বউ, বস ও বেশ্যা/ড. মোহাম্মদ আমীন
বউ ঘরের লক্ষ্ণী, বস অফিসের, বেশ্যা ভ্রমণের। বউ রাগলে বাসা নষ্ট,
বস রাগলে কর্মস্থল, বেশ্যা রাগলে ভ্রমণ। ভ্রমণে বউ নয়, বসও নয়; বেশ্যাই
নন্দিত। বেশ্যা হোটেলে বউ; মানে লক্ষ্ণী।
বেশ্যাকে টাকা দিলেই যথেষ্ট, ভালবাসার জন্য মোটেও অধীর নয়, বরং ভালবাসা দিতে অধীর। বউকে শুধু ভালবাসা দিলে হয় না; সাথে দিতে হয়- স্নো, পাউডার, লিপিস্টিক, কাপড়, ভ্যানিটি ব্যাগ, আদর সোহাগ, যৌন তৃপ্তি সব।
তাই জ্ঞানীরা বলেন- বউ পোষা বেশ্যা পোশার চেয়ে বেশি কষ্টকর। বউকে পছন্দ না হলে উপায় নেই। পছন্দ করিয়ে ছাড়ে।
বউ ভাবে মরবে কখন.বেশ্যা চায় আজীবন। বেশ্যার কাছে শরীর, বউয়ের কাছে সুনাম। যা মরলে আরও বাড়ে।
মরলে বউয়ের লাভ, বাঁচলে বেশ্যার। কারণ বউ উত্তরাধিকারী, বেশ্যা নয়।
বস কিন্তু মরা বাঁচায় নেই। সে চেয়ে কাজ। ভাগ্যিস বসের বউ থাকে। তাই সে পুরো বস হয়ে উঠতে পারে না। পুরো বস হয়ে উঠার আগে বউ ডাক দেয়- এত দেরি কেন? কোন মাগি নিয়ে ফস্টি মারছ?
মেয়ে বসকে ম্যানেজ করা যেমন কঠিন তেমন সহজ। যদি মিলে যায়। মেয়ে বসকে সন্তুষ্ট করার সহজ উপায়- তাকে সর্বাধিক ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানত্ব ও দ হিসেবে প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিয়ে তেমন মর্যাদায় অভিষিক্ত রাখা।
বস অনবদ্য নির্যাতনকারীর নন্দিত কষ্ট, প্রত্যাশায় ভেজা প্রতিকারহীন ভরসা। বউ প্রকৃতই নির্যাতনকারী তবে মরতে দেয় না। নরকে যেমন পাপিষ্ঠদের মরার সুযোগ নেই, কষ্ট ভোগ করাই উদ্দেশ্য; তেমনি সংসারও অনুরূপ। বসের হাত হতে রেহাই পাওয়া যায় কিন্তু বউয়ের হাত হতে রেহাই পাওয়া মুশকিল। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা নেই।
বউ ও বেশ্যা উভয়ের সাথে সেঙ্ জড়িত।
উদ্যমের জন্য উদ্যমহীন হবার তীব্র আকাঙ্খাই সেঙ্ বা যৌানতা। এটাকে সুন্দর অসুন্দর বলে অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। যৌনতায় সুন্দর অসুন্দর ব্যাপারটা খুবই গৌণ। যৌন সঙ্গীদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি কোন প্রকার বলৎকার ব্যতীত পরস্পর নিবিড় গভীরে একাত্ন হয়ে যাওয়া যৌনতার সৌন্দর্য। বলৎকারই যৌনতার কুৎসিত রূপ। বলৎকার যেখানে প্রবল যৌনতা সেখানে তত কুৎসিত। যৌনতা যেখানে যত নিবিড় ভালবাসা সেখানে তত গভীর।
তবে দ্বিতীয় অংশে যেতে হলে অনেক সময় প্রথম অংশ পাড় হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। প্রেমের শুরু কিন্ত বির্কষণ আর বিরক্তি দিয়ে। সেখানে যখন খানিকটা জোর খাটাতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিরক্তিটাই শৃঙ্গারে পরিণত হয় সেখানে সেঙ্ ও ভালবাসা দুটোই অসুন্দর হয়েও সুন্দরের গর্ভ যাতনার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়।
বউয়ের কাছে প্রেম যৌন-তৃপ্তির পোশাক। আদিমভাবে উপভোগ করতে হবে, সবার জানামতে তবে নিঃশব্দে নিশাত অন্ধকারে। বিয়ে হলে সবাই জানে কী হবে। একজন বেশ্যা কিন্তু মা, বোন হিসেবেও প্রতিভাত হতে পারে। কারণ তার নির্দিষ্ট সামাজিক স্বীকৃতি নেই। যে কোনরূপ ধারণ করতে পারে। কেউ তাকে চেনে না। বেশ্যা মনে করে যৌনতা খদ্দেরকে আনন্দ দেয়ার একমাত্র উপায়। তাই সে যে কোনভাবে হোক আনন্দ দিতে প্রাণন্ত থাকে।
বউ ওসবের ধার ধারে না। নিজে তৃপ্ত হলে যথেষ্ট।
তবে সেঙ্রে প্রারম্ভিক সূত্র বিবেচনায় বসও অনেকটা বউয়ের মত। তার স্বার্থ বা ল্য অর্জিত হলেই হল। সংসারে যা কিছু ভাল তার কৃতিত্ব বউয়ের; অফিসে যা কিছু সুন্দর সুনামের তার সব কৃতিত্ব বসের। একই কথা। তবে বেশ্যা এসবের ধারে কাছে নেই। এেেত্র সে কোলবালিশ। বউয়ের ভাগশেষ আছে। আছে পুত্র, কন্যা অনেক। বেশ্যার কোন ভাগশেষ নেই। ভাগশেষ অঙ্কটাকে জটিল করে তোলে। তাই সংসার ভাগশেষের মতই জটিল।
একটা কথা উদাহরণ টানা যায়।
আমার কলিগ নাজমুল ও সুশান্ত।
নাজমুল অনেকটা ওয়ার্কহোলিক। সুসান্ত এ সবের ধারে কাছে নেই। চাকুরি জীবনের জন্য, চাকুরির জন্য জীবন নয়। সাংঘাতিক ফূর্তিবাজ। যেমন কথায় তেমন কাজে।
বস ডাকল সে সময় বউও ডাকল। প্রয়োজন দুটোরই সমান। একই সাথে যেতে হবে। তুমি কার কাছে যাবে?
সুসান্তের প্রশ্নে নাজমুলের সোজা উত্তর: বসের কাছে।
ভাবীর সাথে তোমার সম্পর্ক ভাল নেই, পরিবারের প্রতিও টান নেই। এমন লোকেরা সংসারে জীবনে অসুখি হয়।
নাজমুল মনটা খারাপ করে ফেলে। বড় যুক্তি। পাল্টা যুক্তির সুযোগ নেই।
শুধু কী সুসান্তের কথাটাই নাজমুলের জন্য প্রযোজ্য?
নাজমুলের চাকুরি-মুখী হওয়ার পেছনে অত্যধিক সংসার-মুখী হওয়াটা প্রধান কারণ হয়ে থাকতে পারে।
কেউ বউকে ভালবাসে আবার বসকেও। দুটোকে ভালবাসতে হয়। নইলে জীবন শেষ। তবে বউকে বেশি ভালবাসতে হয়; কিন্তু বউয়ের ভালবাসার মাধুর্য্য বস বা চাকুরির উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে অনেকে বউয়ের চেয়ে বসকে অধিক ভালবাসতে শুর করে। বউয়ের ভালবাসাও গিয়ে বর্তায় বসের উপর। বউ-সংসারের সান্নিধ্যের জন্য বসের সুন্তুষ্টি প্রয়োজন।
এভাবে বঞ্চিত হয়ে যায় বউ। বউকে ভালবাসতে গিয়ে অনেকে বসকে ভালবাসতে শুরু করে। বসের ভালবাসার সাথে সাথে স্বাচ্ছন্দ বেড়ে যায়। বউ খুশি হয়। আরও ভালবাসতে শুরু করে বসকে। অবশেষে হারিয়ে যায় বউ, বসাসক্তি পরিণত হয় পরাসক্তিতে। স্বাচ্ছ্যন্দের পর্যায়ে গিয়ে বউ দেখে স্বামী বসের পেছনে, অর্থের পেছনে। ফিরাতে চায়।
পারে না। তিনি ততণে এগিয়ে। তার মানবতাগুলো আস্তে আস্তে সংসার হতে বস্তুতে গিয়ে এত গভীরে গ্রথিত হয় যে, কোষগুলো ধাতব হয়ে যায়। ঠিক তেমন ঘটে বউয়ের। দু মেরূতে চলে যায় দুজনের বন্ধন। সুতরাং সংসারের আনন্দ চাইলে বসের প্রতি ভালবাসার লাগাম অবশ্যই টেনে রাখা উচিত।
এখানে বস শুধু ব্যক্তি নয়; বরং অর্থ, যশ, সম্মান, বেতন, মতা, প্রতিপত্তি ইত্যাদি।
বস নেতাগিরি ফলায়। ঠিক গরীব স্বামীর ধনী বউয়ের মত।
বস শীত নিবাড়নের জন্য প্রজ্বলিত আগুণের মত। বেশি কাছে গেলে গরম দূরে গেলে ঠাণ্ডা। তাই বসের সাথে সবসময় এমন দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় যাতে গরম কিংবা ঠাণ্ডা কোনটা না লাগে। তবে বউ শীতাকলের আগুণের মত হলেও এ আগুণ যত কাছে যায় ততই প্রশান্তিময় হয়ে উঠে।
বেশ্যা ছাড়তে পারে।
বউ আর বস ছাড়ে না। ছাড়ে তবে হাড় গুড়ো করে। স্বামী প্রতিদিন অফিস, বউ প্রতিদিন মতাসীন দল। বেশ্যা রেল লাইনের বিশ্রামাগার। অনীহা সত্ত্বেও উঠতে হয়। তবু চরম কান্তিতে সে অবাঞ্চিত স্থানটিই হয়ে উঠে মোহনীয় পরম। বউ ঘর, বেশ্যা বিশ্রামাগার। প্রয়োজনে বিশ্রামাগার ঘরের চেয়েও প্রিয় হয়ে উঠে। কারণে অকারণে হতে পারে। বাস-ট্রেন হতে নেমে অপরিচ্ছন্ন বিশ্রামাগারের ভাঙ্গা চেয়ারগুলোতে একটু বসার জন্য যে হুড়োহুড়ি শুরু হয় তা দেখে কথাটি কি আরও প্রবল হয়ে উঠে না?
বেশ্যা যন্ত্রণার আশ্রয়, এক গ্লাস মদ।
বউ এক গ্লাস আগুণ।
তাহলে বস?
এক গ্লাস গরম চা, অতি গরম; যা খুব সাবধানে নিতে হয়। বসের সাথে ব্যবহার সাবধানি হতে হয়। বউয়ের সাথেও। তবে বেশ্যার সাথে কথা বলতে সাবধানতার কোন প্রয়োজন নেই। এজন্য মানুষ মদ খেয়ে বেশ্যার কাছে যায়। যাতে মন খুলে বলতে পারে। যেখানে সাবধানতার প্রয়োজন নেই, সেখানে ভয়েরও কোন হেতু নেই। যেখানে ভয় নেই সেখানে আনন্দ, মহানন্দ। মদ খেয়ে মানুষ তা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে চায়। এ জন্য অনেক সময় মানুষ বেশ্যার জন্য বেশ্যা হয়ে উঠে।
বউ সংসারের নিয়মাক। পাপের মত অগ্নিময়- যথেষ্ট আপেকি, পরাজিতের দায়, বিজয়ীর ঘৃণা ও মতাবানের চাবুক।
বেশ্যা হাতের পরশ, বস মুচকি হাসি।
বউ মাকড়সার খোলস প্রচণ্ড সর্বনাশী।
বউ রাজনীতিবিদদের মতই উদার, রাজনীতিবিদদের মতই সংকীর্ণ, রাজনীতিবিদদের মতই নিষ্ঠুর সর্বোপরি রাজনীতিবিদদের মতই চতুর। রাজনীতিবিদগণের মত বউয়ের চরিত্রের উৎসমূল খোজে পাওয়া অসম্ভব।
বউ সব সময় নারী তবে রমণী নয়। রমণী বাঁশী, বউ বাঁশ। রমণী বউ হওয়ার তার বাঁশীময় কণ্ঠ বাঁশময় হয়ে যায়। বউ সবসময় বাঁশ। তবে বস যখন বাঁশীর মত ব্যবহার করে তখন বুঝতে হবে বস খুশি হয়েছে নতুবা এমন কিছু চাইছে যাতে সে খুশি হতে পারে। তেমনি বউ। বউ যখন বাঁশীর মত কথা বলে তখন বুঝতে হবে বউ খুশি আছে নতুবা এুণি কিছু চাইবে; সোনা-গহণা, শাড়ি – -।
রাজনীতি হচ্ছে পরের ধনে পোদ্দারী আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সর্দারি। যে কোন সময় যে কোন আচরণ হতে পারে। কোন নোটিশ ছাড়াই।
সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাই বউ রাজনীতিবিদ। সে ভালবাসার জন্য কষ্ট দেয়। এটি এক ধরণের বিকৃতি।
বউয়ের মত বসও অনিশ্চিত।
ভালবাসতে- বাসতে ভাসিয়ে দেয়।
বেশ্যার দৃষ্টি কোমরে, বসের দৃষ্টি আনুগত্যে আর বউয়ের দৃষ্টি সর্বাবয়বে। পা হতে পায়ের তালু, মন হতে রক্ত বিন্দু।
বেশ্যা কিন্তু পাঠসুলভ। তে তে বলে দেয়া যায় কোথায় কী।
বেশ্যা সহজে ধাক্কা দেয় না। বউ আর বস যে কোন সময় ধাক্কা দিতে পারে। বেশ্যা সহজে ধাক্কা মারে না। সে জানে তার কাছে কোন বন্ধন নেই। তাই ধাক্কায় তারই তি।
বউ ওসবের ধার ধারে না। শুধু ধাক্কায়।
সে জানে সামাজিক বা ধর্মীয় বিধির বিয়ে নামক রশিতে যাদু বান্ধা। বসের কাছে বাঁধা চাকুরি-বিধির রশিতে বাঁধা। সুতরাং স্বাধীনতা পেতে হলে বউ কিংবা বসের চেয়ে বেশ্যা অনেক উত্তম, অনেক উপাদেয়।
মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায় বউকে। তারপর বসকে। এ দিক হতেও বস দ্বিতীয়। বসকে ভয় পান না এমন মানুষ বিরল। বেশ্যা কেউ ভয় পায় না। যেখানে ভালবাসা প্রবল সেখানে ভয় ীণ। কথাটি কী সব সময় সত্য?
এ নিয়ে একটা গল্প আছে।
সম্রাট সম্রাজ্যের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করবেন। এক ভাগে বউকে যারা ভয় পায়, অন্য ভাগে যারা বউকে ভয় পায় না তারা। যারা বউকে ভয় পায় তারা ধার্য্য তারিখ রাজার বাম পাশে; যারা বউকে ভয় পায় না তারা ডান পাশে দাঁড়াবে। তবে কেউ মিথ্যা দাবিতে ডান দিকে দাঁড়ালে তাকে কতল করা হবে।
সন্ধ্যার মধ্যে সব লোকের আসা শেষ। ডান দিকে কোন মানুষ নেই। তাহলে তার রাজ্যে কী বউকে ভয় পায় না এমন কোন লোক নেই? রাজার মনটা খারাপ হয়ে যায়। যদি একটি মানুষও পাওয়া যেত তাহলে তার পায়ে হাত দিয়ে বলতেন- তুমি আমার রাজার রাজা।
হঠাৎ দেখলেন কৃশকায় এক লোক। তারা পথ ডানে। রাজা চমকে, উত্তেজনায় চেয়ার হতে দাঁড়িয়ে অপলক।
কৃশকায় লোকটি অনেক কষ্টে রাজার ডানদিকে এসে দাঁড়ায়। রাজা এবার নিশ্চিত, লোকটি বউকে ভয় পায় না। একজন হলেও অন্তত আছে। রাজা বড় বাঁচা বেঁচে যান। গত রাতে বউ বলেছে- বউকে ভয় পায় না এমন পুরুষ তার রাজ্যে নেই। চ্যালেজ্ঞ করেছিলেন রাজা রাণীর সাথে।
রাজা আপ্লুত। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন কৃষকায় লোকটিকে।
আমি আপনাকে আমার সাম্রাজ্যের প্রধান সেনাপতি বানাব। আমার সেনাপতিও বামদিকে। তুমি তার চেয়ে সাহসী। এমন সাহসী লোকই আমার রাজ্যের সেনাপতি হবার একমাত্র যোগ্যতা রাখে।
সম্রাট কৃশকায় লোকটির হাত ধরে বললেন: বীর বলুন,কীভাবে এত পাতলা শরীরে বউকে ভয় না পেয়ে চলা সম্ভব? আপনি কীভাবে এমন দুর্লভ মতা অর্জন করলেন? সত্যি আপনি কী বউকে ভয় পান না?
জ্বী না।
তাহলে ডানে দাঁড়ালে কেন? তোমাকে তো মরতে হবে।
রাজার সম্বোধন আপনি হতে তুমিতে নেমে আসে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।
বল, জল্লাদ প্রস্তুত হও।
কৃশকায় কাঁপছে: বউয়ের জন্য আমার মরতে হচ্ছে।
কেন?
আসার সময় বউ ডানে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। হুজুর, বউকে বলেছিলাম, বামে দাঁড়াব। কিন্তু বউ ধমক দিয়ে বলেছে; মিনসের পুত যা বলছি তা-ই করবে। আমি বলেছিলাম, তাহলে জল্লাদ আমাকে কতল করে ফেলবে। বউ রেগেমেগে ধাক্কা দেয়: নচ্চার, যা বলি তাই শুন। বামদিক লোকারন্য থাকবে। ডানে কেউ দাঁড়াবে না। বামে অসংখ্য লোকের ভীড়ে তোমার অসুবিধা হতে পারে।
আমি বলেছিলাম: কিন্তু ডানে দাঁড়ালে স্রমাট মেরে ফেলবে।
বউ প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বলেছিল: আমার কথার যেন নড়চড় না হয়। হুজুর এ জন্য আমি বউয়ের ভয়ে ডানে দাঁড়িয়েছি। বউয়ের ভয় মৃত্যু ভয়ের চেয়েও ভীতকর।
বউ পছন্দ করে না এমন কাজ কেউ সাধারণত বউয়ের সামনে করে না, করতে পারে না। কিন্তু বউয়ের অগোচরে করে থাকে অনেকে অনেক কিছু। বউ তা জানে না। স্বামীধন ভাবে বউ কী বোকা! কিচ্ছু জানছে না।
কিন্তু বউও যে স্বামীর অবর্তমানে তার চেয়েও খারাপ কিছু করতে পারে তা বোক হদ্দ স্বামী ঘুণারেও ভাবে না। ভাবে তার বউয়ের সীতা। তাই বউ ভাবে স্বামীরা আসলেই হাবা, গর্দভের গর্দভ। স্বামী কত গর্দভ তা রাস্তায় স্বামীর হাতে লাগেজ আর গতরে বাচ্চা দুটোর ভারে ন্যুজ্ব দেখে অনুমান করা যায়।
বউ আর বস উভয়ে সর্বোত্তম প্রত্যয়, আদর্শের কাণ্ডারি, কল্যাণের সাগর।
যা কিছু উত্তম, যা কিছু মানবীয়, যা কিছু যৌক্তিক তা বউ এবং বস। বউ আর বসের সবকিছু অসাধারণ তুলনীহীন এবং গর্বিত প্রকাশ। এর কোন তুলনা নেই।
তাই বউ এবং বসের কাছে সব সময় ছোট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বেশ্যাকে টাকা দিলেই যথেষ্ট, ভালবাসার জন্য মোটেও অধীর নয়, বরং ভালবাসা দিতে অধীর। বউকে শুধু ভালবাসা দিলে হয় না; সাথে দিতে হয়- স্নো, পাউডার, লিপিস্টিক, কাপড়, ভ্যানিটি ব্যাগ, আদর সোহাগ, যৌন তৃপ্তি সব।
তাই জ্ঞানীরা বলেন- বউ পোষা বেশ্যা পোশার চেয়ে বেশি কষ্টকর। বউকে পছন্দ না হলে উপায় নেই। পছন্দ করিয়ে ছাড়ে।
বউ ভাবে মরবে কখন.বেশ্যা চায় আজীবন। বেশ্যার কাছে শরীর, বউয়ের কাছে সুনাম। যা মরলে আরও বাড়ে।
মরলে বউয়ের লাভ, বাঁচলে বেশ্যার। কারণ বউ উত্তরাধিকারী, বেশ্যা নয়।
বস কিন্তু মরা বাঁচায় নেই। সে চেয়ে কাজ। ভাগ্যিস বসের বউ থাকে। তাই সে পুরো বস হয়ে উঠতে পারে না। পুরো বস হয়ে উঠার আগে বউ ডাক দেয়- এত দেরি কেন? কোন মাগি নিয়ে ফস্টি মারছ?
মেয়ে বসকে ম্যানেজ করা যেমন কঠিন তেমন সহজ। যদি মিলে যায়। মেয়ে বসকে সন্তুষ্ট করার সহজ উপায়- তাকে সর্বাধিক ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানত্ব ও দ হিসেবে প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিয়ে তেমন মর্যাদায় অভিষিক্ত রাখা।
বস অনবদ্য নির্যাতনকারীর নন্দিত কষ্ট, প্রত্যাশায় ভেজা প্রতিকারহীন ভরসা। বউ প্রকৃতই নির্যাতনকারী তবে মরতে দেয় না। নরকে যেমন পাপিষ্ঠদের মরার সুযোগ নেই, কষ্ট ভোগ করাই উদ্দেশ্য; তেমনি সংসারও অনুরূপ। বসের হাত হতে রেহাই পাওয়া যায় কিন্তু বউয়ের হাত হতে রেহাই পাওয়া মুশকিল। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা নেই।
বউ ও বেশ্যা উভয়ের সাথে সেঙ্ জড়িত।
উদ্যমের জন্য উদ্যমহীন হবার তীব্র আকাঙ্খাই সেঙ্ বা যৌানতা। এটাকে সুন্দর অসুন্দর বলে অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। যৌনতায় সুন্দর অসুন্দর ব্যাপারটা খুবই গৌণ। যৌন সঙ্গীদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি কোন প্রকার বলৎকার ব্যতীত পরস্পর নিবিড় গভীরে একাত্ন হয়ে যাওয়া যৌনতার সৌন্দর্য। বলৎকারই যৌনতার কুৎসিত রূপ। বলৎকার যেখানে প্রবল যৌনতা সেখানে তত কুৎসিত। যৌনতা যেখানে যত নিবিড় ভালবাসা সেখানে তত গভীর।
তবে দ্বিতীয় অংশে যেতে হলে অনেক সময় প্রথম অংশ পাড় হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। প্রেমের শুরু কিন্ত বির্কষণ আর বিরক্তি দিয়ে। সেখানে যখন খানিকটা জোর খাটাতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিরক্তিটাই শৃঙ্গারে পরিণত হয় সেখানে সেঙ্ ও ভালবাসা দুটোই অসুন্দর হয়েও সুন্দরের গর্ভ যাতনার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়।
বউয়ের কাছে প্রেম যৌন-তৃপ্তির পোশাক। আদিমভাবে উপভোগ করতে হবে, সবার জানামতে তবে নিঃশব্দে নিশাত অন্ধকারে। বিয়ে হলে সবাই জানে কী হবে। একজন বেশ্যা কিন্তু মা, বোন হিসেবেও প্রতিভাত হতে পারে। কারণ তার নির্দিষ্ট সামাজিক স্বীকৃতি নেই। যে কোনরূপ ধারণ করতে পারে। কেউ তাকে চেনে না। বেশ্যা মনে করে যৌনতা খদ্দেরকে আনন্দ দেয়ার একমাত্র উপায়। তাই সে যে কোনভাবে হোক আনন্দ দিতে প্রাণন্ত থাকে।
বউ ওসবের ধার ধারে না। নিজে তৃপ্ত হলে যথেষ্ট।
তবে সেঙ্রে প্রারম্ভিক সূত্র বিবেচনায় বসও অনেকটা বউয়ের মত। তার স্বার্থ বা ল্য অর্জিত হলেই হল। সংসারে যা কিছু ভাল তার কৃতিত্ব বউয়ের; অফিসে যা কিছু সুন্দর সুনামের তার সব কৃতিত্ব বসের। একই কথা। তবে বেশ্যা এসবের ধারে কাছে নেই। এেেত্র সে কোলবালিশ। বউয়ের ভাগশেষ আছে। আছে পুত্র, কন্যা অনেক। বেশ্যার কোন ভাগশেষ নেই। ভাগশেষ অঙ্কটাকে জটিল করে তোলে। তাই সংসার ভাগশেষের মতই জটিল।
একটা কথা উদাহরণ টানা যায়।
আমার কলিগ নাজমুল ও সুশান্ত।
নাজমুল অনেকটা ওয়ার্কহোলিক। সুসান্ত এ সবের ধারে কাছে নেই। চাকুরি জীবনের জন্য, চাকুরির জন্য জীবন নয়। সাংঘাতিক ফূর্তিবাজ। যেমন কথায় তেমন কাজে।
বস ডাকল সে সময় বউও ডাকল। প্রয়োজন দুটোরই সমান। একই সাথে যেতে হবে। তুমি কার কাছে যাবে?
সুসান্তের প্রশ্নে নাজমুলের সোজা উত্তর: বসের কাছে।
ভাবীর সাথে তোমার সম্পর্ক ভাল নেই, পরিবারের প্রতিও টান নেই। এমন লোকেরা সংসারে জীবনে অসুখি হয়।
নাজমুল মনটা খারাপ করে ফেলে। বড় যুক্তি। পাল্টা যুক্তির সুযোগ নেই।
শুধু কী সুসান্তের কথাটাই নাজমুলের জন্য প্রযোজ্য?
নাজমুলের চাকুরি-মুখী হওয়ার পেছনে অত্যধিক সংসার-মুখী হওয়াটা প্রধান কারণ হয়ে থাকতে পারে।
কেউ বউকে ভালবাসে আবার বসকেও। দুটোকে ভালবাসতে হয়। নইলে জীবন শেষ। তবে বউকে বেশি ভালবাসতে হয়; কিন্তু বউয়ের ভালবাসার মাধুর্য্য বস বা চাকুরির উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে অনেকে বউয়ের চেয়ে বসকে অধিক ভালবাসতে শুর করে। বউয়ের ভালবাসাও গিয়ে বর্তায় বসের উপর। বউ-সংসারের সান্নিধ্যের জন্য বসের সুন্তুষ্টি প্রয়োজন।
এভাবে বঞ্চিত হয়ে যায় বউ। বউকে ভালবাসতে গিয়ে অনেকে বসকে ভালবাসতে শুরু করে। বসের ভালবাসার সাথে সাথে স্বাচ্ছন্দ বেড়ে যায়। বউ খুশি হয়। আরও ভালবাসতে শুরু করে বসকে। অবশেষে হারিয়ে যায় বউ, বসাসক্তি পরিণত হয় পরাসক্তিতে। স্বাচ্ছ্যন্দের পর্যায়ে গিয়ে বউ দেখে স্বামী বসের পেছনে, অর্থের পেছনে। ফিরাতে চায়।
পারে না। তিনি ততণে এগিয়ে। তার মানবতাগুলো আস্তে আস্তে সংসার হতে বস্তুতে গিয়ে এত গভীরে গ্রথিত হয় যে, কোষগুলো ধাতব হয়ে যায়। ঠিক তেমন ঘটে বউয়ের। দু মেরূতে চলে যায় দুজনের বন্ধন। সুতরাং সংসারের আনন্দ চাইলে বসের প্রতি ভালবাসার লাগাম অবশ্যই টেনে রাখা উচিত।
এখানে বস শুধু ব্যক্তি নয়; বরং অর্থ, যশ, সম্মান, বেতন, মতা, প্রতিপত্তি ইত্যাদি।
বস নেতাগিরি ফলায়। ঠিক গরীব স্বামীর ধনী বউয়ের মত।
বস শীত নিবাড়নের জন্য প্রজ্বলিত আগুণের মত। বেশি কাছে গেলে গরম দূরে গেলে ঠাণ্ডা। তাই বসের সাথে সবসময় এমন দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয় যাতে গরম কিংবা ঠাণ্ডা কোনটা না লাগে। তবে বউ শীতাকলের আগুণের মত হলেও এ আগুণ যত কাছে যায় ততই প্রশান্তিময় হয়ে উঠে।
বেশ্যা ছাড়তে পারে।
বউ আর বস ছাড়ে না। ছাড়ে তবে হাড় গুড়ো করে। স্বামী প্রতিদিন অফিস, বউ প্রতিদিন মতাসীন দল। বেশ্যা রেল লাইনের বিশ্রামাগার। অনীহা সত্ত্বেও উঠতে হয়। তবু চরম কান্তিতে সে অবাঞ্চিত স্থানটিই হয়ে উঠে মোহনীয় পরম। বউ ঘর, বেশ্যা বিশ্রামাগার। প্রয়োজনে বিশ্রামাগার ঘরের চেয়েও প্রিয় হয়ে উঠে। কারণে অকারণে হতে পারে। বাস-ট্রেন হতে নেমে অপরিচ্ছন্ন বিশ্রামাগারের ভাঙ্গা চেয়ারগুলোতে একটু বসার জন্য যে হুড়োহুড়ি শুরু হয় তা দেখে কথাটি কি আরও প্রবল হয়ে উঠে না?
বেশ্যা যন্ত্রণার আশ্রয়, এক গ্লাস মদ।
বউ এক গ্লাস আগুণ।
তাহলে বস?
এক গ্লাস গরম চা, অতি গরম; যা খুব সাবধানে নিতে হয়। বসের সাথে ব্যবহার সাবধানি হতে হয়। বউয়ের সাথেও। তবে বেশ্যার সাথে কথা বলতে সাবধানতার কোন প্রয়োজন নেই। এজন্য মানুষ মদ খেয়ে বেশ্যার কাছে যায়। যাতে মন খুলে বলতে পারে। যেখানে সাবধানতার প্রয়োজন নেই, সেখানে ভয়েরও কোন হেতু নেই। যেখানে ভয় নেই সেখানে আনন্দ, মহানন্দ। মদ খেয়ে মানুষ তা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে চায়। এ জন্য অনেক সময় মানুষ বেশ্যার জন্য বেশ্যা হয়ে উঠে।
বউ সংসারের নিয়মাক। পাপের মত অগ্নিময়- যথেষ্ট আপেকি, পরাজিতের দায়, বিজয়ীর ঘৃণা ও মতাবানের চাবুক।
বেশ্যা হাতের পরশ, বস মুচকি হাসি।
বউ মাকড়সার খোলস প্রচণ্ড সর্বনাশী।
বউ রাজনীতিবিদদের মতই উদার, রাজনীতিবিদদের মতই সংকীর্ণ, রাজনীতিবিদদের মতই নিষ্ঠুর সর্বোপরি রাজনীতিবিদদের মতই চতুর। রাজনীতিবিদগণের মত বউয়ের চরিত্রের উৎসমূল খোজে পাওয়া অসম্ভব।
বউ সব সময় নারী তবে রমণী নয়। রমণী বাঁশী, বউ বাঁশ। রমণী বউ হওয়ার তার বাঁশীময় কণ্ঠ বাঁশময় হয়ে যায়। বউ সবসময় বাঁশ। তবে বস যখন বাঁশীর মত ব্যবহার করে তখন বুঝতে হবে বস খুশি হয়েছে নতুবা এমন কিছু চাইছে যাতে সে খুশি হতে পারে। তেমনি বউ। বউ যখন বাঁশীর মত কথা বলে তখন বুঝতে হবে বউ খুশি আছে নতুবা এুণি কিছু চাইবে; সোনা-গহণা, শাড়ি – -।
রাজনীতি হচ্ছে পরের ধনে পোদ্দারী আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সর্দারি। যে কোন সময় যে কোন আচরণ হতে পারে। কোন নোটিশ ছাড়াই।
সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তাই বউ রাজনীতিবিদ। সে ভালবাসার জন্য কষ্ট দেয়। এটি এক ধরণের বিকৃতি।
বউয়ের মত বসও অনিশ্চিত।
ভালবাসতে- বাসতে ভাসিয়ে দেয়।
বেশ্যার দৃষ্টি কোমরে, বসের দৃষ্টি আনুগত্যে আর বউয়ের দৃষ্টি সর্বাবয়বে। পা হতে পায়ের তালু, মন হতে রক্ত বিন্দু।
বেশ্যা কিন্তু পাঠসুলভ। তে তে বলে দেয়া যায় কোথায় কী।
বেশ্যা সহজে ধাক্কা দেয় না। বউ আর বস যে কোন সময় ধাক্কা দিতে পারে। বেশ্যা সহজে ধাক্কা মারে না। সে জানে তার কাছে কোন বন্ধন নেই। তাই ধাক্কায় তারই তি।
বউ ওসবের ধার ধারে না। শুধু ধাক্কায়।
সে জানে সামাজিক বা ধর্মীয় বিধির বিয়ে নামক রশিতে যাদু বান্ধা। বসের কাছে বাঁধা চাকুরি-বিধির রশিতে বাঁধা। সুতরাং স্বাধীনতা পেতে হলে বউ কিংবা বসের চেয়ে বেশ্যা অনেক উত্তম, অনেক উপাদেয়।
মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায় বউকে। তারপর বসকে। এ দিক হতেও বস দ্বিতীয়। বসকে ভয় পান না এমন মানুষ বিরল। বেশ্যা কেউ ভয় পায় না। যেখানে ভালবাসা প্রবল সেখানে ভয় ীণ। কথাটি কী সব সময় সত্য?
এ নিয়ে একটা গল্প আছে।
সম্রাট সম্রাজ্যের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করবেন। এক ভাগে বউকে যারা ভয় পায়, অন্য ভাগে যারা বউকে ভয় পায় না তারা। যারা বউকে ভয় পায় তারা ধার্য্য তারিখ রাজার বাম পাশে; যারা বউকে ভয় পায় না তারা ডান পাশে দাঁড়াবে। তবে কেউ মিথ্যা দাবিতে ডান দিকে দাঁড়ালে তাকে কতল করা হবে।
সন্ধ্যার মধ্যে সব লোকের আসা শেষ। ডান দিকে কোন মানুষ নেই। তাহলে তার রাজ্যে কী বউকে ভয় পায় না এমন কোন লোক নেই? রাজার মনটা খারাপ হয়ে যায়। যদি একটি মানুষও পাওয়া যেত তাহলে তার পায়ে হাত দিয়ে বলতেন- তুমি আমার রাজার রাজা।
হঠাৎ দেখলেন কৃশকায় এক লোক। তারা পথ ডানে। রাজা চমকে, উত্তেজনায় চেয়ার হতে দাঁড়িয়ে অপলক।
কৃশকায় লোকটি অনেক কষ্টে রাজার ডানদিকে এসে দাঁড়ায়। রাজা এবার নিশ্চিত, লোকটি বউকে ভয় পায় না। একজন হলেও অন্তত আছে। রাজা বড় বাঁচা বেঁচে যান। গত রাতে বউ বলেছে- বউকে ভয় পায় না এমন পুরুষ তার রাজ্যে নেই। চ্যালেজ্ঞ করেছিলেন রাজা রাণীর সাথে।
রাজা আপ্লুত। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন কৃষকায় লোকটিকে।
আমি আপনাকে আমার সাম্রাজ্যের প্রধান সেনাপতি বানাব। আমার সেনাপতিও বামদিকে। তুমি তার চেয়ে সাহসী। এমন সাহসী লোকই আমার রাজ্যের সেনাপতি হবার একমাত্র যোগ্যতা রাখে।
সম্রাট কৃশকায় লোকটির হাত ধরে বললেন: বীর বলুন,কীভাবে এত পাতলা শরীরে বউকে ভয় না পেয়ে চলা সম্ভব? আপনি কীভাবে এমন দুর্লভ মতা অর্জন করলেন? সত্যি আপনি কী বউকে ভয় পান না?
জ্বী না।
তাহলে ডানে দাঁড়ালে কেন? তোমাকে তো মরতে হবে।
রাজার সম্বোধন আপনি হতে তুমিতে নেমে আসে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।
বল, জল্লাদ প্রস্তুত হও।
কৃশকায় কাঁপছে: বউয়ের জন্য আমার মরতে হচ্ছে।
কেন?
আসার সময় বউ ডানে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। হুজুর, বউকে বলেছিলাম, বামে দাঁড়াব। কিন্তু বউ ধমক দিয়ে বলেছে; মিনসের পুত যা বলছি তা-ই করবে। আমি বলেছিলাম, তাহলে জল্লাদ আমাকে কতল করে ফেলবে। বউ রেগেমেগে ধাক্কা দেয়: নচ্চার, যা বলি তাই শুন। বামদিক লোকারন্য থাকবে। ডানে কেউ দাঁড়াবে না। বামে অসংখ্য লোকের ভীড়ে তোমার অসুবিধা হতে পারে।
আমি বলেছিলাম: কিন্তু ডানে দাঁড়ালে স্রমাট মেরে ফেলবে।
বউ প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বলেছিল: আমার কথার যেন নড়চড় না হয়। হুজুর এ জন্য আমি বউয়ের ভয়ে ডানে দাঁড়িয়েছি। বউয়ের ভয় মৃত্যু ভয়ের চেয়েও ভীতকর।
বউ পছন্দ করে না এমন কাজ কেউ সাধারণত বউয়ের সামনে করে না, করতে পারে না। কিন্তু বউয়ের অগোচরে করে থাকে অনেকে অনেক কিছু। বউ তা জানে না। স্বামীধন ভাবে বউ কী বোকা! কিচ্ছু জানছে না।
কিন্তু বউও যে স্বামীর অবর্তমানে তার চেয়েও খারাপ কিছু করতে পারে তা বোক হদ্দ স্বামী ঘুণারেও ভাবে না। ভাবে তার বউয়ের সীতা। তাই বউ ভাবে স্বামীরা আসলেই হাবা, গর্দভের গর্দভ। স্বামী কত গর্দভ তা রাস্তায় স্বামীর হাতে লাগেজ আর গতরে বাচ্চা দুটোর ভারে ন্যুজ্ব দেখে অনুমান করা যায়।
বউ আর বস উভয়ে সর্বোত্তম প্রত্যয়, আদর্শের কাণ্ডারি, কল্যাণের সাগর।
যা কিছু উত্তম, যা কিছু মানবীয়, যা কিছু যৌক্তিক তা বউ এবং বস। বউ আর বসের সবকিছু অসাধারণ তুলনীহীন এবং গর্বিত প্রকাশ। এর কোন তুলনা নেই।
তাই বউ এবং বসের কাছে সব সময় ছোট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
No comments:
Post a Comment