Translate

Saturday 23 January 2016

অভয়নগর ও ড. মোহাম্মদ আমীন/ আফজাল এম মুনীর

অভয়নগরের ইতিহাস’; প্রথমে মনে হবে এটি কেবল ইতিহাস গ্রন্থ। কিন্তু পড়লে বুঝা যাবে, এটি কেবল ইতিহাস নয়। গ্রন্থটির লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন, ছবিও আছে লেখকের।চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার সৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া গ্রামে লেখকের জন্ম। চাকরিসূত্রে তিনি অভয়নগর আসেন। তিনি ছিলেন অভয়নগর উপজেলার নির্বাহী অফিসার।
নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন ড. মোহাম্মদ আমীন বইটা লিখেছেন। আমি বই খুব তেমন একটা পড়ি না, তবে সংগ্রহ করি। কিন্তু নিজ জেলার ইতিহাস দেখে বেশ আগ্রহ হলো, চটপট কিনে নিলাম। শাহীন আমদেরর কাছ থেকে আমি বইটার কথা জানতে পারি। তবে এর অনেক আগে শুনেছি অভয়নগর উপজেলার একটি ইতিহাস আছে। চটি টাইপের বই মনে করে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু সে ইতিহাস গ্রন্থ যে এত সমৃদ্ধ হবে, তা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। চারশ চল্লিশ পৃষ্ঠার বইটি প্রচ্ছদ, পৃষ্ঠা, ছাপা এবং গেটআপ- যেদিক দিয়ে বিবেচনা করা হোক না কেন, বেশ আকর্ষণীয় মনে হলো। পঞ্চাশটি অধ্যায় রয়েছে বইটিতে। প্রতিটি অধ্যায় রীতিমতো ঈর্ষণীয়ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ গ্রন্থে অভয়নগরের ভূগঠন থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা সত্যি মুগ্ধকর। একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পক্ষে এমন নিষ্ঠার সঙ্গে কীভাবে আমাদের উপজেলার ইতিহাস লেখা সম্ভব হলো? এভাবে ব্রিটিশ আমলে প্রশাসকগণ আমাদের ইতিহাসের ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন। একজন লোক একটি উপজেলাকে কত ভালবাসলে, কত মমতায় নিতে পারলে এমন ইতিহাস রচনা করতে পারে- তা ভেবে আমি বিস্মিত হয়ে যাই।
পড়তে গিয়ে আরও মুগ্ধ হয়ে পড়ি। উপজেলার কোনো কিছু বলা যায়, বাদ যায়নি। মোটামুটি সবকিছু তুলে এনেছেন লেখক তার চারশ চল্লিশ পৃষ্ঠার গ্রন্থে।প্রথম অধ্যায় ভূগঠনের ইতিবৃত্ত।আন্তর্জাতিক পরিসরে অভয়নগর অধ্যায় পড়ে আমি গর্বে অভিভূত হয়ে উঠি। আমি জানতাম না, আমার উপজেলা এত সমৃদ্ধ। নমশূদ্র ছিয়ানব্বই গ্রাম ও তফশিলি সম্প্রদায়’ অধ্যায়টি পড়ে আমি হতবাক। বাংলাদেশে এমন আর কোনো এলাকা নেই। ইতিহাস গ্রন্থটিতে লেখক অভয়নগরের ভূ-গঠনের ইতিবৃত্ত, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, স্থানসমূহের নামকরণ, ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃতি ব্যক্তি, ভূগঠন হতে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত কালক্রমিক রাজনীতিক ও শাসনতান্ত্রিক বিবরণ, জনমিতি, লোকসাহিত্য, অর্থনীতি, ভূমিব্যবস্থাপনা, প্রকৃতি, পরিবেশ, যোগাযোগ, বাণিজ্য, দর্শনীয় স্থান, ক্রীড়া, আইনশৃঙ্খলা প্রভৃতি বিস্তারিত যেভাবে তুলে ধরেছেন তা আমাকে অভিভূত করেছে। প্রত্যেক অভয়নগরবাসীর কাছে অনুরোধ নিজের মূলকে অনুধাবনের জন্য বইটি পড়ুন। আমাদের অভয়নগর কত ঐতিহ্যময়, কত সমৃদ্ধ, কত গুরুত্বপূর্ণ তা জেনে গর্বিত হউন এবং ভবিষ্য প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিন, তারাও যেন আমাদের উপজেলাকে, আমাদের দেশকে এভাবে আমাদের পূর্বপুরুষের ন্যায় ভবিষ্যৎকেও ঐতিহ্যময় সমৃদ্ধিতে ঋদ্ধ করার অনুপ্রেরণা পায়। অভিয়নগর যতদিন থাকবে, ততদিন ড. মোহাম্মদ আমীন জীবিত থাকবেন। সুদূর অতীতে কেউ অভয়নগরের উপর কাজ করলেও ড. আমানের ইতিহাসকে ভিত্তি করে এগুতে হবে। অভয়নগরবাসী তাঁকে কোনোদিন ভুলতে পারবে না।

No comments:

Post a Comment