Translate

Friday, 22 January 2016

মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী / ড. মোহাম্মদ আমীন

      মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী

সাংবাদিক, সাহিত্যিক মাওলানা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ১৮৭৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের রবিবার চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বরমা-আড়ালিয়ার চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মতিউল্লাহ পণ্ডিত। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ও রাজনীতিক ইতিহাসে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর অবদান অপরিসীম। ন্যায়নীতি ও দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য মাওলানা ইসলামাবাদী ভারতবর্ষের বিখ্যাত নেতা মহাত্মা গান্ধী, জওহর লাল নেহেরু, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখের সঙ্গে দিল্লির লালকেল্লায় বন্দি ছিলেন। মাওলানা ইসলামাবাদী উচ্চশিক্ষা জীবন শেষে প্রথমে রংপুর হারাগাছা মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন।একই সঙ্গে সাপ্তাহিক সোলতান নামের একটি পত্রিকা বের করেন। পরে তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড মাদরাসার প্রধান হিসেবে কিছুকাল চাকরি করেন। সেই সময় মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত পত্রিকা মিসরের আল মিনার, আল-ইহরাম, আল-বিলাদ পত্রিকায় আরবি ভাষায় তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে। বহু উর্দু ও ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকায়ও ইসলামাবাদীর মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশ হতো। অর্থ অভাবে সোলতান পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাঙ্গলা, ইসলাম মিশন, খাদেমুল ইনসান সমিতি, কৃষক-প্রজা সমিতি, শিক্ষক সমিতি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপনসহ সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আরব বিশ্বের বিখ্যাত ফার্সি ভাষার পত্রিকা দৈনিক হাবলুল মতিন’-এর বাংলা সংস্করণ সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে মাসিক ইসলামাবাদ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সাপ্তাহিক সোলতান, দৈনিক সোলতান, মাসিক আল ইসলাম, তাঁর কৃতিত্বের সেরা স্বাক্ষর|
চট্টগ্রামের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা স্কুল তাঁরই হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান। তাঁর স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রামের দক্ষিণ মহকুমার কর্ণফুলীর তীরবর্তী দেয়াং পাহাড়ে জাতীয় আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সে লক্ষ্যে সরকার থেকে ৬০০ বিঘা জমি এবং ওই এলাকার জমিদার আলী খান থেকে ৫০০ কানি ভূমি রেজিস্ট্রিমূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গ্রহণ করেছিলেন। বিখ্যাত নেতা ও শিক্ষাবিদ শেরেহিন্দ মাওলানা শওকত আলী এ আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। জঙ্গে জিহাদ শাহ বদিউল আলম শাহ জুলফিকার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবল সমর্থক হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে ঐ সময় চট্টগ্রামে থাকতে রাজি হন। দেয়াং পাহাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ স্থান পরিদর্শনে এসে মুগ্ধ হন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা আকরাম খাঁ, মুন্সী রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানে বিখ্যাত কর্মবীর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ইসলামাবাদীর সঙ্গে গোপনে দুই বার বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম দক্ষিণ মহকুমা থেকে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা, ভারতীয় মুসলমান সভ্যতা, ভারতীয় রাজনীতি এবং আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি গ্রন্থ রচনা করেন। এ খ্যাতিমান সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, রাজনীতিবিদ, সংগঠক শেষ বয়সেও ইংরেজদের রোষানল থেকে রেহাই পাননি। ৬৫ বছর বয়সে কারাগারে তাঁকে যে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তার সাক্ষি তাঁরই আত্মজীবনী পড়লে অনুধাবন করা যায়। মাওলানা ইসলামাবাদী ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন।

No comments:

Post a Comment