Translate

Friday, 3 November 2017

অর্হণা মুগ্ধকর প্রতীতি / প্রমিতা দাস লাবণী

অর্হণা
অর্হণা একটি তৎসম শব্দ। এর ব্যুৎত্তি হলো ‘অর্হ+অন্‌+ আ (টাপ্‌)’। এটি বিশেষ্য হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ পূজা; সম্মান, যোগ্য, শ্রেষ্ঠ, উপযুক্ত প্রভৃতি অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাংলা ভাষায় বর্তমানে শব্দটির ব্যবহার বেশ অপ্রতুল এবং সেহেতু এটি অপরিচিতই বলা যায়।,= ইদানীং শব্দটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।  এর কারণ ড. মোহাম্মদ আমীন এবং তার ‘অর্হণা’। অর্হণা  এখন কেবল অভিধানে বন্দি শব্দমাত্র নয়। এটি এখন ‘উপন্যাস’, লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন তাই ‘অর্হণা’ অভিধানের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পাঠকে আগ্রহে আগ্রহে। 

‘অর্হণ’ স্যমন্তক সিরিজের দ্বিতীয় উপন্যাস। লেখক কলকাতায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “তদিন রচনা বেঁচে
থাকবে ততদিন স্যমন্তক সিরিজের বই প্রকাশিত হতে থাকবে।” যদি আপনি মারা  যান তখন কী হবে? একজন সাংবাদিকের এই প্রশ্নে লেখক বলেছিলেন, তখন যারা জীবিত থাকবেন, তারাই এর উত্তর দেবে। অর্হণা এখনো প্রকাশিত হয়নি। সম্ভব জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হবে এবং বাংলাদেশের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৭’- এর পুথিনিলয় স্টলে পাওয়া যাবে। বইটির পাণ্ডুলিপি পড়ে আমি আনন্দ, রোমাঞ্চ আর ঋদ্ধ সঞ্চয়নে অভাবনীয়ভাবে অলংকৃত। এমন বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট একসঙ্গে আর কোনো উপন্যাসে পাইনি। বিশেষ করে মনোহর বাক্য-বিন্যাস ও হৃদয়মথিত কথোপকথন আমাকে মুগ্ধতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। 

শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রায় পুরো পৃথিবী উপন্যাসের ক্ষেত্র। উভয় বাংলার কালজয়ী কবিসাহিত্যিকগণ এই উপন্যাসের মূল চরিত্র। এছাড়াও রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের নামকরা কয়েকজন পণ্ডিত। বিংশ
শতকের অর্ধশতাধিক খ্যাতিমান সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, কুটনীতিবিদ, রাজনীতিক, চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং তাদের গুণান্বিত আলোচনার বিরল বাক্যে ‘অর্হণা’ সজ্জিত হয়েছে পাঠকদের জন্য।উপন্যাসের নায়ক-নায়িকা থেকে প্রায় সব চরিত্র খ্যাতিমান ও পরিচিত। এমন গুণবান ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা উপন্যাস অর্হণা’ পড়তে শুরু করলে নিজের অজান্তে চলে যেতে হয় সে গুণবানদের আলাপচারিতায়--- ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে লন্ডন, জার্মান আমেরিকা; আফ্রিকা থেকে আরো সুদূরে, জ্ঞানবানদের একান্ত আসরে।  এবার বলছি এই উপন্যাসের কয়েকজন চরিত্রে নাম।

আহমদ ছফা, অন্নদাশঙ্কর রায়, ড. মফিজ আলী চৌধুরী, আহমদ শরীফ, কবীর চৌধুরী, ডাক্তার নুরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক, আবদুল গাফফার চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, মযহারুল ইসলাম, আবদুল মাননান সৈয়দ, নরেন বিশ্বাস, আল মাহমুদ, হুমায়ুন আজাদ, আবদুল কাইউম, আসকার ইবনে সাইখ, শফিউদ্দীন আহমেদ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রফেসর গ্রিয়েল, প্রফেসর ব্রুম, প্রফেসর মিন্ড্রা, শ্রাবন্তীনাহা, শাহিদা সুলতানা, অরুণাভ সরকার, আবদুল আলিম, নাজিম উদ্দিন মোস্তান, ওসমান গনি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হায়াৎ মামুদ, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আহসান, কে এম শিহাব উদ্দিন, আখতারুজ্জামান বাবু, প্রফেসর কোবাইসি মাসাহিতো, অধ্যাপক টিআই চোধুরী, ভাষাবিষারদ প্রফেসর রচনাসহ আরও অনেক কালজয়ী কবি-সাহিত্যিক এই উপন্যাসের চরিত্র।

অর্হণা উপন্যাসের ভূমিকা লিখেছেন  হায়াৎ মামুদ। তিনি নিজেও উপন্যাসের একটি চরিত্র। চরিত্র দিয়ে বর্ণিত 
ভূমিকাসমৃদ্ধ উপন্যাস ইতোঃপূর্বে আমি পরিনি। তাই ‘অর্হণা’ ছিল আমার কাছে একটি নতুন ধারণার বিকাশ। ভূমিকায় হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, “
সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসা আর মানবীয় মূল্যবোধের সুষমিত প্রগাঢ়ত্বের সঙ্গে এতগুলো বিস্ময়কর চরিত্রের চরিত্রায়ণ উপন্যাসটিকে করে তুলেছে অনবদ্য। চরিত্রের সঙ্গে কথোপকথন, সজ্জা আর তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা এতই নিবিড় যে, অনুভবকেও হার মানিয়ে দেয়। এমন একটি উপন্যাস বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে -- এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ” হায়াৎ মামুদ আরো লিখেছেন, “উপন্যাসে চরিত্রবর্গের আলাপচারিতায় সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি, সংস্কার-কুসংস্কার, ধর্ম, আর্থ-রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত নির্দেশিত হয়েছে তা গভীর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অভাবিত আন্তরিকতাপুষ্ট ঋদ্ধ দ্যোতনায় দ্যোতিত। সর্বোপরি উপন্যাসের নায়িকা কল্পনার সঙ্গে নায়কের ভীষণ স্পর্শকাতর সম্পর্ক পাঠককে নুতন ভাবনায় মারাত্মক দ্বিধায় ফেলে দেবে। বাংলা সাহিত্যেকে এমন একটি অসাধারণ উপন্যাস উপহার দেওয়ার জন্য আমি লেখক ড. মোহাম্মদ আমীনকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।”

নিজেই চরিত্র তাই হায়াৎ মামুদ অতিরিক্ত প্রশংসা করে ফেললেন কিনা তা দেখার ইচ্ছা পাণ্ডুলিপি পাঠকে আরো তরান্বিত করে দিল।না, অতিরিক্ত কিছু তিনি লিখেননি। তাঁর লেখা যথার্থ এবং পাণ্ডুলিপি আদ্যপান্ত পাঠ করেই অর্হণার ভূমিকা লিখেছেন। অর্হণার আলোচনায় বিশিষ্ট সমালোচক এরশাদ হোসেন আবীর লিখেছেন, এমন জীবন্ত উপন্যাস আমি আর পড়িনি। দেখুন পরিচিত নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে কত ভালো লাগে। আপনার মনে অজানা এক শিহরন দেবে প্রেমে আর বোদ্ধমায় সমৃদ্ধতায়। প্রতিটি লাইন স্মরণীয় বাণী হয়ে অনেকদিন মোহিত রাখবে আপনাকে।

উপন্যাসটি  কেমন হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, ভাষা  মানুষকে এখনো এমন হাতিয়ার দিতে পারেনি,যদ্দ্বারা মানুষ তার সব উপলব্ধিকে বাক্য-ভাষায় অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তেমনি অর্হণার পাণ্ডুলিপি পারে আমার
প্রমিতা দাস লাবণী
 অনুভবে সঞ্চারিত আবেশরাশিকে সম্পূর্ণরূপে কথায় প্রকাশ করতে পারব না। শুধু বলবো, অসাধারণ, অসাম, হৃদয়কাড়া একটি উপন্যাস।যার প্রত্যেকটি লাইন নীরব চন্দ্রিমায় রাতের কোলে ঘেষেও জোছনাকে বাক্য বানিয়ে পাঠকের মনে বিপুল ঝড় তুলে দিতে নিমিষ চিন্তার মতো কিন্তু প্রকৃতির মতো বিরল স্থায়িত্বে। তাই বইটি কেমন? প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি, এর অবিকল উত্তর পেতে হলে ‘অর্হণা’ পড়তে হবে। অর্হণা এমন একটি উপন্যাস যা আপনাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিসাহিত্যিক ও পণ্ডিতবর্গের বন্ধু বানিয়ে দিতে সক্ষম হবো।  আমি বলবো অর্হণা শুধু উপন্যাস নয়, পাঠকের তীর্থভূমি। যেখানে প্রকৃতি বিছিয়ে রেখেছে তার অশেষ ঐশ্বর্য থরে থরে। অর্হণারূপ উপন্যাসের তীর্থক্ষেত্র থেকে আপনি পেতে পারেন সাহিত্যের নির্ঝর সমৃদ্ধি, বিমল মুগ্ধতা।

প্রকৃত অর্থে  প্রকাশের আগে এমন একটি অসাধারণ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি পড়তে দিয়ে স্যার (ড. মোহাম্মদ আমীন) আমার প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসার যে নিদর্শন দেখিয়েছেন তা আমার হৃদয়ে তীক্ষ্ণ-গভীর ভালোবাসায় নিরূপম শ্রদ্ধা হয়ে আমাকে আরো মুগ্ধ করে দিলেন-- 
প্রণাম আমার 
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।
যুগে যুগে মহিমার।

No comments:

Post a Comment