Translate

Sunday, 17 January 2016

নটির বাচ্চা / ড. মোহাম্মদ আমীন

নটির বাচ্চা 

রাত দুটোয় মোবাইল করে জাফর (ছদ্মনাম) : আমি তোমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। গেটটা খোল।  রিক্সা ভাড়াটা দিতে হবে । আমি পার্স আনতে পারিনি।
জাফর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্যতম। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে জাফরকে নিয়ে আসি। বাসায় ঢুকি সন্তর্পনে, আমারও বউ আছে, যদি জেগে যায়! সবার বউ একই রকম, তফাৎ কেবল ঊনিশ-বিশ। জাফর লুঙ্গি পরে চলে এসেছে।গায়ে একটা পাতলা গেঞ্জি, পায়ে চপ্পল। শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে।
জাফরের বিষণ্ন চেহারায় নির্যাতিত সংখ্যালঘুর করুণ অসহায়ত্ব। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে কপোলে। সুন্দর চেহারাটা ঝড়ে ভেঙে-যাওয়া সর্ষে ক্ষেত যেন। আরও কয়েক বার সে এত রাতে আমার বাসায় এসেছে কিন্তু এমন বিমর্ষ দেখিনি। একটা স্যুয়েটার পরতে দিয়ে বললাম : কী হয়েছে?  
উত্তর দেওয়ার আগে আবার বেজে ওঠে মোবাইল। জাফর-ভাবীর রিং।কোনোরূপ সম্ভাষণ ছাড়াই শুরু করেন ভাবী : ভাই, হারামজাদাটাকে ঘরে জায়গা দেবেন না। ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি। জাফর মিয়া যদি বাপের জন্মের হয় আর বাসায় ফিরবে না। আপনি বলে দেবেন। জানি সে আপনার কাছে গিয়েছে। সে জাফর নয়, মীরজাফর, ঘসেটি বেগমের গোষ্ঠী। সাবধান! সে কিন্তু আপনার বাসাটাকেও ধ্বংস করে দেবে। সে হায়েনার চেয়ে ভয়ঙ্কর। কুকুরের বাচ্চার চেয়েও অধম, আকৃতিটা ছাড়া মানুষের কিছু নেই। আমি তাকে পুলিশে দেব, নারী নির্যাতনের মামলায় হাজতে রাখব। তার ধ্বংসই আমার কামনা। অসভ্যটা একদিনের জন্যও আমাকে শান্তি দিল না। অফিস থেকে এসেই বলে, ভাত দাও। কেন? সে নিয়ে খেতে পারে না! আমি কী তার চাকর! ভাই আপনারাও তো সংসার করেন। কোনোদিন বউকে ভাত দিতে বলেছেন? চাকরানিরাই এসব করে। কিন্তু চাকরানি রেখেও শান্তি নেই। তার ভয়ে একটা চাকরানি পর্যন্ত রাখতে পারি না। আমার চেয়ে চাকর-বাকরদের প্রতি মায়া। একটু বকা দেলে দরদ উত্‌লে ওঠে। আমি সব বুঝি, কেন এত দরদ। ভাই, আপনারাও তো সংসারে করেন, এমন তো হয় না, হয় কী? সে একটা জানোয়ার। বাপ ছিল ফকিন্নি, মা-টা ছিল গণ্ডমূর্খ। ভাইগুলো চাষাভূষা, বোনগুলো বেশ্যা। এমন জঘন্য পরিবারের ছেলে কীভাবে ভালো হয়? আমার মা-বাবা কীভাবে এমন নিকৃষ্ট পরিবারের একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে জীবনটা বরবাদ করে দিল। এতক্ষণে সে মনে হয় আমার বিরুদ্ধে অনেক আজেবাজে কথা বলে দিয়েছে। আমি কিন্তু ভাই বেশি কথা পছন্দ করি না। হারামির বাচ্চাটা মরে না কেন? সে যদি মরতো, বিশ্বাস করেন ভাই, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম। মসজিদে শিরনি দিতাম। কুত্তার বাচ্চা বাসায় আসুক, জিব কেটে ডাস্টবিনে ফেলে দেব। তাকে খুন করে আমি হাজতে যেতেও প্রস্তুত।
     কী হয়েছে ভাবী? আমি আগ্রহে জানতে চাইলাম।

জাফর ভাবী : ঘটনা বললে তো ভাই আপনি আকাশ থেকে পড়বেন।বলেন না ভাবী, কী হয়েছে। 
জাফর ভাবী বললেন : নটির বাচ্চা - বলে কিনা আমি বেশি কথা বলি।  

No comments:

Post a Comment