Translate

Friday 5 January 2018

সাধারণ জ্ঞান নাকি শিক্ষার অপমান / ড. মোহাম্মদ আমীন

সরকারের উচ্চপদে চাকরি-পরীক্ষায় যারা দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের জ্ঞান এত সাধারণ যে, অসাধারণ প্রশ্ন করার কোনো সামর্থ্য নেই । ছাগল তো আর বাঘের গর্জন দিতে পারে না! তাই তাঁদের প্রশ্নরাশি কেবল সেক্সপিয়রের বাড়ি কোথায়, রবীন্দ্রনাথের পিতামহের নাম ৎকার বোর্ডে যাবার আগে কর্তারা সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে এমন ধরণের কয়েকটি প্রশ্ন মুখস্থ করে পরীক্ষার্থীদের উত্তর জানতে চান। আমি নিজেও অমন করেছি। এর মানে, আমি সাধারণ জ্ঞানকে অবহেলা করতে বলছি না। বলছি, সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের মধ্যেও যেন মেধা-স্ফুরিত কিছু থাকে। যেন হালকা হয়ে না যায় এবং যুগের সঙ্গে মানানসই হয়।
কী ছিল, লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চির টাকের আয়তন কত, আমেরিকার কোন প্রেসিডেন্ট বাম হাতে লিখতেন, কার মোজ সবচেয়ে মোটা -- এমন সব সাধারণ মানের প্রথাগত সস্তা দরের প্রশ্নে ঘুরপাক খায়। সাক্ষা
প্রশ্নকর্তারা সৃজনশীল নয় বলে, সৃজনশীল কোনো প্রশ্ন করতে পারেন না। যারা অমন প্রশ্ন করার যোগ্যতা রাখেন, তাঁদের ওই দায়িত্বে আসার জন্য যেরূপ তদ্বির বা তোষামুদে-দক্ষতা প্রয়োজন তা থাকে না বললেই চলে। সংগত কারণে চাকরিপ্রার্থীরাও তোতাপাখির মতো ওইসব সাধারণ প্রশ্ন মগজে ঢুকিয়ে পরীক্ষার হলে কিংবা সাক্ষাৎকার বোর্ডে বমির মতো উগড়ে দিয়ে খালি মাথা নিয়ে বের হয়ে আসে। চাকরি হয়ে গেলে আর কী! লেখাপাড়া করার প্রয়োজন হয় না। ফাইলে শুধু ‘দেওয়া যেতে পারে, আলাপ করুন, অনুমোদিত, আরো যাচাই করুন, মতামত নিন’-- এমন কয়টি বাক্য ছাড়া সারা জীবন আর কিছু না লিখলেও শুধু প্রশ্নহীন আনুগত্যের বদৌলতে পদোন্নতি পেয়ে সচিব, সিনিয়র সচিব প্রভৃতি হয়ে যান।
এ অবস্থায়, সরকারের অধিকাংশ উচ্চপদের প্রার্থীরা চাকরির জন্য বিশেষায়িত জ্ঞানের পরিবর্তে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, সাধারণ জ্ঞানের চাপে পড়ে সৃজনশীলতা মরে যায়। তথ্যের ভারে তা হাবুডুবু খাচ্ছে কিন্তু জ্ঞানের দেখাও পাচ্ছে না। রসায়ন বিজ্ঞান থেকে পাস করে পুলিশ হন, এমবিবিএস পাস করে হন সহকারী কমিশনার। এভাবে মস্তকে সঞ্চিত দীর্ঘদিনের বিশেষ অধীত বিদ্যা হারিয়ে যায় সাধারণ জ্ঞানের পায়ের (পদ) নিচে। অথচ আধুনিক বিশ্বে বিশেষায়িত জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই।
একজন মেধাবী ছাত্র, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পর যতদিন চাকরিতে থাকেন, প্রতিদিন একটু একটু করে মেধা কমতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে সব মেধা, ব্যক্তিত্ব এবং উদারতা পদ নামক পায়ের নিচে পিষ্ট হতে থাকে। এমন একসময় আসে, যখন মাথায় আর কিছু থাকে না। সব পায়ের দখলে চলে যায়। মস্তক মগজবিহীন হয়ে যায়। এমন লোকদের মধ্য থেকে আবার কাউকে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়।
- - -



[ সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, চাকরি এবং সৃজনশীলতা’ শিরোনামের প্রবন্ধের কিয়দংশ।]
প্রদায়ক : শ্রাবন্তীনাহা অথৈ।

No comments:

Post a Comment