Translate

Sunday 24 January 2016

নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট ; ড, মোহাম্মদ আমীন

নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট্য

---------------------------------------------------------------------পৃথিবীর অতি নিকৃষ্ট জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হলো। আপনার জানা থাকলে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য দিন এবং যদি আপনি অকুতোভয় হোন তো বলুন, পৃথিবীর এক বা একাধিক অথবা অন্তত একটি নিকৃষ্ঠ জাতির নাম বলুন।
নিকৃষ্ট জাতির বৈশিষ্ট্য : 
১. অতি সংখ্যাগুরু হয়েও সংখ্যালঘু জাতির পদানত থাকতে বাধ্য হয়। তারা কেবল মাথা গণনা করে কিন্তু মাথার মগজ নিয়ে ভাবে না। ফলে, মাথাগুলো মৃত খুলির মতো ভয়ঙ্কর ভৌতিকতায় কেবল জন্ম দেয়। অজ্ঞতা ও সামর্থ্যহীনতার জন্য তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। তারা সাহসী নয়, পাশব; এর ভীরু এবং প্রচণ্ড লোভী। সামান্য অর্থের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করতে কুণ্ঠিত হয় না। 
২. কুসংস্কার, পৌরাণিক কাহিনি, অলৌকিকতা, পশ্চাদপদতা ও একগ্রন্থমুখীনতায় কঠিনভাবে আবদ্ধ থাকার কারণে পরিবর্তনকে পাপ মনে করে। পরিবর্তন এদের কাছে ভয়ঙ্কর, এরা কেবল অতীত আঁকড়ে ধরতে চায়। মনে করে অতীতের সবকিছু ভালো, বর্তমান জঘন্য। অতীত আকড়ে থাকে বলে আধুনিকতা তাদেরকে চরম অবহেলা করে। তাদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অতীতের বাস্তবতা বিবর্জিত বিশ্বাস দ্বারা ছেয়ে থাকে। ফলে, তারা আধুনিক যানের সঙ্গে ঠেলাগাড়ি নিয়ে অসম প্রতিযোগিতার শিকারে বার বার পরাজিত হতে থাকে। এমন জাতির বুদ্ধিজীবীরা মিথ আর বিজ্ঞান, কল্পকাহিনি আর জ্ঞানকে মিশিয়ে পুরো জাতিকে উদ্ভট করে দেয়।
৩. সর্বজনীনতা না-থাকায় তারা নিজ জাতি ছাড়া অন্য সবাইকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে,  তারা ভালবেসে টেনে নিতে জানে না তবে গ্রাস করে নিতে উদগ্রীব থাকে। কিন্তু সামর্থ্যহীনতার কারণে তা-ও পারে না। বরং নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যায়, নিজেদের ভূমি হারিয়ে ফেলে।  নিজস্ব মতবাদ প্রচারের জন্য অনুসারীদেরকে জোড়ায় জোড়ায় কতল করার নির্দেশ দেয়। হিংস্রতা দেখাতে গিয়ে তারা নিজেরাই বিশ্বব্যাপী হিংস্রতার শিকারে পরিণত হয়। এদের একাধিক উপজাতি বা উপগোত্র রয়েছে এবং এক উপজাতি বা উপগোত্র অন্যকে ভূয়া বলে বাতিল ঘোষণা করে। একজন আর একজনকে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাসঘাতকতা তাদের মজ্জাগত। 
৪. একান্ত অনুসারী ছাড়া অন্যদের চরম শত্রু ভাবে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের চরম অকল্যাণ কামনা করে। অথচ নিজেদের মৌলিক চাহিদা ও প্রাত্যহিক জীবন পরিচালনা করার জন্য ভিন্ন মতাবলম্বীদের আবিষ্কারের দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকে। অন্য ধর্মাবলম্বীকে পাপিষ্ঠ বলে গালি দেয় কিন্তু পাপিষ্ঠদের নির্মিত যন্ত্রে চড়ে পূণ্য অর্জনের জন্য তীর্থে যায়। 
৫. সংখ্যায় এর অগণিত, লাখে লাখে বেশুমার। তারপরও অন্য জাতির কেউ জাত বা ধর্ম ত্যাগ করে নিজেদের দলে যোগ দিলে সত্যমিথ্যা যাচাই না-করে কথিত সংবাদে উৎফুল্ল হয়ে উঠে। অথচ জানে না ঘটনাটা আদৌ সত্য কিনা। যোগদানকারী কি এবং কে- তাও বিবেচনা করে না। এদর কাছে সংখ্যাই মুখ্য, গুণের কোনো মূল্য নেই। এদের কাছে একজন রিক্সাওয়লা ও একজন পাইলট সমান। কায়িক শ্রমের উপর প্রচণ্ড নির্ভরশীল।
৬. সর্বক্ষণ অন্তর্কলহ ও পরচর্চায় নিয়োজিত থাকে। স্বার্থের জন্য নিজের ভাই, বন্ধু, অনুসারী এমনকি মা-বাবাকেও শেষ করে দিতে কুণ্ঠিত বোধ করে না। স্বার্থানুযায়ী মতবাদ প্রচার করে ও ব্যাখ্যা দেয়। নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করে। অন্য জাতির দুর্যোগে চরম আনন্দ পায় এবং বিপদ কামনা করে। আবার নিজেদের দুর্যোগে তাদেরই সহায়তায় বিপদমুক্তির জন্য ধর্ণা দেয়। 
৭. এরা মাতৃভাষার চেয়ে অন্য ভাষাকে অধিক পবিত্র মনে করে। পিতা-মাতার চেয়ে গুরু-ঠাকুরকে অধিক মর্যাদা দেয়। শিক্ষিত, জ্ঞানী ও প্রগতিশীল লোকদের সমালোচনা করে এবং তাদেরকে পাপিষ্ঠ ভাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা শোনালে পৌরানিক কাহিনির দোহাই দিয়ে জ্ঞানীদের কটাক্ষ করে। মিথ-পিরিত তাদের সকল অগ্রসর চিন্তাকে অন্ধের মতো কালো অন্ধকারে ঢেকে রাখে।
৮. তাদের কাজ আর কথার মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা যায়। তারা যা বলে তা করে না এবং যা করে তা বলে না। দিনের বেলা যা নিষিদ্ধ, রাতে তা দিব্যি আরামে উপভোগ করে যায়। সাধারণ জীবনযাপনকে পূণ্যময় মনে করলেও নিজেরা অত্যন্ত বিলাসী জীবন উপভোগ করে। 
১০. অপার্থিব ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন, শত্রু মোকাবেলা এবং সম্পদশালী হওয়ার চিন্তা করে। তাই প্রকৃতপক্ষে তারা সবাই দরিদ্র থেকে যায়- আজীবন এবং প্রগতিশীল জাতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। 
১১. এরা শিক্ষায় পিছিয়ে আছে এবং আধুনিক শিক্ষাগ্রহণকে এখনও পাপ মনে করে। যারা শিক্ষিত হন, তাদেরকে পাপিষ্ঠ ও ঈশ্বরদ্রোহী গণ্য করে একঘরে করে দেয়। 
১২. বিজ্ঞানের সকল সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করলেও বিজ্ঞানকে ঘৃণা করে। বিজ্ঞানের অনেক কথা মেনে নিতে চায় না কিন্তু বিপদে পড়লে আশ্রয় নেয় বিজ্ঞানে। বলে, পৃথিবী গোলাকার নয়, সমতল। 
১৩. এরা শাক্ত। শক্তির পুজা করে কিন্তু নিজেরা শক্তিহীন। সবসময় আচার-আচরণে শক্তের ভক্ত, নরমের যম। মিথ্যা বলে বেশি, সত্য বলে কম। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব আদর্শ ও বিশ্বাস বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত বোধ করে না। অথচ প্রকৃত ক্ষমতা কখনও পায় না। এদের বিশ্বাস সর্বদা পার্থিব প্রাপ্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত হয়। শাক্ত বলে এর সাধারণ মানুষের শক্তি ও গণতন্ত্রকে প্রকৃত অর্থে প্রয়োগ করে না।
১৩. অনেক ক্ষেত্রে এদের ধর্ম ও সংস্কৃতি অভিন্ন থাকে না। এজন্য তারা ধর্ম ও সংস্কৃতি কোনোটাকে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে পারে না। তারা জাতীয়তাবোধ, স্বকীয়তা, ব্যক্তিত্ব ও দেশপ্রেমের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ গুনাবলি  হতে অনেক পিছিয়ে থাকে। এজন্য সহজে, তারা অন্য জাতির পদানত হয়ে পড়ে। এদের কেবল বিশ্বাস আছে কিন্তু বিশ্বাসে আস্থা নেই। ইহকালের চেয়ে পরকাল অনেক আনন্দময় বিশ্বাস করলেও, কেউ সহজে পরকালের ওই আনন্দময় জগতে প্রবেশের জন্য মোটেও আগ্রহী থাকে না।
১৪. এরা বিবর্তনবাদে অবিশ্বাসী কিন্তু বিবর্তন হয়ে এতদূর যে এসেছে- এটা মোটেও মেনে নিতে চয় না। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নিয়ে এত মগ্ন থাকে যে, সারাক্ষণ ধর্ম নিয়ে তর্কবিতর্ক করে। নিজের ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে অন্যকে আহত করে, হত করে। 
১৫. এদের কিছু সদস্য বিজ্ঞান পড়লেও বিজ্ঞানমনস্ক হয় না। কারণ এরা শুধু পার্থিব লোভ আর সহজে চাকরি পাওয়ার জন্য বিজ্ঞান পড়ে। জাতি বা গোষ্ঠী বা দেশের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা দেখা যায় না। প্রত্যেকে কেবল নিজের চিন্তা করে বলে, জাতি গঠন ও দেশনির্মাণে তাদের প্রকৃত অর্থে কোনো আন্তরিকাতা পরিলক্ষিত হয় না। 
১৬. এদের আনুগত্য, জাত্যাভিমান, দেশপ্রেম বা নেতৃত্ববোধ কেবল ব্যক্তিস্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। নিজেদের নেতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন না-করে নেতার ক্ষমতা, সম্পত্তি ও সম্পদ ভাগাভাগির ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে এবং নেতার লাশ পচে গন্ধ বের না-হওয়া পর্যন্ত হুশ ফেরে না। 
১৭. এরা শিক্ষিত হলেও জ্ঞানী নয়, প্রকৃতি ও বাস্তবতা থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, জানে না। এরা মারাত্মক ধর্মবাজ, কুসংস্কাচ্ছান্ন, গোড়া, উগ্র জাতীয়তাবাদী, জীবনের সবক্ষেত্রে ধর্মকে টেনে নিয়ে আসে এবং ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষিত সাধারণ মানুষকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে। যারা প্রগতির কথা বলে,তাদের নির্যাতন করাকে পুণ্য মনে করে। 
১৮. এর ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার চরম বিরোধী। যারা নতুন কিছু বলে বা নতুন কিছু করতে চায়, তাদেরকে স্বগোত্রীয় হলেও ক্ষমা করে না। এরা সবসময় সংস্কার বিরোধী এবং প্রবলভাবে অন্ধবিশ্বাসে আবদ্ধ। এদের রীতি-নীতি ও অনুভব মুক্তচিন্তা বা মুক্তবুদ্ধির প্রতিবন্ধক বলে কোনো সংস্কারককে মেনে নেয় না। এদের মতবাদ ভিত্তিহীন বলে কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ভয় পায়, যদি আলোচনা তাদের ভিত্তিহীন ভত্তিকে চুরামার করে দেয়!  
১৯. অজ্ঞ বলে এদের কাছে যুক্তির কোনো দাম নেই। যুক্তিবাদীদের মনে করে শত্রু। তাদের বিচার ও বিবেচনাবোধ একগ্রন্থমুখী নির্দেশনার আলোকে অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিদের ইচ্ছায় তাড়িত হয়। এখানে না থাকে বিজ্ঞান, না থাকে দর্শন, না থাকে কোনো সংস্কৃতি। ফলে একই ভাষা, একই ধর্ম এবং একই সংস্কৃতির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র গঠন করতে পারে না। বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে বলে সহজে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

No comments:

Post a Comment