Translate

Saturday, 16 November 2013

ইহুদি : কেন শক্তিশালী, অসহায় কেন মুসলিম / ড. মোহাম্মদ আমীন

ইহুদি : কেন শক্তিশালী, অসহায় কেন মুসলিম
ইসরাইল এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের একটি ইহুদি রাষ্ট্র।তবে, বিশ্বের ৫০টা মুসলিম রাষ্ট্রের ৩০টি এখনও ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।  এর উত্তরে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্ডান, পূর্ব পশ্চিমে যথাক্রমে পশ্চিম তীর গাজা ভূখ- এবং দক্ষিণপশ্চিমে মিশর। ইসরাইলি পতাকায় রয়েছে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর এটি গৃহীত হয়। এর মাঝখানে তারকা চিহ্নটি দাউদ নবির সিলমোহর। ইসরায়েল অর্থ ইসরাইল নবি ও তার সন্তানদের দেশ। ইসরাইল নবির আর এক নাম ইয়াকুব। ইসরায়েল নামের সঙ্গে ইসরায়েলের নবি এবং ইসরাইলের শিশু কথাগুলো সংশ্লিষ্ট। ইহুদি সাহিত্যিক ও ইতিহাসবেত্তাগণ বলেন, ইসরাইল নামের উৎপত্তির সঙ্গে আম ইসরায়েল এবং বনি ইসরাইল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ইসরাইল শব্দের আক্ষরিক অর্থ ঈশ্বরের জন্য সংগ্রাম। ইসরাইলের নবি ইয়াকুব ও তার উত্তরপুরুষগণ অর্থাৎ ইসরাইলের সন্তানগণ এ ভূখ-ে বসবাস করে। তাই এর নাম রাখা হয় ইসরাইল।
ইসরায়েলের আয়তন ২০,৭৭০/২২,০৭২ বর্গ কিলোমিটার বা  ৮,০১৯/৮,৫২২ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয়ভাগের পরিমাণ ২.১২ ভাগ। আয়তন বিবেচনায় ইসরাইল বিশ্বের ১৫৩-তম দেশ। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী ইসরাইলের জনসংখ্যা ৮২,৩৮,৩০০, প্রতিবর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ৩৮৭.৬৩। জনসংখ্যা বিবেচনায় এর অবস্থান বিশ্বে ৯৬-তম। জনসংখ্যার মধ্যে ৭৪.৯% ইহুদি, ২০.৭% আরব বা মুসলিম এবং ৪.৪ ভাগ নন-আরব খ্রিস্টান ও অন্যান্য। মোট ইহুদির ৯২% ইহুদি শহরে বসবাস করে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে ইসরাইলের জিডিপি (পিপিপি) ২৮১.৭৫৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সে হিসাবে মাথপিছু আয় ৩৩,৬৫৮ ইউএস ডলার (২৫-তম)। জিডিপি নমিনাল ২৯৮.৮৬৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৩৫,৭০২ ইউএস ডলার (২৫-তম)।পৃথিবীতে মাত্র ১৪ মিলিয়ন ইহুদি, তন্মধ্যে ৭ মিলিয়ন আমেরিকায়, ৫ মিলিয়ন এশিয়ায় ২মিলিয়ন ইউরোপে এবং ১ লক্ষ আফ্রিকায়। প্রতি ১জন মুসলিমের বিপরীতে রয়েছে ১০০ জন ইহুদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ইহুদিরা, মুসলিমদের চেয়ে ১০০ গুণের অধিক শক্তিশালী।
আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ প্রভাবশালী, কার্যকর ও জনপ্রিয় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও গবেষক ইহুদি।সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein) ছিলেন ইহুদি। সাইকোবিশ্লেষনের জন্মদাতা সিগময়েন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud), কার্ল মাক্স, (Karl Marx)পল স্যামুয়েলসন, মিল্টন (Paul Samuelson) এবং মিল্টন ফ্রায়েডম্যান(Milton Friedman)সহ অসংখ্য ইহুদি বিজ্ঞানীর আবিষ্কার ও সার্বজনীন অবদান পৃথিবীর মানুষকে প্রতিনিয়ত উপকৃত করে যাচ্ছে। বেঞ্জামিন রবিন (Benjamin Rubin) আবিষ্কার করেছেন ইনজেকশন সিরিঞ্জ,  জোনাস সল্ক (Jonas Salk) প্রথম পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন, আলবার্ট সাবিন (Albert Sabin) লাইভ পোলিও ভ্যাকসিন, গার্টুড ইলিয়ন (Gertrude Elion) লিউকেমিয়া ড্রাগ,  বারুচ ব্লামবার্গ (Baruch Blumberg)আবিষ্কার করেন কার্যকর হেপটাইটিস বি ভ্যাকসিন, সিপলিসের চিকিৎসা আবিষ্কার করেন পল ইরলিক (Paul Ehrlich), ইলি মেচনিকপ (Elie Metchnikoff) সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বার্নাড কার্টজ (Bernard Katz) নিউরোমাসকুলার ট্রান্সমিশনের জন্য নোবেল পুরস্কার পান, এন্ড্রু স্ক্যালি (Andrew Schally) অন্তঃস্রাবী রোগ, ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরোডিজম প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পান।এসব ইহুদি আবিষ্কারকের অবদান পুরো বিশ্বের মানুষের জন্য পরম আশীর্বাদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।[1]

অ্যারন বেক(Aaron Beck)আবিষ্কার করেন মানসিক চিকিৎসার প্রতিরোধক সাইকো থেরাপি, গ্রেগরি পিন্কাস (Gregory Pincus) আবিষ্কার করেন প্রথম ওরাল গর্ভনিরোধক বড়ি, জর্জ ওয়াল্ড  (George Wald)মানব চক্ষুর বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুধাবন জ্ঞানের বিবরণের জন্য পান নোবেল পুরস্কার, স্ট্যানলি কোহেন (Stanley Cohen) অ্যাম্ব্রায়োলজি বা ভ্রূণতত্ত্বের উন্নয়নের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ইউলেম কলফ (Willem Kolff) ডায়ালাইসিস যন্ত্র আবিষ্কার করে পুরো পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিয়ে আসেন এক অবিশ্বাস্য আলোড়ন।
আধুনিক তথ্যবিজ্ঞানেও ইহুদিদের আবিষ্কার অবিস্মরণীয়। ইহুদি বিজ্ঞানী স্ট্যানটি মেযর (Stanley Mezor) প্রথম মাইক্রো প্রসেসর চিপ আবিষ্কার করে বিশ্বকে নতুন জগতে  নিয়ে যান। লিও জিলার্ড (Leo Szilard) আবিষ্কার করেন প্রথম নিউক্লিয়ার চেইন রি-অ্যাক্টর, পিটার স্কুলটাজ (Peter Schultz) আবিষ্কার করেন অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, চার্লস অ্যাডলার (Peter Schultz) আবিষ্কার করেন ট্রাফিক লাইট, বেনো স্ট্রাস (Benno Strauss) আবিষ্কার করেন স্টেইনলেস স্টিল, ইসাডর কাইস( Isador Kisee) আবিষ্কার করেন সবাক চলচ্চিত্র, এমিল বার্লিনার (Emile Berliner) আবিষ্কার করেন টেলিফোন মাইক্রোফেন এবং চালর্স গিন্সবার্গ (Charles Ginsburg)আবিষ্কার করেন ভিডিও টেপ রেকর্ডার।
জনসংখ্যার অনুপাতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রভৃতি বিবেচনাতেও ইহুদিজাতি বিশ্বে প্রথম। ইহুদিদের মধ্যে মাথাপিছু বিলিয়নিয়ারে সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি পোলো ((Polo)এর মালিক রালফা লউরেন (Ralph Lauren), লেভিস জিন্স (Levi's Jeans)কোম্পানির মালিক লেভিস স্ট্রাস (Levis Strauss), স্ট্রাটবাক (Starbuck's) কোম্পানির মালিক হোয়ার্ড স্কালটয (Howard Schultz), গুগুল (Google) এর মালিক সার্গে ব্রিন (Sergey Brin), ডেল কম্পিউটার (Dell Computers) কোম্পানির মালিক মিখাইল ডেল (Michael Dell), ওরাকল (Oracle)-এর মালিক ল্যারি এলিসন (Larry Ellison), ডিকেএনওয়াই (DKNY) কোম্পানির মালিক ডোনা ক্যারন (Donna Karan), বাসকিনস এন্ড রবিনস  (Baskins & Robbins)  কোম্পানির মালিক ইর্ভ রবিনস (Irv Robbins) এবং ডানকিন ডোনাটস (Dunkin Donuts) কোম্পানির মালিক বিল রোসেনবার্গ (Bill Rosenberg)পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কয়েকজন শিল্পোদ্যক্তা ও ধনকুবের। তাঁরা সবাই ইহুদি।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট রিচার্ড লেভিন (Richard Levin), আমেরিকার প্রাক্তন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার, রিগ্যান, বুশ, ক্লিনটনও জুনিয়র বুশের সময়কালীন ফেডারেল চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্পান (Alan Greenspan), প্রাক্তন সিনেটর ও সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেফ লিবারম্যান (Joseph Lieberman) ও মেডেলিন অ্যাব্রাইট (Madeleine Albright), ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোসাইলিস্ট এর প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাক্মিম লিটভিনভ (Maxim Litvinov), সিঙ্গাপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড মার্শাল (David Marshal), অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারের আইজাক আইজাকস (Issac Isaacs), ব্রিটিশ রাষ্ট্রনায়ক ও লেখক বেঞ্জামিন ডিসরাইলি (Benjamin Disraeli), পর্তুগালের প্রেসিডেন্ট জর্গ স্যাম্পাইও (Jorge Sampaio), কানাডার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হার্ব গ্রে (Herb Gray), ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ম্যান্ডেস (Pierre Mendes), ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মিখাইল হোয়ার্ড (Michael Howard), অস্ট্রিয়ার চান্সেলর ব্রুনো ক্রিস্কি (Bruno Kreisky)সহ অসংখ্য ইহুদি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আছেন।
বিশ্ব মিডিয়া জগতেও রয়েছে ইহুদিদের প্রবল প্রভাব। অনেক ইহুদি বিশ্বের প্রভাবশালী মিডিয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন এবং আছেন। তন্মধ্যে সিএনএন-এর উল্ফ ব্লিটজার (Wolf Blitzer), এবিসি নিউজ এর বারবার ওয়াল্টরস (Barbara Walters), ওয়াশিংটন পোস্ট এর ইউগেন মেয়ার (Eugene Meyer), টাইম ম্যাগাজিনের এডিটর ইন চিফ হেনরি গ্রুনওয়াল্ড (Henry Grunwald), দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর নির্বাহী সম্পাদক জোসেফ লেলিএল্ড (Joseph Lelyyeld)এবং নিউইয়ক টাইমস এর মার্ক্স ফ্রাঙ্কেল প্রমূখ উল্লেখযোগ্য।           
ইহুদি জনসংখ্যার তুলনায় অর্থের পরিমাণ, কার্যকারিতা ও বিশ্বে প্রদত্ত দানের অবদান বিবেচনাতেও ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ইহুদি ধনকুবের জর্জ সোরোস (George Soros) পৃথিবীর বিভিনন দেশে বিজ্ঞান গবেষণায় ৪ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ দান করেছেন।আর এক ইহুদি ধনকুবের লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেছেন ২ বিলিয়ন ডলার।
অলিম্পিক গেমসে ইহুদি খেলোয়াড় মার্ক স্পিটজ (Mark Spitz) সাতটি স্বর্ণপদক পেয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।লেনি ক্র্যাইজেলবার্গ (Lenny Krayzelburg) অলিম্পিকে ৩ বার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। মার্ক স্পিটজ, লেনি ক্র্যাজেলবার্গ ও টেনিস খেলোয়াড় বরিস বেকার (Boris Becker) সবাই ছিলেন ইহুদি। হ্যারিসন ফোর্ড (Harrison Ford), জর্জ বার্নস, টনি কার্টিস, চার্লস বনসন, সান্দ্রা বোলোক, বারবারা স্ট্র্যাইস্যান্ড (Barbra Streisand), বিলি ক্রিস্টাল, উডি অ্যালেন, পল নিউম্যান, পিটার সেলের্স, ডাস্টিন হফম্যান, মিখাইল ডগলাস, বেন কিংসলি, কির্ক ডগলাস, উইলিয়াম সাটনার, জেরি লুইস ও পিটার ফক-সবাই ইহুদি।
হলিউডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন ইহুদি। পরিচালক ও প্রযোজক স্টিভেন স্ফিলবার্গ (Steven Spielberg), মেল ব্রুকস (Mel Brooks), অলিভার স্টোন (Oliver Stone), বেভারলি হিলস ৯০২১০ এর অ্যারন স্প্যালিং (Aaron Spelling), দ্যা অড কাপল এর নেইল সিমন (Neil Simon), র‌্যাম্বোস ১,২ ও ৩ এর অ্যান্ড্রু ভায়না (Andrew Vaina), স্ট্রাস্কি এন্ড হাচ (Starsky and Hutch) এর মিখাইল ম্যান (Michael Mann), ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্যা কোকোস নেস্ট (One Flew Over the Cuckoo's Nest) এর মিলোস ফোরমান (Milos Forman), দ্যা থিফ অব বাগদাদ (The Thief of Baghdad) এর ডগলাস ফেয়ারব্যাংকস (Douglas Fairbanks)এবং  গোস্টবাস্টার্স (Ghostbusters) এর আভান রিটমান (Ivan Reitman)প্রমূখ ইহুদি ছিলেন। এখনও হলিউডসহ বিশ্বের ইংরেজি চলচ্চিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্বের বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি।তন্মধ্যে ১ বিলিয়ন এশিয়ায়, ৪০০ মিলিয়ন আফ্রিকায়, ৪৪ মিলিয়ন ইউরোপে এবং ৬ মিলিয়ন আমেরিকায়। প্রত্যেক পাঁচজন মানুষের মধ্যে ১জন মুসলিম। প্রতি ১জন হিন্দুর মধ্যে দুইজন মুসলিম, প্রতি ১জন বুড্ডিস্টের মধ্যে ২জন মুসলিম এবং প্রতি ১জন ইহুদির মধ্যে ১০১ জন মুসলিম। তারপরও কেন মুসলিম ক্ষমতাহীন? কেন বিশ্বে তাদের প্রভাব জনসংখ্যার তুলনায় প্রায় শূন্য?
প্রথম কারণ হচ্ছে শিক্ষা। ওআইসি (OIC)-র ৫৭ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫০০। সে হিসাবে প্রতি ৩ মিলিয়ন মুসলমানের জন্য রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ৫,৭৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। সে হিসাবে প্রতি ৫৭,০০০ আমেরিকানের জন্য রয়েছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়।ভারতে রয়েছে ৮,৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে সাংহাই জিয়াও সঙ ইউনিভার্সিটি (Shanghai Jiao Tong University) অ্যাকাডেমিক শিক্ষার  গুণগত মান ও প্রায়োগিক অধ্যয়ন বিবেচনায় পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন। মুসলিম দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই ওই তালিকার প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও স্থান পায়নি।[2]
উইএনডিপি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, খ্রিস্টানদের মধ্যে শিক্ষিতের হার ৯০%, তন্মধ্যে ১৫টি খ্রিস্টান সংখ্যা গরিষ্ট রাষ্ট্রে শিক্ষিতের হার ১০০৫। অন্যদিকে, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষিতের হার মাত্র ৪০% এবং পৃথিবীর কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশই এখন পর্যন্ত ১০০% শিক্ষিত হতে পারেনি। শিক্ষিত খ্রিস্টানদের ৯৮% প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, কিন্তু মুসলিম শিক্ষিতের মধ্যে কেবল ৪০% প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডী পাড় হতে পারে। শিক্ষিত খ্রিস্টানদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তির হার ৪০% কিন্তু মুসলিম বিশ্বেতা কেবল ২%
জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশে মুসলিমবিশ্বের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। এদিকে তারা মধ্যযুগের অবস্থানে রয়ে গেছে। মধ্যযুগে কীভাবে মুসলিম বিশ্ব সারা পৃথিবী জয় করেছিল, জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নতি করেছিল- তা এখন ধরে থাকলে তাদের আরও মারাত্মকভাবে পিছিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সৃজনে তারা পিছিয়ে আছে বলেই এতসংখ্যা নিয়েও তারা এখন প্রায় বলতে গেলে ক্ষমতাহীন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে প্রতি ১ মিলিয়নে বিজ্ঞানীর সংখ্যা ২৩০ জন কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা ৪০০জন, জাপানে ৫,০০০ জন। পুরো আরব বিশ্বে পূর্ণকালীন গবেষকের সংখ্যা মাত্র ৩৫,০০০ এবং সেখানে প্রতি ১ মিলিয়ন আরবীয়দের মধ্যে ট্যাকনিশিয়ানের সংখ্যা মাত্র ৫০ জন অন্যদিকে খ্রিস্টানপ্রধান দেশে প্রতি ১ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ট্যাকনিশিয়ানের সংখ্যা ১,০০০। মুসলিম বিশ্ব তাদের মোট জিডিপি (GDP) এর ০.২% গবেষণা ও গবেষণার সংক্রান্ত উন্নয়নে ব্যয় করে কিন্তু খ্রিস্টানপ্রধান দেশ ব্যয় করে ৫%।[3]
সংবাদপত্র ও মানসম্মত পুস্তক প্রকাশের সংখ্যার একটি দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, আধুনিকতা সামগ্রিক শিক্ষার বিস্তার নির্ভর করে।সংবাদপত্র ও সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যার উপর একটি দেশের জনসংখ্যার শিক্ষা, মেধা, জ্ঞানার্জন ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগিক বিস্তৃতি নির্ণয় করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও মুসলিমপ্রধান দেশগুলো মারাত্মকভাবে পিছিয়ে আছে। মুসলিম-প্রধান দেশে পাকিস্তানে প্রতি ১০০০ অধিবাসীর জন্য রয়েছে ২৩ পত্রিকা অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে সমসংখ্যক জনগনের জন্য রয়েছে ৩৬০টি পত্রিকা। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর স্বীকৃত পুস্তক টাইটেলের সংখ্যা ২০০০, অন্যদিকে মিশরে তা কেবল ২০।
উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পন্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মুসলিমপ্রধান দেশের পরিমাণ খুবই হতাশাজনক।প্রায়োগিক উচ্চশিক্ষা উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের নিয়ামক। পাকিস্তান প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে তন্মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্যের পরিমাণ মাত্র ১%। অন্যদিকে সৌদি আরব, কুয়েত, মরক্কো ও আলজেরিয়ার সম্মিলিত রপ্তানি ০.৩% কিন্তু ৭১২ বর্গমাইল আয়তনের ছোট একটি দেশের মোট রপ্তানি দ্রব্যের ৫৮% উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য।
বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি হার বিবেচনায় ইসরাইলের স্থানা পৃথিবীতে তৃতীয়।  এদেশের ৫৫ ভাগ নারীপুরুষ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। যা জনসংখ্যা অনুপাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তার জন্য পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করে। এ খরচ অর্ধেক কমালেও ইসরায়েল পৃথিবীর এক নম্বর ধনী দেশে পরিণত হবে।কৃষিতে ইসরায়েলের উন্নয়ন বিস্ময়কর। সব্জি ও মিষ্টি ভক্ষণে ইসরায়েল পৃথিবীর তৃতীয়। বিগত ২৫ বছরে ইসরায়েলি কৃষির সাতগুণ বিস্তার ঘটলেও কৃষিকাজে পানি ব্যবহারের পরিমাণ একই রয়ে গেছে। পৃথিবীতে ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যেখানে একবিংশ শতকে বৃক্ষের সংখ্যা বিংশ শতকের চেয়ে অনেক বেশি।
এটি লজ্জাকরভাবে বিস্ময়কর যে, ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম-প্রধান দেশের ক্রয়সক্ষমতাভিত্তিক বার্ষিক সম্মিলিত জিডিপি (GDP) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একক বার্ষিক জিডিপির চেয়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলার কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রতিবছর ১২ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে, চায়না করে ৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার, জাপান করে ৩.৮ট্রিলিয়ন ডলার, জার্মানি করে ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তেলসম্পদে সমৃদ্ধ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার একত্রে ৫০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। তন্মধ্যে সিংহভাগ তেল। অন্যদিকে, স্পেন একাই ১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। ক্যাথলিকি পোল্যান্ড উৎপাদন করে ৪৮৯ বিলিয়ন ডলার, বুড্ডিস্ট-প্রধান থাইল্যান্ড উৎপাদন করে ৫৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা।
পর্যন্ত ৮৫৫ জন লোক বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে তম্মধ্যে ১৯৩ জন ইহুদি যা মোট নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর ২২. ভাগ ইহুদি অথচ ইহুদির সংখ্যা কোটি ৪০ লক্ষ যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার . ভাগেরও কম অর্থাৎ প্রতি ৫০০ জন ইহুদির একজন নোবেল বিজয়ী প্রথম নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রথম ইহুদি এডলফ ভন ব্যায়ের তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেনমুসলমানদের মধ্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ীর সংখ্যা ১০ যা মোট নোবেল পুরষ্কার বিজয়রী মাত্র . ভাগ অথচ সারা বিশ্বে মোট মুসলমানের সংখ্যা ১৪০ কোটি যা মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ মুসলমানদের মধ্যে জন শান্তিতে, জন সাহিত্যে, ১জন পদার্থ বিদ্যায়, ১জন রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনজন মুসলিম এককভাবে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তারা হলেন: সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী নাগিব মাহফুজ ওরহান পামুক এবং রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মিশরীয়-মার্কিন বিজ্ঞানী আহমেদ জেবিল[4]
২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রসায়ন শাস্ত্রে ৩৪ জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। যা রসায়নে প্রদত্ত মোট পুরস্কারের ২২%, যা পুরস্কার বিজয়ী মোট আমেরিকানদের ৩৩%। অর্থনীতি শাস্ত্রে ইহুদিরা পেয়েছেন ২৯টি পুরস্কার, যা বিশ্বের মোট ৩৯%, এবং আমেরিকার ৫০%। সাহিত্যে ইহুদিরা ১৩টি নোবেল পুরস্কার অর্জন করে। এটি মোট প্রদত্ত পুরস্কারের ১২% এবং আমেরিকার ২৭%।শান্তিতের ৯জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বিশ্বে মোট প্রদত্ত পুরস্কারের ৯%, এবং আমেরিকার অর্জনের ১০%।পদার্থ বিজ্ঞানে মোট ৫১ জন ইহুদি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা বিশ্বের ২৬% এবং আমেরিকার ৩৭%। চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী ইহুদির সংখ্যা ৫৫জন। এটি বিশ্বের ২৭% এবং আমেরিকার ৪০%।
ইসরাইলে আরব-ইসরাইলি সমমর্যাদার ভোটাধিকার ভোগ করেন। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের স্বল্প কয়েকটি দেশের একটি যেখানে আরবীয় মহিলাদের ভোটাধিকার রয়েছে। ইসরাইলের আরবি মেয়েরা সেখানে ইসরালি নারীপুরুষের মতো সমান মর্যাদা ভোগ করে। এখানকার মহিলার বিশ্বের যে কোনো দেশের মুসলিম মহিলার চেয়ে অনেকে বেশি স্বাধীনতা পায়। তারা রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হতে পারেন। বিভিন্ন ইসলামি দেশের নারীদের উপর সম্মানজনক-খুনসহ অতি শাসনের যে আইন দেখা যায়, তা ইসরাইলে নেই। ইসরাইলে মোট জনসংখ্যার ২০% নন-ইহুদি। মুসলিমের সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন, ১৪,০০০ খ্রিস্টান, ১ লাখ দ্রুজ (Druze) ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। প্রত্যেকে ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারেন। ইসরাইলে ২০টি আরবি ভাষায় প্রকাশিত সাময়িকী রয়েছে।পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মুসলিমরা যে মর্যাদা ও সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করে, ইসরাইলে বসবাসরত আরবীয় মুসলিমেরাও তার চেয়ে বেশি সামাজিক নিরাপত্তায় আছে।ইহুদিদের স্কুলসমূহের আরবি পড়ান হয়। ৩,৫০,০০০ এর অধিক শিশু ইহুদি স্কুলে পড়ে। আরবীয় মুসলিমদের জন্য এখানে শতাধিক স্কুল তৈরি করা হয়েছে। ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আরবি সাহিত্য ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শিক্ষার জন্য খ্যাত।[5]
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইসরায়েল পৃথিবীর প্রথম স্থানে। জনসংখ্যা বিবেচনায় কলেজ ডিগ্রিপ্রাপ্ত অধিবাসীর সংখ্যা ইসরাইলে সর্বাধিক। মিউজিয়াম ও স্টার্টআপ কোম্পানির সংখ্যার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইসরায়েল কম্পিউটারের এন্টিভাইরাস আবিষ্কার করে। ছোট এ দেশটা যতগুলো ভাষার এবং যতসংখ্যক পুস্তকের অনুবাদ প্রকাশ করেছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো জাতি করতে পারেনি। মাথাপিছু নতুন বইয়ের সংখ্যা বিবেচনায় ইসরাইলের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। ইসরাইলের ‘বের’ শহরে জনসংখ্যা অনুপাতে দাবা গ্র্যান্ড মাস্টারের সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক।
আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ইসরায়েল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন তারা নতুন নতুন জিনিস ও আকর্ষণীয় সফটওয়্যার আবিষ্কার করছে। উইন্ডোজ এনটি ও এক্সপি, ভয়েস মেইল সিস্টেম পেন্টিয়াম-৪, সেন্ট্রিনো প্রসেসর, এওএল ইনস্ট্যন্ট মেসেঞ্জার প্রযুক্তি এবং মোবাইল ফোনের আবিষ্কার হয়েছে ইসরায়েলে। মোটোরোলা কোম্পানি ইসরায়েলে সেলফোন আবিষ্কার করে। এসব আবিষ্কার পুরো পৃথিবীর মানুষের জীবনযাত্রা ও আচরণ বদলে দিয়েছে। ইসরায়েলের ছোট্ট ভূখণ্ডে রয়েছে ৩,৫০০টি অতি উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন বিশালাকার কোম্পানি। উচ্চপ্রযুক্তিসম্পন্ন আধুনিক কোম্পানির সংখ্যা, গবেষণা ও আবিষ্কারের ধরণ প্রভৃতি বিবেচনায় ইসরায়েলের স্থান সিলিকন ভ্যালির পর দ্বিতীয়। পৃথিবীর যে নয়টি দেশ মহাশূণ্যে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করেছে, তন্মধ্যে ইসরায়েল অন্যতম। ইসরাইলি প্রযুক্তির দ্বারা এখন হার্ট টিস্যু রিজেনারেশন সম্ভব হয়েছে।
ইসরাইলে নিবন্ধকৃত আইনজীবীদের মধ্যে ৪৪% মহিলা। আয়তনে ছোট হলেও এ দেশের বিমান বাহিনি পরিধি ও শক্তি বিবেচনায় বিশ্বে চতুর্থ স্থানের অধিকারী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চায়নার পর ইসরায়েলি বিমান বাহিনির স্থান। হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নেওয়ার পর ইসরাইলের প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রশিক্ষণ গ্রহণের এ সীমা বালকদের জন্য তিন বছর এবং বালিকাদের জন্য দুই বছর।
বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্র ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরোধি। ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ (১৫৩) বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৮০,৫১,২০০ (৯৬-তম) কিন্তু ইসরাইলকে ঘিরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের মোট জনসংখ্যা ২২৩,৬০৮,২০৩ বর্গ কিলোমিটার। বিশ্ব বিবেচনায়  ১.৪ কোটি ইহুদির কাছে ১৪০ কোটি মুসলিম হাতের পুতুলের মত অসহায় এবং মধ্যপ্রাচ্য বিবেচনায় ২২.৪ কোটি মুসলমান ১.৪ কোটি মুসলমানের কাছে অসহায়। হিসাব করে দেখুন: ১জন ইহুদি সমান কতজন মুসলমান। একসময় মুসলিমরা এত নিকৃষ্ট ছিল না। তাদের ছিল বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী। জ্ঞানবিজ্ঞানেও মোটামুটি দখল ছিল। যদিও, সূচনা হতে আধুনিক শিক্ষা ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়ন ইসলাম বিশ্ব কখনও করতে পারেনি। ভিন্ন মতাবলম্বীদের কঠোর হস্তে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আধুনিক যুগে পাকিস্তানের বিজ্ঞানী আবদুস সালামকেও নন-মুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বলা যায়, মুসলমানদের এ অসহায়ত্ব, ক্ষমতাহীনতা ও চরম দারিদ্রের প্রধান কারণ হচ্ছে যুগোপযোগী শিক্ষা। শিক্ষা হতে দূরে থাকার কারণে মুসলিমবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে চরম অনৈক্য, কুসংস্কার, লোভ, পশ্চাদপদ ব্যবস্থাপনা,  কুসংস্কার, হানাহানি, সংস্কারবিমুখ মানসিকতা, কুটনীতিক অদক্ষতা, বিলাসী জীবন, দ্রুতহ্রাসমান প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিলাসী জীবন যাপনের প্রতিযোগিতা, উচ্চপ্রযুক্তি নির্ভর শিল্পের পরিবর্তে ইষ্টকভবন তৈরির হাস্যকর মহড়া প্রভৃতি। শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগের মাধ্যমে আধুনিক উচ্চপ্রযুক্তি আয়ত্ত করতে না-পারলে মুসলিম বিশ্ব আরও অসহায় হয়ে পড়বে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও সংখ্যা লঘুদের হাতের পতুল হয়ে থাকতে হবে।  


[1] Why are Jews so powerful and Muslims so powerless?  by Dr. Farrukh Saleem January 8, 2010,The Muslim Times.
[2] Dr Farrukh Saleem. The Muslim Issue, October 20, 2012 
[3] Muslim World Today. http://www.muslimworldtoday.com/
[4]  এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
[5]  A Muslim in Jews Land, Dr Tashbih Sayeed, Published: December 10, 2005
On a trip to Israel, a Muslim journalist 

নোবেল পুরষ্কার এবং মুসলিম

নোবেল পুরষ্কার এবং মুসলিম/ড. মোহাম্মদ আমীন

এ পর্যন্ত দশ জন মুসলিম নোবেল পুরষ্কার লাভ করেছেন। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রথম মুসলিম আনোয়ার সাদাত (25 December 1918 – 6 October 1981)। তিনি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে একজন ইহুদি ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচেন বেগিনের সাথে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ইয়াসির আরফাত (24 August 1929 – 11 November 2004) অপর দুই ইহুদি সিমন পেরেজ ও আইজাক রবিনের সাথে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তিতে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান। ইরানের শিরিন এবাদি (born 21 June 1947) ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে, মিশরের মোহাম্মদ এর বারাদাই (born June 17, 1942) ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে, বাংলাদেশের ড. মোহাম্মদ ইউনুছ (born 28 June 1940) ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে এবং ইয়ামেনের তাওয়াকেল (born 7 February 1979) কারমান ২০১১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।

সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী প্রথম মুসলিম নাগিব মাহফুজ (11 December 1911 – 30 August 2006)। মিশরীয় নাগরিক নাগিব মাহফুজ ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। সাহিত্যে দ্বিতীয় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী তুর্কি লেখক ওরহান পামুক (born 7 June 1952)। তিনি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। 

পাকিস্তানি পদার্থবিদ আবদুস সালাম (29 January 1926 – 21 November 1996) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে পদার্থ বিদ্যায় এবং মার্কিন-নিবাসী মিশরের বিজ্ঞানী আহমেদ জেবিল (born February 26, 1946) ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার লাভ করে।

যানজটের ক্ষতি

যানজটের ক্ষতি/ড. মোহাম্মদ আমীন


যানজটের কারণে প্রতি বছর দেশের ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় আট দশমিক ১৬ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে শুধু যানজটের কারণে। আর এর মধ্যে তিন দশমিক ২০ মিলিয়ন ঘণ্টা অর্থাৎ ৪০ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়িক কর্ম ঘণ্টা। শুধু বাসে এই ক্ষতির পরিমাণ সাত হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। প্রচলিত নিয়ম আনুযায়ি দেশে সরকারি বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম চলে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মোট আট ঘণ্টা। কিন্তু যানজটের জন্য এই কর্মঘণ্টা কমে দাঁড়ায় পাঁচ থেকে ছয় এর মধ্যে। আর এতে করে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার কাজের জন্য একজন কর্মীকে দিতে হচ্ছে পুরো আট ঘণ্টার মজুরি।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, “রাজধানীতে শুধু কর্মঘণ্টা নষ্টের জন্য বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা, ব্যবসায়িক ক্ষতি চার হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি অপচয় ৫৭৫ কোটি টাকা, দুর্ঘটনা জনিত খরচ ৫০ কোটি টাকা পরিবেশের ক্ষতি দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা।”নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির ৩৫ শতাংশ আসছে রাজধানী থেকে। যদি যানজটজনিত ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব হতো তাহলে প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো রাজধানী থেকে।

সরকারি হিসেব মতে রাজধানী মোট রাস্তার পরিমাণ দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়ক মাত্র ৩৮৮ কিলোমিটার এবং ফুটপথ রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের (ডিটিসিবি) হিসাব মতে ঢাকায় মোট যানবাহন ১২ লাখের মতো। অথচ ঢাকার সড়ক পরিবহণে ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১.৫ লাখের মতো। ডিটিসিবি’র মতে রাজধানীর সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকার মোট আয়তনের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ রাস্তার প্রয়োজন। ঢাকায় সড়ক রয়েছে মাত্র সাত শতাংশ। এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, “যানজটের কারণে দেশে প্রতিবছর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সে টাকা দিয়ে বছরে একটা পদ্মা সেতু করা যায়।”

সার্কিট হাউস বিড়ম্বনা


সার্কিট হাউস বিড়ম্বনা/ ড. মোহাম্মদ আমীন



উনিশ নিরানব্বই।
সন্ধ্যা ছটায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের তিন নম্বর কক্ষে উঠি।
বান্দরবান থেকে টেলিফোনে কক্ষটা রিজার্ভ করেছিলাম। রাত আটটায় ডা: শংকর সাহার এপয়েন্টমেন্ট।
কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর ডাক্তারের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেই। চেম্বার বেশি দূরে নয়, তবে প্রচণ্ড ভীড়।
যেমন রাস্তায় তেমন চেম্বারে।
চেক-আপ করে সার্কিট হাউজে ফিরতে দশটা বেজে যায়।
রুমের চাবি চাইতে কেয়ার টেকার আমতা আমতা করে বললেন: সরি, চাবি দেয়া যাবে না স্যার ।
কেন?
আপনার কক্ষের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
লজ্জা এবং ভয়ে আঁতকে: কী হয়েছে?
কেয়ার টেকার: আগামীকাল এডিসি জেনারেল সাহেবের আত্মীয়ের বিয়ে।
তাতে কী?
বর যাত্রীদের জন্য সার্কিট হাউসের সাধারণ কক্ষগুলো তিনি দখল করে নিয়েছেন।
এত রাতে কোথায় যাব!
আজ মন্ত্রী আসবেন নইলে আমি আপনাকে ভিআইপি রুমে রাখার ব্যবস্থা করতাম।
কেয়ার টেকারের সাহনুভূতিতে মনটা ভরে উঠে।
এডিসি সাহেবকে আমার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলেননি?
বলেছি।
তিনি কী বলেছেন?
কেয়ার টেকার : আপনি জেনারেল স্যারের সাথে দেখা করেন। পাঁচ নম্বর কক্ষে আছেন।
এডিসি সাহেবের নাম শহীদুল্লাহ মজুমদার। নোয়াখালী বাড়ি, এক মাস হয় চট্টগ্রামে জয়েন করেছেন। এর আগে ছিলেন রাঙ্গামাটি। হাসান সাহেব এনেছেন। রতনে রতন।
শহিদুল্লাহ সাহেব কয়েকজন লোকের সাথে আলাপ করছিলেন।
পরিচয় দিয়ে রাতটা থাকার সুযোগ দিতে অনুরোধ করি।
আমার অনুরোধে তার চোখেমুখে বিরক্তের বন্যা: আপনার স্ত্রী অসুস্থ তাতে আমার কী?
বিনয়ের সাথে বললাম: এত রাতে কোথায় যাবো?
আমার আত্মীয়ের চেয়ে আপনার স্ত্রীর অসুস্থতা বড়ো হতে পারে না।
একটু বুঝার চেষ্টা করুন স্যার।
আপনি যান। আমি গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করছি। ডিস্টার্ব আমার একদম অপছন্দ।
তাঁর কথা যথেষ্ট রুক্ষ তবু সংযত থাকলাম, হাজার হোক সিনিয়র। সাথে বউ না থাকলে চলে যেতাম। চট্টগ্রামে বাড়ি, হোটেল তো আছেই। কিন্তু বউয়ের সামনে এতবড় অপমান মেনে নেয়া যাচ্ছিল না।
আরও বিগলিত হয়ে বললাম: বিয়ে তো আগামীকাল। ভোরে চলে যাবো। এতো রাতে অসুস্থ মহিলা নিয়ে কোথায় যাবো?
যেখানে ইচ্ছা সেখানে যান, আমার কী? আপনি আমার কাছেই বা কেন এসেছেন?
আপনিই তো চাবি দিতে নিষেধ করেছেন।
তো বেশ করেছি। ঝামেলা করবেন না। চলে যান।
তার কথা শেষ হবার আগে দরজার পেছন হতে নারী কন্ঠের আওয়াজ ভেসে আসে।
পেছনে তাকাই, আমার স্ত্রী।
এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলো। তার শরীর কাঁপছে। চোখে-মুখে ক্রোধ, এমনিতে সে সাহসী, এথেলেট ছিল, অধিকন্তু মেয়েলি ভয়ঙ্করতা তো আছেই। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। মনটা শঙ্কায় আঁতকে।
বললাম: তুমি এখানে এলে কেন?
আমার স্ত্রী বললেন: চলে এসো। দরকার হলে ফুটপাতে থাকবো। এই জাহান্নামে নয়।
আর একবার অনুরোধ করে দেখি!
কার কাছে অনুরোধ করবে? মানুষের কাছে মানুষ অনুরোধ করে, জানোয়ারের কাছে নয়। আগামীকালের মেহমানের জন্য যিনি আজকের মেহমানদের চরম অসুবিধা সত্ত্বেও রাত দশটার বের করে দেন তাঁর কাছে অনুরোধ করার চেয়ে কুত্তার কাছে অনুরোধ করা অনেক ভালো, শুয়োরের কাছে অনুরোধ করো। আমি অনেক অমানুষ দেখেছি কিন্তু এমন অমানুষ দেখিনি। দেখতেও পশুর মত লাগছে। ছি! ছি!! জুনিয়র সহকর্মীদের প্রতি যার সাহনুভূতি নেই সে তো হায়েনার চেয়েও ভয়ঙ্কর। সে কীভাবে অফিসার হয়!
আমার স্ত্রীর কথায় শহিদুল্লাহ সাহেব রাগে কাঁপছেন।
আমার দিকে তাঁকিয়ে কাঁপা গলায় বললেন: আপনার স্ত্রীকে সরে যেতে বলেন। নইলে কিন্তু অসুবিধা হবে।
আমি কিছু বলতে চাইলাম, পারলাম না। মেয়েরা কথা বলতে চাইলে পুরুষদের সুযোগ শুন্য হয়ে যায়।
আমার স্ত্রী আরও সামনে এগিয়ে: সার্কিট হাউস আপনার বাবার সম্পত্তি নয়, সরকারি ভবন। এখানে আপনার মেহমানের চেয়ে আমাদের অধিকার বেশী। সার্কিট হাউসে অবস্থানের নীতিমালা আছে, সেটা পড়ে আসুন। এটা কমিউনিটি সেন্টার নয়,সার্কিট হাউজ।
সরে যান, সরে যান বলছি- চিৎকার করে উঠেন শহিদুল্লাহ মজুমদার।
সরে না গেলে কী করবেন? করাপ্টেড বুচার, নৃশংস হারামি!
আমার স্ত্রীর অগ্নিমূতি শহিদুল্লাহ মজুমদারকে ভয় পাইয়ে দেয়।
তবু গোঁ ছাড়েন না। আমার দিকে তাকিয়ে কর্কশ কণ্ঠে বললেন : আপনার স্ত্রীকে সরিয়ে নিন। নইলে-
নইলে কী করবেন? অসভ্য কোথাকার। বিবেকহীন কুত্তা। হোটেল ভাড়া করে বরযাত্রী রাখার যোগ্যতা অর্জন করার আগে আত্মীয়কে বিয়ে করাচ্ছেন কেনো? মুরোদ নেই যার তার আবার কথা। ভিক্ষেয় বের হলে তো পারতেন। অবৈধভাবে সার্কিট হাউস দখলের মজাটা আমি আজ দেখাবো।
কী করবেন আপনি?
আমার স্ত্রী সেন্ডেল খুলতেই মজুমদার সাহেব আমার পেছনে লুকিয়ে পড়েন।
আমি সেন্ডেলটা নিয়ে নেই।
কাঁদো কাঁদো গলায় শহিদূল্লাহ মজুমদার বললেন: আপনারা যান, আমি চাবি নিয়ে আসছি।
আমি স্ত্রীকে টেনে নিয়ে ওয়েটিং রুমে চলে আসি। সে কাঁদছে। ওয়েটিং রুমে অনেক লোক। বন্দর সমস্যা নিয়ে আলোচনা। দুজন মন্ত্রী আসছেন। এগারটার মধ্যে সার্কিট হাউসে পৌঁছবেন। আধ ঘণ্টা বাকি।
সার্কিট হাউজে থাকব না। মেইন গেইটে শুয়ে থাকবো। দেখি মন্ত্রীরা কীভাবে সার্কিট হাউসে ঢুকেন।
আমি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করি।
তবু রাগ কমে না: ছিঃ! কী চাকুরিতে ঢুকলে তুমি! যেখানে একজন সিনিয়র তার জুনিয়র সহকর্মীর অসুস্থ স্ত্রীকে রাত দশটায় রাস্তায় বের করে দেয়। এ রকম ক্যাডারে চাকুরি করার চেয়ে ফুটপাথে ছোলা বিক্রি অনেক ভালো।
প্লিজ, থামো।
থামবো না। বাইরে তো বড়াই করো, এডমিন ক্যাডার। আমি মন্ত্রীকে বিচার না দিয়ে যাবো না।
মন্ত্রীকে জানালে ঘটনা অনেক বড়ো হয়ে যাবে। পত্রিকায় উঠবে, এমনি এডমিন ক্যাডারের দোষ খুঁজে সবাই। আবার বুঝানোর চেষ্টা করি। এবার মন গলে তার।
মন্ত্রীকে বিচার দেবো না। তবে আবার শহিদুল্লাহ্রর সাথে দেখা করবো।
ঠিক আছে।
এডিসি সাহেব কক্ষের বাইরে পায়চারি করছিলেন। মুখ ফ্যাকাশে। আমার স্ত্রীকে দেখে ভয়ে ভেতর ঢুকে যেতে চাইলেন।
আমার স্ত্রী ডাক দিলেন: দাঁড়ান, কথা আছে।
বলুন ম্যাডাম।
আমরা চলে যাচ্ছি। স্বামীর অনুরোধে ক্ষমা করলাম। নইলে আপনার আত্মীয়ের বিয়ের বারোটা বাজাতাম। অবৈধভাবে সরকারি সম্পদ ব্যবহার এবং আমাদের বৈধ অধিকার কেড়ে নিয়ে যে হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে আপনার প্রতি শুধু নয়, আপনার ক্যাডারের প্রতিও আমার ঘৃণা জমে গেছে। দুর্বল আংটা দিয়ে পুরো চেইনের শক্তি কত তা পরিমাপ করা হয়। আপনার মতো নষ্ট জানোয়ার যতোদিন প্রশাসনে থাকবে ততোদিন এ ক্যাডারের উন্নতি কঠিন।
ধরাপড়া চোরের মতো মুখটা মলিন করে জনাব মজুমদার দাঁড়িয়ে। কোনো কথা নেই, কাঁপছেন।
আমি স্ত্রীর হাত ধরে টানতে থাকি: এসো চলে যাই।
তোমার এডিসি নাকি বিডিসি, তাকে একটা চড় দিতে এসেছিলাম। কিন্তু এমন আবর্জনায় হাত লাগাতে ইচ্ছা করল না।
আমি চোখে ইশারা করতে মজুমদার সাহেব রুমে ঢুকে পড়েন।
বারান্দায় বেশ কিছু লোক। তারা প্রশংসা দৃষ্টিতে আমার স্ত্রী দিকে তাকিয়ে।
রাত পৌনে এগারটার দিকে সার্কিট হাউস থেকে বেরিযে আসি।
গেইট পাড় হতে না হতে সার্কিট হাউসে মন্ত্রীর গাড়িবহর ঢুকে পড়ে।
ঘটনাটি মনে পড়লে আমি এখনো শিউরে উঠি।
যদি আমার স্ত্রী ঐদিন মন্ত্রীকে বিষয়টা জানাত তো মজুমদার সাহেবের কি হত? পত্রপত্রিকায় বিশ্রীভাবে লেখালেখি হত।
এ ঘটনার কয়েক মাস পূর্বে আমার শালীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। শুধু তারিখ নির্ধারণ বাকি ছিল।
হবু স্বামী প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য ছিলেন।
আমার স্ত্রীর কাছে সার্কিট হাউসের ঘটনা শুনে শ্বশুর মশায় বিয়ে ভেঙ্গে দেন।
আমি অনুনয় করেছিলাম।
শ্বশুড় অনড়: এমন ক্যাডারের সদস্যের কাছে মেয়ে দেব না।
আমি চেষ্টা করেছিলাম শালিকার মাধ্যমে রাজি করাতে।
শালিকা বাপের চেয়ে আরও এককাঠি উপরে: প্রয়োজনে রিক্সাওয়ালা বিয়ে করব, তবু প্রশাসন ক্যাডারের কাউকে নয়।
কেন?
এ ক্যাডারে শহিদুল্লাহ মজুমদার আছেন।
অতপর বিয়ে ভেঙ্গে দেন শালিকা।
সার্কিট হাউস দেখলে এখনও আমার ঘটনাটা মনে পড়ে,
মনে পড়ে শহিদুল্লাহ মজুমদারের কথা,
শালীর বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার কথা।
স্ত্রীর সামনে আমার লজ্জায় আনত হবার কথা।

Wednesday, 21 August 2013

বিড়ম্বনা / ড. মোহাম্মদ আমীন






বিড়ম্বনা

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব

 

প্রথম পর্ব

বিখ্যাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিফ। অনেকদিন পর গ্রামে গেছেন। প্রত্যন্ত গ্রাম। বিদ্যুৎ নেই। গাছপালা ঢাকা পরিবেশে। জ্যোস্নার আলোও ঢুকতে পারে না সহজে।
বাড়ির কয়েকশ গজ দূরে মেঠোপথের পাশে সুপারি গাছের টুল। গ্রামের লোকেরা এখানে বসে আড্ডা মারেন, বিশ্রাম করেন। কেউ কেউ চাঁদনি রাতে শুয়ে চোখ বুজে বাতাস টানেন, কেউ টানেন ধুয়া।
সিগারেটের নেশায় ধরেছে আসিফের। অনেক্ষণ টানতে পারেনি।
বাড়িতে বাবা আছেন। চাচা আছেন। মা আছেন। তাদের সমানে সিগারেট খাওয়া যায় না। কারণটা কী এখনও সে বের করতে পারেনি। অথচ সে বাবার ছুড়ে দেয়া সিগারেটের অংশ থেকে ধুয়ার স্বাদ পেয়েছে। বাবা এখনও সিগারেট টানে। তবে বাসায় নয়, মা পছন্দ করে না। মায়ের কথা: বিষ খাও তো বাইরে গিয়ে খাও। তোমার বমি বিষ কেন আমার ছেলেমেয়েদের ফুসফুস কানা করে দেবে!
আসিফের মনটা উসখুস। 
নেশা ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বাবা পাশের রুমে আকবর হোসেনের ‘দুদিনের খেলাঘরে পড়ছেন’। মা আর অন্যরা জিটিভির নাটকে।

আশিফ দরজা টানতে  মা সজাগ হয়ে উঠেন: কে?
 আমি।
কোথায় যাচ্ছো?
 উঠোনে একটু হাটবো- মা।
মা: সাবধান। চারিদিক অন্ধকার। সাপজোঁক থাকতে পারে। দুদিনআগে কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে। ছাদরটা জড়িয়ে নাও।

কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। সিগারেট তাকে ডাকছে। যেমন ডাকে ঋতৃস্বা। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এক বছর জুনিয়র। ঋতৃস্বার সাথে সিগারেটের কিছুটা পার্থ্ক্য রয়েছে। 
সিগারেট যে কোন সময় পাওয়া যায় কিন্তু ঋতৃস্বাকে সবসময় পাওয়া যায় না। সিগারেটের নেশার বিকল্প নেই, ঋতৃস্বার বিকল্প আছে।
ঋতৃস্বার কথা ভাবতে ভাবতে আসিফ টুলের সামনে চলে আসে। দেখা যায় না, আবছা অনুমান। অন্ধকারে নাকি নিজের ছায়াটাও চলে যায়। কী অদ্ভুদ পৃথিবী, কী অদ্ভুদ মানুষ।
টুলে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। কত বার বসেছে এ টুলে, কতভাবে। দাদার কথা মনে পড়ে, তিনি কোলে নিয়ে চলে আসতেন টুলে। বাতাস খাবেন। আদর করে ডাকতেন ‘আসি’।
এগার বার চেষ্টা করে সিগারেট জ্বালায় আসিফ। অসহনীয় বাতাস।
বাতাস মাঝে মাঝে বড় বিরক্তিকর মনে হয়। আসলে, নেশা সব সুন্দরকে আড়াল করে দিতে চায়। এমন একরোখা প্রেমিকা আর হয় না। ম্যাচের সব কাঠি শেষ। 
খালি বক্সটা পেছনে পুকুরের দিকে ছুড়ে দেয়। জলে পড়েনি। বাতাস আবার তার সামনে নিয়ে আসে।
সিগারেট টানতে শুরু করেছে আসিফ। আহ্ কী মধুর, কী অপূর্ব!!
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। লোকজনের আনাগোনা কম।
একজন লোক এদিকে আসছে। আসুক, খোলা জায়গায় টের পাবে না কী টানছে আসিফ। সিগারেট কে না টানে!

যে-ই হোক বাবা না হলে হলো। গ্রামে বাবা-মা ছাড়া সবার সামনে সে সিগারেট টানে।
আশার কথা- বাবা এখন বের হবেন না। 
আকবর হোসেন মগ্ন।
লোকটা আরও এগিয়ে আসছে। আসিফ বুঝতে পারছেন না, চিনতে পারছে না। 
 টুলের কাছে এসে বলল : ভাই একটু আগুন দেন তো?
আসিফ: কীসের আগুন।
সিগারেটের আগুন।
আসিফ: আমার কাছে সিগারেট নেই।

তো কী টানছেন?
আসিফ: বুইল্যা। 

ওটা থেকে দেন?
আসিফ: এটার পাছা থেকে আগুন নেয়া যায় না। ঝরে যায়। আঁশ বড় চিকন।
বুইল্যা আবার কী?
আসিফ: গাঁজা।
কী বললে? কী বললে?
চমকে উঠে আসিফ। নেশা কেটে যায়। কণ্ঠ পরিষ্কার। রাতের আধারেও চেনা যাচ্ছে।  লোকটা কেউ নয়, তার বাপ আজমত উল্লাহ পাটোয়ারী। যার
ওহ মাই গড!!

সান্তনা একটাই- এর কাছ থেকে আসিফ সিগারেট টানা শিখেছে। 
গাঁজা ঢাকায় বন্ধুদের পাল্লায়। 

বিড়ম্বনা দ্বিতীয় পর্ব

উপজেলা নির্বাহী অফিসার হামিদ আলীগড় লাইব্রেরিতে বই দেখছেন। ঢাকায় এলে বই কেনে। যদিও অফিসারেরা এখন তেমন বই পড়ে না, সময়ের ওজুহাত দেয়।
বই কেনে না, অর্থের দোহাই দেয়। তবে বাচ্চাদের জন্য বিদেশে খেলনা কেনার টাকার অভাব হয় না। হামিদ আলী একটু ব্যতিক্রম। তিনি বই পড়েন, বই কেনেন। 
জাফর সাহেব এক সময় খুব বই পড়তেন, এখন পড়েন না। বউ পছন্দ করেন না। বই আর বউ পরস্পর সতিনের আচরণ করে। দুটোর বানানেই ‘ব’।
মোবাইল বেজে উঠে হামিদের।
হামিদের বন্ধু, রংপুরের এডিশনাল এসপি জামান। 
এ পর্যন্ত তিন বার রিং করেছে।
জামানের ছোট ভাই সাজ্জাদ সাতক্ষীরার সহকারী কমিশনার। তার বদলির তদ্বির নিয়ে আলাপ করবে জামান। ঢাকায় আসার ব্যাপারে এটিও অনতম কারণ।
সকালে সচিবালয়ে কয়েক জনের সাথে কথা বলেছেন হামিদ।
 তারা আস্বস্ত করেছেন। বদলি হয়ে যাবে।
জামান: কী দোস্ত. আমার ভাইয়ের বদলির কী হলো?
হামিদ: হয়ে যাবে। কোন চিন্তা করিস না।
জামান: কীভাবে হবে?
হামিদ: আমি আধঘণ্টা আগে সংস্থাপন (বর্তমান জনপ্রশাসন) সচিবের সাথে কথা বলেছি। তাঁর রুমে বসে চা খেয়েছি। গল্প করেছি। তিনি তো আমার বন্ধুর মত। আমি স্যারকে বলে দিয়েছি। স্যার রাজি হয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে বদলি হয়ে যাবে।
কথা শেষ করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকানোর আগে কাঁধে স্পর্শ পান হামিদ। 

পেছনে ফেরেন। 
একজন পৌঢ়। তিনিও  বই দেখছিলেন।
ভদ্রলোক: আপনি কী আমাকে চেনেন?
হামিদ: জ্বী না।
ভদ্রলোক: তাহলে আপনি যে বললেন আধঘণ্টা আগে সংস্থাপন সচিবের সাথে কথা বলেছেন।
হামিদ: আপনি কে?
ভদ্রলোক: আমিই তো সংস্থাপন সচিব। আধ ঘণ্টা আগে আপনি যার রুমে গিয়েছেন, কথা বলেছেন, চা খেয়েছেন- - -। কিন্তু বাবা, তুমি কে?
হতভম্ব হামিদ আমি! আমি!! - - -বলেই ভো দৌড়।
বাইরে এসে হাঁফ ছাড়ে।
ইস্, পরিচয় জানতে পারলে খবর ছিল।