Translate

Friday 22 January 2016

চন্দনাইশের নামকরণ-বৃত্তান্ত / ড. মোহাম্মদ আমীন

চন্দনাইশের নামকরণ-বৃত্তান্ত

চন্দনাইশ চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সৃজনশীল কর্মকা- এবং প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন দেশপ্রেমমূলক আন্দোলনে এলাকার জনগণ প্রশংসনীয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, রাজনীতিবিদ যাত্রামোহন সেনগুপ্ত, ভাষা সৈনিক ও ঢাকার বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, সাহিত্যিক আহমদ ছফা, পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম নাফিল্ড স্কলারশিপ অর্জনকারী জাতীয় অধ্যাপক ডাক্তার নুরুল ইসলাম, কলকাতা কর্পোরেশন প্রাক্তন মেয়র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী নেলী সেনগুপ্তা এবং আস্কর আলী প-িতসহ সহ আরও অনেক খ্যাতিমান মনীষীর স্মৃতিবিজড়িত চন্দনাইশ, বাংলাদেশের অনবদ্য গৌরব। এর আয়তন ২০১.৯৯ বর্গকিলোমিটার বা ৭৭.৯৯ বর্গমাইল। চন্দনাইশ উপজেলার উত্তরে পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, দক্ষিণে সাতকানিয়া উপজেলা, পূর্বে বান্দরবান সদর উপজেলা ও সাতকানিযা উপজেলা এবং পশ্চিমে আনোয়ারা উপজেলা অবস্থিত। চন্দনাইশের বুকচিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চলে গিয়েছে। সাঙ্গু ও চানখালী চন্দনাইশ উপজেলার প্রধান নদী। 
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ অক্টোবর পটিয়া থানার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে চন্দনাইশ থানার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ২ জুলাই চন্দনাইশ থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ১০ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা সমন্বয়ে চন্দনাইশ উপজেলার প্রশাসনিক অবয়ব রচিত। বৈলতলী, বরকল, বরমা, ধোপাছড়ি, দোহাজারি, হারালা, হাশিমপুর, জোয়ারা, কাঞ্চনাবাদ এবং সাতবাড়ীয়াÑ চন্দনাইশ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন। চন্দনাইশ পৌরসভা ৯টি সাধারণ ও ৩টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে বিভক্ত। চন্দনাইশ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৯২,৬০০ তন্মধ্যে পুরুষ ৯৮২৭০, মহিলা ৯৪৩৩০। মুসলিম ১৬১৭৫১, হিন্দু ২৫৫০০,  বৌদ্ধ ৫১৫৭, খ্রিস্টান ১৪২ এবং অন্যান্য ৫০। এবার চন্দনাইশ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নামকরণের ইতিহাস ও কিংবদন্তি বিশ্লেষণ করা যাক।
চন্দনাইশ : চন্দন ও আঁশ হতে চন্দনাইশ। এর অর্থ চন্দনের আঁশ। একসময় এলাকাটি চন্দন গাছের উৎপাদন ও ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল। সাঙ্গু নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজে করে প্রচুর চন্দনকাঠের আঁশ দেশ-বিদেশ রপ্তানি করা হতো। তাই এলাকাটির নাম হয় চন্দনাইশ। অনেকে মনে করেন এখানে চন্দন গাছ উৎপাদিত হতো না। তবে শঙ্খ নদী দিয়ে চন্দন কাঠ রপ্তানি হতো। এলাকাবাসী চন্দনকাঠের জাহাজ আসার জন্য অপেক্ষা করত। তাই এলাকাটির নাম হয় চন্দনাইশ। এটাকে অনেকে নিছক প্রবাদ মনে করেন। তাদের মতো ‘চন্দন’ হতে চন্দনাইশ নামের উদ্ভব এটি ঠিক। তবে এ ‘চন্্দন’ অর্থ চন্দন কাঠ নয়। এটি একপ্রকার উপাদেয় সব্জি। এখানে চন্্দন নামের সব্জির প্রাচুর্য ছিল। চন্দন সব্জির আঁইশ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ছিল। এখান হতে বিভিন্ন এলাকায় চন্দন-এর আঁইশ রপ্তানি করা হতো। তাই এলাকাটির নাম হয় চন্দনাইশ।
কাঞ্চনাবাদ : কাঞ্চন ও আবাদ হতে কাঞ্চনাবাদ। ‘কাঞ্চন’ শব্দের আক্ষরিক ও আভিধানিক অর্থ স্বর্ণ। তবে কাঞ্চন এক বিশেষপ্রজাতির ধানও বটে। এখানে বর্ণিত কাঞ্চন হচ্ছে সোনার রঙবিশিষ্ট একজাতীয় ধান। একসময় এ অঞ্চলে কাঞ্চন ধানের আবাদ করা হতো। তাই এলাকাটির নাম হয় কাঞ্চনাবাদ। কাঞ্চন ধানের জন্য এলাকটি বিখ্যাত ছিল। কাঞ্চন ধান ক্রয়ের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ব্যবসায়ীরা এখানে আসতেন। ফলে এখানে নগরের ন্যায় একটি সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে উঠেছিল। তাই এর নাম হয় কাঞ্চন নগর। অনেকে মনে করেন চক্রশালা সংলগ্ন এ এলাকায় গৌতম বুদ্ধ এসেছিলেন। অধিবাসীরা তাকে কাঞ্চন মুদ্রা বা স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিয়ে বরণ করেছিলেন। তাই এলাকাটির নাম হয় কাঞ্চন নগর। সমতল ও ছোট ছোট পাহাড় নিয়ে গঠিত কাঞ্চন নগর সত্যিই কাঞ্চনের মতো মনোহর। এ এলাকায় প্রচুর পেয়ারা জন্মে। আপেলের চেয়েও সুস্বাদু এ পেয়ারা সারা বিশ্বে খ্যাত।
জোয়ারা : জোয়ার একজাতীয় শস্যদানা। যার ইংরেজি নাম ংড়ৎমযঁস, একসময় এলাকাটি জোয়ার নামক শস্যদানা উৎপাদন ও বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল। তাই এলাকাটির নাম হয় জোয়ারা। অনেকের মতে ‘জোয়াতা’ শব্দ হতে জোয়ারা নামের উদ্ভব। শব্দটির অর্থ একান্নবর্তী পরিবারের সম্পদ। এখানে সমৃদ্ধ একান্নবর্তী পরিবার ছিল সম্মান ও শক্তির প্রতীক। প্রত্যেক পরিবারের অনেক সদস্য থাকত। কিন্তু তারা পৃথগান্ন না হয়ে একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস করত। তাই তাদের জমিজমাকে বলা হতো জোয়াতা বা একান্নবর্তী পরিবারের সম্পদ। পুরো এলাকার প্রায় সব সম্পদ ছিল জোয়াতা। এ জোয়াতা শব্দে থেকে জোয়ারা নামের উদ্ভব।
দোহাজারী : দোহাজারী ইউনিয়ন চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণাংশে অবিস্থত একটি সমৃদ্ধ ইউনিয়ন। দোহাজারী নামের পেছনে একটা ইতিহাস রয়েছে। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে মোঘল বাহিনী চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। দক্ষিণ চট্টগ্রামে তখনও আরকানি মগদের আধিপত্য পুরোপুরি বজায় ছিল। তাদের দমন করার জন্য মোঘল বাহিনী চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে আরাকানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মোর্তজা খাঁর নেতৃত্বে মোঘল বাহিনী কর্ণফুলি নদী পার হয়ে শঙ্খ নদীর উত্তর তীরে তাবু ফেলে। যেখানে তারা তাবু ফেলে সেটিই বর্তমান দোহাজারী। আধু খাঁ ও লক্ষণ সিংহ নামক দুজন ভূস্বামীকে হাজারি মনসবদার নিযুক্ত করে সীমান্ত  রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ স্থানে দুজন ভূ-স্বামীকে হাজারি মনসবদারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল। তাই এলাকাটির নাম হয় দোহাজারী। আধু খাঁর নাম অনুসারে আধুনগর গ্রাম প্রতিষ্ঠা পায়। দোহাজারী ইউনিয়নের উত্তরে হাশিমপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণে শঙ্খ নদী, পশ্চিমে বৈলতলী ও পূর্বে ধোপাছড়ি ইউনিয়ন অবস্থিত। চাগাচর, দোহাজারী, জামিরজুরি, রায়জোয়ারা, দিয়াকুল গ্রাম নিয়ে দোহাজারী ইউনিয়ন গঠিত। এখানে একটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। যা আখেরি স্টেশন নামে পরিচি। কারণ এরপর আর রেললাইন নেই।
ধোপাছড়ি : ধোপাছড়ি চন্দনাইশ উপজেলার একটি পর্বত-প্রধান ইউনিয়ন। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। অসংখ্য ছোটবড় পাহাড় ইউনিয়নটিকে গড়ে তুলেছে সুন্দরের নিলয় কারুকার্যে। ‘ধোপা’ ও ‘ছড়ি’ শব্দের সমন্বয়ে ধোপাছড়ি শব্দ গঠিত। পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ¯্রােতকে ‘ছড়ি’ বলা হয়। ধোপা শব্দের অর্থ পরিষ্কার। এখানে যে ছড়িটি ছিল সে ছড়ির জল ছিল স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার। তাই এর নাম হয় ধোপাছড়ি, মানে পরিষ্কার জলের ছড়ি। ধোপাছড়ির পাশে গড়ে ওঠা জনবসতি ধোপাছড়ি নামে পরিচিতি পায়। এভাবে পুরো এলাকা ধোপাছড়ি নামধরণ করে। পরবর্তীকালে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা হলে ইউনিয়নের নাম হয়  ধোপাছড়ি।
বরকল : ‘বঙ্কল’ বা ‘বাকল’ শব্দ হতে বরকল নামের উদ্ভব। বঙ্কল বা বাকল হচ্ছে ঔষধরূপে ব্যবহৃত গাছপালার ছাল বা বাকল। এখানে অনেক পূর্ব হতে ‘বঙ্কল’ পাওয়া যেত। বঙ্কলের প্রাচুর্য ও বাণিজ্য হতে এলাকাটির নাম হয় বঙ্কল। যার পরিবর্তীত রূপ বরকল। আবার অনেকে মনে করেন, বরফকল হতে বরকল। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে এখানে সবচেয়ে আগে বরফ তৈরির কল স্থাপন করা হয়েছিল। তাই স্থানটি বরফকল নামে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে। বরফকলের ‘ফ’ বিচ্যুত হয়ে নামধারণ করে বরকল। আবার অনেকে মনে করেন, বঙ্কল শব্দের অর্থ নদীর বাঁক। নদীর বাঁকে জনপদটি গড়ে ওঠেছিল। তাই এর নাম বঙ্কল, যার অপভ্রংশ বরকল।
বরমা: ‘বর’ ও ‘মা’ শব্দ হতে বরমা নামের উদ্ভব। ‘বর’ শব্দের অর্থ আর্শীর্বাদ ও ‘মা’ শব্দের অর্থ মা, জননী, কালীমা প্রভৃতি। সুতরাং বরমা অর্থ মায়ের আশীর্বাদ। কথিত হয়, এলাকায় একবার প্রচ- খরা দেখা দেয়। খরার মধ্যে শুরু হয় কলেরার উৎপাত, তারপর পোকাা-মাকড়েরর উপদ্রব। বিপদের পর বিপদ আসতে থাকে। মানুষ জন মৃত্যুভয়ে এলাকা ছাড়তে শুরু করে।  এ অবস্থায় জমিদার মশায় প্রজাদের নিয়ে অনেক বড় করে মায়ের পূজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মানত করা হয়ে যে, এ বিপদ হতে রক্ষা পেলে এলাকার নামটি মায়ের নামে রাখা হবে। অনেক বড় করে মায়ের পূজা দেওয়া হয় এবং মায়ের আশীর্বাদে গ্রামবাসীর বিপদ কেটে যায়। সে হতে এলাকাটির নাম হয় ‘বরমা’ বা মায়ের আশীর্বাদ।
বৈলতলী: বৈলাম থেকে বৈলতলী নামের উদ্ভব। বৈলাম একজাতীয় ধান। এখানে প্রচুর বৈলাম ধান উৎপাদিত হতো। বৈলাম ধান উৎপাদন ও বাণিজ্যের জন্য আলোচ্য জনপদটি বিখ্যাত ছিল। তাই এর নাম হয় বৈলামতলী। যার অর্থ বৈলাম ধান উৎপাদনের জমি বা বৈলাম ধান উৎপাদনের স্থান। যা ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈলতলী নাম ধারণ করে। আবার অনেকের মতে, ‘বৈলন’্ থেকে বৈলতলী। ‘বৈলান’ হচ্ছে দড়ি পাকাবার বা দড়ি বানাবার একটি যন্ত্র। এখানে দড়ি বানানোর যন্ত্র ছিল এবং অনেকে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই এলাকাটির নাম হয় বৈলতলী।  কেউ কেউ বলেন, আসলে বৈল হতে বৈলতলী। ‘বৈল’ অর্থ ষাড় বা বলদ এবং তলী অর্থ স্থান। বহুকাল পূর্ব হতে জনপদটি ষাঁড় উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। ষাড়ের লড়াই তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। এ অঞ্চলের ষাড়ের সঙ্গে অন্য এলাকার ষাড় লড়াইয়ে প্রায় সময় হেরে যেত। অধিকন্তু এখানে বৈলগাড়ির জন্যও বিখ্যাত ছিল। তাই এলাকাটির নাম হয় বৈলতলী।
হারালা : ‘হারালা’ শব্দের অর্থ হারিয়ে দিলে, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলা যায় ‘হারাইলা বা আরাইলা’ বা হারাইয়া দিলা। এলাকার লোকজন সাহিত্য-সংস্কৃতি, কবিগান, তর্ক, বলীখেলা, লাঠিখেলা, চাষাবাদ প্রভৃতিতে বেশ সুনামের অধিকারী ছিল। সহজে কেউ তাদের কোনো বিষয়ে হারাতে পারত না। এ গ্রামের নিবাসীরা আশেপাশের অনেক গ্রামের লোকদের নানা প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিয়েছিল। একবার বিশাল এক কবিগান হলো। অনেক দূর-দূরান্ত হতে নামীদামি কবিয়াল আনা হয়। হাজার হাজার লোক কবিগানে জমায়েত হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত বর্তমানে হারালা নামে পরিচিত এলাকার কবিদল জিতে যায়। এ অবস্থায় বিপক্ষ দল বলে ওঠল, তোমরা আমাদের হারালা। এরপর থেকে এলাকার নাম হয়ে যায় হারালা।
সাতবাড়ীয়া : ‘সাত বাড়ি’ হতে সাতবাড়ীয়া নামের উৎপত্তি। কথিত হয়, ব্রিটিশ আমলে এখানে সাতটি প্রভাবশালী পরিবার ছিল। এ সাতটি পরিবার সাতটি ভিন্ন জমিদারি নিয়ে সাতটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করত। তাদের মধ্যে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও সহায়-সম্পদ নিয়ে প্রায় সময় দাঙ্গাহাঙ্গাম লেগে থাকত। এ কারণে তাদের প্রত্যেকের প্রভাব দুর্বল ও জমিজমার পরিমাণ কমে আসছিল। এলাকার জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলাও বিঘœ হয়ে পড়ে। প্রজাসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে সাত প্রভাবশালী পরিবার সমঝোতায় বসে এবং ‘সাতবাড়ি’ নাম দিয়ে একটি বড় গ্রাম গড়ে তোলে। যা পরবর্তীকালে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে পরিণত করা হয়। সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের দক্ষিণে বৈলতলী ইউনিয়ন, উত্তরে চন্দনাইশ পৌরসভা, পূর্বে হাশিমপুর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে বরমা ইউনিয়ন অবস্থিত। সাতবাড়ীয়া ইউনিয়ন চন্দনাইশ উপজেলার একটি সমৃদ্ধ জনপদ। দেওয়ানজী পাড়া, বেপারীপাড়া, যতরকুল, হাজিরপাড়া, মহুরীপাড়া, হাছনদ-ী, পূর্ব সাতবাড়ীয়া প্রভৃতি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়নটি গঠিত।
হাশিমপুর  : হাসিমপুর চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার একটি বনেদী এলাকা। আর্থ-সামাজিক কর্মকা- ও অবস্থানগত কারণে প্রাচীনকাল হতে এটি ছিল বাণিজ্য-প্রধান। বর্তমান হাসিমপুর নামে পরিচিত জনপদটির সূচনা নাম ছিল হাসিলপুর। ‘হাসিল’ এবং ‘পুর’ শব্দের সমন্বয়ে হাসিলপুর। ‘হাসিল’ শব্দের  অর্থ আদায়। আবার উৎপন্ন দ্রব্য অর্থ প্রকাশেও ‘হাসিল’ শব্দটির প্রয়োগ আছে। ‘পুর’ শব্দের অর্থ  প্রাম, জনপদ, নগর, স্থান প্রভৃতি। এটি ছিল একটি বাণিজ্যকেন্দ্র। চন্দনকাষ্ঠসহ মূল্যবান বনজসম্পদ, গবাদিপশু ও আকর্ষণীয় ফল-ফসলের বিশাল এক বাজার ছিল এখানে। বাজারে ক্রয়বিক্রয়ের ‘হাসিল’ আদায় এবং সড়কপথে মালামাল পরিবহনের হাসিল তোলার জন্য এখানে একটি হাসিল ঘর স্থাপন করা হয়েছিল। এ হাসিলঘর থেকে এলাকাটির নাম হয় হাসিলপুর। যা ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয়ে হাসিমপুর বা হাশিমপুর নামধারণ  করে। আবার অনেকে মনে করেন ‘হাসিল’ শব্দের অর্থ উৎপাদন। এ পুর বা নগর বা স্থানে প্রচুর কৃষিজ ও বনজদ্রব্য উৎপন্ন হতো। তাই এলাকাটির নাম হয় হাসিলপুর। এ হাসিলপুর ক্রম পরিবর্তনের মাধ্যমে  অপভ্রংশে হাসিমপুর বা হাশিমপুর নামে স্থিতি পায়।
 লেখক পরিচিতি: সাহিত্যিক, ইতিহাসবেত্তা, গবেষক ও ব্যাকরণবিদ।

No comments:

Post a Comment