Translate

Friday 10 October 2014

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ইহুদি / ড. মোহাম্মদ আমীন



বিশ্বে ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তন্মধ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন প্রকৃতপক্ষে ২জন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে মিশরের নাগিব মাহফুজ (Naguib Mahfouz), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে আলবার্ট ক্যামুস (Albert Camus) এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সাহিত্যিক ওরহান পামুক (Albert Camus) নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। আলবার্ট কামু মুসলিম বংশোদ্ভুত হলেও ইসলাম ধর্ম পালন করতেন না, বিশ্বাসও করতেন না। নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয়ও দিতেন না। এ হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মুসলমানের সংখ্যা মাত্র দুই জন।

সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে ইহুদির সংখ্যা মোট ইহুদির সংখ্যা ১,৩৭, ৪৬,২০০ জন। তন্মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ জন ইহুদি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১১১জন ব্যক্তি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। 

প্রথম : জার্মান গীতিকবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও ছোটগাল্পিক পাউল ইয়োহান লুডভিগ ফন হেইনজে (Paul Heyse) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ইহুদি। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। হেইনজে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ জার্মানির বার্লিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল তিনি মিউনিখে মারা যান।

দ্বিতীয় : বিশ শতকের প্রচণ্ড প্রভাবশালী ফ্রেন্স দার্শনিক হেনরি লুইস বেরগস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বিতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রিউ ল্যামারটিন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি তিনি প্যারিসে মারা যান।

তৃতীয় : ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সোভিয়েত ঔপন্যাসিক, বরিস পাস্তারনেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তৃতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের মস্কো নগরে এক ধনাঢ্য ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চতুর্থ ও পঞ্চম : জার্মান কবি ও নাট্যকার নেলি নেওনি স্যাকস  পোলিশ লেখক স্যামুয়েল ইয়োসেপ আগনন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী  চতুর্থ পঞ্চম  ইহুদি। তাঁরা উভয়ে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। নেলি নেওনি স্যাকস ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মারা যান। অন্যদিকে  স্যামুয়েল ইয়োসেফ আগনন ৮১ বছর বয়সে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

ষষ্ঠ : কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন-ইহুদি লেখক সাউল বোলো  সাহিত্যে নোবেলা পুরস্কার বিজয়ী ষষ্ঠ ইহুদি। তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সাউল বেলো ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন পূর্ব-কানাডার কুইবেক শহরের লাচিনে এক গোঁড়া ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল ৮৬ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসের ব্রুকলিনে  মারা যান।

সপ্তম : পোলিশ-মার্কিন সাহিত্যিক ও বিশ্বখ্যাত ছোটগাল্পিক আইজাক্‌ বসেভিস্ সিঙ্গার (Isaac Bashevis Singer) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সপ্তম ইহুদি। আইজাক ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত কংগ্রেসে পোলান্ডের ওয়ারশো শঞরের কাছে লিউনিকে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই তিনি মারা যান।

অষ্টম : ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বুলগেরিয়ান ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, স্মৃতিকার ও প্রাবন্ধিক  এলিয়াস কানেত্তি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী অষ্টম ইহুদি। তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই বুলগেরিয়ার নিম্ন ডানিয়ুব আপত্যাকার রিউজ শহরের রুসচুক নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অগাস্ট সুইজারল্যান্ডের জুরিখে মারা যান।

নবম: বিখ্যাত সাহিত্যিক জোসেফ ব্রডস্কি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নবম ইহুদি। তিনি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রুশ-মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক ব্রডস্কি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে রাশিয়ার লেলিনগ্রাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক  শহরে মারা যান।

দশম :  ইংরেজিভাষী নেদাইন গার্ডিমার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দশম ইহুদি। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে অবস্থিত স্প্রিং গুয়েটন এলাকার স্প্রিং নামক স্থানে এক অভিবাসী ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

একাদশ : ইমরে কাটেজ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয় একাদশ ইহুদি। হাঙ্গেরিয়ান নাগরিক ইমরে কাটেজ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বাদশ : ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অস্ট্রিয়ান নাগরিক এলফ্রিড জেলিনেক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বাদশ ইহুদি। তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের  ২০ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার স্ট্রাইরিয়া নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। 

ত্রয়োদশ : ইংলিশ নাট্যকার, স্ক্রিনরাইটার, অভিনেতা, থিয়েটার পরিচালক, রাজনীতিক কর্মী ও কবি হ্যারল্ড পিন্টার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ত্রয়োদশ ইহুদি। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর  পশ্চিম লন্ডনের ক্যাকনি নামক স্থানে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর তিনি লিভার ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্দশ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী চতুর্দশতম ইহুদি। প্যাত্রিক মোদিয়ানো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই প্যারিসের বুলন শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী পিতা আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন ইতালীয় ব্যবসায়ী এবং মা লুইজা কোলপেন ছিলেন বেলজিয়াম-অভিনেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মোদিয়ানো প্যারিসের লুসি অঁরি-৪ সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষক হিসাবে বিখ্যাত লেখক রেমো কুইনোর সঙ্গলাভের সুযোগ পান। কুইনোর উৎসাহ আর পরিচর্যা মোদিয়ানোর সাহিত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কুইনো নিজেই মোদিয়ানোকে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা গ্যালিমার সঙ্গে মোদিয়ানোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। মোদিয়ানো তরুণ বয়সে  প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মের আগের স্মৃতিও লেখার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে মোদিয়ানো বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, শুধু ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোমিনিক জাহফুসের সঙ্গে মোদিয়ানো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের দুই  মেয়ে যাথাক্রমে জিনা ও মারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে  মাত্র ২২ বছর বয়সে মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘লা প্লাস দো লেতোয়াল’ প্রকাশিত হয় । মোদিয়ানো মূলত ঔপন্যাসিক। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সমান দক্ষ। তাঁর উপন্যাসগুলো কমপক্ষে ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে রু দে বুতিক অবসকিউর (দ্য মিসিং পারসন), ভয়্যাজ দো নোস (হানিমুন), লা রন্দ দো নুই (নাইট রাউন্ডস), দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি (আউট অব দ্য ডার্ক), দোরা ব্রুদার (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ (রিং রোডস: অ্যা নোভেল)। লাকোম্ব লুসিয়াঁ নামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন মোদিয়ানো। তাঁর সাম্প্রতিক বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে।

সাহিত্যে নোবেল ২০১৪ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো / ড. মোহাম্মদ আমীন

সাহিত্যে নোবেল ২০১৪ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো

২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন প্যাত্রিক মোদিয়ানোর। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে খ্যাতিমান ছোটগল্পকার এলিস মুনরো সাহিত্যে নোবেল পান। প্রাঞ্জল গদ্যে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ফুটিয়ে তোলার অনবদ্য মুনশিয়ানার জন্য তাঁকে ‘কানাডার
চেকভ’ বলা হয়। সুইডিশ অ্যাকাডেমি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১১তম লেখক হিসাবে ৬৯ বছর  বয়স্ক মোদিয়ানোর নাম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একাদশ ফরাসি সাহিত্যিক। প্যাত্রিক মোদিয়ানো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই প্যারিসের বুলন শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী পিতা ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোমিনিক জাহফুসের সঙ্গে মোদিয়ানো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের দুই  মেয়ে

মোদিয়ানো মূলত ঔপন্যাসিক। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সমান দক্ষ। তাঁর উপন্যাসগুলো কমপক্ষে ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে রু দে বুতিক অবসকিউর (দ্য মিসিং পারসন), ভয়্যাজ দো নোস (হানিমুন), লা রন্দ দো নুই (নাইট রাউন্ডস), দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি (আউট অব দ্য ডার্ক), দোরা ব্রুদার (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ (রিং রোডস: অ্যা নোভেল)। লাকোম্ব লুসিয়াঁ নামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন মোদিয়ানো।   তাঁর সাম্প্রতিক বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে।

নোবেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ফ্রান্সে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মান দখলদারির সময় সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প নিজের বিভিন্ন লেখায় মোদিয়ানো নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘স্মৃতির শিল্প’ দিয়ে তিনি মানুষের ভাগ্যের সে সব দিক বর্ণনা করেছেন, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে মুঠোয় ধরা সবচেয়ে কঠিন। কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, জাপানের লেখক

মোদিয়ানো ফ্রান্সে সবচেয়ে সমাদৃত লেখকদের একজন। তিনি দেশটির শীর্ষ সাহিত্য পুরস্কার প্রি গঁকুর পেয়েছেন ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী তিন দশক ধরে বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে নিজের কৃতিত্বকে বিশ্বমহলে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। নিজেকে তিনি প্রকাশ করেন এভাবে - ‘আসলে, আমি কখনো অন্য কিছু করার কথা ভাবিনি। আমার কোনও ডিপ্লোমা ছিল না, অর্জনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যও ছিল না। তবে তরুণ লেখক হিসেবে শুরু করাটা ছিল আসলেই কঠিন। আমি নিজের প্রথম জীবনের বইগুলো পড়তে পছন্দই করি না। তার মানে এই নয় যে আমি সেগুলো অপছন্দ করি, তবে এ সব লেখায় আমি নিজেকে চিনতে পারি না -নিজেকে তরুণ অবস্থায় দেখতে একজন প্রবীণ অভিনেতার যেমন অনুভূতি হয়।’

মূলত তিনি ঔপন্যাসিক। তবে শুধু উপন্যাস নয়, শিশুসাহিত্য, এমনকি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও  তিনি লিখেছেন। তবে তার সবচেয়ে পরিচিত কাজ সম্ভবত ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘রুই দে বুটিক অবসকিউর’ (ইংরেজি অনুবাদম মিসিং পারসন), যে উপন্যাসের জন্য তিনি সম্মানজনক ‘প্রি গুনকুয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। এ উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে এমন এক গোয়েন্দাকে ঘিরে, যিনি ঘটনাচক্রে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন এবং জীবনের শেষ ‘কেইস’ হিসাবে নিজের পরিচয় উদ্ঘাটনের তদন্তে নেমেছেন। এই অন্বেষণে ইতিহাসের পাতায় তিনি অনুসরণ করে চলেছেন নিজেরই ফেলে আসা পদচিহ্ন। সুইডিশ
অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলান্দ বলেন, “আকারে ছোট, ১৩০ থেকে ১৫০ পৃষ্ঠার এক একটি বই। অধিকাংশ কাহিনীতেই ফিরে ফিরে এসেছে স্মৃতি, স্মৃতিলোপ, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট আর নিজের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা।”মোদিয়ানোর বহু উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে তার শৈশবের প্যারিসে। তারই জীবনের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে গল্পের পরিণতির দিকে এগিয়েছে এক একটি চরিত্র। কখনও কখনও তিনি উপন্যাসের মাল-মসলা সংগ্রহ করেছেন মানুষের সাক্ষাৎকার থেকে, পত্রিকার নিবন্ধ থেকে, কখনও বা নিজের ডায়েরিতে লেখা নোট থেকে, বছরের পর বছর ধরে যা তিনি লিখে চলেছেন। কখনও আবার মোদিয়ানোর একটি উপন্যাসের গল্প থেকেই জন্ম নিয়েছে আরেকটি উপন্যাস, এক কাহিনীর চরিত্র অন্য  কোনও উপন্যাসে হাজির হয়েছে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে। 

স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলান্দ বলেন, অনবদ্য শৈল্পিক স্মৃতিগ্রন্থনার জন্য প্যাত্রিক মোদিয়ানোকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি মানব-ভাগ্যের দুর্বোধ্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, উন্মোচন করেছেন আগ্রাসনের বিশ্বে জীবনের বর্ণীল স্বরূপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দখলদার নাৎসি বাহিনীর অধীনে ফ্রান্সের মানুষের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা এবং নিজ শৈশবের বিভিন্ন দুঃসহ স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে সব ইতিহাস আর আপন অনুভূতির মিশেলে তিনি তরুণ বয়স থেকে একের পর এক সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য উপন্যাস। ফরাসিভাষী প্যাত্রিক মোদিয়ানোর ‘স্মৃতির শিল্প’ এ বছর সুইডেনের নোবেল কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি অর্জন করেছে বিরল মর্যাদায়। যা তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে মোদিয়ানোর হাতে পুরস্কার বাবদ তুলে দেয়া হবে ৮০ লাখ ক্রোনার। আমরা তাঁর স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

হারুকি মুরাকামি, বেলারুশের সাংবাদিক-লেখক সোয়েলনা এলেক্সিয়েভিচ এবং সিরিয়ার কবি আদোনিসকে পেছনে ফেলে প্যাত্রিক মোদিয়ানো ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জন্য নির্ধারিত সাহিত্য-নোবেল অর্জন করেন। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব পিটার ইংলান্ড বলেন, মোদিয়ানোর অনেক বই যেন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে, একটি অপরটির প্রতিধ্বনি করে। এ সব বইয়ে রয়েছে স্মৃতি, পরিচয় ও অনুসন্ধান। তাঁর লেখা ছোট ছোট বইয়ে নানা বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঘুরেফিরে এসেছে একই আখ্যানবস্তু: স্মৃতির কথা, ক্ষয়ক্ষতির কথা, পরিচয়ের কথা, অনুসন্ধানের কথা। তাঁকে এই সময়ের বিখ্যাত ফরাসি লেখক বলা যেতে পারে।

যাথাক্রমে জিনা ও মারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে  মাত্র ২২ বছর বয়সে মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘লা প্লাস দো লেতোয়াল’ প্রকাশিত হয় । ফ্রান্সের পাঠকদের কাছে প্যাত্রিক মোদিয়ানো একটি পরিচিত নাম। তার বেশ কয়েকটি বই ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তবু অন্য ভাষার পাঠকবৃন্দ তার লেখার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন।
আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন ইতালীয় ব্যবসায়ী এবং মা লুইজা কোলপেন ছিলেন বেলজিয়াম-অভিনেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মোদিয়ানো প্যারিসের লুসি অঁরি-৪ সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষক হিসাবে বিখ্যাত লেখক রেমো কুইনোর সঙ্গলাভের সুযোগ পান। কুইনোর উৎসাহ আর পরিচর্যা মোদিয়ানোর সাহিত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কুইনো নিজেই মোদিয়ানোকে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা গ্যালিমার সঙ্গে মোদিয়ানোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। মোদিয়ানো তরুণ বয়সে  প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মের আগের স্মৃতিও লেখার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে মোদিয়ানো বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, শুধু ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’

উপকারী গ্রুপ শুবাচ / ফজলে রাববি

উপকারী গ্রুপ শুবাচ

শুবাচ গ্রুপে জয়েন্ট করেছি খুব বেশি দিন হয়নি। প্রথমে অনেকটা গুরুত্ব না-দিয়েই যুক্ত হয়েছি। তবে যুক্ত থাকার কারণে নিউজফিডে নতুন পোস্টগুলো মাঝে মাঝেই চোখে পড়ত। কখনও বা দু’একবার শখ করে ঢুঁ মারতার। এরপর ধীরে ধীরে এর অসামান্য উপকারিতা অনুভব করি। এখন কেমন যেন নতুন পোস্টের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে থাকি। নতুন কোনও পোস্ট পেলেই বিশেষ করে ড. আমীন স্যারের পোস্ট গোগ্রাসে গিলতে থাকি। কিছু শেখার চেষ্টা করি। ফেসবুক এখন শুধু সময় কাটানোর জায়গা নয় শিক্ষা অর্জনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। এ জন্য ’শুবাচ’এর কাছে কৃতজ্ঞ আমি। 
এর পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই ড. আমীন স্যারের। ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ ’শুবাচ’এর সকল শুভানুধ্যায়ীদের।

Saturday 4 October 2014

বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক / ড. মোহাম্মদ আমীন

বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রাচীন মিশরের হ্যাটসেপসুট (Hatchepsut) বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক। হ্যাচহেপসুট শব্দের অর্থ সর্বোত্তম মহা-মহীয়ান রমণী। তদকালে সারা বিশ্বে তার মত প্রজ্ঞাময় কোন শাসক ছিলেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানময় মন, বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গী ও উদার মননশীলতার অধিকারী। বিশ্বখ্যাত ইজিপটোলজিস্ট জেম হেনরি ব্রিয়াস্টেডের (James Henry Breasted) মতে , হ্যাচহেপসুটই বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক। হ্যাচহ্যাপসুট খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৯- ১৪৫৮ পর্যন্ত ২১ বছর মিশর সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী (ফারাও) ছিলেন। তার পূর্বে বিশ্বে কোন মহিলা শাসক ছিলেন, এমনটি জানা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের পঞ্চম ফারাও। তাকে আলোকিত মিশর সাম্রাজ্যের মহান ফারাও বলা হয়ে থাকে। কারণ তিনি প্রাচীন ধর্মীয় গোঁড়ামি, অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, মনগড়া বিশ্বাস, অলীক দাবি ইত্যাদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিশ্বকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ করার প্রয়াস শুরু করেছিলেন। নারী শাসক হওয়া সত্ত্বেও সে প্রায় অন্ধকার যুগে তার আলোকবর্তিকা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশে অনিবার্য মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত।

হ্যাটসেপসুট ১৫০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম থুটমোজ ও তার প্রথম স্ত্রী আহমেজ এর কন্যা। তার স্বামী দ্বিতীয় থুটমোজ ছিলেন প্রথম থুটমোজ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুটনেপেরেট এর সন্তান। হ্যাচহেপসুটই বিশ্বে প্রথম নারী অধিকার সম্পর্কে প্রায়োগিক ধারণার জন্ম দেন। তিনিই বিশ্বে প্রথম নারীর মর্যাদাময় জীবনের দাবি প্রতিষ্ঠা করে এবং নারীও যে পুরুষের মত মানুষ সে সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা সৃষ্টি করেন। তার শাসনকালে কুসংস্কার ও কল্পিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আলোকিত মানুষের প্রথম প্রতিবাদের শুভ সূচনা ঘটে। তার শাসনামলে বিশ্বে প্রথম ভবনবিদ্যা ও স্থাপত্যকলার সূচনা ঘটে। তার সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্তচিন্তার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫৮ এর ১৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরন করেন। মমি পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি বোন-ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। মহারাজকীয় সমাধিস্থল এস্পিওজ আর্টমিডজ এর দায়ার এল বাহরির টেম্পল অব কার্নাকে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এখনও সেখানে তার স্মৃতিসৌধ মহাগৌরবে দাঁড়িয়ে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক : সম্রাট অশোক / ড. মোহাম্মদ আমীন

পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধ শাসক সম্রাট অশোক পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। কারণ:
১. তিনিই বিশ্বের প্রথম শাসক, যিনি বিশ্বে প্রথম অহিংস নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সূচনা ঘটান;
২. মানব ইতিহাসে তিনিই প্রথম শাসক, যিনি প্রথম দাসপ্রথা রহিত করেন;
৩. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি বিশ্বে প্রথম মৃত্যুদন্ড রহিত করেন;
৪. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি বনায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে মরুকরণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেন;
৫. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি মানব ইতিহাসে প্রথম নারীপুরুষ সমতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন;
৬. তিনিই প্রথম শাসক যিনি লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্রীয় নীতি ঘোষণা করেন;
৭. তিনিই প্রথম শাসক যিনি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের উপর পাঠদান ব্যবস্থা চালু করেন।

(বিন্দুসারের মৃত্যুর পর সম্রাট অশোক (জন্ম ৩০৪ খ্রিস্টপূর্ব, শাসনকাল ২৯৮-২৭২ খ্রিস্টপূর্ব) সম্রাট হন। তিনি পূর্বে আসাম ও বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্হান, উত্তরে পামীর গ্রন্থি থেকে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ-ভারত নিজের সাম্রাজ্যভূক্ত করে নেন। এরপর অশোক কলিঙ্গ প্রজাতন্ত্র দখলে উদ্যোগী হন। খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রিস্টপূর্ব ২৬৩) দয়া নদীর ধারে ধৌলি পাহাড়ের কাছে ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে কলিঙ্গবাহিনীর ১,০০,০০০ সেনা ও মৌর্য সেনাবাহিনীর ১০,০০০ সেনা নিহত ও অসংখ্য নর-নারী আহত হয়। যুদ্ধের বীভৎসতা সম্রাট অশোককে বিষাদময় করে তোলে। তিনি যুদ্ধের পথ ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন ও অহিংস-নীতিতে সাম্রাজ্য পরিচালনার নীতি গ্রহণ করেন। অশোক দেশে-বিদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে উদ্যোগী হন। তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিনি শ্রীলংকা পাঠান। এছাড়া তিনি কাশ্মীর, গান্ধার, ভানাভাসী, কোংকন, মহারাষ্ট্র, ব্যাকট্রিয়, নেপাল, থাইল্যান্ড, ব্রহ্মদেশ, লাক্ষাদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেও বৌদ্ধধর্ম প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।)

ক্ষুদ্রতম দেশ / ড. মোহাম্মদ আমীন


১. ভাটিক্যান সিটি
ভ্যাটিকান সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র। স্থলবন্দি এ দেশটি ইটালির রাজধানী রোমের মাঝখানে অবস্থিত। এর আয়তন ১১০ একর এবং লোক সংখ্যা ৮৪০জন। ১৯২৯খ্রিস্টাব্দে দেশটি স্বাধীন হয়। St. Peter’s Basilica বিশ্বের বৃহত্তম ক্যাথলিক চার্চ। ভ্যাটিকানি মউজিয়ামে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সংগ্রহ। এ সংগ্রহগুলো পাশাপাশি সাজালে ৯ মাইল লম্বা হবে। যা পুরো ভ্যাটিকান সিটির চারিদেকে সাড়ে চার বার ঘুরিয়ে আনা যাবে। পোপ হচ্ছে ভ্যাটিকান সিটির প্রধান।

২. মোনাকো
পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত মোনাকো (Monaco) পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। এর আয়তন ২.০২ বর্গ কিলোমিটার (২৪৮-তম) এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩৬৩৭১ (২১৭-তম)। জনসংখ্যার মাত্র ৬০০০ মোনাকো পাসপোর্টধারী। বাকিরা বিদেশি ও রেজিস্টাটর্ড। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্ব ১৮,০০৫। যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। মোনাকের জনগণের মাথাপিছু আয় ১,৫৩,১৭৭ মার্কিন ডলার। যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে হতে মোনাকে আয়কর মুক্ত দেশ। জনগণকে কোন আয়কর দিতে হয় না। ক্যাসিনো এবং পর্যটন দেশের প্রধান আয়-খাত। পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রের ধনকুবেরগ উপভোগ ও অর্থ ব্যয়ের জন্য মোনাকোকে এক নম্বর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। মোনাকের কোন নিজস্ব বিমান বহর নেই। 
৩. নাউরু
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ নাউরু (Nauru) পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। নাউরুর আয়তন ২১ বর্গ কিলোমিটার (পৃথিবীর ২৩৯-তম) এবং লোকসংখ্যা ৯৭৮২ (২১৬-তম)। মাথাপিছু আয় ১৭১৪০ মার্কিন ডলার। শিক্ষিতের হার ১০০ ভাগ। কোন বেকার নেই। চাওয়ামাত্র যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়া হয়। এ দেশের জনগণকে কোন আয়কর দিতে হয় না।প্রতি ৩৪ জন লোকের জন্য একটি হাসপাতাল বেড। অথচ আমেরিকায় প্রতি ১৫২ জনের জন্য ১টি হাসপাতাল বেড।নাউরুর মোট জনসংখ্যার ৯৫ ভাগ অতিরিক্ত ওজনের ভার ন্যুজ। এ জন্য এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে মোটা লোকের দেশও বলা হয়। ফসফেট এবং সিবার্ড ম্যানউর সম্পন্ন দেশটির জনগণ অতিরিক্ত মাত্রায় পশ্চিমা ফাস্ট ফুড গ্রহণের কারণে বিংশ শতক থেকে অতি-ওজন মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রাচীন নাম ছিল Pleasant Island। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। নাউরুর সরকার ঘোষিত কোন রাজধানী নেই। এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশে যার কোন রাজধানী নেই। ইয়রেন দেশটির অঘোষিত রাজধানী। এ দেশের কোন নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী নেই। মাত্র ১০০ সদস্যের একটি নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।প্রস্থ বরাবর দেশটি অতিক্রম করতে মাত্র গড়ে ৫৬ মিনিট সময় লাগে। এ দেশে ১৫০০ ইহুদি রয়েছে।

৪. টুভালু
টুভালু (Tuvalu)পৃথিবীর চতুর্থতম ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র। এর প্রাচীন নাম ইলিস আইল্যান্ড (Ellice Islands)। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দেশটির আয়তন ২৬ বর্গ কিলোমিটার (২২৬-তম) এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দের আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১০,৮৩৭ (২২৮তম)। মাথাপিছু আয় ৩৪০০ মার্কিন ডলার। মুদ্রার নাম টুভালুয়ান ডলার। দেশটি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রাজধানীর নাম পুনাপুটি। দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি।

৫. স্যান ম্যারিনো
স্যান ম্যারিনো (san Marino) পৃথিবীর পঞ্চম ক্ষুদ্রতম দেশ। এর দাপ্তরিক নাম রিপাবলিক অব স্যান ম্যারিনো। ইতালিয়ান পেনিনসুলা অবস্থিত দেশটির চারিদিকে ইতালি। আয়তন ৬১.২ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩১,২৪৭। মুদ্রাইউরো এবং দাপ্তরিক ভাষা ইতালিয়ান। জনগণের মাথাপিছু আয় ৪৪২০৮ মার্কিন ডলার। ৩০১ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর দেশটি রোমান সাম্রাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর দেশটির সংবিধান গৃহীত হয়। স্যান ম্যারিনো পৃথিবীর প্রাচীনতম সার্বভৌম ও সাংবাধিনাকি প্রজাতন্ত্র ।

নিয়তি : বাহাদুর শাহ জাফর / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাহাদুর শাহ জাফর(অক্টোবর ২৪, ১৭৭৫ - নভেম্বর ৭, ১৮৬২)

মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর বা ২য় বাহাদুর শাহ্ ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর দিল্লির লালকেল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম আবুল মুজাফ্ফার সিরাজুদ্দীন মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ গাজী। তিনি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ (১৮০৬-৩৭ খ্রি:) ও সম্রাজ্ঞী লাল বাঈর দ্বিতীয় পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর বাহাদুর শাহ (দ্বিতীয়) ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে পিতামহ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬ খ্রি:) এবং পিতা সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ উভয়ের মতো দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী ছিলেন। তিনি বার্ষিক ১ লাখ টাকা ভাতা পেতেন।


সিপাহী বিপ্লবের শেষে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকেরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ অক্টোবর ৮৩ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল, দুই শাহজাদা, শাহজাদী এবং অন্য আত্মীয় ও ভৃত্যদের নিয়ে ইংরেজ গোলন্দাজ ও অশ্বারোহী বাহিনী দিল্লি ত্যাগ করে। ৯ ডিসেম্বর জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট গ্যারেজে সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। সম্রাটকে শুতে দেয়া হয় একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। সম্রাট পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর, শুক্রবার ভোর ৫টায় সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন।সম্রাটকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে দাফন করা হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম গ্র্র্যাজুয়েট / ড. মোহাম্মদ আমীন

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম গ্র্র্যাজুয়েট

ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর, সাহিত্যিক ও গবেষক দেলোয়ার হোসায়েন (১৮৪০-১৯১৬) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট। তার পূর্বে কোন মুসলিম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভের গৌরব অর্জন করতে পারেননি। কালেক্টর থাকাকালীন ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকদের বৈষম্যের প্রতিবাদে সরকারি চাকুরি হতে অবসর গ্রহণ করেন। তার সমসাময়িক নওয়াব আবদুল লতিফ ও স্যার সৈয়দ আহমদও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন একই কারণে অবসর গ্রহণ করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক ও একজন প্রশসক/ ড. মোহাম্মদ আমীন

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহিদ


কুমিল্লার তৎকালীন জেলপ্রশাসক শামসুল হক খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহিদ। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের পূর্বে তিনি জেলাপ্রশাসক হিসেবে কুমিল্লা যোগদান করেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা সার্কিট হাউস থেকে মেজর আগা ও ক্যাপ্টেন বোখারীর নেতৃত্বে তাঁকে ও পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর তাদের হত্যা করা হয়।

২৫ মার্চের পূর্বে কুল্লার পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন, ড. আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক খোরশেদ আলম এমসিএ, আলী আহমেদ এমসিএ প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে শামসুল হক খান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রিম প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন। ৭ মার্চের পর এবং ২৫ মার্চের পূর্বে কুমিল্লার জেলাপ্রশাসক শামসুল হক খানের নেতৃত্বে এ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। তার পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এত উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তা এমন সুসংঘটিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেননি। তাই শামসুল হক খান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী হিসেবেও স্বীকৃত।

যোগদানের পর থেকে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধে সক্রিয় হয়ে উঠেন। জেলাপ্রশাসক শামসুল হক খানের নির্দেশে কুমিল্লা সেনানিবাসে রেশন ও পরিবহন জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাকিস্তানি সেনারা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করতে গেলে পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশ ছাড়া স্টোরের চাবি হস্তান্তরে অপারগতা জানান। এ নিয়ে আলোচনার জন্য স্থানীয় সামরিক আইন প্রশাসক ডেকে পাঠালে বেসামরিক প্রশাসনের জেলাপ্রধান শামসুল হক খান তাতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর এ আচরণে পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ২৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা সার্কিট হাউস থেকে মেজর আগা ও ক্যাপ্টেন বোখারীর নেতৃত্বে তাঁকে ও পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের জন্য শহীদ শামসুল হক খানকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে "স্বাধীনতা পদক"-এ ভূষিত করা হয়। তাঁর নামে কুমিল্লায় একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিয়াম মিলনায়তনের ভাষণকক্ষটির নামও তাঁর নামে করা হয়েছে। তবে এর দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম শহিদ ও প্রথম প্রতিরোধকারী হিসেবে তিনি উপযু্ক্ত স্বীকৃতি পেয়েছেন কিনা তা আলোচনার দাবি রাখে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী


বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনীতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যকিত্ব লীলা নাগ (জন্ম: অক্টোবর ২১, ১৯০০ - মৃত্যু:জুন ১১ ১৯৭০) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী। তিনি আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছাত্র জীবন শুরু হয় ঢাকার ইডেন
স্কুলে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক লাভ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল়য়ে ইংরেজি বিষয়ে এমএ ভর্তি হন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনিই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রীধারী।

তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহকারী ছিলেন। লীলা নাগের পিতা গিরীশচন্দ্র নাগ ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী অমিত রায়কে বিবাহের পরে তার নাম হয় লীলা রায় । লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন । এজন্য কয়েকবার তাঁকে কারা বরণ করতে হয়। তিনি মহিলা সমাজে মুখপাত্র হিসেবে “জয়শ্রী” নামে একটি পত্রিকা বের করেন। তিনি ঢাকার আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (তৎকালীন নারীশিক্ষা মন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত বিভাগের পর লীলা নাগ কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।

মজার তথ্য / ড. মোহাম্মদ আমীন

মজার তথ্য

১. জনসংখ্যায় ইউরোপের ক্ষুদ্রতম দেশ : ভ্যাটিকান (জনসংখ্যা প্রায় ১০০০ জন)।
২. ইউরোপের দীর্ঘতম নদী : ভলগা।
৩. ইউরোপের দীর্ঘতম পর্বতমালা : আল্পস পর্বতমালা।
৪’ ইউরোপের দ্বার : ভিয়েনা
৫. ইউরোপের বৃহত্তম সুড়ঙ্গপথ: ইউরো টানেল।
৬. ইউরোপের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ : মাউন্ট ব্ল্যাঙ্ক।
৭. ইউরোপের ককপিট বা রণক্ষেত্র : বেলজিয়াম।
৮. ইউরোপের বৃহত্তম সাগর : ভূমধ্যসাগর।
৯. বিশ্বের বৃহত্তম সমভূমির নাম: মধ্য ইউরোপের বিস্তীর্ণ সমভূমি।
১০. আফ্রিকা মহাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২৫ জন।
১১. আফ্রিকা ইউরোপ মহাদেশের চেয়ে আড়াই গুণ বড়।
১২. আয়তনে উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম দেশ : কানাডা (৯৯,৩৬,১৪০ বর্গ কি.মি)।
১৩. আয়তনে উত্তর আমেরিকার ক্ষুদ্রতম দেশ: বারমুডা (৬১ বর্গ কি.মি.)।
১৪.জনসংখ্যায় উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম দেশ: যুক্তরাষ্ট্র (২৯ কোটি ৪০ লাখ)।

সর্বাধিক ভাষাভাষী দেশ / ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রশ্ন: পৃথিবীর কোন্ দেশের লোক সর্বাধিক ভাষায় কথা বলে?
উত্তর: পাপুয়া নিউগিনি (Papua New Guinea )। ওশেনিয়া মহাদেশের অবস্থিত পাপুয়া নিউগিনির আয়তন ৪৬২৮৪০ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা 7,059,653। এ দেশের জনগণ ৮২০টি ভাষায় কথা বলে।
নিচের ছবিতে পাপুয়া নিউগিনির একটি দৃশ্য দেয়া হল।

ব্রতচারী আন্দোলনের পথিকৃৎ / ড. মোহাম্মদ আমীন

ব্রতচারী আন্দোলনের পথিকৃৎ


আইসএিস অফিসার, রাজনীতিবিদ, লোকশিল্পী, লেখক, গবেষক, সমাজসেবক ও বিশ্বে ব্রতচারী আন্দোলনের মহান পথিকৃৎ গুরুসদয় দত্ত (১৮৮২-১৯৪১) ছিলেন আপন সংস্কৃতির প্রবল সমর্থক ও স্বদেশপ্রেমের আকড়। ব্রিটিশ সরকারের অধিনে চাকরি করলেও জনস্বার্থ বিরোধি কোন নির্দেশ পালন করেননি। যেখানে অবিচার দেখেছেন সেখানে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ডান্ডি অভিযান তথা লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের পর মহাত্মা গান্ধীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমবেত জনতার উপর গুলিবর্ষনের আদেশ প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। ফলে কর্তৃপক্ষ তাকে বীরভূমে বদলি করে দেন। গুরুসদয় দত্ত রোড (বা গুরুসদয় রোড) দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাস্তাটির আদি নাম বালিগঞ্জ স্টোর রোড। পরবর্তীকালে বাঙালি আইসিএস অফিসার ও দেশপ্রেমিক তথা ব্রতচারী আন্দোলনের প্রবক্তা গুরুসদয় দত্তের নামে রাস্তাটির নামকরণ হয়।

মহারাজা সুরেন ঠাকুর এ অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর বসতবাড়িটি এখন বিড়লা শিল্প ও প্রযুক্তি সংগ্রহশালা। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরটি এশিয়ার প্রথম জনপ্রিয় বিজ্ঞান সংগ্রহশালা। শিল্পপতি কে কে বিড়লা, বি এম বিড়লা, রাজা আনন্দীলাল পোদ্দার, এইচ এল সোমানি, নবাব ফারুকি, আইসিএস অফিসার স্যার কে জি গুপ্ত এবং যাঁর নামে এই রাস্তার নাম সেই গুরুসদয় দত্তের বসতবাড়িও এই রাস্তাটির ধারেই অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে ১৭৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম ক্রিকেট ক্লাব ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব। এছাড়া গান্ধার আর্ট গ্যালারি, কলকাতার সেরা চিনা রেস্তোরাঁ মেইনল্যান্ড চায়না এই অঞ্চলেই অবস্থিত।

বনমানুষের দেশ / ড. মোহাম্মদ আমীন

বনমানুষের দেশ

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশ। কঙ্গোকে বনমানুষের দেশও বলা হয়। কারণ এখানে ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও বনমানুষ, গরিলা বা বনবস পাওয়া যায় না। কঙ্গোর জনগণের মাথাপিছু আয় মাত্র ৩৬৮ মার্কিন ডলার। এটি ডিআর কঙ্গো বা ডিআরসি নামেও পরিচিত। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কঙ্গো জায়ার নামে পরিচিত ছিল। এর আয়তন ২৩৪৫,৪০৯ স্কয়ার কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৭৫৫০৭৩০৮। কঙ্গো হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশে যার সরকারি ভাষা ফ্রেঞ্চ। উল্লেখ্য ফ্রান্সের জনসংখ্যা ৬৫ মিলিয়ন কিন্তু কঙ্গোর জনসংখ্যা ৭০.৫ মিলিয়ন। এটি আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এ দেশের অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দারা ছবি তুলেন না। কারণ তারা মনে করেন, ছবি তোলা মানে কারও আত্মাকে বন্দি করে ফেলা।যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীন কোন্দলের জন্য দেশটির এ দুরবস্থা।

ইহুদি বনাম মুসলমান / ড. মোহাম্মদ আমীন


ইসরাইল এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের একটি ইহুদি রাষ্ট্র।তবে, বিশ্বের ৫০টা মুসলিম রাষ্ট্রের ৩০টি এখনও ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।  এর উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান, পূর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে পশ্চিম তীর গাজা ভূখ- এবং দক্ষিণপশ্চিমে মিশর। ইসরাইলি পতাকায় রয়েছে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর এটি গৃহীত হয়। এর মাঝখানে তারকা চিহ্নটি দাউদ নবির সিলমোহর। ইসরায়েল অর্থ ইসরাইল নবি ও তার সন্তানদের দেশ। ইসরাইল নবির আর এক নাম ইয়াকুব। ইসরায়েল নামের সঙ্গে ইসরায়েলের নবি এবং ইসরাইলের শিশু কথাগুলো সংশ্লিষ্ট। ইহুদি সাহিত্যিক ও ইতিহাসবেত্তাগণ বলেন, ইসরাইল নামের উৎপত্তির সঙ্গে আম ইসরায়েল এবং বনি ইসরাইল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ইসরাইল শব্দের আক্ষরিক অর্থ ঈশ্বরের জন্য সংগ্রাম। ইসরাইলের নবি ইয়াকুব ও তার উত্তরপুরুষগণ অর্থাৎ ইসরাইলের সন্তানগণ এ ভূখ-ে বসবাস করে। তাই এর নাম রাখা হয় ইসরাইল।
ইসরায়েলের আয়তন ২০,৭৭০/২২,০৭২ বর্গ কিলোমিটার বা  ৮,০১৯/৮,৫২২ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয়ভাগের পরিমাণ ২.১২ ভাগ। আয়তন বিবেচনায় ইসরাইল বিশ্বের ১৫৩-তম দেশ। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী ইসরাইলের জনসংখ্যা ৮২,৩৮,৩০০, প্রতিবর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ৩৮৭.৬৩। জনসংখ্যা বিবেচনায় এর অবস্থান বিশ্বে ৯৬-তম। জনসংখ্যার মধ্যে ৭৪.৯% ইহুদি, ২০.৭% আরব বা মুসলিম এবং ৪.৪ ভাগ নন-আরব খ্রিস্টান ও অন্যান্য। মোট ইহুদির ৯২% ইহুদি শহরে বসবাস করে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে ইসরাইলের জিডিপি (পিপিপি) ২৮১.৭৫৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সে হিসাবে মাথপিছু আয় ৩৩,৬৫৮ ইউএস ডলার (২৫-তম)। জিডিপি নমিনাল ২৯৮.৮৬৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩৫,৭০২ ইউএস ডলার (২৫-তম)।পৃথিবীতে মাত্র ১৪ মিলিয়ন ইহুদি, তন্মধ্যে ৭ মিলিয়ন আমেরিকায়, ৫ মিলিয়ন এশিয়ায় ২মিলিয়ন ইউরোপে এবং ১ লক্ষ আফ্রিকায়। প্রতি ১জন মুসলিমের বিপরীতে রয়েছে ১০০ জন ইহুদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ইহুদিরা, মুসলিমদের চেয়ে ১০০ গুণের অধিক শক্তিশালী।
আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ প্রভাবশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও গবেষক ইহুদি।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein) ছিলেন ইহুদি। সাইকোবিশ্লেষনের জন্মদাতা সিগময়েন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud), কার্ল মাক্স, (Karl Marx)পল স্যামুয়েলসন, মিল্টন (Paul Samuelson) এবং মিল্টন ফ্রায়েডম্যান(Milton Friedman)সহ অসংখ্য ইহুদি বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ও সার্বজনীন অবদান পৃথিবীর মানুষকে প্রতিনিয়ত উপকৃত করে যাচ্ছে। বেঞ্জামিন রবিন (Benjamin Rubin) আবিষ্কার করেছেন ইনজেকশন সিরিঞ্জ,  জোনাস সল্ক (Jonas Salk) প্রথম পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন, আলবার্ট সাবিন (Albert Sabin) লাইভ পোলিও ভ্যাকসিন, গার্টুড ইলিয়ন (Gertrude Elion) লিউকেমিয়া ড্রাগ,  বারুচ ব্লামবার্গ (Baruch Blumberg)আবিষ্কার করেন কার্যকর হেপটাইটিস বি ভ্যাকসিন, সিপলিসের চিকিৎসা আবিষ্কার করেন পল ইরলিক (Paul Ehrlich), ইলি মেচনিকপ (Elie Metchnikoff) সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বার্নাড কার্টজ (Bernard Katz) নিউরোমাসকুলার ট্রান্সমিশনের জন্য নোবেল পুরস্কার পান, এন্ড্রু স্ক্যালি (Andrew Schally) অন্তঃস্রাবী রোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরোডিজম প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পান।এসব ইহুদি আবিষ্কারকের অবদান পুরো বিশ্বের মানুষের জন্য পরম আশীর্বাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।[1]

অ্যারন বেক(Aaron Beck)আবিষ্কার করেন মানসিক চিকিৎসার প্রতিরোধক সাইকো থেরাপি, গ্রেগরি পিন্কাস (Gregory Pincus) আবিষ্কার করেন প্রথম ওরাল গর্ভনিরোধক বড়ি, জর্জ ওয়াল্ড  (George Wald)মানব চক্ষুর বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুধাবন জ্ঞানের বিবরণের জন্য পান নোবেল পুরস্কার, স্ট্যানলি কোহেন (Stanley Cohen) অ্যাম্ব্রায়োলজি বা ভ্রূণতত্ত্বের উন্নয়নের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ইউলেম কলফ (Willem Kolff) ডায়ালাইসিস যন্ত্র আবিষ্কার করে পুরো পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিয়ে আসেন এক অবিশ্বাস্য আলোড়ন।
আধুনিক তথ্যবিজ্ঞানেও ইহুদিদের আবিষ্কার অবিস্মরণীয়। ইহুদি বিজ্ঞানী স্ট্যানটি মেযর (Stanley Mezor) প্রথম মাইক্রো প্রসেসর চিপ আবিষ্কার করে বিশ্বকে নতুন জগতে  নিয়ে যান। লিও জিলার্ড (Leo Szilard) আবিষ্কার করেন প্রথম নিউক্লিয়ার চেইন রি-অ্যাক্টর, পিটার স্কুলটাজ (Peter Schultz) আবিষ্কার করেন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, চার্লস অ্যাডলার (Peter Schultz) আবিষ্কার করেন ট্রাফিক লাইট, বেনো স্ট্রাস (Benno Strauss) আবিষ্কার করেন স্টেইনলেস স্টিল, ইসাডর কাইস( Isador Kisee) আবিষ্কার করেন সবাক চলচ্চিত্র, এমিল বার্লিনার (Emile Berliner) আবিষ্কার করেন টেলিফোন মাইক্রোফেন এবং চালর্স গিন্সবার্গ (Charles Ginsburg)আবিষ্কার করেন ভিডিও টেপ রেকর্ডার।
জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রভৃতি বিবেচনাতেও ইহুদিজাতি বিশ্বে প্রথম। ইহুদিদের মধ্যে মাথাপিছু বিলিয়নিয়ারে সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি পোলো ((Polo)এর মালিক রালফা লউরেন (Ralph Lauren), লেভিস জিন্স (Levi's Jeans)কোম্পানির মালিক লেভিস স্ট্রাস (Levis Strauss), স্ট্রাটবাক (Starbuck's) কোম্পানির মালিক হোয়ার্ড স্কালটয (Howard Schultz), গুগুল (Google) এর মালিক সার্গে ব্রিন (Sergey Brin), ডেল কম্পিউটার (Dell Computers) কোম্পানির মালিক মিখাইল ডেল (Michael Dell), ওরাকল (Oracle)-এর মালিক ল্যারি এলিসন (Larry Ellison), ডিকেএনওয়াই (DKNY) কোম্পানির মালিক ডোনা ক্যারন (Donna Karan), বাসকিনস এন্ড রবিনস  (Baskins & Robbins)  কোম্পানির মালিক ইর্ভ রবিনস (Irv Robbins) এবং ডানকিন ডোনাটস (Dunkin Donuts) কোম্পানির মালিক বিল রোসেনবার্গ (Bill Rosenberg)পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কয়েকজন শিল্পোদ্যক্তা ও ধনকুবের। তাঁরা সবাই ইহুদি।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট রিচার্ড লেভিন (Richard Levin), আমেরিকার প্রাক্তন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার, রিগ্যান, বুশ, ক্লিনটনও জুনিয়র বুশের সময়কালীন ফেডারেল চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্পান (Alan Greenspan), প্রাক্তন সিনেটর ও সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেফ লিবারম্যান (Joseph Lieberman) ও মেডেলিন অ্যাব্রাইট (Madeleine Albright), ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোসাইলিস্ট এর প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাক্মিম লিটভিনভ (Maxim Litvinov), সিঙ্গাপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড মার্শাল (David Marshal), অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারের আইজাক আইজাকস (Issac Isaacs), ব্রিটিশ রাষ্ট্রনায়ক ও লেখক বেঞ্জামিন ডিসরাইলি (Benjamin Disraeli), পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট জর্গ স্যাম্পাইও (Jorge Sampaio), কানাডার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হার্ব গ্রে (Herb Gray), ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ম্যান্ডেস (Pierre Mendes), ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মিখাইল হোয়ার্ড (Michael Howard), অস্ট্রিয়ার চান্সেলর ব্রুনো ক্রিস্কি (Bruno Kreisky)সহ অসংখ্য ইহুদি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আছেন।
বিশ্ব মিডিয়া জগতেও রয়েছে ইহুদিদের প্রবল প্রভাব। অনেক ইহুদি বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন এবং আছেন। তন্মধ্যে সিএনএন-এর উল্ফ ব্লিটজার (Wolf Blitzer), এবিসি নিউজ এর বারবার ওয়াল্টরস (Barbara Walters), ওয়াশিংটন পোস্ট এর ইউগেন মেয়ার (Eugene Meyer), টাইম ম্যাগাজিনের এডিটর ইন চিফ হেনরি গ্রুনওয়াল্ড (Henry Grunwald), দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর নির্বাহী সম্পাদক জোসেফ লেলিএল্ড (Joseph Lelyyeld)এবং নিউইয়ক টাইমস এর মার্ক্স ফ্রাঙ্কেল প্রমূখ উল্লেখযোগ্য।           
ইহুদি জনসংখ্যার তুলনায় অর্থের পরিমাণ, কার্যকারিতা ও বিশ্বে প্রদত্ত দানের অবদান বিবেচনাতেও ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ইহুদি ধনকুবের জর্জ সোরোস (George Soros) পৃথিবীর বিভিনন দেশে বিজ্ঞান গবেষণায় ৪ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ দান করেছেন।আর এক ইহুদি ধনকুবের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেছেন ২ বিলিয়ন ডলার।
অলিম্পিক গেমসে ইহুদি খেলোয়াড় মার্ক স্পিটজ (Mark Spitz) সাতটি স্বর্ণপদক পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।লেনি ক্র্যাইজেলবার্গ (Lenny Krayzelburg) অলিম্পিকে ৩ বার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। মার্ক স্পিটজ, লেনি ক্র্যাজেলবার্গ ও টেনিস খেলোয়াড় বরিস বেকার (Boris Becker) সবাই ছিলেন ইহুদি। হ্যারিসন ফোর্ড (Harrison Ford), জর্জ বার্নস, টনি কার্টিস, চার্লস বনসন, সান্দ্রা বোলোক, বারবারা স্ট্র্যাইস্যান্ড (Barbra Streisand), বিলি ক্রিস্টাল, উডি অ্যালেন, পল নিউম্যান, পিটার সেলের্স, ডাস্টিন হফম্যান, মিখাইল ডগলাস, বেন কিংসলি, কির্ক ডগলাস, উইলিয়াম সাটনার, জেরি লুইস ও পিটার ফক-সবাই ইহুদি।
হলিউডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন ইহুদি। পরিচালক ও প্রযোজক স্টিভেন স্ফিলবার্গ (Steven Spielberg), মেল ব্রুকস (Mel Brooks), অলিভার স্টোন (Oliver Stone), বেভারলি হিলস ৯০২১০ এর অ্যারন স্প্যালিং (Aaron Spelling), দ্যা অড কাপল এর নেইল সিমন (Neil Simon), র‌্যাম্বোস ১,২ ও ৩ এর অ্যান্ড্রু ভায়না (Andrew Vaina), স্ট্রাস্কি এন্ড হাচ (Starsky and Hutch) এর মিখাইল ম্যান (Michael Mann), ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্যা কোকোস নেস্ট (One Flew Over the Cuckoo's Nest) এর মিলোস ফোরমান (Milos Forman), দ্যা থিফ অব বাগদাদ (The Thief of Baghdad) এর ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস (Douglas Fairbanks)এবং  গোস্টবাস্টার্স (Ghostbusters) এর আভান রিটমান (Ivan Reitman)প্রমূখ ইহুদি ছিলেন। এখনও হলিউডসহ বিশ্বের ইংরেজি চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্বের বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি।তন্মধ্যে ১ বিলিয়ন এশিয়ায়, ৪০০ মিলিয়ন আফ্রিকায়, ৪৪ মিলিয়ন ইউরোপে এবং ৬ মিলিয়ন আমেরিকায়। প্রত্যেক পাঁচজন মানুষের মধ্যে ১জন মুসলিম। প্রতি ১জন হিন্দুর মধ্যে দুইজন মুসলিম, প্রতি ১জন বুড্ডিস্টের মধ্যে ২জন মুসলিম এবং প্রতি ১জন ইহুদির মধ্যে ১০১ জন মুসলিম। তারপরও কেন মুসলিম ক্ষমতাহীন? কেন বিশ্বে তাদের প্রভাব জনসংখ্যার তুলনায় প্রায় শূন্য?
প্রথম কারণ হচ্ছে শিক্ষা। ওআইসি (OIC)-র ৫৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০০। সে হিসাবে প্রতি ৩ মিলিয়ন মুসলমানের জন্য রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৫,৭৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। সে হিসাবে প্রতি ৫৭,০০০ আমেরিকানের জন্য রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়।ভারতে রয়েছে ৮,৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে সাংহাই জিয়াও সঙ ইউনিভার্সিটি (Shanghai Jiao Tong University) অ্যাকাডেমিক শিক্ষার  গুণগত মান ও প্রায়োগিক অধ্যয়ন বিবেচনায় পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। মুসলিম দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই ওই তালিকার প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও স্থান পায়নি।[2]
উইএনডিপি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, খ্রিস্টানদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ৯০%, তন্মধ্যে ১৫টি খ্রিস্টান সংখ্যা গরিষ্ট রাষ্ট্রে শিক্ষিতের হার ১০০৫। অন্যদিকে, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিতের হার মাত্র ৪০% এবং পৃথিবীর কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশই এখন পর্যন্ত ১০০% শিক্ষিত হতে পারেনি। শিক্ষিত খ্রিস্টানদের ৯৮% প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, কিন্তু মুসলিম শিক্ষিতের মধ্যে কেবল ৪০% প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডী পাড় হতে পারে। শিক্ষিত খ্রিস্টানদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তির হার ৪০% কিন্তু মুসলিম বিশ্বেতা কেবল ২%
জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমবিশ্বের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। এদিকে তারা মধ্যযুগের অবস্থানে রয়ে গেছে। মধ্যযুগে কীভাবে মুসলিম বিশ্ব সারা পৃথিবী জয় করেছিল, জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি করেছিল- তা এখন ধরে থাকলে তাদের আরও মারাত্মকভাবে পিছিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সৃজনে তারা পিছিয়ে আছে বলেই এতসংখ্যা নিয়েও তারা এখন প্রায় বলতে গেলে ক্ষমতাহীন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে প্রতি ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানীর সংখ্যা ২৩০ জন কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা ৪০০জন, জাপানে ৫,০০০ জন। পুরো আরব বিশ্বে পূর্ণকালীন গবেষকের সংখ্যা মাত্র ৩৫,০০০ এবং সেখানে প্রতি ১ মিলিয়ন আরবীয়দের মধ্যে ট্যাকনিশিয়ানের সংখ্যা মাত্র ৫০ জন অন্যদিকে খ্রিস্টানপ্রধান দেশে প্রতি ১ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ট্যাকনিশিয়ানের সংখ্যা ১,০০০। মুসলিম বিশ্ব তাদের মোট জিডিপি (GDP) এর ০.২% গবেষণা ও গবেষণার সংক্রান্ত উন্নয়নে ব্যয় করে কিন্তু খ্রিস্টানপ্রধান দেশ ব্যয় করে ৫%।[3]
সংবাদপত্র ও মানসম্মত পুস্তক প্রকাশের সংখ্যার একটি দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, আধুনিকতা সামগ্রিক শিক্ষার বিস্তার নির্ভর করে।সংবাদপত্র ও সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যার উপর একটি দেশের জনসংখ্যার শিক্ষা, মেধা, জ্ঞানার্জন ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগিক বিস্তৃতি নির্ণয় করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও মুসলিমপ্রধান দেশগুলো মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে। মুসলিম-প্রধান দেশে পাকিস্তানে প্রতি ১০০০ অধিবাসীর জন্য রয়েছে ২৩ পত্রিকা অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে সমসংখ্যক জনগনের জন্য রয়েছে ৩৬০টি পত্রিকা। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর স্বীকৃত পুস্তক টাইটেলের সংখ্যা ২০০০, অন্যদিকে মিশরে তা কেবল ২০।
উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মুসলিমপ্রধান দেশের পরিমাণ খুবই হতাশাজনক।প্রায়োগিক উচ্চশিক্ষা উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের নিয়ামক। পাকিস্তান প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে তন্মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্যের পরিমাণ মাত্র ১%। অন্যদিকে সৌদি আরব, কুয়েত, মরক্কো ও আলজেরিয়ার সম্মিলিত রপ্তানি ০.৩% কিন্তু ৭১২ বর্গমাইল আয়তনের ছোট একটি দেশের মোট রপ্তানি দ্রব্যের ৫৮% উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য।
বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি হার বিবেচনায় ইসরাইলের স্থানা পৃথিবীতে তৃতীয়।  এদেশের ৫৫ ভাগ নারীপুরুষ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যা জনসংখ্যা অনুপাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তার জন্য পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করে। এ খরচ অর্ধেক কমালেও ইসরায়েল পৃথিবীর এক নম্বর ধনী দেশে পরিণত হবে।কৃষিতে ইসরায়েলের উন্নয়ন বিস্ময়কর। সব্জি ও মিষ্টি ভক্ষণে ইসরায়েল পৃথিবীর তৃতীয়। বিগত ২৫ বছরে ইসরায়েলি কৃষির সাতগুণ বিস্তার ঘটলেও কৃষিকাজে পানি ব্যবহারের পরিমাণ একই রয়ে গেছে। পৃথিবীতে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যেখানে একবিংশ শতকে বৃক্ষের সংখ্যা বিংশ শতকের চেয়ে অনেক বেশি।
এটি লজ্জাকরভাবে বিস্ময়কর যে, ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম-প্রধান দেশের ক্রয়সক্ষমতাভিত্তিক বার্ষিক সম্মিলিত জিডিপি (GDP) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক বার্ষিক জিডিপির চেয়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলার কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রতিবছর ১২ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে, চায়না করে ৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার, জাপান করে ৩.৮ট্রিলিয়ন ডলার, জার্মানি করে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তেলসম্পদে সমৃদ্ধ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার একত্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। তন্মধ্যে সিংহভাগ তেল। অন্যদিকে, স্পেন একাই ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। ক্যাথলিকি পোল্যান্ড উৎপাদন করে ৪৮৯ বিলিয়ন ডলার, বুড্ডিস্ট-প্রধান থাইল্যান্ড উৎপাদন করে ৫৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা।
পর্যন্ত ৮৫৫ জন লোক বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে তম্মধ্যে ১৯৩ জন ইহুদি যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২. ভাগ ইহুদি অথচ ইহুদির সংখ্যা কোটি ৪০ লক্ষ যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার . ভাগেরও কম অর্থাৎ প্রতি ৫০০ জন ইহুদির একজন নোবেল বিজয়ী প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রথম ইহুদি এডলফ ভন ব্যায়ের তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেনমুসলমানদের মধ্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০ যা মোট নোবেল পুরষ্কার বিজয়রী মাত্র . ভাগ অথচ সারা বিশ্বে মোট মুসলমানের সংখ্যা ১৪০ কোটি যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ মুসলমানদের মধ্যে জন শান্তিতে, জন সাহিত্যে, ১জন পদার্থ বিদ্যায়, ১জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনজন মুসলিম এককভাবে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তারা হলেন: সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী নাগিব মাহফুজ ওরহান পামুক এবং রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মিশরীয়-মার্কিন বিজ্ঞানী আহমেদ জেবিল[4]
২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রসায়ন শাস্ত্রে ৩৪ জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। যা রসায়নে প্রদত্ত মোট পুরস্কারের ২২%, যা পুরস্কার বিজয়ী মোট আমেরিকানদের ৩৩%। অর্থনীতি শাস্ত্রে ইহুদিরা পেয়েছেন ২৯টি পুরস্কার, যা বিশ্বের মোট ৩৯%, এবং আমেরিকার ৫০%। সাহিত্যে ইহুদিরা ১৩টি নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। এটি মোট প্রদত্ত পুরস্কারের ১২% এবং আমেরিকার ২৭%।শান্তিতের ৯জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বিশ্বে মোট প্রদত্ত পুরস্কারের ৯%, এবং আমেরিকার অর্জনের ১০%।পদার্থ বিজ্ঞানে মোট ৫১ জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বিশ্বের ২৬% এবং আমেরিকার ৩৭%। চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী ইহুদির সংখ্যা ৫৫জন। এটি বিশ্বের ২৭% এবং আমেরিকার ৪০%।
ইসরাইলে আরব-ইসরাইলি সমমর্যাদার ভোটাধিকার ভোগ করেন। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের স্বল্প কয়েকটি দেশের একটি যেখানে আরবীয় মহিলাদের ভোটাধিকার রয়েছে। ইসরাইলের আরবি মেয়েরা সেখানে ইসরালি নারীপুরুষের মতো সমান মর্যাদা ভোগ করে। এখানকার মহিলার বিশ্বের যে কোনো দেশের মুসলিম মহিলার চেয়ে অনেকে বেশি স্বাধীনতা পায়। তারা রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হতে পারেন। বিভিন্ন ইসলামি দেশের নারীদের উপর সম্মানজনক-খুনসহ অতি শাসনের যে আইন দেখা যায়, তা ইসরাইলে নেই। ইসরাইলে মোট জনসংখ্যার ২০% নন-ইহুদি। মুসলিমের সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন, ১৪,০০০ খ্রিস্টান, ১ লাখ দ্রুজ (Druze) ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। প্রত্যেকে ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন। ইসরাইলে ২০টি আরবি ভাষায় প্রকাশিত সাময়িকী রয়েছে।পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মুসলিমরা যে মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করে, ইসরাইলে বসবাসরত আরবীয় মুসলিমেরাও তার চেয়ে বেশি সামাজিক নিরাপত্তায় আছে।ইহুদিদের স্কুলসমূহের আরবি পড়ান হয়। ৩,৫০,০০০ এর অধিক শিশু ইহুদি স্কুলে পড়ে। আরবীয় মুসলিমদের জন্য এখানে শতাধিক স্কুল তৈরি করা হয়েছে। ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আরবি সাহিত্য ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শিক্ষার জন্য খ্যাত।[5]
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসরায়েল পৃথিবীর প্রথম স্থানে। জনসংখ্যা বিবেচনায় কলেজ ডিগ্রিপ্রাপ্ত অধিবাসীর সংখ্যা ইসরাইলে সর্বাধিক। মিউজিয়াম ও স্টার্টআপ কোম্পানির সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইসরায়েল কম্পিউটারের এন্টিভাইরাস আবিষ্কার করে। ছোট এ দেশটা যতগুলো ভাষার এবং যতসংখ্যক পুস্তকের অনুবাদ প্রকাশ করেছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি করতে পারেনি। মাথাপিছু নতুন বইয়ের সংখ্যা বিবেচনায় ইসরাইলের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। ইসরাইলের ‘বের’ শহরে জনসংখ্যা অনুপাতে দাবা গ্র্যান্ড মাস্টারের সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক। 
আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ইসরায়েল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন তারা নতুন নতুন জিনিস ও আকর্ষণীয় সফটওয়্যার আবিষ্কার করছে। উইন্ডোজ এনটি ও এক্সপি, ভয়েস মেইল সিস্টেম পেন্টিয়াম-৪, সেন্ট্রিনো প্রসেসর, এওএল ইনস্ট্যন্ট মেসেঞ্জার প্রযুক্তি এবং মোবাইল ফোনের আবিষ্কার হয়েছে ইসরায়েলে। মোটোরোলা কোম্পানি ইসরায়েলে সেলফোন আবিষ্কার করে। এসব আবিষ্কার পুরো পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা ও আচরণ বদলে দিয়েছে। ইসরায়েলের ছোট্ট ভূখণ্ডে রয়েছে ৩,৫০০টি অতি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন বিশালাকার কোম্পানি। উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন আধুনিক কোম্পানির সংখ্যা, গবেষণা ও আবিষ্কারের ধরণ প্রভৃতি বিবেচনায় ইসরায়েলের স্থান সিলিকন ভ্যালির পর দ্বিতীয়। পৃথিবীর যে নয়টি দেশ মহাশূণ্যে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করেছে, তন্মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। ইসরাইলি প্রযুক্তির দ্বারা এখন হার্ট টিস্যু রিজেনারেশন সম্ভব হয়েছে। 
ইসরাইলে নিবন্ধকৃত আইনজীবীদের মধ্যে ৪৪% মহিলা। আয়তনে ছোট হলেও এ দেশের বিমান বাহিনি পরিধি ও শক্তি বিবেচনায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানের অধিকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চায়নার পর ইসরায়েলি বিমান বাহিনির স্থান। হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নেওয়ার পর ইসরাইলের প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের এ সীমা বালকদের জন্য তিন বছর এবং বালিকাদের জন্য দুই বছর। 
বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরোধি। ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ (১৫৩) বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮০,৫১,২০০ (৯৬-তম) কিন্তু ইসরাইলকে ঘিরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের মোট জনসংখ্যা ২২৩,৬০৮,২০৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্ব বিবেচনায়  ১.৪ কোটি ইহুদির কাছে ১৪০ কোটি মুসলিম হাতের পুতুলের মত অসহায় এবং মধ্যপ্রাচ্য বিবেচনায় ২২.৪ কোটি মুসলমান ১.৪ কোটি মুসলমানের কাছে অসহায়। হিসাব করে দেখুন: ১জন ইহুদি সমান কতজন মুসলমান। একসময় মুসলিমরা এত নিকৃষ্ট ছিল না। তাদের ছিল বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী। জ্ঞানবিজ্ঞানেও মোটামুটি দখল ছিল। যদিও, সূচনা হতে আধুনিক শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন ইসলাম বিশ্ব কখনও করতে পারেনি। ভিন্ন মতাবলম্বীদের কঠোর হস্তে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আধুনিক যুগে পাকিস্তানের বিজ্ঞানী আবদুস সালামকেও নন-মুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বলা যায়, মুসলমানদের এ অসহায়ত্ব, ক্ষমতাহীনতা ও চরম দারিদ্রের প্রধান কারণ হচ্ছে যুগোপযোগী শিক্ষা। শিক্ষা হতে দূরে থাকার কারণে মুসলিমবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে চরম অনৈক্য, কুসংস্কার, লোভ, পশ্চাদপদ ব্যবস্থাপনা,  কুসংস্কার, হানাহানি, সংস্কারবিমুখ মানসিকতা, কুটনীতিক অদক্ষতা, বিলাসী জীবন, দ্রুতহ্রাসমান প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিলাসী জীবন যাপনের প্রতিযোগিতা, উচ্চপ্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের পরিবর্তে ইষ্টকভবন তৈরির হাস্যকর মহড়া প্রভৃতি। শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগের মাধ্যমে আধুনিক উচ্চপ্রযুক্তি আয়ত্ত করতে না-পারলে মুসলিম বিশ্ব আরও অসহায় হয়ে পড়বে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও সংখ্যা লঘুদের হাতের পতুল হয়ে থাকতে হবে।  



[1] Why are Jews so powerful and Muslims so powerless?  by Dr. Farrukh Saleem January 8, 2010,The Muslim Times.
[2] Dr Farrukh Saleem. The Muslim Issue, October 20, 2012 
[3] Muslim World Today. http://www.muslimworldtoday.com/
[4]  এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
[5]  A Muslim in Jews Land, Dr Tashbih Sayeed, Published: December 10, 2005
On a trip to Israel, a Muslim journalist