Translate

Sunday 31 January 2016

ড. মোহাম্মদ আমীন : বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সাধক / মো: আব্দুস সালাম খান

মোহাম্মদ আমীনের চকরিয়ার ইতিহাস  অভয়নগরের ইতিহাস গ্রন্থে যে সকল চমৎকার তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা পড়ে মুগ্ধ হতে হয়। পুঁটি মাছের মুখ দিয়ে  “ পৃথিবীতে একমাত্র  মানুষই  নিজের  মলমূত্র খায়”  বলিয়ে যেভাবে মানুষের বিবেককে জাগিয়ে  তুলতে চেষ্টা করা হয়েছে তাতে স্যানিটেশন সম্পর্কে মানুষ মানুষ  সচেতন  না হয়ে পারে না। তার গ্রন্থসমূহে অতীতকে  জানার এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ  রচনার জন্য  মানব  সমাজকে সাহায্য করবে  বলে আমি বিশ্বাস করি। সাহিত্য চর্চায় তার মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে মানব কল্যাণে তিনি আরও ব্রতী হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তার সাধানা তাকে খ্যাতির উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবে এটাই কামনা করি।
জনাব আমীনের লেখা  ‘বনমামলা দায়ের ও পরিচালনার কৌশল’ এবং ‘ম্যাজিস্ট্রেসি ও আদেশনামা’ বইদুটো আমাদের সহকর্মীদের দৈনন্দিন কর্তব্যপালনে উপকারে আসবে। বই দুটো প্রশাসনে নিয়োজিত উদীয়মান কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রমে আরও সুদক্ষ করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। জনাব মোহাম্মদ আমীন আমাদের গর্ব। আমি তার চমৎকার লেখার প্রশংসা করছি। তার এ কর্ম প্রচেষ্টা অন্যদেরকে বই লিখতে অনুপ্রাণিত করবে।
কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনাব আমীনের সাহিত্য চর্চায় আমি মুগ্ধ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ম্যাজিস্ট্রেসির পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা করে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন। ‘তিলোত্তমা হাতিয়া’ যিনি লিখেত পারেন তার পক্ষে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করা অসম্ভব নয়। তার জন্য আমি গর্ববোধ করি।

লেখক : মো: আব্দুস সালাম খান, প্রাক্তন সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও  রেক্টর, বিপিএটিসি, সাভার, ঢাকা ও প্রাক্তন জেলাপ্রশাসক, চট্টগ্রাম।

ড. মোহাম্মদ আমীনের চোখে আহমদ ছফা / সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস

 পশ্চিমবঙ্গ হতে ড. মোহাম্মদ আমীনের কাছে লেখা সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাসের চিঠি
প্রিয় মোহাম্মদ আমীন সাহেব 
আশা করি ভালো আছেন। আপনার লেখা ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ বইটা পড়লাম। সকাল দশটায় বইটায় একটু চোখ বুলানোর জন্য হাতে নিয়ে বিছানায় বসলাম। হাতে কিছু অন্য কাজও ছিল। কিন্তু অন্য কাজ আর হলো না। দুপুর দুটা নাগাদ বইটা শেষ করে তারপর স্নান করতে গেলাম। কী যে ভালো লাগলো! তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।মনটা যেন প্রশান্তিতে ভরে গেল।  
বর্ডারের ঝামেলার কথা মনে করে মাত্র দুই সেট বই নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে। তার এক সেট আপনাকে দিয়ে দিই। পরে অনেকে বই চেয়েছেন দিতে পারিনি।একবাই বোধহয় ভেবেছিলাম, তাঁকে বই দুটো না দিলেই ভালো হতো। কারণ সাধারণত সরকারি কর্তাব্যক্তিরা বইপত্র তেমন পড়েন না। যত বড় কর্তা হন, বই পড়ার হার তত কমে যায়। এখন বুঝতে পারছি- আমার ওই ছাইটুক না দিলে এই ‘সোনার তাল’ কোনোদিনই হয়তো বা পেতাম না। আহমদ ছফা হয়তো বা আমার অজানাই থেকে যেতেন।  
আমি সাহিত্যের ছাত্র নই। সাহিত্য বুঝি না, সাহিত্যিকদের চিনি না তেমন। এপার বা ওপার বাংলার সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে তেমন কোনো পরিচয় নেই। যতদূর মনে পড়ে ওপার বাংলার সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচয় বলতে -ইলিয়াস সাহেবের ‘খোয়াবনামা’, অন্য কোনো এক লেখকের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ এমন এক আধটু। আহমদ ছফা সাহেবের সৃষ্টি সাথে পরিচয় না ঘটা তাই আমার ক্ষেত্রে অগৌরবের হলেও অস্বাভাবিক নয়।  
আপনি লিখেছেন ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি পেলাম ‘ আপনার চোখে আহমদ ছফা’।আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ! বেনিয়া গোষ্ঠীর কবল থেকে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির মুক্তিসংগ্রাম! উহ্- এ আর এক মহান যুদ্ধের সুতীব্র আহবান। আহমদ ছফার সাহিত্য সৃষ্টির সাথে আমার এখনও পরিচয় ঘটেনি। কিন্তু সেটা কোনো বিষয় নয়। আনন্দবাজার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রনমুক্ত হবার যে দিক্‌নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন, তাতেই তাঁর চিন্তার শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়।  
‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থ পাঠ করার পর বুঝতে কষ্ট হয় না যে, আহমদ ছফা একজন বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী চরিত্র। আপনার বইয়ে তাঁর যে তেজ, যে আদর্শ, যে সাহস এবং যে নির্লোভ দৃঢ়তা প্রকাশ হয়েছে তা দলিত মানুষের জন্য  একটি বড় সুখবর। কিন্তু এ বই থেকে পরিষ্কার হলো না - তিনি কোনো স্বতন্ত্র সাহিত্যধারার সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন কি না; যা একান্তই প্রয়োজন। 
পশ্চিম বাংলায় একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যধারার আন্দোলন শুরু হয়েছে। যা ‘দলিত সাহিত্য আন্দোলন’ নামে পরিচিত। প্রচলিত সাহিত্য বা আনন্দবাজারী সাহিত্যকে তারা ‘ব্রাহ্মন্যবাদী সাহিত্য’ নামে চিহ্নিত করে। দলিত সাহিত্য, ব্রাহ্মন্যবাদী শিল্প-সাহিত্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দলিত, গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রাম, তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাকে উপজীব্য করে তাদের বিকাশের জন্য সাহিত্য সৃষ্টি করে। দলিত সাহিত্য নিছক কোনো সাহিত্য কর্ম নয়; এটি হলো একটি আন্দোলন-- সময় বদলের সংগ্রাম। তাদের সংগঠন ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থা’ এবং তাদের মুখপত্র ‘চতুর্থ দুনিয়া’(তৃতীয় বিশ্বে দলিতরা অন্য আর এক জাতের মানুষ)। 
মনে হচ্ছে আহমদ ছফা সৃষ্টি করেছেন একটি স্ফুলিঙ্গ- য দিয়ে দাবানল তৈরি হতে পারে। সে গুরুদায়িত্ব আপনাদের। ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থের মাধ্যমে তা আপনারা অতি সাহসের সঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েছেন । আহমদ ছফাকে অনুসরণ করে যদি একটি স্বতন্ত্র সাহিত্য-সংস্কৃতির আন্দোলন আপনারা গড়ে তুলতে ও বাঁচিয়ে রাখতে না পারেন, তাহলে ছফা একদিন হয়তো বা হারিয়ে যাবেন, তাতে সমাজ বদলের সংগ্রাম আরও দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। 
আহমদ ছফাকে নিয়ে যিনি লেখেন, সেই লেখার মধ্যে আহমদ ছফার সাথে লেখককেও খুঁজে পাওয়া যায়। লেখকের সত্ত্বায় যদি আহমদ ছফা মিশে না থাকতেন, তাহলে এমন প্রাণবন্ত ছফাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। অসম্ভব ভালো আপনার অনুভূতি, সুউচ্চ আপনার মূল্যবোধ, সুতীক্ষ্ণ আপনার কলম।আহমদ ছফার কথাকে ঠিক আহমদ ছফার মতো অগ্নিস্বরে আপনার কলম দিয়ে বের করেছেন।  
মনে হচ্ছে আপনার বইয়ে কোনো এক জায়গার ‘চৈতন্য দেব’ এর উল্লেখ করেছেন। তিনি নমস্য, তাঁকে নমস্কার জানিয়ে আপনাকে অনুরোধ করব, ‘হরি গুরু চাঁদ’ এর খোঁজ নিন একটু। জন্ম গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে। আমার লেখা বইয়ে ‘গ্রাম বাংলার রেনেসাঁর জনক গুরুচাঁদ ঠাকুর’ শিরোনামে একটা লেখায় তাঁর প্রাথমিক পরিচয় পাবেন। আমার বিশ্বাস আপনি চেষ্টা করলে আপনার কলমের আঁচড়ে তাঁরা প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারবেন। 
আমার জন্ম মশিয়াহাটিতে। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে কেটেছে। তারপর একান্ত অনিচ্ছায় ভারতে বন্দি হয়ে আছি। পালাবার পথ করে উঠতে পারিনি কিন্তু পালাবার ইচ্ছা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।মনে হয়, ওই মাটি (বাংলাদেশের) আপনাদের থেকেও আমার বেশি প্রিয়। দীর্ঘ বিরহে প্রেমাকর্ষণ যেন বেড়েই চলেছে। খুব তাড়াতাড়ি ্আবার মশিয়াহাটি (যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার একটি গ্রাম) যাবার ইচ্ছা আছে।  
দেখুন, সাহিত্য, সাহিত্যমূল্য এসব বুঝি না। আমি ‘লিফলেট’ লেখা মানুষ। তাই, মনের কথাগুলো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারলাম না। আপনার বীরপ্রতীক পিতামহ -- ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি থেকে উদ্ধার করার মতই একটু কষ্ট করে আমার আনন্দ ও উচ্ছ্বাস যদি বুঝে নেন, কৃতজ্ঞ থাকব।   
আপনার লেখা ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থটা পড়ে আমি নতুন আলোর আগমন টের পাচ্ছি। তাই আপনার মাধ্যমে ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থা’র একজন কর্মী হিসাবে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক ও প্রাগ্রসর প্রজন্মকে আহমদ ছফার মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বতন্ত্র সাহিত্য-সংস্কৃতির আন্দোলনকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবে উজ্জীবিত ও দলিতের কল্যাণে নিবেদিত একটি সার্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, দলিত মানুষের হাহাকার, বঞ্চিতের চীৎকার। 
ধন্যবাদসহ,
আপনার গুণমুগ্ধ
সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস নতুন পল্লী, মছলন্দপুর উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

ড. মোহাম্মদ আমীনের চোখে আহমদ ছফা / সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস

 পশ্চিমবঙ্গ হতে ড. মোহাম্মদ আমীনের কাছে লেখা সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাসের চিঠি
প্রিয় মোহাম্মদ আমীন সাহেব 
আশা করি ভালো আছেন। আপনার লেখা ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ বইটা পড়লাম। সকাল দশটায় বইটায় একটু চোখ বুলানোর জন্য হাতে নিয়ে বিছানায় বসলাম। হাতে কিছু অন্য কাজও ছিল। কিন্তু অন্য কাজ আর হলো না। দুপুর দুটা নাগাদ বইটা শেষ করে তারপর স্নান করতে গেলাম। কী যে ভালো লাগলো! তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।মনটা যেন প্রশান্তিতে ভরে গেল।  
বর্ডারের ঝামেলার কথা মনে করে মাত্র দুই সেট বই নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে। তার এক সেট আপনাকে দিয়ে দিই। পরে অনেকে বই চেয়েছেন দিতে পারিনি।একবাই বোধহয় ভেবেছিলাম, তাঁকে বই দুটো না দিলেই ভালো হতো। কারণ সাধারণত সরকারি কর্তাব্যক্তিরা বইপত্র তেমন পড়েন না। যত বড় কর্তা হন, বই পড়ার হার তত কমে যায়। এখন বুঝতে পারছি- আমার ওই ছাইটুক না দিলে এই ‘সোনার তাল’ কোনোদিনই হয়তো বা পেতাম না। আহমদ ছফা হয়তো বা আমার অজানাই থেকে যেতেন।  
আমি সাহিত্যের ছাত্র নই। সাহিত্য বুঝি না, সাহিত্যিকদের চিনি না তেমন। এপার বা ওপার বাংলার সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে তেমন কোনো পরিচয় নেই। যতদূর মনে পড়ে ওপার বাংলার সাহিত্যকর্মের সাথে পরিচয় বলতে -ইলিয়াস সাহেবের ‘খোয়াবনামা’, অন্য কোনো এক লেখকের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ এমন এক আধটু। আহমদ ছফা সাহেবের সৃষ্টি সাথে পরিচয় না ঘটা তাই আমার ক্ষেত্রে অগৌরবের হলেও অস্বাভাবিক নয়।  
আপনি লিখেছেন ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি পেলাম ‘ আপনার চোখে আহমদ ছফা’।আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ! বেনিয়া গোষ্ঠীর কবল থেকে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির মুক্তিসংগ্রাম! উহ্- এ আর এক মহান যুদ্ধের সুতীব্র আহবান। আহমদ ছফার সাহিত্য সৃষ্টির সাথে আমার এখনও পরিচয় ঘটেনি। কিন্তু সেটা কোনো বিষয় নয়। আনন্দবাজার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রনমুক্ত হবার যে দিক্‌নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন, তাতেই তাঁর চিন্তার শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়।  
‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থ পাঠ করার পর বুঝতে কষ্ট হয় না যে, আহমদ ছফা একজন বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী চরিত্র। আপনার বইয়ে তাঁর যে তেজ, যে আদর্শ, যে সাহস এবং যে নির্লোভ দৃঢ়তা প্রকাশ হয়েছে তা দলিত মানুষের জন্য  একটি বড় সুখবর। কিন্তু এ বই থেকে পরিষ্কার হলো না - তিনি কোনো স্বতন্ত্র সাহিত্যধারার সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন কি না; যা একান্তই প্রয়োজন। 
পশ্চিম বাংলায় একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যধারার আন্দোলন শুরু হয়েছে। যা ‘দলিত সাহিত্য আন্দোলন’ নামে পরিচিত। প্রচলিত সাহিত্য বা আনন্দবাজারী সাহিত্যকে তারা ‘ব্রাহ্মন্যবাদী সাহিত্য’ নামে চিহ্নিত করে। দলিত সাহিত্য, ব্রাহ্মন্যবাদী শিল্প-সাহিত্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দলিত, গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের জীবন সংগ্রাম, তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাকে উপজীব্য করে তাদের বিকাশের জন্য সাহিত্য সৃষ্টি করে। দলিত সাহিত্য নিছক কোনো সাহিত্য কর্ম নয়; এটি হলো একটি আন্দোলন-- সময় বদলের সংগ্রাম। তাদের সংগঠন ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থা’ এবং তাদের মুখপত্র ‘চতুর্থ দুনিয়া’(তৃতীয় বিশ্বে দলিতরা অন্য আর এক জাতের মানুষ)। 
মনে হচ্ছে আহমদ ছফা সৃষ্টি করেছেন একটি স্ফুলিঙ্গ- য দিয়ে দাবানল তৈরি হতে পারে। সে গুরুদায়িত্ব আপনাদের। ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থের মাধ্যমে তা আপনারা অতি সাহসের সঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়েছেন । আহমদ ছফাকে অনুসরণ করে যদি একটি স্বতন্ত্র সাহিত্য-সংস্কৃতির আন্দোলন আপনারা গড়ে তুলতে ও বাঁচিয়ে রাখতে না পারেন, তাহলে ছফা একদিন হয়তো বা হারিয়ে যাবেন, তাতে সমাজ বদলের সংগ্রাম আরও দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে। 
আহমদ ছফাকে নিয়ে যিনি লেখেন, সেই লেখার মধ্যে আহমদ ছফার সাথে লেখককেও খুঁজে পাওয়া যায়। লেখকের সত্ত্বায় যদি আহমদ ছফা মিশে না থাকতেন, তাহলে এমন প্রাণবন্ত ছফাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। অসম্ভব ভালো আপনার অনুভূতি, সুউচ্চ আপনার মূল্যবোধ, সুতীক্ষ্ণ আপনার কলম।আহমদ ছফার কথাকে ঠিক আহমদ ছফার মতো অগ্নিস্বরে আপনার কলম দিয়ে বের করেছেন।  
মনে হচ্ছে আপনার বইয়ে কোনো এক জায়গার ‘চৈতন্য দেব’ এর উল্লেখ করেছেন। তিনি নমস্য, তাঁকে নমস্কার জানিয়ে আপনাকে অনুরোধ করব, ‘হরি গুরু চাঁদ’ এর খোঁজ নিন একটু। জন্ম গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে। আমার লেখা বইয়ে ‘গ্রাম বাংলার রেনেসাঁর জনক গুরুচাঁদ ঠাকুর’ শিরোনামে একটা লেখায় তাঁর প্রাথমিক পরিচয় পাবেন। আমার বিশ্বাস আপনি চেষ্টা করলে আপনার কলমের আঁচড়ে তাঁরা প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারবেন। 
আমার জন্ম মশিয়াহাটিতে। ২০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে কেটেছে। তারপর একান্ত অনিচ্ছায় ভারতে বন্দি হয়ে আছি। পালাবার পথ করে উঠতে পারিনি কিন্তু পালাবার ইচ্ছা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।মনে হয়, ওই মাটি (বাংলাদেশের) আপনাদের থেকেও আমার বেশি প্রিয়। দীর্ঘ বিরহে প্রেমাকর্ষণ যেন বেড়েই চলেছে। খুব তাড়াতাড়ি ্আবার মশিয়াহাটি (যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার একটি গ্রাম) যাবার ইচ্ছা আছে।  
দেখুন, সাহিত্য, সাহিত্যমূল্য এসব বুঝি না। আমি ‘লিফলেট’ লেখা মানুষ। তাই, মনের কথাগুলো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারলাম না। আপনার বীরপ্রতীক পিতামহ -- ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিযোদ্ধার ডায়েরি থেকে উদ্ধার করার মতই একটু কষ্ট করে আমার আনন্দ ও উচ্ছ্বাস যদি বুঝে নেন, কৃতজ্ঞ থাকব।   
আপনার লেখা ‘আহমদ ছফার চোখে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী’ গ্রন্থটা পড়ে আমি নতুন আলোর আগমন টের পাচ্ছি। তাই আপনার মাধ্যমে ‘বাংলা দলিত সাহিত্য সংস্থা’র একজন কর্মী হিসাবে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক ও প্রাগ্রসর প্রজন্মকে আহমদ ছফার মতো দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্বতন্ত্র সাহিত্য-সংস্কৃতির আন্দোলনকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবে উজ্জীবিত - একটি সার্বজনীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, দলিত মানুষের হাহাকার, বঞ্চিতের চীৎকার। 
ধন্যবাদসহ,
আপনার গুণমুগ্ধ
সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস নতুন পল্লী, মছলন্দপুর উত্তর চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।


Monday 25 January 2016

মা নাকি বউ / ড. মোহাম্মদ আমীন


অক্সফোর্ডে MS এর বিষয় ছিল Impact of marriage on Person and Family. শিক্ষার্থী ৪৯ জন প্রথম ক্লাশের ঘটনা। শিক্ষক প্রত্যেকের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। লেখা ছিল : আপনার কাছে একটি একটি খাবারের প্যাকেট আছে । ওটি দুজনের যে কোনো একজনকে দিতে হবে। ওই দুজনের মধ্যে্ একজন তোমার মা এবং অন্যজন সদ্য-বিবাহিতা স্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে বস্তুটি তুমি কার হতে তুলে দেবে? 
সময় ছিল মাত্র দুই সেকেন্ড।শিক্ষার্থীরা জবাব লিখে শিক্ষকের হাতে ‍তুলে দিলেন। তিনি কাগজগুলো পড়ে বললেন : যারা প্যাকেটটি মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার কথা লিখেছেন, তারা বাস্তবতা বিবর্জিত, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ, পশ্চাৎপদ, অদূরদর্শী, বোকা, স্বার্থপর, অপরিনামদর্শী, মায়ের অকল্যাণকামী, সর্বোপরি নিজের, পরিবারের ও সমাজের সঙ্গে সুন্দর সেতুবন্ধন রচনায় বিচক্ষণ নয়। যারা মা-কে প্রকৃত অর্থে ভালবাসে তারা কখনও প্যাকেটটি মায়ের হাতে তুলে দেবে না।কয়েকজন প্রশ্ন করলেন : কেন?শিক্ষক : দেখ, প্যাকেটটা তোমার মাকে দিলে তিনি খুশি হবেন কিন্তু বউকে দিলে তিনি আরও বেশি খুশি হবেন। বউ ভাববেন, নিজের জন্মদত্রীকে না-দিয়ে আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী আমাকে খুব ভালবাসেন। তিনি আপনার প্রতি আরও অনুরক্ত হবেন। মা ভাববেন, আমার ছেলে, দশমাস পেটে রেখেছি, লালন করেছি; আমাকে না দিয়ে কী বউকে দেবে? বউ ভাববেন ভালবাসা, মা ভাববেন কর্তব্য।বউকে দিলে মা কষ্ট পাবেন সত্য, কিন্তু তোমার সংসার করতে হবে বউয়ের সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে নয়। তোমার মাকে অধিকাংশ সময় পুত্রবধূর সঙ্গে কাটাতে হবে। তুমি যদি প্যাকেটা বউকে দাও সে খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠবে। খুশিতে আপ্লুত বউ বস্তুটা তোমার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারেন : মা, আপনার ছেলের উপহার, আপনি রাখুন, দেখুন কী দিয়েছে আপনার ছেলে। আর যদি মাকে দাও, বউ খুব কষ্ট পাবে। ওই কষ্ট তাকে ঈর্ষাপরায়ণ ও হিংস্র করে তুলতে পারে। যা ক্রমশ আপনাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে দূরত্ব, অবিশ্বাস আর ভালবাসাহীনতা।
মায়ের হাতে তুলে দিলে বউ ভাববেন, না-জানি কী মূল্যবান বস্তু প্যাকেটে আছে। এটা আমাকে পেতেই হবে। স্বামী আমাকে ভালবাসে না। যত ভালবাসা মায়ের প্রতি। আমি পরের মেয়ে তাই এত অবহেলা। এবার বুড়ির মজা দেখাব। এ অবস্থায়, বউ স্বামীর অবর্তমানে শাশুড়ীকে মানসিক অশান্তিতে জর্জরিত করে তুলতে পারেন। অধিকন্তু তুমি মা-কে প্যাকেটটা দিলেও তোমার মা রাখতে পারবেন না। বউ ওই বস্তুটা কোনো এক ফাঁকে সুযোগ বুঝে জোর করে বা কৌশলে নিয়ে নেবেন। সংসারে শুরু হবে অশান্তি, জীবন অতীষ্ঠ হয়ে ওঠবে, এমনকি মায়ের অবর্তমানেও তোমাকে খোচা দেবে।মাকে বউয়ের সেবায় সংসারকে আনন্দময় করে তুলতে হলে বউয়ের হাত দিয়ে মায়ের উপহার দিন। কারণ, মা যতটুকু সহ্য করতে পারবেন, মেনে নিতে পারবেন- বউ তত পারবেন না। কম বয়সী মেয়েরা অভিমানী হন, তারা ভালবাসা ছাড়া কিছু বুঝেন না। বাস্তবতাকে আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সংসারে অশান্তি আসে। তাই প্যাকেটটা মায়ের হাতে দিলে তিনি তার সামান্য সুফলও পাবেন না। কিন্তু বউয়ের হাত দিয়ে মাকে দিলে অন্তত সামান্য হলেও সুফল পাবেন।একজন শিক্ষার্থী বললেন : বউ যদি মাকে পুরো বঞ্চিত করেন?সাধারণত করেন না। কারণ, বউ আপনার মাকে বঞ্ছিত করে আপনার বিরাগভাজন হবেন না। যদি কেউ করেন, সেটি হবে ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারে না। গবেষণায় এমনটি দেখা যায়নি।তোমাদের হয়তো অনেকের জানা আছে, সম্রাট আকবরের দরবারে আগত এক অতিথি রাজাকে পানের বাটা তুলে দেওয়ার গল্প! পানের বাটাধারী এসে দ্বন্ধে পড়ে গেলেন। কার হতে তুলে দেবেন বাটা। রাজার দিলে সম্রাট ভাববেন, আমার খায, আমার পরে, সে কিনা আমার অধীন সামান্য এক রাজার কাছে পানের বাটা তুলে দিল। যদি সম্রাটের হাতে তুলে দেন তো, রাজা ভাববেন, মেহমান হিসাবে ডেকে এনে অপমান! এ অবস্থায় পানদার সম্রাট আকবরের হাতে পানের বাটা তুলে দিয়ে বললেন : মহামহিম সম্রাট, আপনি নিজ হাতে আপনার মেহমানকে পানের বাটা তুলে দিয়ে সম্মানিত করুন। দুজনেই খুশি।বউ যদি আমার মাকে কষ্ট দেন?শিক্ষক : কারণটা খুঁজে বের করতে হবে এবং তোমাকেই সেটি বন্ধ করতে হবে। সংসারকে রাষ্ট্রের চেয়েও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। এখানে আবেগ নয, স্ববেগ প্রয়োগ করতে হবে। মাঝে মাঝে মা ও বউ উভয়কে নিয়ে বেড়াতে যাবে। গল্পচ্ছলে বউকে বুঝাতে হবে, একদিন তিনিও শাশুড়ী হবেন, মাকে বুঝাতে হবে একদিন তিনিও বউ ছিলেন। তবে সবক্ষেত্রে মা-কে বেশি মেনে নিতে হবে। তিনি মা, তার অভিজ্ঞতা বেশি।একজন শিক্ষার্থী বললেন : আমি অবশ্যই প্যাকেটটা মায়ের হাতে তুলে দেব।এতবড় প্যাকেট আপনার বৃদ্ধা মা রাখতে পারবেন না। মাটিতে পড়ে ভেঙে যাবে। মাকে দিয়ে হচ্ছে না বলেই তো বিয়ে করেছ, নাকি? মাকে যদি কেউ সংসার জীবনের জন্য যথেষ্ট মনে করেন এবং বউ এলে মা অত্যচারিত হবে ভাবেন, তাদের বিয়ে না-করাই উত্তম। অন্তত মা গত হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরা উচিত|
আফ্রিকান এক শিক্ষার্থী বলল : কে বড়, মা না বউ?
শিক্ষক : জন্ম তারিখ দেখেই তো তা বোঝা যায়।
না, মানে বলতে চাইছি মায়ের গুরুত্ব বেশি নাকি বউয়ের?
শিক্ষক : শ্বাসনালীর গুরুত্ব বেশি নাকি ফুসফুসের? কলিজার নাকি হৃদপিণ্ডের? মুরগির নাকি ডিমের?
একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন।

এটাই আসল কথা। বোন আর বোনের স্বামীর মধ্যে যেরূপ মধুর সম্পর্ক তুমি আশা কর, তোমার আর তোমার স্ত্রীর সম্পর্ক কমপক্ষে ততটুক মধুর হওয়া উচিত। প্রত্যেক মায়ের উচিত তার পুত্রবধূর সঙ্গে এমন আচরণ করা, যা তিনি তার কন্যার জন্য কন্যার শাশুড়ি হতে আশা করেন। 

Sunday 24 January 2016

নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট ; ড, মোহাম্মদ আমীন

নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট্য

---------------------------------------------------------------------পৃথিবীর অতি নিকৃষ্ট জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হলো। আপনার জানা থাকলে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য দিন এবং যদি আপনি অকুতোভয় হোন তো বলুন, পৃথিবীর এক বা একাধিক অথবা অন্তত একটি নিকৃষ্ঠ জাতির নাম বলুন।
নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট্য : 
১. অতি সংখ্যাগুরু হয়েও সংখ্যালঘু জাতির পদানত থাকতে বাধ্য হয়। তারা কেবল মাথা গণনা করে কিন্তু মাথার মগজ নিয়ে ভাবে না। ফলে, মাথাগুলো মৃত খুলির মতো ভয়ঙ্কর ভৌতিকতায় কেবল জন্ম দেয়। অজ্ঞতা ও সামর্থ্যহীনতার জন্য তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। তারা সাহসী নয়, পাশব; এর ভীরু এবং প্রচণ্ড লোভী। সামান্য অর্থের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয় না। 
২. কুসংস্কার, পৌরাণিক কাহিনি, অলৌকিকতা, পশ্চাদপদতা ও একগ্রন্থমুখীনতায় কঠিনভাবে আবদ্ধ থাকার কারণে পরিবর্তনকে পাপ মনে করে। পরিবর্তন এদের কাছে ভয়ঙ্কর, এরা কেবল অতীত আঁকড়ে ধরতে চায়। মনে করে অতীতের সবকিছু ভালো, বর্তমান জঘন্য। অতীত আকড়ে থাকে বলে আধুনিকতা তাদেরকে চরম অবহেলা করে। তাদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অতীতের বাস্তবতা বিবর্জিত বিশ্বাস দ্বারা ছেয়ে থাকে। ফলে, তারা আধুনিক যানের সঙ্গে ঠেলাগাড়ি নিয়ে অসম প্রতিযোগিতার শিকারে বার বার পরাজিত হতে থাকে। এমন জাতির বুদ্ধিজীবীরা মিথ আর বিজ্ঞান, কল্পকাহিনি আর জ্ঞানকে মিশিয়ে পুরো জাতিকে উদ্ভট করে দেয়।
৩. সর্বজনীনতা না-থাকায় তারা নিজ জাতি ছাড়া অন্য সবাইকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে,  তারা ভালবেসে টেনে নিতে জানে না তবে গ্রাস করে নিতে উদগ্রীব থাকে। কিন্তু সামর্থ্যহীনতার কারণে তা-ও পারে না। বরং নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যায়, নিজেদের ভূমি হারিয়ে ফেলে।  নিজস্ব মতবাদ প্রচারের জন্য অনুসারীদেরকে জোড়ায় জোড়ায় কতল করার নির্দেশ দেয়। হিংস্রতা দেখাতে গিয়ে তারা নিজেরাই বিশ্বব্যাপী হিংস্রতার শিকারে পরিণত হয়। এদের একাধিক উপজাতি বা উপগোত্র রয়েছে এবং এক উপজাতি বা উপগোত্র অন্যকে ভূয়া বলে বাতিল ঘোষণা করে। একজন আর একজনকে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাসঘাতকতা তাদের মজ্জাগত। 
৪. একান্ত অনুসারী ছাড়া অন্যদের চরম শত্রু ভাবে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের চরম অকল্যাণ কামনা করে। অথচ নিজেদের মৌলিক চাহিদা ও প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনা করার জন্য ভিন্ন মতাবলম্বীদের আবিষ্কারের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকে। অন্য ধর্মাবলম্বীকে পাপিষ্ঠ বলে গালি দেয় কিন্তু পাপিষ্ঠদের নির্মিত যন্ত্রে চড়ে পূণ্য অর্জনের জন্য তীর্থে যায়। 
৫. সংখ্যায় এর অগণিত, লাখে লাখে বেশুমার। তারপরও অন্য জাতির কেউ জাত বা ধর্ম ত্যাগ করে নিজেদের দলে যোগ দিলে সত্যমিথ্যা যাচাই না-করে কথিত সংবাদে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। অথচ জানে না ঘটনাটা আদৌ সত্য কিনা। যোগদানকারী কি এবং কে- তাও বিবেচনা করে না। এদর কাছে সংখ্যাই মুখ্য, গুণের কোনো মূল্য নেই। এদের কাছে একজন রিক্সাওয়লা ও একজন পাইলট সমান। কায়িক শ্রমের উপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল।
৬. সর্বক্ষণ অন্তর্কলহ ও পরচর্চায় নিয়োজিত থাকে। স্বার্থের জন্য নিজের ভাই, বন্ধু, অনুসারী এমনকি মা-বাবাকেও শেষ করে দিতে কুণ্ঠিত বোধ করে না। স্বার্থানুযায়ী মতবাদ প্রচার করে ও ব্যাখ্যা দেয়। নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করে। অন্য জাতির দুর্যোগে চরম আনন্দ পায় এবং বিপদ কামনা করে। আবার নিজেদের দুর্যোগে তাদেরই সহায়তায় বিপদমুক্তির জন্য ধর্ণা দেয়। 
৭. এরা মাতৃভাষার চেয়ে অন্য ভাষাকে অধিক পবিত্র মনে করে। পিতা-মাতার চেয়ে গুরু-ঠাকুরকে অধিক মর্যাদা দেয়। শিক্ষিত, জ্ঞানী ও প্রগতিশীল লোকদের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে পাপিষ্ঠ ভাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা শোনালে পৌরানিক কাহিনির দোহাই দিয়ে জ্ঞানীদের কটাক্ষ করে। মিথ-পিরিত তাদের সকল অগ্রসর চিন্তাকে অন্ধের মতো কালো অন্ধকারে ঢেকে রাখে।
৮. তাদের কাজ আর কথার মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যায়। তারা যা বলে তা করে না এবং যা করে তা বলে না। দিনের বেলা যা নিষিদ্ধ, রাতে তা দিব্যি আরামে উপভোগ করে যায়। সাধারণ জীবনযাপনকে পূণ্যময় মনে করলেও নিজেরা অত্যন্ত বিলাসী জীবন উপভোগ করে। 
১০. অপার্থিব ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন, শত্রু মোকাবেলা এবং সম্পদশালী হওয়ার চিন্তা করে। তাই প্রকৃতপক্ষে তারা সবাই দরিদ্র থেকে যায়- আজীবন এবং প্রগতিশীল জাতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। 
১১. এরা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে এবং আধুনিক শিক্ষাগ্রহণকে এখনও পাপ মনে করে। যারা শিক্ষিত হন, তাদেরকে পাপিষ্ঠ ও ঈশ্বরদ্রোহী গণ্য করে একঘরে করে দেয়। 
১২. বিজ্ঞানের সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করলেও বিজ্ঞানকে ঘৃণা করে। বিজ্ঞানের অনেক কথা মেনে নিতে চায় না কিন্তু বিপদে পড়লে আশ্রয় নেয় বিজ্ঞানে। বলে, পৃথিবী গোলাকার নয়, সমতল। 
১৩. এরা শাক্ত। শক্তির পুজা করে কিন্তু নিজেরা শক্তিহীন। সবসময় আচার-আচরণে শক্তের ভক্ত, নরমের যম। মিথ্যা বলে বেশি, সত্য বলে কম। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব আদর্শ ও বিশ্বাস বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত বোধ করে না। অথচ প্রকৃত ক্ষমতা কখনও পায় না। এদের বিশ্বাস সর্বদা পার্থিব প্রাপ্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত হয়। শাক্ত বলে এর সাধারণ মানুষের শক্তি ও গণতন্ত্রকে প্রকৃত অর্থে প্রয়োগ করে না।
১৩. অনেক ক্ষেত্রে এদের ধর্ম ও সংস্কৃতি অভিন্ন থাকে না। এজন্য তারা ধর্ম ও সংস্কৃতি কোনোটাকে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে পারে না। তারা জাতীয়তাবোধ, স্বকীয়তা, ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেমের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ গুনাবলি  হতে অনেক পিছিয়ে থাকে। এজন্য সহজে, তারা অন্য জাতির পদানত হয়ে পড়ে। এদের কেবল বিশ্বাস আছে কিন্তু বিশ্বাসে আস্থা নেই। ইহকালের চেয়ে পরকাল অনেক আনন্দময় বিশ্বাস করলেও, কেউ সহজে পরকালের ওই আনন্দময় জগতে প্রবেশের জন্য মোটেও আগ্রহী থাকে না।
১৪. এরা বিবর্তনবাদে অবিশ্বাসী কিন্তু বিবর্তন হয়ে এতদূর যে এসেছে- এটা মোটেও মেনে নিতে চয় না। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নিয়ে এত মগ্ন থাকে যে, সারাক্ষণ ধর্ম নিয়ে তর্কবিতর্ক করে। নিজের ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে অন্যকে আহত করে, হত করে। 
১৫. এদের কিছু সদস্য বিজ্ঞান পড়লেও বিজ্ঞানমনস্ক হয় না। কারণ এরা শুধু পার্থিব লোভ আর সহজে চাকরি পাওয়ার জন্য বিজ্ঞান পড়ে। জাতি বা গোষ্ঠী বা দেশের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা দেখা যায় না। প্রত্যেকে কেবল নিজের চিন্তা করে বলে, জাতি গঠন ও দেশনির্মাণে তাদের প্রকৃত অর্থে কোনো আন্তরিকাতা পরিলক্ষিত হয় না। 
১৬. এদের আনুগত্য, জাত্যাভিমান, দেশপ্রেম বা নেতৃত্ববোধ কেবল ব্যক্তিস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। নিজেদের নেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন না-করে নেতার ক্ষমতা, সম্পত্তি ও সম্পদ ভাগাভাগির ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে এবং নেতার লাশ পচে গন্ধ বের না-হওয়া পর্যন্ত হুশ ফেরে না। 
১৭. এরা শিক্ষিত হলেও জ্ঞানী নয়, প্রকৃতি ও বাস্তবতা থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, জানে না। এরা মারাত্মক ধর্মবাজ, কুসংস্কাচ্ছান্ন, গোড়া, উগ্র জাতীয়তাবাদী, জীবনের সবক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষিত সাধারণ মানুষকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে। যারা প্রগতির কথা বলে,তাদের নির্যাতন করাকে পুণ্য মনে করে। 
১৮. এর ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার চরম বিরোধী। যারা নতুন কিছু বলে বা নতুন কিছু করতে চায়, তাদেরকে স্বগোত্রীয় হলেও ক্ষমা করে না। এরা সবসময় সংস্কার বিরোধী এবং প্রবলভাবে অন্ধবিশ্বাসে আবদ্ধ। এদের রীতি-নীতি ও অনুভব মুক্তচিন্তা বা মুক্তবুদ্ধির প্রতিবন্ধক বলে কোনো সংস্কারককে মেনে নেয় না। এদের মতবাদ ভিত্তিহীন বলে কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ভয় পায়, যদি আলোচনা তাদের ভিত্তিহীন ভত্তিকে চুরামার করে দেয়!  
১৯. অজ্ঞ বলে এদের কাছে যুক্তির কোনো দাম নেই। যুক্তিবাদীদের মনে করে শত্রু। তাদের বিচার ও বিবেচনাবোধ একগ্রন্থমুখী নির্দেশনার আলোকে অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিদের ইচ্ছায় তাড়িত হয়। এখানে না থাকে বিজ্ঞান, না থাকে দর্শন, না থাকে কোনো সংস্কৃতি। ফলে একই ভাষা, একই ধর্ম এবং একই সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে বলে সহজে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

Saturday 23 January 2016

বরিশাল সদর উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন

বরিশাল সদর উপজেলা 
তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, কচা ও কীর্তনখোলা নদী বিধৌতা বরিশাল সদর উপজেলার আয়তন আয়তন ৩০৭.৫৯ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকষংখ্যা ৪,৬৯,৯৬০। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮ জানুয়ারি । বরিশাল সদর থানার নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। বরিশাল নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে।বাকলা অঞ্চল লবণ উৎপাদন ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবসার জন্য প্রাচীনকাল হতে বিখ্যাত ছিল।শুল্ক আদায়ের প্রধান চৌকি ছিল গিরদে বন্দর। গিরদে অর্থ একটি নির্দিষ্ট এলাকা। গিরদে ছিল বরিশালের প্রাচীন একটি নাম। এখানে লবণের বড় বড় গোলা ছিল। গিরদে ছিল দক্ষিণ বাংলার লবণ শুল্ক আদায়ের প্রধান চৌকি। ইউরোপীয় বণিকগণ গিরদে বন্দরকে বড়িশল্ট বলতে। অনেকে মনে করেন, বড়িশল্ট পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নাম ধারণ করে। আবার অনেকের মতে, এখানকার লবণের দানাগুলো বড় ছিল। তাই ইংরেজগণ এখানকার লবণকে বড়িশল্ট বলতেন। যা হতে বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ বলেন, প্রাচীনকালে বরিশালে বড় বড় শাল বৃক্ষ ছিল। তাদের মতে বড়শাল বৃক্ষ হতে এলাকার নাম হয় বরিশাল। বরিশাল নামের আর একট কিংবদন্তি বেরি নামের এক পর্তুগিজ যুবক ও শেলি নামের এক পর্তুগিজ কন্যার নামের সাথে সম্পৃক্ত। বেরী নামের এ যুবক শেলীর প্রেমে পড়েন। কিন্তু প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বেরি আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ‘বেরিশেলী’ যুগল নাম তখন লোকের মুখে মুখে। ‘বেরীশেলী’ই পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল হয়। কারো কারো মতে, শঅল অর্থ গৃহ, বরিশালে বড় বড় গৃহ নির্মিত হয় বলে এর নাম বড়শাল বা বরিশাল। আলোচ্য এলাকাটি একসময় ঘন জঙ্গলে আচ্ছন্ন ছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে এ জনপদের পত্তন হয়। জঙ্গলে প্রচুর বাঘ ছিল। স্থানীয় লোকজনের কাছে বাঘ বড় শিয়াল নামে পরিচিত ছিল এবং এর আঞ্চলিক উচ্চারণ ছিল বশিয়াল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে ‘বশিয়াল’ অর্থ বাঘ নির্দেশ করেছেন। কথিত হয়, এ বশিয়াল বা বড় শিয়াল থেকে বরিশাল নামের উদ্ভব। আবার অনেকের ধারণা, বুকরি চাল নামক এক প্রকার মোট জাতের চাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভ। এক সময় আলোচ্য এলাকায় প্রচুর বুকরি চাল উৎপন্ন হতো। কথিত হয়, এ বুকরি চাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভব। অন্য একটি প্রবাদমতে, বরিষার কাল বা বর্ষাকাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভব। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন




তেঁতুলিয়া, খারাবাদ, চরামুদ্দি, পাণ্ডব ও পাণ্ডো নদী বিধৌত বাকেরগঞ্জ উপজেলার আয়তন ৪১৭.২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ৩,৫৪ম২৬০। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগষ্ট এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। নবাব আলীবর্দি খার আমলে আগা বাকের খান বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের বুজর্গ উমেদপুর পরগণার জমিদারি লাভ করে। আগা বাকের ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে সুগন্ধার শাখা নদী খয়রাবাদ নদীর তীরে নিজ নামে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন নাম দেন বাকেরগঞ্জ। বাকেরগঞ্জ বন্দরের গুরুত্বের কারণে বাকলা তার পূর্ব গৌরব ও পরিচিতি হারিয়ে ফেলে এবং পুরো এলাকা বাকেরগঞ্জ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

বানারীপাড়া উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


সন্ধ্যা, হারতা, নলশ্রী, জৈনকাঠি ও স্বরূপকাঠি নদী বিধৌত বানারীপাড়া উপজেলা আয়তন ১৩৪.৩২ বর্গ কিলোমটিার এবং লোকসংখ্যা ১,৫৩,১৬০। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। বানারীপাড়া নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন এককালে এ অঞ্চলে প্রচুর বানর ছিল। তাই এলাকার নাম হয় বানরপাড়া। যার অপভ্রংশ বানারীপাড়া। অনেকে মনে করেন বানা ও আড়াআড়ি হতে বানারীপাড়া। বানা শব্দের অর্থ বাঁশের পাতলা সরু চটা দিয়ে প্রস্তুত মাছ আটকানোর বেড়া। এক সময় আলোচ্য এলাকায় মাছ আটকানোর জন্য খাল, নদী ও হাউড় কিংবা বিলে আড়াআড়িভাবে প্রচুর বানা বসানো হতো। বানা ও আড়াআড়ি শব্দদ্বয় যুক্ত হয়ে বানারী। যে পাড়া বা লোকালয়ে  এ বানা বেশি ছিল সেটি বানারীপাড়া নামে পরিচিতি পায়। আবার অনেকে মনে করেন বেনিয়া শব্দের তদস্থানের কথ্যরূপ বানারী। বেনিয়া অর্থ ব্যবসায়ী। এককালে আলোচ্য এলাকায় বহু বানারী ছিল। তাই পাড়াটির নাম হয় বানারীপাড়া।

উজিরপুর উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


আমতলী, কালিজিরা, উজিরপুর, বিষারকান্দি, নান্দা ও হারতা নদী বিধৌত উজিরপুর জেলার আয়তন ২৪৮.৩৫ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ২,৪২,৭২০। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। উজিরপুর নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন, উজির আল মামুন নামক এক জলদস্যু এখানে আস্তানা গেড়ে দস্যুতা করে বেড়াতো। তার নামানুসারে এলাকার নাম হয় উজিরপুর। আবার অনেকের মতে, ‘ফকির মোহাম্মদ’ নামক নবাবে মুর্শিদাবাদের এক উজির এ অঞ্চলে বসবাস করতেন। সে উজির হতে এলাকার নাম হয় উজিরপুর। উজিরপুর নামকরণের আরেকটি প্রবাদ  উজার বা উজোড় শব্দের সাথে সম্পৃক্ত। এর অর্থ জনশুণ্য স্থান বা বিরানভূমি। ষষ্ঠদশ শতকের এক ভয়ঙ্কর বন্যায় এলাকাটির জনমানুষ, ঘরবাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি উজার হয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল। তাই এলাকাটির নাম হয় উজারপুর। যার অপভ্রংশ উজিরপুর। 

বাবুগঞ্জ উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


আমতলী, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, সন্ধ্যা ও শিকারপুর নদী বিধৌত বাবুগঞ্জ উপজেলার আয়তন ১৬৪.৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১,৪৭,৪০০ জন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্র“য়ারি এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় । বাবুদের গঞ্জ হতে বাবুগঞ্জ। এলাকার অভিজাত ও প্রভাবশালী হিন্দুদের বাবু বলা হতো। আড়িয়াল খা নদীর তীরে অনেক পূর্বে এলাকার অভিজাত ও প্রভাবশালী লোকজন এখানে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাবুদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এ বাজার বাবুগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করে। আবার অনেকে মনে করেন, আলোচ্য এলাকাটি যশোর পরগনার জমিদার ‘বাবু বিরাজ রায় চৌধুরী’র জমিদারির অন্তর্ভূক্ত ছিল। প্রজাসাধারণের সুবিধার্থে তিনি আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে তার নামানুসারে বাবুগঞ্জ নামের একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে এলাকাটির নাম হয় বাবুগঞ্জ। 

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা 
আজিমপুর, আড়িয়াল খাঁ, চিলমারি, মাসকাটা, সুলতানা, খালিয়ার, গনেশপুরা, তেঁতুলিয়া, লোয়ারা মেঘনা ও ধর্মগঞ্জ নদী বিধৌত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আয়তন ৪৩৫.৮০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২,৯৬,৪৪০। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর স্থাপিত হয়। আগা বাকেরের আমলে ‘মেহেন্দী খান’ নামক এক আমাত্য নদীর তীরে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে তুলেন। মেহেন্দি খানের নামানুসারে বাণিজ্য কেন্দ্রটির নাম হয় মেহেন্দিগঞ্জ। আবার অনেকে মনে করেন আগা বাকেরের পুত্র  মেহেদী খান এর নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় মেহেন্দিগঞ্জ।

হিজলা উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


জয়ন্তী, নয়াভাঙানি, মেঘনা, লোয়ার মেঘনা ও আজিমপুর নদী বিধৌত হিজলা উপজেলার আয়তন ৫১৫.৩৬ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১,৭৭,০২০। এটি জেলার বৃহত্তম উপজেলা। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর বদরটুনিতে প্রথম থানা সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। কথিত হয়, হিজল গাছ হতে হিজলা। এক সময় এ এলাকায় প্রচুর হিজল গাছ ছিল। এ হিজল গাছ থেকে হিজলা নামের উদ্ভব। হিজলা শব্দের অর্থ হিজল গাছ সম্বলিত লোকালয়।

মুলাদী উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


জয়ন্তী, আড়িয়াল খাঁ, খালিয়ার নদী, নয়াভাঙ্গা ও পলারদি নদী বিধৌত মুলাদী উপজেলার আয়তন ২৬১.০২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১,৭৮,৬২০। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর এখানে থানা সদর প্রতিষ্ঠিত হয়। মুলাই খান নামক জনৈক দরবেশের নামানুসারে এলাকার নাম হয় মুলাদি। মুলাদি অর্থ মুলই খানের দ্বীপ। নদী বেষ্টিত ও দ্বীপসদৃশ এ ভূখণ্ডে মুলাখান আস্তান স্থাপন করলে দ্বীপটির নাম হয় মুলাইদি; যার অপভ্রংশ মুলাদি। আবার অনেকে মনে করেন, এ দ্বীপে এক সময় প্রচুর মুলা জন্মাতো। তাই এলাকার নাম হয় মুলারদী। যার অপভ্রংশ মুলাদী।

আগৈলঝারা উপজেলার নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


বিষারকান্দি, পয়সা ও নান্দা নদী বিধৌত আগৈলঝারা উপজেলার আয়তন ১৬১.৮২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১,৪৯,৬০০। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের  ১৬ জুন এখানে থানা সদর প্রতিষ্ঠিত হয়। আগৈল অর্থ মাটি কাটার ঝুড়ি এবং ঝারা অর্থ ঝেরে ফেলা বা কোন পরিষ্কার করা। সুতরাং আগৈলঝারা শব্দের অর্থ মাটি কাটার ঝুড়ি ঝারা। সপ্তদশ শতকে নবাব আলী খাঁর আমলে ছবি খাঁ নামক এক সুবাদার বর্তমান আগৈলঝারা, গৌরনদী, উজিরপুর ও কোটালিপাড়া নিয়ে গঠিত একটি পরগনার আঞ্চলিক শাসক ছিলেন। তদকালে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট নিরসণের জন্য দীঘির কোন বিকল্প ছিল না। ছবি খাঁ দীঘি খননের সময় অনেক শ্রমিক নিয়োগ করেন। শ্রমিকেরা কাজ শেষে একটি নিচু স্থানে আগৈল ঝাড়তেন। এভাবে আগৈল ঝাড়তে ঝাড়তে সেখানে একটি মাটির ঢিবি গড়ে উঠে। এ ঢিবির পাশে য়ে লোকালয় গড়ে উঠে তার নাম হয় আগৈলঝারা। শ্রমিকদেরকে যে স্থানে মজুরি প্রদান করা হতো তার নাম হয় পয়সারহাট।

গৌরনদী উপজেলা ও নামকরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন


নুন্দা, আগরপুর ও তরকি নদী বিধৌত গৌরনদী উপজেলার আয়তন ১৪৪.১৮ বর্গ কিলোমিটার এবং লোকসংখ্যা ১,৭৯,২৬০। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় এ এলাকাটির পাশ দিয়ে মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও গড়াই নদীর মিলিত প্রবাহ হতে সৃষ্ট একটি ছোট নদী প্রবাহিত হতো। ঐ নদীটির পানি ছিল গৌরবর্ণের। তাই লোকে স্রোতস্বিনীটিকে গৌরনদী বলতো। নদীটি এখন বিলুপ্ত। গৌরবর্ণের জলবাহিত এ নদীর পানির স্রোতধারায় আলোচ্য এলাকার জনপদ বিধৌত হতো। তাই এলাকার নাম নদীর নামানুসারে হয় গৌরনদী। 

বরিশাল ও বরিশাল জেলার নামকরণ / ড.মোহাম্মদ আমীন


মোঘল আমলের পূর্বে বাকলা নামকরণের পূর্বে এলাকার নাম ছিল ‘চন্দ্রদ্বীপ’। চন্দ্রদ্বীপ নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে আলোচ্য এলাকার চন্দ্রকলার মতো হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতো বলে এর নাম হয় চন্দ্রদ্বীপ। আবার অনেকে বলেন, জনপদটির আকৃতি চাঁদের ন্যায় ছিল বলে নাম চন্দ্রদ্বীপ। দনুজমর্দন দেব তার গুরু চন্দ্রশেখর চক্রবর্তীর কৃপায় রাজ্য লাভ করেন। তাই তিনি এর নাম রাখেন চন্দ্রদ্বীপ। আবার অনেকের মতে, রাজা চন্দ্রবর্মার নামানুসারে নামকরণ হয় চন্দ্রদ্বীপ। অনেকে ধারণা, মহাদেবের কপালে চন্দ্রের  কারণে নাম হয় চন্দ্রদ্বীপ। বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত চন্দ্রগোমিনের নাম থেকে এ জনপদের নাম চন্দ্রদ্বীপ হয়েছে বলেও অনেকের অভিমত। তবে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে, চন্দ্রভন্ড্র নামক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় চন্দ্রদ্বীপ। 
মোঘল শাসনামলে আলোচ্য এলাকার নাম হয় ‘বাকলা’। আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরী ও র‌্যালফ ফিচের বিবরণে বাকলা নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। এবার বাকলা নামের উৎপত্তি বিশ্লেষণ করা যাক। বাকেরগঞ্জের প্রাচীন নাম বাকলা। বাঙ্গালার পরিবর্তিত রূপ বাকলা। প্রাগৈতিহাসিক আমলে বাকেরগঞ্জের উত্তরাংশে বাঙ জাতিগোষ্ঠীভূক্ত লোক বাস করতো। বাঙ শব্দ চিনা বা তিব্বতীয় গোষ্ঠী হতে আগত। প্রাচীনকালে বাকলা জলাভূমি ছিল। বাঙ জাতির লোকেরা তিন হাজার বছর পূর্বে জলাভূমি আবাদ করে বসতি স্থাপন করতো এবং বন্যা ও লোনা পানি হতে রক্ষার জন্য আইল বা আল দিতো। বাঙ জাতির নামের সাথে আল যুক্ত হয়ে হয় বাঙাল। বাঙাল জাতির আদি বাসস্থান বরিশাল। এদের একটা গোষ্ঠীকে চন্দ্রভণ্ড্র বলা হতো। চন্দ্রভণ্ড্র হতে বাকলার অপর নাম চন্দ্রদ্বীপ। বাকলা ছিল এর লোকায়ত নাম এবং চন্দ্রদ্বীপ ছিল রাজনীতিক নাম। ‘বাকলা’ আরবি শব্দ। এর অর্থ শস্য ব্যবসায়ী। আলোচ্য এলাকাটি ছিল ধনধান্য ও শস্যে ভরপুর । তাই এখানে প্রচুর বাকলা বা শস্য ব্যবসায়ীর আগমন ঘটত। তাই এলাকার নাম হয় বাকল। অনেকের মতে বাকাল এক প্রজাতির সাপ। এ বাকাল হতে বাকলা নামের উৎপত্তি। আবার কারও কারও মতে গাছের বাকল হতে বাকলা নামের উদ্ভব। আলোচ্য এলাকাটি ছিল আবার কারো মতে, বাকাল নামক এক ধরে নর সাপের নাম থেকে ‘বাকলা’ নামের উদ্ভব। মধ্যযুগের কবি বিজয় গুপ্তের পদ্মপূরাণ বা মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থে বাকলা নামের উল্লেখ আছে। অবশ্য মোগল আমলে বাকলা ইসমাইলপুর নামেও অভিহিত হতো।

নবাব আলীবর্দি খার আমলে আগা বাকের খান বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের বুজর্গ উমেদপুর পরগণার জমিদারি লাভ করে। আগা বাকের ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে সুগন্ধার শাখা নদী খয়রাবাদ নদীর তীরে নিজ নামে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন নাম দেন বাকেরগঞ্জ। বাকেরগঞ্জ বন্দরের গুরুত্বের কারণে বাকলা তার পূর্ব গৌরব ও পরিচিতি হারিয়ে ফেলে এবং পুরো এলাকা বাকেরগঞ্জ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
বরিশাল নামকরণ নিয়ে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত আছে।বাকলা অঞ্চল লবণ উৎপাদন ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর ব্যবসার জন্য প্রাচীনকাল হতে বিখ্যাত ছিল।শুল্ক আদায়ের প্রধান চৌকি ছিল গিরদে বন্দর। গিরদে অর্থ একটি নির্দিষ্ট এলাকা। গিরদে ছিল বরিশালের প্রাচীন একটি নাম। এখানে লবণের বড় বড় গোলা ছিল। গিরদে ছিল দক্ষিণ বাংলার লবণ শুল্ক আদায়ের প্রধান চৌকি। ইউরোপীয় বণিকগণ গিরদে বন্দরকে বড়িশল্ট বলতে। অনেকে মনে করেন, বড়িশল্ট পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নাম ধারণ করে। আবার অনেকের মতে, এখানকার লবণের দানাগুলো বড় ছিল। তাই ইংরেজগণ এখানকার লবণকে বড়িশল্ট বলতেন। যা হতে বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ বলেন, প্রাচীনকালে বরিশালে বড় বড় শাল বৃক্ষ ছিল। তাদের মতে বড়শাল বৃক্ষ হতে এলাকার নাম হয় বরিশাল। বরিশাল নামের আর একট কিংবদন্তি বেরি নামের এক পর্তুগিজ যুবক ও শেলি নামের এক পর্তুগিজ কন্যার নামের সাথে সম্পৃক্ত। বেরী নামের এ যুবক শেলীর প্রেমে পড়েন। কিন্তু প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বেরি আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ‘বেরিশেলী’ যুগল নাম তখন লোকের মুখে মুখে। ‘বেরীশেলী’ই পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল হয়। কারো কারো মতে, শঅল অর্থ গৃহ, বরিশালে বড় বড় গৃহ নির্মিত হয় বলে এর নাম বড়শাল বা বরিশাল। আলোচ্য এলাকাটি একসময় ঘন জঙ্গলে আচ্ছন্ন ছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে এ জনপদের পত্তন হয়। জঙ্গলে প্রচুর বাঘ ছিল। স্থানীয় লোকজনের কাছে বাঘ বড় শিয়াল নামে পরিচিত ছিল এবং এর আঞ্চলিক উচ্চারণ ছিল বশিয়াল। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ আঞ্চলিক ভাষার অভিধানে ‘বশিয়াল’ অর্থ বাঘ নির্দেশ করেছেন। কথিত হয়, এ বশিয়াল বা বড় শিয়াল থেকে বরিশাল নামের উদ্ভব। আবার অনেকের ধারণা, বুকরি চাল নামক এক প্রকার মোট জাতের চাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভ। এক সময় আলোচ্য এলাকায় প্রচুর বুকরি চাল উৎপন্ন হতো। কথিত হয়, এ বুকরি চাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভব। অন্য একটি প্রবাদমতে, বরিষার কাল বা বর্ষাকাল হতে বরিশাল নামের উদ্ভব। ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা উপজেলা ও নদ নদীর নামকরণের ইতিহাস’ গ্রন্থে আরও বিস্তারিত আছে। 

রাজা রামমোহন রায় এবার বাংলাদেশে / ড. অনিমেষ চ্যটার্জি

ভেবেছিলাম, এবারও রাজা রামমোহন রায় অ্যাওয়ার্ড, ভারতে থেকে যাবে। কিন্তু না, তা হয়নি এবার রাজা রামমোহন চলে গেছেন বাংলাদেশে। পেয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলা বানান-বিশারদ ও শুদ্ধ বানান চর্চা গ্রুপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাংলা প্রমিত বানানে নব আন্দোলনের উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার অধিবাসী ড. মোহাম্মদ আমীন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। শুদ্ধ বাংলা বানান, প্রমিত বাংলা প্রচলন, বাংলা ভাষার বিশ্বব্যাপী প্রচার ও প্রসার, সর্বোপরি বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রাজা রামমোহন রায় অ্যাওয়ার্ড, ২০১৫ লাভের বিরল গৌরব অর্জন করেন। আমরা কিন্তু কেউ তার নাম তেমন শুনিনি। কিন্তু জি বাংলার একজন পরিচালক যখন তাঁর নাম প্রস্তাব করেন, তখন টেবিল উল্টে যায়। নির্বাচকবৃন্দ জনাব আমীনকেই কেবল এ পুরষ্কারের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত করে বসেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুললেও তার অবদান দেখে যথাযোগ্য গণ্যে মেনে নিয়েছেন সানন্দে।

উল্লেখ্য ২০১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতিবছর রাজা রামমেহান রায় পর্ষদ একজন বাঙালিকে রাজা রামমোহন রায় পুরষ্কার দিয়ে আসছেন। এবছর এ সম্মানজনক পুরষ্কারটি পেয়েছেন ড. মোহাম্মদ আমীন। উল্লেখ্য, তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানায় জন্মগ্রহণ করেন। চন্দনাইশ থানা একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, নেলী সেনগুপ্ত প্রমুখের স্মৃতিধন্য চন্দনাইশ।
বাংলাদেশের বানান-বিশারদ ড. মোহাম্মদ আমীন। পুরষ্কারে একটি পদবিও উল্লেখ থাকে। ড. মোহাম্মদ আমীনকে দেওয়া হয়েছে বঙ্গভূষণ।রাজা রামমোহন রায় প্রথম ভারতীয় যিনি ধর্মীয় সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠতা এবং বাঙালি দার্শনিক।তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় শিক্ষা, বাংলা ভাষা ও সর্বজনীন শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিলেন।বাংলা ভাষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রয়েছে তাঁর অসামান্য অবদান। তার অবদানকে সম্মানিত করার জন্য প্রতিবছর রাজা রামমোহন রায় স্মৃতি পর্ষদ এমন একজন বাঙালিকে এ পদক দেন, যিনি বাংলা বানান ও বাংলা সাহিত্যের প্রমিত মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেন। এবার এমনটি পাওয়া গিয়েছে ড. মোহাম্মদ আমীনের কাছে। তাই পর্ষদ তাকে এ পুরষ্কারে ভূষিত করে। ড. মোহাম্মদ আমীনকে বঙ্গভূষণ পুরষ্কার তুলে দিচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির সচিব বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ও সুরকার ভূইয় সফিকুল ইসলাম।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় -এর কলমে ড. মোহাম্মদ আমীন


বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ও শিক্ষানুরাগী সৈয়দ আবুল হোসেনকে নিয়ে প্রকাশনীয় ‘সময়ের পরশ পাথর’ গ্রন্থের জন্য আমার একটা লেখা সংগ্রহ উপলক্ষ্যে ড. মোহাম্মদ আমীনের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। ড. আমীন যখন আমাকে ই-মেইল করেন তখন আমি লন্ডনে। ই-মেইলের শেষাংশ ছিল : “স্যার, সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্য লেখা শেষ হলে আমার জন্যও দুকলম লিখবেন।” সহজ-সরল প্রকাশ, বেশ দাগ কাটে মনে।
জনাব আমীনই ‘সময়ের পরশ পাথর’ বইটির সম্পাদনা করছেন। সম্পাদকের অভিজ্ঞতা জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে জনাব আমীন তাঁর লেখা কয়েকটি বই পাঠান। ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভুগোল, বৈশ্বিকভাবনা, জীবনী, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, উপন্যাস, ছোটগল্প, গবেষণা, বাংলা বানান, প্রশাসন, বাংলা সাহিত্য, আইন, আন্তর্জাতিক বিষয়, শিশুতোষগ্রন্থ, দর্শন, সম্পাদনা, ব্যাকরণ, অভিধান, ব্লগ, সমাজজীবন- সবক্ষেত্রে দেখি সরব পদচারণা? গানও লিখেছেন, ছড়াও লিখেছেন, কবিতাও দেখলা কয়েকটি। একটা পত্রিকাও ছাত্রজীবনে সম্পাদনা করেছেন।
তাঁর লেখা আমার কাছে অতুলনীয় মনে হয়েছে। ‘সময়ের পরশ পাথর’ গ্রন্থের জন্য লেখা দিতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ আমীনের প্রোফাইল ও জীবনী প্রথমে একটু ধাক্কা দিয়েছিল বই কি। প্রশাসনে চাকুরি করেন- এমন লোকদের মধ্যে এরূপ বহুমুখী প্রতিভা এখন দেখা যায় না বললেই চলে। তাঁর পাঠনো বইগুলো ভালো লাগল। তিনি নিজের মতো করে লিখেছেন। কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ করেননি। বিশেষ করে, তাঁর ইতিহাসগ্রন্থসমূহ উচ্চপ্রশংসার দাবি রাখে। অতীতের প্রতিটি ঘটনা যেন অন্তমূল থেকে তোলে আনা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ কোনো প্রত্যয়। যা, যে কাউকে নস্টালজিয়ায় নিয়ে যেতে পারে।তাঁর আর একটা বিষয় আমাকে মুগ্ধ করেছে, সেটি - বাংলা বানান নিয়ে গবেষণা। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র, অথচ বাংলা বানানে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য আমি সমীহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়েছি। বানান নিয়ে ড. মোহাম্মদ আমীনের শ্রম, মেধা ও বিচক্ষণতার ঋণ বাংলাভাষী কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। আমি কিছুদিন আগে, বাংলা ভাষার স্বকীয়তা অচিরে হারিয়ে যাবে বলে যে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, ড. আমীনের বাংলা বানান-বিষয়ক কার্যক্রম দেখে তা দূর হয়েছে। আমি এখন শান্তিতে মরতে পারব। আমার বাংলা আমীনদের মতো লোকদের জন্য অনন্তকাল বেঁচে থাকবে। লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে নিয়ে আরও বিস্তারিত লেখার আশা রইল। ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থেকে আমীন। 
                    ১৪ জুন, ২০১২
 সংগ্রহে : আল মাহমুদ চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজকমী ও ব্যবসায়ী।

ভাইস চ্যান্সেলরের চোখে ইতিহাসবেত্তা ড.মোহাম্মদ আমীন / প্রফেসর গিয়াসুদ্দিন।

চকরিয়ার বিজ্ঞ উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোহাম্মদ আমীন চকরিয়া নিয়ে কাজ করছেন। তিনি তখন ডক্টরেট ছিলেন না, করছিলেন।অফিস সময়ের পর তিনি বেরিয়ে পড়তেন কাগজ-কলম নিয়ে রিক্সায় চড়ে কিংবা কোনো সহকর্মীর মোটর সাইকেলে চড়ে। উদ্দেশ্য চকরিয়ার ইতিহাসের সন্ধান। আমরা শিক্ষকদের অনেকে তাঁর এ কাজের ভূয়শী প্রশংসা করতে শুরু করি এবং প্রয়োজনে সকল সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকি। চকরিয়ার ইতিহাস রচিত হলে তা হবে আমাদের জন্য এক বিরাট পাওয়া। তবে অনেকে সমালোচনাও শুরু করেছেন। অন্য জেলার লোক কেন আমাদের উপজেলার ইতিহাস লিখবেন? তিনি ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষক নন- ইতিহাস লেখার জ্ঞান কোথায়! আরও নানা জনের নানা কথা। কেউ কেউ বললেন- বই বিক্রি করে আয় করার ফন্দি। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কানে এসব গিয়েছে, তবু তিনি কাজ চালিয়ে গেছেন। ভালো কাজে খারাপ কাজের চেয়ে বেশি বদনাম সইতে হয়। এটি প্রসব যন্ত্রণা। তিনি এগিয়ে যান তাঁর লক্ষ্যে। 
ড. আবদুল করিম (১৯২৮-২০০৭)
জনাব আমীন ছাত্জীরবন হতে লেখালেখিতে জড়িত। আমাদের উপজেলা হতে অল্পদূরে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলায় তার বাড়ি, তিনি বেশ শিক্ষিত, বনেদি ও ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। আমি চকরিয়া কলেজের শিক্ষক। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে ইতিহাসের তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়, অনেক সময় আমিও তথ্য সংগ্রহে তার সাথে যাই। আমার উদ্দেশ্য ছিল, চকরিয়ার ইতিহাস রচনায় তাকে সহায়তা প্রদান। অনেকে এটি প্রকাশের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমি এ বিষয়ে আলাপ করিনি। একদিন তিনি আমার হাতে একটা পাণ্ডুলিপি দিলেন। চকরিয়ার ইতিহাস। পাণ্ডুলিপি দেখে আমি রীতিমতো হতভম্ব। ইতিহাস রচনা হয়ে গেছে, এখন প্রকাশের পালা। কীভাবে এটি সম্ভব হলো? মনের প্রশ্ন মনে রেখে দিই। তাঁর সম্পর্কে যা শুনেছি, তার অর্ধেক সত্য হলেও এটি তেমন কঠিন নয় জনাব আমীনের কাছে।বিনয়ের সঙ্গে বললাম, যদি অনুমতি দেন তো, আমি বইটি প্রকাশ করব।আমার কথায় তিনি রাজি হলেন।
প্রকাশ হয়ে গেল ‘চকরিয়ার ইতিহাস’। প্রকাশক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার। প্রকাশ হওয়ার চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। আলোচনা, সমালোচনা, প্রশংসা- সব। এরপরের ঘটনা আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটারের জবানিতে শোনা যাক : বইটি কেমন হয়েছে জানার জন্য একদিন এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. আবদুল করিম সাহেবের কাছে নিয়ে যাই। ড. করিম আবার আমার আত্মীয়। তিনি ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ নভেম্বর  থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরউপাচার্য পদে নিযুক্ত ছিলেন। জনাব আবদুল করিমের (জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন)  গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা বাঁশখালী উপজেলা চাপাছড়িতে ভিন্ন উপজেলা হলেও, ভৌগলিক দিক হতে উভয় উপজেলার অনেক মিল ছিল। একসময় নাকি দুটো উপজেলা অভিন্ন ছিল।যাই হোক, ড. করিম, জনাব মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ বইটি পড়তে শুরু করেন। আস্তে আস্তে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তিনি বইয়ে একাগ্র হয়ে পড়েন। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বই হতে মুখ তুলে বলেন : মোহাম্মদ আমীন কে? 
আমাদের উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট।প্রশাসন ক্যাডারের লোকের পক্ষে কীভাবে এমন তথ্যবহুল ইতিহাস লেখা সম্ভব হলো? এরা তো এত জ্ঞানী ও দূরদর্শী নন। এমন ছেলে কেন অ্যাডমিন ক্যাডারে গেল?প্রশংসা শুনে আমি খুশিতে হাসছি। ড. করিম বলেই যাচ্ছিলেন : আনোয়ার, এ তো অবিশ্বাস্য, আমি তো এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আর দেখিনি। অ্যাডমিন ক্যাডারেও তাহলে মেধাবীদের কেউ কেউ যায়!ড. করিমের এমন প্রশংসা আমাকে প্রকাশক হিসাবে গর্বে অভিভূত করে দেয়। আবার পড়তে শুরু করেন তিনি। আরও আধঘণ্টা পড়েন, তারপর মুখ তুলে বললেন : ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসেন, আমি তার কাছ থেকে ইতিহাস লেখার এমন অদ্ভুদ কৌশলটা শিখব।তিনি যে কৌশলে ইতিহাস লিখেছেন, সেটি আয়ত্তে আনা কঠিন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক লেকচার দিয়ে তা অর্জন করা সম্ভব নয়। মাঠ
পর্যায়ে মাঠে থেকে কাজ করতে করতে তা জানতে হয়। তিনি কী আরও কোনো ইতিহাস লিখেছেন?লিখেছেন। হাতিয়ার ইতিহাস।হাতিয়ার উপর আমি কাজ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু একটা তথ্যও সংগ্রহ করতে পারিনি। এ ছেলে তো বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। যত তাড়াতাড়ি পারেন তাকে নিয়ে আসেন।নিয়ে আসব।ইতোমধ্যে চা এসে যায়।চায়ে ভিজিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে ড করিম বললেন: এটি কেবল নামেই ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু ইতিহাস নয়, বৈচিত্র্যহাস; ভূগোল, জনমিতি, ধর্ম, বিবর্তন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্রমবর্ণনা, জনজীবনে সমুদ্রের প্রভাব, শরণার্থী, প্রস্তর যুগ হতে বঙ্গযুগ- সব বিবরণ এমন নির্ভুল তথ্যসহকারে তুলে ধরেছেন, যা আমার পক্ষে এত চমৎকারভাবে সম্ভব হতো না কখনও।ছেলেটিকে নিয়ে আসুন। আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলব, আমার শেষ ইতিহাসের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।কয়েকটি বিষয়ে আটকে গেছি।
ড. আমীনকে আমি করিম সাহেবের প্রশংসার কথা বলেছিলাম।তিনি খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ড. করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু আজ-কাল করে যাওয়া হয়নি। শেষপর্যন্ত ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই ড. আবদুল করিম চিরদিনের জন্য আমাদের সাক্ষাতের বাইরে চলে যান। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।                                    
এখন ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ বইটির প্রবল চাহিদা। লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে চকরিয়ার অনেক লোক আছে। তারা আমাকে ফোন করেন, ফোন করে বইটি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আমি গর্ব বোধ করি। এমন সম্মানজনক ও স্থায়ী কাজ আমার পক্ষে আর কখনও করা সম্ভব হবে না। বইটির মাঝে আমি বেঁচে থাকব।বেঁচে থাকবে বইটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। যতদিন চকরিয়ার থাকবে, ততদিন আমরা চকরিয়ার স্মৃতি আমাদের কাজে অক্ষয় হয়ে থাকবে। মরণশীল মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে! চকরিয়া আজ পূর্ণ ইতিহাসে ঋদ্ধ, সারাবিশ্বে চকরিয়ার ইতিহাস আমাদের ঐতিহ্যকে আলোর মতো অফুরন্ত জ্ঞানে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই আমি মনে আমার প্রকাশনায় প্রকাশিত ও ড. মোহাম্মদ আমীনের লিখিত চকরিয়ার ইতিহাস চকরিয়াবাসীর ‘ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বকীয়তা ও আত্মমর্যাদা’ অনিবার্য প্রতীক।
-----------------------------------------------------------------------------------------
কৃতজ্ঞতা : ‘চকরিয়া উপজেলার ইতিহাস’- এর লেখক কন্ট্রকটার আনোয়ার হোসেনের লেখা থেকে। 

ড. আবদুল করিম, চকরিয়া ও ড. মোহাম্মদ আমীন / আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার

আমি যখন শুনতে পাই, চকরিয়ার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমীন চকরিয়া নিয়ে কাজ করছেন। অফিস সময়ের পর তিনি বেরিয়ে পড়েন ইতিহাসের সন্ধানে। অনেকে সমালোচনাও শুরু করেছেন।ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে বই লেখেন।কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিক ও পেশাজীবী আমাকে ড. আমীন সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য দিলেন।ছাত্র জীবন হতে তিনি লেখালেখি করে আসছেন।চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলাতে বাড়ি।আমি রাজনীতি করি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাহস করে একদিন উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে গেলাম। চকরিয়ার ইতিহাস রচনায় আমার আগ্রহ শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি।আমার হাতে একটা পাণ্ডুলিপি দিয়ে দেখতে বলেন। চোখ দিয়ে আমি অবাক। ইতিহাস তো হয়েই গেছে।
বললাম, আমি প্রকাশ করব।তিনি রাজি হলেন। প্রকাশ করে ফেললাম চকরিয়ার ইতিহাস। একদিন ইতিহাস গ্রন্থটা কেমন হয়েছে দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ড. করিম সাহেবের কাছে যাই। উল্লেখ্য ড. করিম আমার আত্মীয় এবং তিনি ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন আবদুল করিম (জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন)  গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা বাঁশখালী উপজেলা চাপাছড়িতে ভিন্ন উপজেলা হলেও, ভৌগলিক দিক হতে উভয় উপজেলার অনেক মিল ছিল। একসময় নাকি দুটো উপজেলা অভিন্ন ছিল।যাই হোক, ড. করিম, জনাব মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ বইটি পড়তে শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি বইয়ে একাগ্র হয়ে পড়েন। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বই হতে মুখ তুলে বলেন : মোহাম্মদ আমীন কে?
আমাদের উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট।প্রশাসন ক্যাডারের লোকের পক্ষে কীভাবে এমন তথ্যবহুল ইতিহাস লেখা সম্ভব হলো? এ তো অবিশ্বাস্য, আমি তো এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আর দেখিনি।ড. করিমের এমন প্রশংসা আমাকে প্রকাশক হিসাবে গর্বে অভিভূত করে দেয়। আবার পড়তে শুরু করেন। মনে হয় আরও আধঘণ্টা। তারপর আবার মুখ তুলে বললেন : ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসেন, আমি তার কাছ থেকে ইতিহাস লেখার এমন অদ্ভুদ কৌশলটা শিখব।ড করিম বললেন: এটি কেবল নামেই ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু ইতিহাস নয়।ভূগোল, জনমিতি, ধর্ম, বিবর্তন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্রমবর্ণনা, জনজীবনে সমুদ্রের প্রভাব, শরণার্থী, প্রস্তর যুগ হতে বঙ্গযুগ- সব বিবরণ এমন নির্ভুল তথ্যসহকারে তুলে ধরেছেন, যা আমার পক্ষে সম্ভব হতো কখনও।ছেলেটিকে নিয়ে আসুন। আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলব, আমার শেষ ইতিহাসের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।ড. আমীনকে আমি এ কথা বলেছিলাম।তিনি খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ড. করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু আজ-কাল করে যাওয়া হয়নি। শেষপর্যন্ত ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই ড. আবদুল করিম চিরদিনের জন্য আমাদের সাক্ষাতের বাইরে চলে যান। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন।                                    
এখন বইটির প্রবল চাহিদা। লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে চকরিয়ার অনেক লোক আছে। তারা আমাকে ফোন করেন, ফোন করে বইটি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আমি গর্ব বোধ করি। এমন সম্মানজনক ও স্থায়ী কাজ আমার পক্ষে আর কখনও করা সম্ভব হবে না। বইটির মাঝে আমি বেঁচে থাকব।বেঁচে থাকবে বইটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন। যতদিন চকরিয়ার থাকবে, ততদিন আমরা চকরিয়ার স্মৃতি আমাদের কাজে অক্ষয় হয়ে থাকবে। মরণশীল মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে!

চকরিয়া ও চকরিয়া উপজেলার ইতিহাস / আনোয়ার হোসেন কন্ট্রকটার

আমি যখন শুনতে পাই, চকরিয়ার উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমীন চকরিয়া নিয়ে কাজ করছেন। অফিস সময়ের পর তিনি বেরিয়ে পড়েন ইতিহাসের সন্ধানে। অনেকে সমালোচনাও শুরু করেছেন।ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে বই লেখেন।কয়েকজন শিক্ষক, সাংবাদিক ও পেশাজীবী আমাকে ড. আমীন সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য দিলেন।ছাত্র জীবন হতে তিনি লেখালেখি করে আসছেন।চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলাতে বাড়ি।আমি রাজনীতি করি, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাহস করে একদিন উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কাছে গেলাম। চকরিয়ার ইতিহাস রচনায় আমার আগ্রহ শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন তিনি।আমার হাতে একটা পাণ্ডুলিপি দিয়ে দেখতে বলেন। চোখ দিয়ে আমি অবাক। ইতিহাস তো হয়েই গেছে।
বললাম, আমি প্রকাশ করব।তিনি রাজি হলেন। প্রকাশ করে ফেললাম চকরিয়ার ইতিহাস। একদিন ইতিহাস গ্রন্থটা কেমন হয়েছে দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এশিয়া মহাদেশের বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ড. করিম সাহেবের কাছে যাই। উল্লেখ্য ড. করিম আমার আত্মীয় এবং তিনি ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন আবদুল করিম (জন্ম ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন)  গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা বাঁশখালী উপজেলা চাপাছড়িতে ভিন্ন উপজেলা হলেও, ভৌগলিক দিক হতে উভয় উপজেলার অনেক মিল ছিল। একসময় নাকি দুটো উপজেলা অভিন্ন ছিল।যাই হোক, ড. করিম, জনাব মোহাম্মদ আমীনের লেখা ‘চকরিয়ার ইতিহাস’ বইটি পড়তে শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি বইয়ে একাগ্র হয়ে পড়েন। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বই হতে মুখ তুলে বলেন : মোহাম্মদ আমীন কে?
আমাদের উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট।প্রশাসন ক্যাডারের লোকের পক্ষে কীভাবে এমন তথ্যবহুল ইতিহাস লেখা সম্ভব হলো? এ তো অবিশ্বাস্য, আমি তো এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আর দেখিনি।ড. করিমের এমন প্রশংসা আমাকে প্রকাশক হিসাবে গর্বে অভিভূত করে দেয়। আবার পড়তে শুরু করেন। মনে হয় আরও আধঘণ্টা। তারপর আবার মুখ তুলে বললেন : ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে আসেন, আমি তার কাছ থেকে ইতিহাস লেখার এমন অদ্ভুদ কৌশলটা শিখব। ড করিম বললেন: এটি কেবল নামেই ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে এটি শুধু ইতিহাস নয়।ভূগোল, জনমিতি, ধর্ম, বিবর্তন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ক্রমবর্ণনা, জনজীবনে সমুদ্রের প্রভাব, শরণার্থী, প্রস্তর যুগ হতে বঙ্গযুগ- সব বিবরণ এমন নির্ভুল তথ্যসহকারে তুলে ধরেছেন, যা আমার পক্ষে সম্ভব হতো কখনও।ছেলেটিকে নিয়ে আসুন। আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলব, আমার শেষ ইতিহাসের কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। ড. আমীনকে আমি এ কথা বলেছিলাম।তিনি খুশি হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ড. করিম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। কিন্তু আজ-কাল করে যাওয়া হয়নি। শেষপর্যন্ত ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই ড. আবদুল করিম চিরদিনের জন্য আমাদের সাক্ষাতের বাইরে চলে যান। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন। এখন বইটির প্রবল চাহিদা। লন্ডন, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশে চকরিয়ার অনেক লোক আছে। তারা আমাকে ফোন করেন, ফোন করে বইটি পাঠানোর অনুরোধ করেন। আমি গর্ব বোধ করি। এমন সম্মানজনক ও স্থায়ী কাজ আমার পক্ষে আর কখনও করা সম্ভব হবে না। বইটির মাঝে আমি বেঁচে থাকব।