Translate

Saturday 27 June 2015

মমতা/ ড. মোহাম্মদ আমীন

মমতা

‘মমতা’ শব্দের অর্থ : মায়া, স্নেহ, দরদ, ভালবাসা, প্রেম, প্রীতি, সহানুভূতি প্রভৃতি। প্রকৃতপক্ষে মম শব্দ
হতে মমতা শব্দের উৎপত্তি। ‘মম’ শব্দের অর্থ আমার, নিজের। সাধুভাষায় যার অর্থ মদীয়। সে হিসাবে
মমতা শব্দের মূল অর্থ: ‘এটা আমার’। আমার ছাড়া আর কারও নয় বোঝাতে ‘মমতা’ শব্দটি
ব্যবহার করা হতো। শব্দটা সে অর্থে একটু স্বার্থপর শোনালেও আসলে এটাই ঠিক। যেটা
মমতার, আদরের, স্নেহের এবং ভালবাসার সেটি কেউ হাতছাড়া করতে
চায় না। নিজেই একান্তভাবে নিজের করে রাখতে চায়। কারও ভালবাসার পাত্র
বা পাত্রীকে অন্যে দখল করলে কেমন হয় তা রোমে হেলেন এবং ভারতে
সীতার অপহরণের ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে মানুষ
ভালবাসার প্রতি অন্ধ আবেগ ‘এটা আমার’ 
শুধু উচ্চারণে
সীমাবদ্ধ রাখেনি। তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঘটিয়েছে
লঙ্কাকাণ্ড। তাই সংস্কৃত ‘এটা আমার’
বাংলায় মমতা হয়ে ভালবাসা, স্নেহ ও
প্রেমপ্রীতিকে আরও অর্থবহ
করে দিয়েছে।
==============================================================
সূত্র: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলা বাজার, ঢাকা।

Friday 26 June 2015

ধান / ড. মোহাম্মদ আমীন

ধান

‘ধান’ এক প্রকার খাদ্যশস্য। বাংলাভাষী সবার কাছে এটি অতি পরিচিত ও প্রিয় একটি শস্য। পৃথিবীর সবদেশে সব মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ‘ধান’ নামক এ শস্যটি সৃষ্টির সূচনা হতে মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে অবিচ্ছেদ অনুপমতায় জড়িয়ে। তবে ধান শব্দটি বাংলা নয়। সংস্কৃত ‘ধান্য’ শব্দ হতে বাংলা ‘ধান’ শব্দের উৎপত্তি। সংস্কৃতে ‘ধান্য’ শব্দের অর্থ যাহা পোষণ করে। সে অর্থে যে সকল শস্য দেহ পোষণ করে সেগুলো ধান্য। সংস্কৃত ‘ধান্য’ শব্দের এ অর্থ বিবেচনায় গম, যব, ভুট্টা প্রভৃতিও ধান্য। কিন্তু বাংলায় ‘ধান’ বলতে কেবল যার থেকে চাল বের করা হয় সেটাকে বোঝায়। সংস্কৃত ভাষায় ধান্যকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : শালি, ব্রীহি, শূক, শিম্বি ও ক্ষুদ্র। শালি হলো সে-ই শস্যদানা বাংলা ভাষায় যাকে ধান বলা হয়। এ শস্যদানা সতুষ অবস্থায় ধান, নিষ্তুষ করলে চাল এবং সিদ্ধ করলে ভাত হয়। ব্রীহিধান্য হলো : তিল; শূকধান্য হলো যব ও গম; শিম্বিধান্য হলো কলাই এবং ক্ষুদ্র ধান্য হল কাউন। সংস্কৃত ভাষায় ধান্য বলতে যা-ই বুঝান হোক না কেন, বাংলা ভাষায় ধান বলতে কেবল শালিধান্যকে বোঝায়। যার থেকে চাল বের করে সিদ্ধ করলে ভাত হয়। এটিই আমরা তরি-তরকারি দিয়ে মনের সুখে খাই।
====================
সূত্র :পৌরাণিক শব্দের বাংলা উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন

নাকানিচুবানি / ড. মোহাম্মদ আমীন

নাকানিচুবানি

অসহায়ভাবে অপমানিত হওয়া, লাঞ্ছিত হওয়া বা করা। নাকানি ও চুবানি শব্দ দুটোর
সংযোগে নাকানিচুবানি শব্দের উৎপত্তি। নাক পর্যন্ত যে পানি তার এককথায় প্রকাশ
হল নাকপানি। অন্যদিকে চুবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে পানিতে ডোবানো ও ভাসানো।
সুতরাং নাকানিচুবান শব্দের অর্থ হচ্ছে নাক পর্যন্ত পানিতে ডোবানো ও ভাসানো।
নাক পর্যন্ত কাউকে পানিতে ডুবালে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।
আবার ভাসালে সে নিঃশ্বাস নিতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার নাক পর্যন্ত
ডোবালে আবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এভাবে কাউকে
বারবার পানিতে নাক পর্যন্ত ডোবান ও ভাসান হলে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত
কষ্টে তার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। এটি খুব কষ্টকর অবস্থা।
ব্যক্তি জীবনে মানুষ যখন কোনও কারণে এমন
কষ্টকর অবস্থায় পড়ে সেটি প্রকাশের
জন্য নাকানিচুবানি বাগভঙ্গি
ব্যবহার করা হয়।
====================
সূত্র :পৌরাণিক শব্দের বাংলা উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন

নাক উঁচু / ড. মোহাম্মদ আমীন

নাক উঁচু
====
নাক উঁচু কথাটির আভিধানিক অর্থ গর্বিত, আত্মাভিমানী, অসহ্য রকমের পছন্দপ্রবণ।
তবে এর ব্যাকরণগত অর্থ অন্যরকম। নাক ও উঁচু শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে নাক
উঁচু বাগধারটির সৃষ্টি। ঘটনাচক্রে নাকের একটি অনৈচ্ছিক আচরণ
থেকে কথাটির উৎপত্তি। কোনও কিছু দেখে অবজ্ঞায় নাক
সিঁটকালে নাকের ডগার দুপাশ সামান্য উঁচু হয়ে যায়।
নাকের এ বিকৃত উঁচু-ভাবটাই বাংলা বাগভঙ্গিতে
নাক উঁচু কথায়
স্থান করে
নিয়েছে।

 ------------------------------------------------------
সূত্র : পৌরাণিক উৎসে বাংলা শব্দ, ড. মোহাম্মদ আমীন

Wednesday 24 June 2015

ক্রিকেট-জরিপ (বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে ক্রিকেট জরিপ-২০১৫) / ড. মোহাম্মদ আমীন

এ মাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ভারত ওয়ানডে ক্রিকেট জরিপ-২০১৫ ও তার বিশ্লেষণ। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজে ভারত ২-১ ম্যাচে হেরেছে। এ বিষয়ে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মন্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে।  ১১৭ জন বাংলাদেশিকে  জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের কেউ মুসলিম নন, তবে একই ধর্মাবলম্বী। কৌশলে তাদের অভিমত জানার চেষ্টা করা হয়েছে, এটি যে জরিপ এমনটি তাদের কাউকে বুঝতে দেওয়া হয়নি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীগণের মধ্যে ১০৩ জন ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। বাকিরা স্বল্পশিক্ষিত, তবে ধনী। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেবল ৯ জন লোক ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ জয়ী হওয়ায় খুশি হয়েছেন। ১১ জন  কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। হেসে এড়িয়ে দিয়েয়েছেন। বাকি ৯৭ জনের প্রত্যাশা ছিল ভারতের জয়।

Saturday 20 June 2015

ফয়জুর রহমান আহমেদ : বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎসপুরুষ / ড. মোহাম্মদ আমীন

ফয়জুর রহমান আহমেদ : বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎসপুরুষ

পুলিশ অফিসার, কথাসাহিত্যিক ও বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয় নবধারার উৎস-পুরুষ ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর স্ত্রীর নাম আয়েশা আখতার খাতুন। ফয়জুর রহমান হচ্ছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের পিতা। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ
পুলিশ বিভাগের অনেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নানাভাবে অবদান রেখেছেন। তবে ফয়জুর রহমানের অবদান যেমন সুদূরপ্রসারী ছিল তেমনি পরবর্তীকালে তা অত্যন্ত কার্যকর প্রতীয়মান হয়েছেন। তিনি সাহিত্যকর্মে জড়িত থাকলেও তেমন বিস্তৃতি পরিসরে যাওয়ার আগে শহীদ হন। কিন্তু তিনি তাঁর সন্তানদের যেভাবে গড়ে তুলেছেন এবং সন্তানগণ যেভাবে গড়ে উঠেছেন তা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্য সম্ভারে এনে দিয়েছে নতুন এক জনপ্রিয় ধারা।

পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহমেদ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে পাকিস্তানি হানাদারেরা পিরোজপুরের মহকুমা পুলিশের প্রধান ফয়জুর রহমান আহমেদকে হত্যা করে। হত্যার পর তার লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরে গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাঁর মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করে দাফন করা হয়। অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ফয়জুর রহমান আহমেদ পিরোজপুর মহকুমায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও তিনি প্রচুর সময় ব্যয় করতেন। মূলত তাঁকে হত্যা করার বিষয়ে হানাদার বাহিনীর এটি অন্যতম কারণ ছিল। হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয় হওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত দীর্ঘদিন ফয়জুর রহমানের কবর নিয়ে তেমন কেউ মাথা ঘামায়নি। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে বহু বছর পর মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বাবার কবর দেখতে যান। এরপর তাঁর কবর ব্যাপকভাবে জনসমক্ষে আসে।

ফয়জুর রহমান আহমেদ
ফয়জুর রহমান আহদে ও তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ দুজনেই ছিলেন সাহিত্যিক। পারিবারিক পরিম-লে সাহিত্য-সংস্কৃতি-চর্চার অনুকূল আবহে তঁঅর সন্তানগণের  শৈশব জীবন অতিবাহিত হয়। ফয়জুর রহমানের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি সমকালীন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বগুড়ায় অবস্থানকালে ‘দীপ নেভা যার ঘরে’ নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি তাঁর স্বদেশ ভাবনা ও আর্থসামাজিক বিষয়গুলো দার্শনিক নান্দনিকতায় তুলে ধরেছেন।

ফয়জুর রহমান আহমেদ নিজে সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি সন্তানদের সাহিত্যচর্চায় জন্য উৎসাহ দিতেন। তাঁর প্রথম সন্তান হুমায়ূন আহমেদ, দি¦তীয় সন্তান মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন কথাসাহিত্যিক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কনিষ্ঠ সন্তান আহসান হাবীব খ্যাতিমান রম্যলেখক ও কার্টুন ম্যাগাজিন ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক। তাঁদের মা আয়েশা ফয়েজও লেখালেখি করতেন।  ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ‘জীবন  যে রকম’ নামে তাঁর একটি আত্মজীবনমূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ফয়জুর রহমানের ঐকান্তিক পরিচর্যা ও আগ্রহ তিন ভাইকে লেখার জগতেই শুধু আনেননি, স্থায়ীই করে দিয়েছেন চিরকালের কোলে সাহিত্যের নির্মেঘ মহিমায়। পুলিশ অফিসার পিতার পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ না-থাকলে হয়তো বাংলা সাহিত্য এ তিনরত্নের বিরল সাহিত্যকর্ম হতে বঞ্চিত হতো- এমনটি বলা অযৌক্তিক হবে না। এ হিসাবে তাঁকে বাংলা সাহিত্যে নবধারার প্রতিষ্ঠাতা তিন দিকপালের স্রষ্টা বলা যায়। ফয়জুর রহমান আহমেদের এ ভূমিকা ও অবদান বঙ্কিমচন্দ্র চেট্টোপাধ্যায়ের পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনীয়।
পিরোজপুর মহকুমায় চাকরিকালীন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে একজন লোক এসে এসডিপি ফয়জুর রহমান আহমেদকে স্থানীয় মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বলে।  তিনি সরল বিশ্বাসে মিলিটারি ক্যাম্পে যান। এরপর তাঁকে আর কেউ জীবিত দেখেননি। পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। পিরোজপুরেই  শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদকে দাফন করা হয়। তাঁর সমাধি ফলকে লেখা আছে :
‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে’
ফয়জুর রহমান আহমেদ
(মহকুমা পুলিশ প্রধান)


Friday 19 June 2015

লেখক পরিচিতি : ড. মোহাম্মদ আমীন



লখেক পরচিতিি : ড. মোহাম্মদ আমীন
ড. মোহাম্মদ আমীনরে জন্ম ১৯৬৪ খ্রস্টিাব্দে চট্টগ্রাম জলোর চন্দনাইশ থানার চন্দনাইশ পৌরসভার অর্ন্তগত চন্দনাইশ গ্রাম।ে তাঁর পতিার নাম নুরুল ইসলাম, মায়রে নাম সকনিা বগেম। দক্ষণি গাছবাড়ীয়া প্রাথমকি বদ্যিালয়ে তার আনুষ্ঠানকি অধ্যয়নরে সূচনা। অতঃপর গাছবাড়ীয় নত্যিানন্দ গৌরচন্দ্র বহুমুখী উচ্চ বদ্যিালয় ও গাছবাড়ীয়া সরকারি কলজে হয়ে চট্টগ্রাম বশ্বিবদ্যিালয়। চট্টগ্রাম বশ্বিবদ্যিালয় হতে পরসিংখ্যান বভিাগে ব.িএসস(িঅর্নাস) ও মার্স্টাস ডগ্রিি র্অজন করনে। ১৯৯১ খ্রস্টিাব্দে বসিএিস(প্রশাসন) ক্যাডাররে সদস্য হসিবেে সহকারী কমশিনার ও ম্যাজস্ট্রিটে পদে সরকারি চাকুরতিে যোগদানরে মাধ্যমে র্কমজীবনরে সূচনা। চাকুরতিে প্রবশেরে পর এলএলবি ও এলএলএম ডগ্রিি র্অজন করনে। তনিি র্মাকনি যুক্তরাষ্ট্ররে অ্যাডওর্য়াড ইউনভর্িাসটিি থকে২ে০০৮ খ্রস্টিাব্দে পএিইচ.ডি ডগ্রিি র্অজন করনে। উপন্যাস, রম্যরচনা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, গবষেণা, জীবনী, শশিুসাহত্যি, ইতহিাস প্রভৃতি তাঁর সাহত্যির্কমরে বচিরণ ক্ষত্রে। এ র্পযন্ত তাঁর লখো গ্রন্থরে সংখ্যা ৫৪। তন্মধ্যে নচিে কয়কেটরি নাম দওেয়া হলো:
১.    র্জজ ওয়াশংিটন হতে বারাক ওবামা;
২.    পৃথবিীর বভিন্নি দশেরে জাতরি পতিা;
৩.    ঠাকুরগাঁওয়রে মুক্তযিুদ্ধ ;
৪.    হাসতে হাসতে বাংলা শখো ;
৫.    বাংলা সাহত্যি ও ভাষা আন্দোলনরে সংক্ষপ্তি ইতহিাস ;
৬.    বাংলা বানান ও শব্দ চয়ন,
৭.    সহজ বাংলা উচ্চারণ;
৮.    বাংলা সাহত্যিরে অ আ ক খ;
৯.    রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনরে কথা;
১০.    আহমদ ছফার চোখে বাংলাদশেরে বুদ্ধজিীবী;
১১.    নন্দতি কান্না নন্দিতি হাসি ;
১২.    দুই রাজকুমারী ;
১৩.    রমণীয় পাঁচালী;
১৪.    খরগোশ ও কচ্ছপ;
১৫.    বদল বাড়রি ভূত;
১৬.    মানুষই সরো;
১৭.    আর্ন্তজাতকি দবিস ;
১৮.    অভয়নগররে ইতহিাস ;
১৯.    তলিোত্তমা হাতয়িা: ইতহিাস ও ঐতহ্যি;
২০.    চকরয়িার ইতহিাস;
২১.    ম্যাজস্ট্রিসেি ও আদশেনামা;
২২.    বন মামলা দায়রে ও পরচিালনার কৌশল;
২৩.    র্পাবত্য চট্টগ্রাম বষিয়ক আইন;
২৪.    জল দুনয়িার মানুষ;
২৫.    বাংলা বানান : ভুল কারণ ও প্রতকিার
২৬.    সময়রে পরশ পাথর;
২৭.     মোহনীয় নরক;
২৮.    জলো, উপজলো ও নদ-নদীর নামকরণরে ইতহিাস;
২৯.    বাংলা সাহত্যিে প্রশাসকদরে ভূমকিা;
৩০.    রঙ্গরসে বাংলা বানান
৩১.    বড়িম্বনা
৩২.    রঙ্গরসে বাংলা বানান
৩৩.    অফসি আদালতে বাংলা লখোর নয়িম
৩৪.    বড়িম্বনা
৩৫. বাংলা বানান কোথায় কী লখিবনে
৩৬. মানুষ ও বড়িাল
৩৭. বাংলা শব্দরে পৌরাণকি উৎস
৩৮. বাংলা সাহত্যিে পুলশিরে ‍ভূমকিা
৩৯. ভূতঅঙ্করে জরিো থয়িোরি
৪০. দাপ্তরকি প্রমতি বাংলা বান্না

আহমদ ছফা বললেন/ ড. মোহাম্মদ আমীন

 আহমদ ছফা বললেন গোসল জমবে না

বিয়ে করবেন না?
ওহ্‌, আল্লাহ্‌, আমার বিয়ের জন্য তোমার এত মাথা ব্যাথা কেন? যাও, এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে এস।
এত সিগারেট টানেন কেন?
এটাই একমাত্র বস্তু যে, জ্বালিয়ে দিলেও কোন প্রতিবাদ করে না। I can ask for cigarettes in every language.
আপনি চন্দনাইশ খুব কম যান।
মাঝে মাঝে যাই এটও তোমাদের ভাগ্য। তুমি জান না আমার ভাতিজা সিরাজ, আনোয়ার এরা কীভাবে আমাকে প্রতিনিয়ত শোষণ করছে? কীভাবে কষ্ট দিচ্ছে প্রতিবেশিরা? সম্পত্তি নিয়ে কীভাবে হয়রানি করছে? আমি সম্পত্তিগুলো তাদের দিয়ে দেব। আত্মীয়দের জন্য ঢাকা পর্যন্ত থাকতে পারছি না, আবার গ্রাম! যেখানে আমার নিজের চলতে কষ্ট হচ্ছে সেখানে সিরাজ- আনোয়ারের মতো অথর্ব আত্মীয়দের ব্যয়ভারও আমাকে বহন করতে হচ্ছে।
সিরাজকে তো আপনি ভালোবাসেন?
তোমার ফুপাতো বোন বিয়ে করেছে। সে মেয়েটির জন্যই আমার কষ্ট। আনোয়ার তো শুধু পাওয়ার জন্য আসে।   সিগারেট কই?
বাংলামটরের বাসা থেকে একটু দূরেই যেতে হয় সিগারেট আনতে। গিয়ে দেখি আহমদ ছফা গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকে গেছেন। আমার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে আসেন গোসল না-করে। বললেন, আগে আর একটা সিগারেট টেনে নিই, নইলে গোসল জমবে না।

Monday 15 June 2015

মোহাম্মদ আমীন সাহিত্যিক ও সাহিত্যকর্ম / এস এম আবীর চৌধুরী

মোহাম্মদ আমীন

ড. মোহাম্মদ আমীন ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া গ্রামে এক অভিজাত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর  পিতা প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ পিরে কামেল ও ইসলামি সংস্কৃতির বিশিষ্ট পুরোধা হযরতুল আল-ামা সৈয়দ মৌলানা নুরুল ইসলাম। মাতার  নাম সকিনা খাতুন চৌধুরানী, মাতামহের নাম আবিদুর রহমান এবং মাতামহীর নাম বজলি বেগম চৌধুরানী।  পিতামহ প্রখ্যাত আধ্যাত্বিক সাধক পিরে কামেল হযরতুল আল¬ামা মৌলানা সৈয়দ গোলাম শরীফ। যিনি বড় হুজুর নামে সমধিক পরিচিত। তাঁর  প্রথম সন্তান এস এম আবীর চৌধুরী মীম বাংলা সাহিত্যের সর্বকনিষ্ঠ লেখক। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর  লেখা রূপকথার গল্প ‘দুধবুড়ি’ প্রকাশিত হয়। সে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত শিশুশিল্পী।

বাড়িতে পিতামহের কাছে আরবি, উদুৃ ও ফারসি এবং মায়ের কাছে বাংলা শেখার মাধ্যমে মোহাম্মদ আমীনের হাতেখড়ি। অতপর বাড়ির পাশে অবস্থিত দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। উক্ত বিদ্যালয় হতে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে গাছবাড়ীয়া নিত্যানন্দ গৌরচন্দ্র বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গেউত্তীর্ণ হয়ে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজে আইএসসি ক্লাশে ভর্তি হন। উক্ত কলেজ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি পাশ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে গমন করেন। চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে বিএ অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন এবং পরিসংখ্যানে বিএসসি (অনার্স) ও জনমিতি বিজ্ঞানে থিসিসগ্র“পে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘মাসিক সাধারণ জ্ঞান’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি ছিল তৎকালীন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ সাধারণ জ্ঞানের উপর প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা।

ছাত্রজীবন হতে তাঁর  লেখালেখি শুরু। উচ্চবিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন চট্টগ্রাম শহরের কাজী নজরুল ইসলাম রোড হতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বনভূমি পত্রিকায় তাঁর  প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটির নাম ছিল স্বাধীনতা। কবিতাটির জন্য চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র তাকে এক হাজার টাকা এবং একটি দামি কলম পুরষ্কার দেন।  এ পুরষ্কার তাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন দৈণিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ ও দৈনিক নয়াবাংলা পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাঁর  লেখাপড়ার খরচের সিংহভাগ লেখালেখি হতে আসতো। অধিকন্তু তিনি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রিলেন্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর  প্রথম গ্রন্থ ‘এ সমাজ’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র কমিটি কর্তৃক ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের বছরই তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তাঁর  প্রথম পোস্টিং ছিল কুড়িগ্রাম। চাকরিতে ঢুকার পরও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। বান্দরবানে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকুরিকালীন বিধি ও আইন সম্পর্কিত বিষয়ে তিনি সমস্যায় পড়েন। পার্বত্য চট্টগ্রাম হিলট্র্যক্টস ম্যানুয়াল-১৯০০ অনুযায়ী পরিচালিত। এখানকার আইন দেশের সমতল অঞ্চলের আইন হতে ভিন্ন। কিন্তু আইন ও বিধিগুলো ছিল সব ইংরেজিতে এবং এগুলো বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত। তাই প্রয়োজনের সময় প্রশাসক ও বিচারকদের আইনগত জটিলতায় পড়তে হতো। প্রশাসনকে এ অবস্থা হতে রক্ষার করার লক্ষ্যে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত সকল বিধিগুলো বাংলায় অনুবাদ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আইন শিরোনামে একটি আইন গ্রন্থ প্রকাশ করেন। প্রকাশ ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ। গ্রন্থটি তিন পার্বত্য জেলায় এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো যে, প্রকাশের তিন মাসের মধ্যে ত্রিশ হাজার কপি নিঃশেষ হয়ে যায়। এরপর আরও বিশ হাজার কপি বিক্রি হয়। পঞ্চাশ হাজার কপি বই বিক্রি করে তিনি একটা মোটা অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হন। চাকরি জীবনের অর্থকষ্ট ও টানাটানি অনেকটা দূরীভূত হয়। এ সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি লেখালেখিতে আরও নিবিড় ও একাত্ম হয়ে যান।

চাকরিতে থাকাকালীন তিনি সরকারের অনুমতি নিয়ে এলএলবি ক্লাশে ভর্তি হন এবং গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর  গবেষণা সন্দর্ভ- ওয়ার ক্রাইম: ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল ডেভলাপমেনট এন্ড লিগ্যাল প্র্যাকটিস। উল্লেখ্য ওয়ার ক্রাইমের উপর বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি ভেদরগঞ্জ শিশুমঞ্চ নামের উন্নতমানের একটি শিশু শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তিনি মহালছড়ি শিশুমঞ্চ নামের আর একটি শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

ছোটগল্প, রম্য রচনা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ইতিহাস, জীবনীগ্রন্থ ও ছড়াসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর  সতত বিচরণ থাকলেও তিনি মূলত একজন গবেষক হিসেবে পরিচিত। Relation Between Magistrate and Police, Meet Bandarban. Roles of Extra Judiciary Organs to ensure effective judiciary system, বাংলা বানানে ভুল: কারণ ও প্রতিকার, এক নজরে বাংলা সাহিত্য ও ভাষা আন্দোলন, সহজ বাংলা উচ্চারণ, আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, বাংলা সাহিত্যের অ আ ক খ,  রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা, বন মামলা দায়ের ও পরিচালনার কৌশল, ম্যাজিস্ট্রেসি ও আদেশনামা, জামিন তত্ত্ব ও রায়, বাংলা বানান ও শব্দ চয়ন, ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ, মামলা ও আইনি হয়রানি হতে নি®কৃতির উপায়, তুচ্ছ হলেও উচ্চ, অভয়নগর প্রোফাইল, বাংলা বানানে ভুল কারণ ও প্রতিকার, জেলা, উপজেলা ও নদনদীর নামকরণের ইতিহাস, আন্তর্জাতিক দিবস, কক্সবাজারের প্রতিষ্ঠাতা হিরাম কক্স, বাংলা সাহিত্যে প্রশাসকের ভূমিকা, বাংলা সাহিত্যে পুলিশের অবদান, বিড়ম্বনা, অফিস আদালতে বাংলা লেখার নিয়ম, রঙ্গরসে বাংলা বানান, বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন, বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, শুদ্ধ বানান চর্চা ইত্যাদি ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা গ্রন্থ।

জনাব মোহাম্মদ আমীনের প্রথম উপন্যাস জল দুনিয়ার মানুষ। এটি তিনি অভয়নগর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনা জেলার দীঘলীয়া উপজেলাব্যাপী প্রতিক্রিয়ারত ভবদহ এলাকার জলবন্দি মানুষের জীবনের প্রাত্যহিককর্মকাণ্ড, সমস্যা, সুখ-দুঃখ ও সম্ভাবনা নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার  আলোকে রচনা করেন। নন্দিত কান্না ও নিন্দিত হাসি জনাব আমীনের একটি গবেষণামূলক উপন্যাসধর্মী রচনা। এ গ্রন্থটি রচনার জন্য তিনি দুই মাস ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন। এ গ্রন্থের জন্য তিনি আইইআই পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর  দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বহ্নিবিবুক্ষ’।  বহ্নিবিবুক্ষ উপন্যাসে দাম্পত্য জীবনের দ্বন্দ্ব ও বিবাহিত জীবনের স্বরূপ উন্মোচণ করা হয়েছে। তাঁর  তৃতীয় উপন্যাস ‘স্বপ্ন জড়ানো পাহাড়’। এটি পাবর্ত্য এলাকার পাহাড়ি-বাঙ্গালি সম্পর্ক এবং ভূমি ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ের উপর বাস্তব অভিজ্ঞতার  আলোকে রচিত। রাজকীয় জীবন ও শারমেয় মরণ ড. আমীনের লেখা একটি রম্য উপন্যাস। এ উপন্যাসে বিবাহিত ও অবিবাহিত জীবনের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিস্তৃত হয়েছে।

রমণীয় পাঁচালী তাঁর  প্রথম রম্য রচনা। তাঁর  লেখা অন্যান্য রম্যরচনাগুলো হচ্ছে নন্দলালের তীর্থযাত্রা, উল্টোদেশে নন্দঘোষ, গদাই বাবুর তীর্থযাত্রা, নিমকহারাম রাজকুমারী, খরগোশ ও খচ্ছপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  খরগোশ ও খচ্ছপ গ্রন্থে কল্পিত ইসপের দৌড় প্রতিযোগিতায় যেখানে খরগোশকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে ড. আমীনের গ্রন্থে খরগোশকে জয়ী করা হয়েছে এবং কচ্ছপ কারচুপির মাধ্যমে জিতেছে বলে তাঁর  হাতপা ভেঙ্গে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাঁর  শিশুতোষ গ্রন্থ ‘মানুষই সেরা’ হাসতে হাসতে বাংলা শেখা, টাকা ছোট পয়সা বড়, ছোটদের আন্তর্জাতিক দিবস ও ছোটদের বাংলা উচ্চারণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আঞ্চলিক ইতিহাসের উপর জনাব আমীনের ঝোঁক লেখালেখির প্রথম হতে লক্ষ্যণীয়। হাতিয়ায় উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন তাঁর  প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস গ্রন্থ ‘তিলোত্তমা হাতিয়া: ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ড. আমীন হাতিয়া জনকল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম ও হাতিয়া শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি কর্তৃক পুরষ্কারে ভূষিত হয়। তাঁর  অন্যান্য ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে অভয়নগরের ইতিহাস, চকোরিয়ার ইতিহাস, ভেদরগঞ্জের ইতিহাস এবং জেলা, উপজেলা ও নদনদীর নামকরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জীবনীগ্রন্থ রচনাতেও তিনি সমানভাবে সফল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতা, জর্জ ওয়াশিংটন হতে বারাক ওবামা, নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক; ১৯০১-২০১১। প্রথমোক্ত গ্রন্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতির পিতার জীবনী, জাতির  পিতা হিসেবে তাদের বেড়ে উঠা ইত্যাদি পরিবেশিত।

বহ্নিবিবুক্ষ ও পাহাড় বরন তাঁর  জনপ্রিয় দুটি উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস নারীপুরুষ ও স্বামীস্ত্রীর স্বরূপ বিবর্ধনে সংসারের প্রকৃত অবস্থার জীবন্ত কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রন্থের প্লট পাবর্ত্য এলাকা। লেখক পার্বত্য এলাকায় চাকরি করেছেন। অধিকন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সন্তু লারমার বড় ভাই মানবেন্দ্র লারমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। যা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সে ভিত্তিতে তিনি এ উপন্যাসে পাহাড়ি বাঙ্গালি সম্পর্ক, পার্বত্য এলাকায় কর্মরত অফিসারগণের প্রতি সাধারণ্যের দৃষ্টিভঙ্গী ।

ড. আমীন বাংলা একাডেমী, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস সমিতি, আইএআরএইচ প্রভৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য। তিনি এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডারের ভূমিকা (চতুর্থ অধ্যায়) / ড. মোহাম্মদ আমীন



মুক্তিযুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডারের ভূমিকা

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ১০ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রতিরোধ ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখেই শুরু হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সংগঠন সমন্বয়ে, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী দেশ ভারত   সেনাবাহিনী সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম এই সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরূদ্ধতা যুদ্ধের রূপ নেয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে  উঠে। মুজিবনগর সরকার গঠনের পরপরই প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যগণ সরকারে কাজ করার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করেন। দেশের অভ্যন্তরে তারা মুজিবনগর সরকারকে জনপ্রিয় করে তুলেন এবং জনগণকে সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও তৎসঙ্গে আস্থাশীল করে। অধিকন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যবর্গ মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য সপক্ষ শক্তির ন্যায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জনমত আদায়ে সচেষ্ট হয়ে উঠেন। হাজার হাজার প্রশাসক জীবনের ভয় তুচ্ছ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

মুক্তিযু্দ্ধকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং লে কর্নেল আবদুর রবকে চিফ অফ স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ রূপে নিযুক্ত করে সমগ্র বাংলাদেশকে১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয় ঐসব সেক্টরকে আবার সেক্টর কমান্ডারগ তাদের নিজ নিজ সুবিধা মত সাব সেক্টরে ভাগ করে নিয়েছিলেন এছাড়াও কর্নেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেছিলেন যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের অদ্যাংশ দিয়ে ( এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স)প্রভৃতি। এ সকল সেক্টর ও সাব-সেক্টরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের দায়িত্ব পালনে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যবর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর সার্বিক দায়িত্বে ছিল। এ সময় প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন আবদুস সামাদ। উপসচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও এম এ ইমাম। সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন নূরুল ইসলাম চৌধুরী ও এম এইচ সিদ্দিকী।

ক্যাবিনেট ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের প্রধান সচিব ছিলেন রুহুল কুদ্দুস। তার অধিনে সংস্থাপন সচিব নূরুল কাদের খান এবং কেবিনেট সচিব ছিলেন এইচ টি ইমাম। উপ-সচিবগন ছিলেন কামাল উদ্দিন আহম্মদ, তৌফিক এলাহী চৌধুরী, দীপক কুমার চৌধুরী, ওলিউল ইসলাম। সহকারী সচিব ছিলেন বজলুর রহমান , নরেশ চন্দ্র রায়, মতিউর রহমান, এম আউয়াল, আবু তালেব, মোহাম্মদ হেদায়েত উল্ল্যা, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও  শাহ মতিউর রহমান।
যুদ্ধকালীন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার ইত্যাদি কাজ শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যগণ এ সময় (১) বাজেট প্রণয়ন আয়-ব্যয়ের হিসাব; () বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য উৎস থেকে সংগৃহীত সম্পদের হিসাব প্রস্তুত; ()বিভিন্ন সংস্থা ব্যক্তিবর্গকে অর্থ প্রদানের দায়িত্ব পালন বিধিমালা প্রণয়ন; (৪) আর্থিক শৃঙ্খলা প্রবর্তন; (৫) রাজস্ব শুল্ক আদায় এবং (৬)আর্থিক অনিয়ম তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে সরকারকে একটি শক্ত ভিতে দাঁড় করিয়ে দেন। যা সার বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি তহবিল খোলা হয়েছিল। এই ফান্ডে ভারত, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা হতো। সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের যে স্মারক ডাকটিকিট বের করেছিলেন তার বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতে বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচের টিকেট থেকে প্রাপ্ত ৩লক্ষ টাকা সরকারি ট্রেজারিতে জমা করেন। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যগণ  এ সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালেন করে।

প্রারম্ভে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো এই স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধিও তেমন ব্যপক ছিল না পাকিস্তান বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ লুটপাটের কারণে সাধারণ মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে পরে এবং সীমান্তের পাড়ে আশ্রয় নিতে থাকে সময় ত্রাণ সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দেয় সীমান্ত অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে এবং দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারনে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বৃদ্ধি পায় এসব কারণে পুলিশ প্রশাসন গঠন একে কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যগণ এ কাজে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে আছে। 

এ সময় স্বরাষ্ট্র,ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন এম এ খালেক। উপসচিব ছিলেন খসরুজ্জামান চৌধুরী এবং সহকারী সচিব জ্ঞানরঞ্জন সাহা ও গোলাম আকবর। খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব। মন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন সাফাত হোসেন। সহকারী সচিব ছিলেন মাখন চন্দ্র মাঝি, শামসুদ্দিন হায়দার, ক্ষিতিশ চন্দ্র কুন্ডু, কে এম হেফারত উল্লাহ, আলি করি, মোঃ ইদ্রিস আলি , জগন্নাথ দে, কে আনোয়ার হক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে ত্রাণ পুনর্বাসন বিভাগের কাজকর্ম সম্পন্ন করা হত। একজন রিলিফ কমিশনারের অধীনে এই বিভাগ সংগঠিত ছিল। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা হত। আবেদনপত্র ছিল বিভিন্ন ধরনের। এসব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হত। শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকদেরই ত্রাণ সুবিধা দেয়া হতো।

যুদ্ধকালীন স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ভূমিকা দুইই ছিল অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকেই যুদ্ধের প্রয়োজনেই সীমান্তের কাছাকাছি অনেক জায়গায় সামরিক হাসপাতাল গড়ে উঠে। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে ত্রিপুরা-কুমিল্লা সীমান্ত বরাবর ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেনএছাড়া বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির নাগরিকদের চিকিৎসা-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুউদ্দিন আহমদের অধিনে দায়িত্ব পালন করেছেন উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম।  পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান কাজ ছিল বহির্বিশ্বে জনমত গড়ে তোলা এনং যথাসম্ভব বন্ধু রাষ্ট্রদের থেকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালানো যদিও বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নামে আলাদা একটি মন্ত্রণালয় তার কর্মী ছিল তথাপি পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রায় সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বসূমূহ যথাযথভাবে পালনে করেছেন প্রশাসন ক্যাডার। মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন মাহবুবুল আলম চাষী। মন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী।