্দেশ-এর চেয়ে কম কঠোরতায় কিন্তু নির্দেশের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিধায় বিশেষ অবস্থার কারণে দ্রুত কার্যকর করার জন্য প্রদান করেন Ñ সেটিই হচ্ছে অনুশাসন।