Translate

Friday 10 October 2014

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ইহুদি / ড. মোহাম্মদ আমীন



বিশ্বে ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তন্মধ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন প্রকৃতপক্ষে ২জন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে মিশরের নাগিব মাহফুজ (Naguib Mahfouz), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে আলবার্ট ক্যামুস (Albert Camus) এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সাহিত্যিক ওরহান পামুক (Albert Camus) নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। আলবার্ট কামু মুসলিম বংশোদ্ভুত হলেও ইসলাম ধর্ম পালন করতেন না, বিশ্বাসও করতেন না। নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয়ও দিতেন না। এ হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মুসলমানের সংখ্যা মাত্র দুই জন।

সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে ইহুদির সংখ্যা মোট ইহুদির সংখ্যা ১,৩৭, ৪৬,২০০ জন। তন্মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ জন ইহুদি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১১১জন ব্যক্তি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। 

প্রথম : জার্মান গীতিকবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও ছোটগাল্পিক পাউল ইয়োহান লুডভিগ ফন হেইনজে (Paul Heyse) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ইহুদি। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। হেইনজে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ জার্মানির বার্লিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল তিনি মিউনিখে মারা যান।

দ্বিতীয় : বিশ শতকের প্রচণ্ড প্রভাবশালী ফ্রেন্স দার্শনিক হেনরি লুইস বেরগস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বিতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রিউ ল্যামারটিন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি তিনি প্যারিসে মারা যান।

তৃতীয় : ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সোভিয়েত ঔপন্যাসিক, বরিস পাস্তারনেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তৃতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের মস্কো নগরে এক ধনাঢ্য ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চতুর্থ ও পঞ্চম : জার্মান কবি ও নাট্যকার নেলি নেওনি স্যাকস  পোলিশ লেখক স্যামুয়েল ইয়োসেপ আগনন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী  চতুর্থ পঞ্চম  ইহুদি। তাঁরা উভয়ে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। নেলি নেওনি স্যাকস ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মারা যান। অন্যদিকে  স্যামুয়েল ইয়োসেফ আগনন ৮১ বছর বয়সে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

ষষ্ঠ : কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন-ইহুদি লেখক সাউল বোলো  সাহিত্যে নোবেলা পুরস্কার বিজয়ী ষষ্ঠ ইহুদি। তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সাউল বেলো ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন পূর্ব-কানাডার কুইবেক শহরের লাচিনে এক গোঁড়া ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল ৮৬ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসের ব্রুকলিনে  মারা যান।

সপ্তম : পোলিশ-মার্কিন সাহিত্যিক ও বিশ্বখ্যাত ছোটগাল্পিক আইজাক্‌ বসেভিস্ সিঙ্গার (Isaac Bashevis Singer) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সপ্তম ইহুদি। আইজাক ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত কংগ্রেসে পোলান্ডের ওয়ারশো শঞরের কাছে লিউনিকে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই তিনি মারা যান।

অষ্টম : ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বুলগেরিয়ান ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, স্মৃতিকার ও প্রাবন্ধিক  এলিয়াস কানেত্তি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী অষ্টম ইহুদি। তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই বুলগেরিয়ার নিম্ন ডানিয়ুব আপত্যাকার রিউজ শহরের রুসচুক নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অগাস্ট সুইজারল্যান্ডের জুরিখে মারা যান।

নবম: বিখ্যাত সাহিত্যিক জোসেফ ব্রডস্কি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নবম ইহুদি। তিনি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রুশ-মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক ব্রডস্কি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে রাশিয়ার লেলিনগ্রাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক  শহরে মারা যান।

দশম :  ইংরেজিভাষী নেদাইন গার্ডিমার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দশম ইহুদি। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে অবস্থিত স্প্রিং গুয়েটন এলাকার স্প্রিং নামক স্থানে এক অভিবাসী ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

একাদশ : ইমরে কাটেজ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয় একাদশ ইহুদি। হাঙ্গেরিয়ান নাগরিক ইমরে কাটেজ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বাদশ : ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অস্ট্রিয়ান নাগরিক এলফ্রিড জেলিনেক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বাদশ ইহুদি। তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের  ২০ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার স্ট্রাইরিয়া নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। 

ত্রয়োদশ : ইংলিশ নাট্যকার, স্ক্রিনরাইটার, অভিনেতা, থিয়েটার পরিচালক, রাজনীতিক কর্মী ও কবি হ্যারল্ড পিন্টার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ত্রয়োদশ ইহুদি। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর  পশ্চিম লন্ডনের ক্যাকনি নামক স্থানে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর তিনি লিভার ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্দশ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী চতুর্দশতম ইহুদি। প্যাত্রিক মোদিয়ানো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই প্যারিসের বুলন শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী পিতা আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন ইতালীয় ব্যবসায়ী এবং মা লুইজা কোলপেন ছিলেন বেলজিয়াম-অভিনেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মোদিয়ানো প্যারিসের লুসি অঁরি-৪ সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষক হিসাবে বিখ্যাত লেখক রেমো কুইনোর সঙ্গলাভের সুযোগ পান। কুইনোর উৎসাহ আর পরিচর্যা মোদিয়ানোর সাহিত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কুইনো নিজেই মোদিয়ানোকে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা গ্যালিমার সঙ্গে মোদিয়ানোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। মোদিয়ানো তরুণ বয়সে  প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মের আগের স্মৃতিও লেখার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে মোদিয়ানো বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, শুধু ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোমিনিক জাহফুসের সঙ্গে মোদিয়ানো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের দুই  মেয়ে যাথাক্রমে জিনা ও মারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে  মাত্র ২২ বছর বয়সে মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘লা প্লাস দো লেতোয়াল’ প্রকাশিত হয় । মোদিয়ানো মূলত ঔপন্যাসিক। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সমান দক্ষ। তাঁর উপন্যাসগুলো কমপক্ষে ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে রু দে বুতিক অবসকিউর (দ্য মিসিং পারসন), ভয়্যাজ দো নোস (হানিমুন), লা রন্দ দো নুই (নাইট রাউন্ডস), দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি (আউট অব দ্য ডার্ক), দোরা ব্রুদার (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ (রিং রোডস: অ্যা নোভেল)। লাকোম্ব লুসিয়াঁ নামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন মোদিয়ানো। তাঁর সাম্প্রতিক বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে।

No comments:

Post a Comment