Translate

Sunday 7 October 2018

সাবধান : সচেতন হউন / ড. মোহাম্মদ আমীন


মন খারাপ কেন? 
আমার এক সিনিয়র বন্ধুকে প্রশ্ন করলাম। তার নাম জে চৌধুরী। প্রসঙ্গত, তিনি চট্টগ্রাম থেকে
ঢাকা এসেছেন বড়ো ভাইকে নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে নামিদামি একটা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য।
আমার প্রশ্নের উত্তর তিনি বললেন, গলায় ক্যান্সারে আক্রান্ত বড়ো ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, গলার নষ্ট অংশ কেটে প্লাস্টিকের গলা লাগিয়ে দিতে হবে। নইলে বেশি দিন বাঁচবে না।
কত দাম হতে পারে? ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলাম।
ডাক্তার বললেন, আমেরিকান লাগালে চার লাখ টাকা এবং ভারতীয় লাগালে সত্তর হাজার টাকা। আমেরিকারটার মেয়াদ পঞ্চাশ বছর এবং ভারতীয়টার মেয়াদ দশ বছর।
বড়ো ভাইয়ের বয়স আশি চলছে। অনেক দিন ধরে অসুস্থ। কথাও বলতে পারছেন না। তার স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, ভারতীয় পার্টসটাই লাগাব। ডাক্তারকে সেভাবে বলে দেওয়া হলো। প্লাস্টিকের গলা লাগানোর চার দিন পর বড়ো ভাই মারা গেলেন। বিল দিল হাসপাতাল, সব মিলিয়ে পনের লাখ টাকা। প্লাস্টিক গলার দাম ধরেছে চার লাখ। ।
এত টাকা কেন? আমি তো ভারতীয়টা লাগতে বলেছিলাম।
ডাক্তার বললেন, আপনি বললে কী হবে, আপনার বড়ো ভাই বলেছেন, যত টাকাই লাগুক আমেরিকানটা লাগাতে হবে। নইলে লাগাবেন না। আপনাদের সঙ্গে আলাপের কথা বলাতে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেছিলেন, ওসব কঞ্জুসদের কথা মুখেই আনবেন না।
তারপর কী হলো? আমি আগ্রহসহকারে জানতে চাইলাম।
কোন দেশি পার্টস লাগানো হলে তা পরীক্ষার জন্য অন্য এক হাসপাতালে নিয়ে মৃত বড়ো ভাইয়ের গলায় আবার অপারেশন করা হলো। অপারেশনের পর আমরা বিমূঢ়, তার গলায় কোনো পার্টসই লাগানো হয়নি।ক্ষুব্ধ মনে মামলা করতে গেলাম। পুলিশ প্রাথমিক অনুসন্ধান করে প্রাথমিকভাবে সত্য পেলে মামলা নেবে জানিয়ে ওই হাসপাতালে গেলেন। সাত দিন পর পুলিশ জানাল, ওই হাসপাতালে আমার বড়ো ভাইকে ভর্তিই করা হয়নি।
পরদিন আমি ওই ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। ডাক্তার কিছুক্ষণ পর জানালেন কম্পিউটারে জে চৌধুরী নামের কোনো রোগীর ভর্তি হওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। অন্য কোনো হাসপাতালে গিয়ে দেখেন।

যেহেতু ঘটনাটি শোনা তাই হাসপাতালের নাম দিলাম না। না দিলেও ধারণা করে নিতে পারেন, ধারণা করতে না পারলেও সতর্ক হতে পারেন। ধারণার চেয়ে সতর্কতা অধিক প্রয়োজনীয়।

No comments:

Post a Comment