দীপন আমার বন্ধু, আমার প্রকাশকও। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে তার প্রকাশনা
সংস্থা জাগৃতির অফিসে কতবার গিয়েছি, গেলেই নিয়ে আসত : আমার পছন্দের ছোলাবুট অথবা
সব্জি দিয়ে লুচি।
সে আর নেই। কিছু মানুষরূপী পশু তাকে হত্যা করেছে।
দীপন, দীপ্ত শপথের এক অনবদ্য মানুষ। পুরো অবয়ব ছিল
আকর্ষণের মমতায় ভরা।অমায়িক, সহজ-সরল, বন্ধু-বাৎসল এবং সদালাপী।
এমন সহজ-সরল
নিষ্পাপ লোকটিকেও জবাই করা হলো।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক
আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যারের একমাত্র ছেলে দীপন।স্যারও ছিলেন
অমায়িক, যেমন বাপ তেমন ছেলে।
অমায়িক, হাসি লেগেই থাকত
দীপনের মুখে, দেখামাত্র উদার গলায় বলে ওঠতেন : কেমন আছেন আমীন ভাই? এতদিন আসেননি কেন? কাজ ছিল বুঝি?
তারপর ফোন করে
আনিয়ে নিতেন লুচি বা ছোলাবুট।
দীপন যেন জীবনের
উচ্ছ্বাস। বড় করে কথাও বলতে পারত না, এমন বিনয়ী সে। সবাই ভালবাসতেন তাকে।
মারা যাবার
কয়েক মাস আগে আমেরিকা যাই।
দীপন বলেছিল, আমেরিকা
থেকে ঘড়ি আনতে।
আন্তরিকতার
সবকিছু ঢেলে দিয়ে বলেছিল : অবশ্যই একটা ঘড়ি আনবেন, কালো।
দীপন ছিল ফর্সা। তার, কালো মানাত বেশ। ঘড়ি
এনেছিলাম। রিংও করেছিলাম কয়েকবার, ধরেনি, হয়তো ব্যস্ত ছিল। ফোন না করে আমি সাধারণত যাই না। কারণ সে, জাগৃতি
অফিসে সবসময় বসত না। আমিও কাজের মধ্যে ডুবে যাই কয়েকদিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিই দিয়ে
আসব।
যেদিন তাকে
হত্যা করা হয়েছে সেদিন সন্ধ্যায় যাওয়ার
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলি। কিন্তু তার আগে সে খুন হয়ে গেল।খুন
করে ফেলে কিছু বর্বর, কিছু অমানুষ।
আমার ঘড়িটা
দেওয়া পর্যন্ত দীপনকে তারা থাকতে দিল না।
ঘড়িটা এখন কী করি! বেদনার স্পন্দন হয়ে টিক টিক করবে অনেক দিন।
তারপর হয়তো থেমে যাবে একদিন, অনেক বিষয় যেমন ভুলে যাই আমরা, থেমে যাই অনেক কিছু সময়ের পরিসরে।
No comments:
Post a Comment