Translate

Tuesday, 19 December 2017

স্যমন্তক/ মুশাররফ খান


প্রসঙ্গ স্যমন্তক ,   
লেখক :  মুশাররফ খান 
প্রদায়ক : প্রমিতা দাস লাবণী 
স্যমন্তক উপন্যাসের মাধ্যাকর্ষণ প্রফেসর রচনা, যিনি লেখকের অনুপম ভালোবাসার শ্যামল ছায়ায়,
মুশাররফ খান
সুনিপুণ নির্মাণ শৈলীর পুর কৌশলে বস্তির দুর্বহ দারিদ্র্য পীড়িত জীবন থেকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বর্নাঢ্য পাদপ্রদীপের নিচে পৌঁছে যাওয়ার এক অসাধারণ অকল্পনীয় দুরূহ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন। লেখক তাঁর অপরূপ সৃষ্টি শৈলীর নিবেদনে তিলে তিলে নির্মান করেছেন একজন রচনাকে যিনি তুখোর মেধাবী, দুর্বিনীত বাগ্মী, সর্বাঙ্গে চৌকস, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার প্রতিভূ, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের সফল 
শিক্ষক। সেই মেয়েই কিনা আবার কখনো জল-কাদার মত নরম, একটুখানি ভালোবাসার কাঙ্গালিনী, শিশুর মতো ছিচকাঁদুনে ক্রাই-বেবি! আবার কখনো তাঁর নির্মাতার শুভ্র পায়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য  নিবেদনের মুগ্ধ পূজারী।
স্যমন্তক উপন্যাসের পরতে পরতে সাজানো মনিমুক্তা হীরা-পান্নার অফুরান ভাণ্ডার। সেখান থেকে অবলীলায় সংগ্রহের ঝাঁপি পূর্ণ করে ঘরে ফিরুন। স্যমন্তকের পাতায় পাতায় জীবনের কত না নিগুঢ় সত্যের অনুপম সম্ভার। স্যমন্তক পাঠ শেষে বোধন ও অভিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে অনুরণনে আপ্লুত হতে হতে মনে হবে বুঝি অনেক কাল পর এক দুর্লভ পঠন-পর্যটনের পরিপূর্ণ প্রাপ্তি ঝুলিতে ভরে ঘরে ফিরছেন। 
স্যমন্তক পড়তে পড়তে মনে হয়েছে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের কিছু খণ্ডচিত্র ছাড়া প্রফেসর রচনাকে বুঝি তেমন পাওয়াই হলো না। স্যমন্তক পাঠকবৃন্দ প্রফেসর রচনাকে আরও বর্ধিত কলেবরে, আরও বিচিত্র পরিসরে পাওয়ার দাবিদার একটু হতেই পারেন। স্যমন্তকের একটা সিকুয়েলের দাবি তাই তারা করতেই পারেন। 
স্যমন্তক রচিয়তার পরিবেশিত প্রতিবেশ এবং কথোপকথন থেকে ধারনা পাই, যাপিত জীবনের যাবতীয় অনুষঙ্গ, কাল যাপনের পরিপ্রেক্ষিতকে তিনি দেখেন নানা দৃষ্টিকোণ, নানা ভাবনা, নানা আলো, নানা
স্যামন্তকের লেখক ড. মোহাম্মদ আমীন
ছন্দের অণুবীক্ষণের নিচে।তার ভাবনায় নিখাদ সত্য কিংবা নির্জলা মিথ্যা - এমন ধ্রুব কিছু নেই। এটা শুধু দেখার কিংবা অনুভবের ভিন্নতার ব্যাপার। যে কোনো অভিদর্শন, বক্তব্য, মন্তব্যকে তিনি অবলীলায় ভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ভিন্ন দিগন্ত, ভিন্ন আঙ্গিক এবং ভিন্ন রঙে ঢঙে দৃঢ় স্তম্ভে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তিনি আপাত দৃশ্যমান সত্যকে কুশলী মিথ্যের মোড়কে পেশ করার, আর মিথ্যের গায়ে সত্যের চাদর মুড়ে দেওয়ার ভেল্কি জানেন। মিথ্যাকে তিনি জানেন অল্টারনেটিভ ট্রুথ, আর সত্যকে মিথ্যার ক্যামোফ্লাজ।পরিবেশনার এই মুগ্ধকর শৈল্পিক রূপময়তার চমৎকারিত্বে মুগ্ধতায় ভরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকেনা।ভেবে পাই না কোন কামরূপ কামাখ্যা থেকে তিনি শিখে এসেছেন এই সম্মোহনী যাদুবিদ্যা! 
স্যমন্তক কি সত্যের নিরেট পরিসংখ্যান পরিবেশন, নাকি সত্যের উপর ভাব ভাবনা ছন্দ রং তুলির কারুকাজ, লেখককে এই প্রশ্ন করার ঔদ্ধত্য আমার নেই। এখানে এসে আমি শুধু বাল্মিকীর আশ্রয় নিতে পারি। বাল্মিকী বলেছেন : 
“নারদ কহিলা হাসি, সেই সত্য যা রচিবে তুমি ,  
ঘটে যা তা সব সত্য নহে । 
কবি , তব মনোভূমি রামের জন্মস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেন।” 
স্যমন্তকের স্রষ্টা কথকতার নিপুন মাকড়সা। শব্দ ছন্দ ভাব ভাবনার হাটে তিনি ধনী মহাজন।সুনিবিড় নৈপুণ্যে তিনি গড়েছেন স্যমন্তক হেন আঁঠালো ওয়েব, একবার পা দিয়েছেন তো গেলেন আটকে। অতঃপর এক নিঃশ্বাসে প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিরামহীন পর্যটন হবে আপনার অমোঘ নিয়তি। 
স্যমন্তক প্রথম পাঠ আমার টেষ্ট রান। স্যমন্তক আমাকে লোভী করে তুলেছে। স্যমন্তক থেকে আমার আরও মনি মুক্তা আহরণ করা চাই। স্যমন্তকের অতলান্তিক গভীরে ডুব দিতে হবে আমাকে আরও একবার। 
জয়তু স্যমন্তক!

1 comment:

  1. এটি উৎসাহজনক। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জনাব মুশাররফ খান।

    ReplyDelete