Translate

Friday 22 January 2016

নেলী সেনগুপ্তা / ড. মোহাম্মদ আমীন

নেলী সেনগুপ্তা


রাজনীতিক ও সমাজকর্মী নেলী সেনগুপ্তা (১৮৮৬-১৯৭৩) ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফ্রেডারিক গ্রে। নেলী গ্রে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থেকে ব্যারিস্টারি অধ্যয়নে লন্ডনে আগত যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর নেলী গ্রে (নেলী সেনগুপ্তা) স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। যতীন্দ্রমোহনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে নেলী সেনগুপ্তা হয়ে উঠেন অপরিসীম প্রেরণার উৎস। বিদূষী স্ত্রীর পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় বিলেত ফেরত যতীন্দ্রমোহন একজন সফল আইনজীবী, অবিভক্ত বাংলা কংগ্রেস ও সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি পরপর পাঁচবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
যতীন্দ্রমোহন ও নেলী সেনগুপ্তা উভয়ে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেস রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামে খদ্দর বিক্রয় করার সময় নেলী সেনগুপ্তা প্রথম গ্রেফতার হন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় অসহযোগ আন্দোলনের সময় যতীন্দ্রমোহনের সঙ্গে দিল্লি, অমৃতসর প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন। দিল্লিতে এক সভায় বক্তব্য রাখার সময় নেলী সেন আবার গ্রেফতার হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পরও নেলী স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যেতে থাকেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে তাকে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তাঁর আগে দু-জন নারী, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে অ্যানি বেশান্ত ও ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সরোজিনী নাইডু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। কলকাতা কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শপথবাক্য পাঠ শেষ হতে না হতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছর তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের অলডারম্যান (মেয়রের নিচে পদমর্যাদাসম্পন্ন) নির্বাচিত হন।
নেলী সেনগুপ্তা প্রথমে স্বামীর সঙ্গে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯২১ সালের ২১ জুলাই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে হরতালে অংশ নিয়ে শ্রমিকদের সমর্থনে জনসভায় বক্তৃতা দানের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হন। একই সঙ্গে তার স্বামীরও কারাদন্ড হয়।১৯২৮ সালে তিনি মতিলাল নেহরুর অনুসারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩১ সালে দিল্লিতে নিষিদ্ধ জনসভায় ও দিল্লি কোর্টে বক্তৃতা দানের অভিযোগে চার মাস কারারুদ্ধ থাকেন।
নেলী সেনগুপ্তা ১৯৪০ ও ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পর মহাত্মা গান্ধীর পরামর্শে নেলী সেনগুপ্তা চট্টগ্রামে চলে আসেন। এখানেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নেলী সেনগুপ্তা কয়েকবারই গৃহে অন্তরীণ থাকেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর নেলী সেনগুপ্তা কলকাতায় মারা যান।আজীবন দেশ ও জনগণের সেবামূলক কাজে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার নেলী সেনগুপ্তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

No comments:

Post a Comment