Translate

Monday 25 January 2016

মা নাকি বউ / ড. মোহাম্মদ আমীন


অক্সফোর্ডে MS এর বিষয় ছিল Impact of marriage on Person and Family. শিক্ষার্থী ৪৯ জন প্রথম ক্লাশের ঘটনা। শিক্ষক প্রত্যেকের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন। লেখা ছিল : আপনার কাছে একটি একটি খাবারের প্যাকেট আছে । ওটি দুজনের যে কোনো একজনকে দিতে হবে। ওই দুজনের মধ্যে্ একজন তোমার মা এবং অন্যজন সদ্য-বিবাহিতা স্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে বস্তুটি তুমি কার হতে তুলে দেবে? 
সময় ছিল মাত্র দুই সেকেন্ড।শিক্ষার্থীরা জবাব লিখে শিক্ষকের হাতে ‍তুলে দিলেন। তিনি কাগজগুলো পড়ে বললেন : যারা প্যাকেটটি মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার কথা লিখেছেন, তারা বাস্তবতা বিবর্জিত, অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ, পশ্চাৎপদ, অদূরদর্শী, বোকা, স্বার্থপর, অপরিনামদর্শী, মায়ের অকল্যাণকামী, সর্বোপরি নিজের, পরিবারের ও সমাজের সঙ্গে সুন্দর সেতুবন্ধন রচনায় বিচক্ষণ নয়। যারা মা-কে প্রকৃত অর্থে ভালবাসে তারা কখনও প্যাকেটটি মায়ের হাতে তুলে দেবে না।কয়েকজন প্রশ্ন করলেন : কেন?শিক্ষক : দেখ, প্যাকেটটা তোমার মাকে দিলে তিনি খুশি হবেন কিন্তু বউকে দিলে তিনি আরও বেশি খুশি হবেন। বউ ভাববেন, নিজের জন্মদত্রীকে না-দিয়ে আমাকে দিয়েছে। আমার স্বামী আমাকে খুব ভালবাসেন। তিনি আপনার প্রতি আরও অনুরক্ত হবেন। মা ভাববেন, আমার ছেলে, দশমাস পেটে রেখেছি, লালন করেছি; আমাকে না দিয়ে কী বউকে দেবে? বউ ভাববেন ভালবাসা, মা ভাববেন কর্তব্য।বউকে দিলে মা কষ্ট পাবেন সত্য, কিন্তু তোমার সংসার করতে হবে বউয়ের সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে নয়। তোমার মাকে অধিকাংশ সময় পুত্রবধূর সঙ্গে কাটাতে হবে। তুমি যদি প্যাকেটা বউকে দাও সে খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠবে। খুশিতে আপ্লুত বউ বস্তুটা তোমার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলতে পারেন : মা, আপনার ছেলের উপহার, আপনি রাখুন, দেখুন কী দিয়েছে আপনার ছেলে। আর যদি মাকে দাও, বউ খুব কষ্ট পাবে। ওই কষ্ট তাকে ঈর্ষাপরায়ণ ও হিংস্র করে তুলতে পারে। যা ক্রমশ আপনাদের মধ্যে সৃষ্টি করতে পারে দূরত্ব, অবিশ্বাস আর ভালবাসাহীনতা।
মায়ের হাতে তুলে দিলে বউ ভাববেন, না-জানি কী মূল্যবান বস্তু প্যাকেটে আছে। এটা আমাকে পেতেই হবে। স্বামী আমাকে ভালবাসে না। যত ভালবাসা মায়ের প্রতি। আমি পরের মেয়ে তাই এত অবহেলা। এবার বুড়ির মজা দেখাব। এ অবস্থায়, বউ স্বামীর অবর্তমানে শাশুড়ীকে মানসিক অশান্তিতে জর্জরিত করে তুলতে পারেন। অধিকন্তু তুমি মা-কে প্যাকেটটা দিলেও তোমার মা রাখতে পারবেন না। বউ ওই বস্তুটা কোনো এক ফাঁকে সুযোগ বুঝে জোর করে বা কৌশলে নিয়ে নেবেন। সংসারে শুরু হবে অশান্তি, জীবন অতীষ্ঠ হয়ে ওঠবে, এমনকি মায়ের অবর্তমানেও তোমাকে খোচা দেবে।মাকে বউয়ের সেবায় সংসারকে আনন্দময় করে তুলতে হলে বউয়ের হাত দিয়ে মায়ের উপহার দিন। কারণ, মা যতটুকু সহ্য করতে পারবেন, মেনে নিতে পারবেন- বউ তত পারবেন না। কম বয়সী মেয়েরা অভিমানী হন, তারা ভালবাসা ছাড়া কিছু বুঝেন না। বাস্তবতাকে আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে সংসারে অশান্তি আসে। তাই প্যাকেটটা মায়ের হাতে দিলে তিনি তার সামান্য সুফলও পাবেন না। কিন্তু বউয়ের হাত দিয়ে মাকে দিলে অন্তত সামান্য হলেও সুফল পাবেন।একজন শিক্ষার্থী বললেন : বউ যদি মাকে পুরো বঞ্চিত করেন?সাধারণত করেন না। কারণ, বউ আপনার মাকে বঞ্ছিত করে আপনার বিরাগভাজন হবেন না। যদি কেউ করেন, সেটি হবে ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারে না। গবেষণায় এমনটি দেখা যায়নি।তোমাদের হয়তো অনেকের জানা আছে, সম্রাট আকবরের দরবারে আগত এক অতিথি রাজাকে পানের বাটা তুলে দেওয়ার গল্প! পানের বাটাধারী এসে দ্বন্ধে পড়ে গেলেন। কার হতে তুলে দেবেন বাটা। রাজার দিলে সম্রাট ভাববেন, আমার খায, আমার পরে, সে কিনা আমার অধীন সামান্য এক রাজার কাছে পানের বাটা তুলে দিল। যদি সম্রাটের হাতে তুলে দেন তো, রাজা ভাববেন, মেহমান হিসাবে ডেকে এনে অপমান! এ অবস্থায় পানদার সম্রাট আকবরের হাতে পানের বাটা তুলে দিয়ে বললেন : মহামহিম সম্রাট, আপনি নিজ হাতে আপনার মেহমানকে পানের বাটা তুলে দিয়ে সম্মানিত করুন। দুজনেই খুশি।বউ যদি আমার মাকে কষ্ট দেন?শিক্ষক : কারণটা খুঁজে বের করতে হবে এবং তোমাকেই সেটি বন্ধ করতে হবে। সংসারকে রাষ্ট্রের চেয়েও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। এখানে আবেগ নয, স্ববেগ প্রয়োগ করতে হবে। মাঝে মাঝে মা ও বউ উভয়কে নিয়ে বেড়াতে যাবে। গল্পচ্ছলে বউকে বুঝাতে হবে, একদিন তিনিও শাশুড়ী হবেন, মাকে বুঝাতে হবে একদিন তিনিও বউ ছিলেন। তবে সবক্ষেত্রে মা-কে বেশি মেনে নিতে হবে। তিনি মা, তার অভিজ্ঞতা বেশি।একজন শিক্ষার্থী বললেন : আমি অবশ্যই প্যাকেটটা মায়ের হাতে তুলে দেব।এতবড় প্যাকেট আপনার বৃদ্ধা মা রাখতে পারবেন না। মাটিতে পড়ে ভেঙে যাবে। মাকে দিয়ে হচ্ছে না বলেই তো বিয়ে করেছ, নাকি? মাকে যদি কেউ সংসার জীবনের জন্য যথেষ্ট মনে করেন এবং বউ এলে মা অত্যচারিত হবে ভাবেন, তাদের বিয়ে না-করাই উত্তম। অন্তত মা গত হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরা উচিত|
আফ্রিকান এক শিক্ষার্থী বলল : কে বড়, মা না বউ?
শিক্ষক : জন্ম তারিখ দেখেই তো তা বোঝা যায়।
না, মানে বলতে চাইছি মায়ের গুরুত্ব বেশি নাকি বউয়ের?
শিক্ষক : শ্বাসনালীর গুরুত্ব বেশি নাকি ফুসফুসের? কলিজার নাকি হৃদপিণ্ডের? মুরগির নাকি ডিমের?
একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন।

এটাই আসল কথা। বোন আর বোনের স্বামীর মধ্যে যেরূপ মধুর সম্পর্ক তুমি আশা কর, তোমার আর তোমার স্ত্রীর সম্পর্ক কমপক্ষে ততটুক মধুর হওয়া উচিত। প্রত্যেক মায়ের উচিত তার পুত্রবধূর সঙ্গে এমন আচরণ করা, যা তিনি তার কন্যার জন্য কন্যার শাশুড়ি হতে আশা করেন। 

No comments:

Post a Comment