সুখ, শান্তি ও কষ্ট/ড. মোহাম্মদ আমীন
অন্যের হাসি দেখে যখন কারও মুখের হাসি ম্লান হওয়ার ঈন্ধন পায় তখনই
জীবনে কষ্টের শুরু। এ উপলব্ধি যার না হয়েছে সে বুঝতে পারবে না কষ্ট কত
ভয়ঙ্কর।
বস্তুত এটিই সবচেয়ে কঠিন কষ্ট। ঈশ্বর, জোহভা, গড, আল্লাহ কিংবা সৃষ্টিকর্তার কল্পিত নরকাণলের চেয়েও এ কষ্ট অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। অন্যের হাসি দেখে যখন কেউ প্রফুল্ল মনে হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না তখন কষ্ট আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
এটি কষ্টের জঘন্য রূপ।
লাঠি ছাড়া হাটতে অম কারও লাঠিখানা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল মাঝপথে। কেউ নেই কী হবে?
কষ্ট হবে।
মাঝপথে হঠাৎ গাড়ির তেল পুড়িয়ে গেল। আশেপাশে কোন তেল-স্টেশন নেই, কী হবে?
কষ্ট।
অনুভূতি কষ্টের বাহন আর প্রত্যাশার বিঘ্নতা কষ্টের উৎস। যখন প্রত্যাশার বিঘ্ন ঘটে তখন কষ্ট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। প্রত্যাশার সাবলীল গতি স্রোতপ্রবল নদীর মতই উচ্ছল। এখানে কষ্ট আশ্রয় নিতে পারে না।
তবে কষ্ট ভূমিকম্পের মত।
এর কোন প্রতিকারমূলক পূর্বাভাস নেই। মৃত্যুর মত যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে কারণ-অকারণে চলে আসতে পারে। এ জন্য অনেকে মৃত্যুকে কষ্টের একটি নিয়মিত রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে মৃত্যু কষ্টের পরিসমাপ্তি। মৃত্যুকে জয় করতে পারলে কষ্টকে জয় করা যায়। মৃত্যুকে কীভাবে জয় করা যায়?
আসলেই কী মৃত্যুকে জয় করা যায়?
যায়।
মরণকে বরণ করে মৃত্যুকে জয় করা যায়। দেহ না থাকলে আত্মাও থাকে না। তাহলে কষ্ট থাকবে কোথায়, শরীর ছাড়া কষ্ট বাঁচতে পারে না। এটি এক ধরণের ভাইরাস।
অন্যের হাসি দেখে কারও মুখের কষ্ট যদি মুছে যায় তখন মনে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেটিই সুখ। এটির প্রাণবন্ত স্বতস্ফূর্ততাই হচ্ছে শান্তি। সুতরাং শান্তির বাহন সুঃখ। কিন্তু শান্তি বলতে কষ্টের অনুপুস্থিতি বুঝায় না।
কষ্ট না থাকলেও কেউ সুখি হতে পারে তা নয়। কোন কষ্ট নেই এমন অনেক লোক আছে যাদের কোন সুখও নেই। কারণ তাদের স্বাভাবিকতা নিষ্প্রভ।
পাপ কষ্ট না সুখ এটি আপেকি প্রত্যয়। যা একজনের কাছে পূণ্যের তা আর একজনের কাছে পাপ। দূর্গা পুজা হিন্দুদের কাছে মহাপূণ্যের কিন্তু মুসলমানদের কাছে জঘন্য। মুসলিম মরলে ইহুদি আবার ইহুদি মরলে মুসলিমরা তৃপ্তি পায়।
অপরাধকে কষ্টের একটি প্রতিক্রিয়া বলা যায়। যার সাথে লোভ জড়িত। যে যত লোভী সে তত অসুখি। যে যত অখুশি তার কষ্ট তত বেশি। কষ্ট সুখকে বেদনার আড়ালে ঢেকে রাখে। তাই দুঃখী মানুষের যতই সুখ বা ঐশ্বর্য্য থাকুক না কেন, তা তার মনে শুধু কষ্টটাই জুড়ে থাকে। কষ্ট সমস্ত সুখকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। পীড়িত কোন ব্যক্তির নিকট যত লোভনীয় সম্পদ দেয়া হোক, আনা হোক না যত শোভনীয় খাবার; সবই বিতৃষ্ণার; কষ্ট বরং আরও বাড়িয়ে দেয়।
সুখ বহুবিধ। তবে সুখ বলতে শারীরিক ও মানসিক সুখকে বুঝায়। এ দুটো শান্তির ধারক, বাহক ও বর্ধক। সুতরাং শারীরিক ও মানসিক সুখ হচ্ছে সকল সুখের উৎস।
সুঃখ না থাকলে শান্তি থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে শান্তি না থাকলেও সুখ থাকতে পারে। সুঃখের উপভোগে যখন কষ্টের ছোঁয়া লাগে তখন শান্তি আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে। কারণ শান্তি কষ্টকে মোটেও সহ্য করতে পারে না।
শান্তি একধরণের নিস্তব্ধতা। যেখানে প্রত্যাশা কম সেখানে শান্তির সম্ভাবনা তত বেশি। যার প্রত্যাশা যত বেশি তার ঝুঁকিও তত বেশি। ঝুঁকি কষ্টের প্রেমিকা। দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে চায়। যেখানে ঝুঁকি বেশি সেখানে প্রত্যাশাও বেশি। প্রত্যাশা ভঙ্গের সম্ভাবনাও বেশি। প্রত্যাশা ভঙ্গই তো কষ্টের প্রকাশ্য রূপ।
নয় কি?
যেখানে ঝুকি কম সেখানে কষ্টও কম। যেখানে ঝুকি কম সেখানে প্রত্যাশাও কম। সংগতকারণে শান্তিটা এ পরিবেশে বেশি নিরাপদ বোধ করে। কারণ এ পরিবেশে কষ্ট তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না।
আশা আর ঝুকি সমার্থকবোধক। আশা শান্তির কার্বনডাই অঙ্াইড। যা লোভকে উসকে দেয় এবং শান্তিকে দমিয়ে রাখে। নির্লোভতা শান্তির অঙ্েিজন। নির্লোভতা শান্তির প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
যিনি যত নির্লোভ তিনি তত বেশি শান্তির নিশ্চিত প্রত্যাশী। যে যত লোভী সে তত দুখী, সে তত কষ্টে থাকে।
বস্তুত এটিই সবচেয়ে কঠিন কষ্ট। ঈশ্বর, জোহভা, গড, আল্লাহ কিংবা সৃষ্টিকর্তার কল্পিত নরকাণলের চেয়েও এ কষ্ট অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। অন্যের হাসি দেখে যখন কেউ প্রফুল্ল মনে হাসতে গিয়েও হাসতে পারে না তখন কষ্ট আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
এটি কষ্টের জঘন্য রূপ।
লাঠি ছাড়া হাটতে অম কারও লাঠিখানা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল মাঝপথে। কেউ নেই কী হবে?
কষ্ট হবে।
মাঝপথে হঠাৎ গাড়ির তেল পুড়িয়ে গেল। আশেপাশে কোন তেল-স্টেশন নেই, কী হবে?
কষ্ট।
অনুভূতি কষ্টের বাহন আর প্রত্যাশার বিঘ্নতা কষ্টের উৎস। যখন প্রত্যাশার বিঘ্ন ঘটে তখন কষ্ট মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। প্রত্যাশার সাবলীল গতি স্রোতপ্রবল নদীর মতই উচ্ছল। এখানে কষ্ট আশ্রয় নিতে পারে না।
তবে কষ্ট ভূমিকম্পের মত।
এর কোন প্রতিকারমূলক পূর্বাভাস নেই। মৃত্যুর মত যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে কারণ-অকারণে চলে আসতে পারে। এ জন্য অনেকে মৃত্যুকে কষ্টের একটি নিয়মিত রূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে মৃত্যু কষ্টের পরিসমাপ্তি। মৃত্যুকে জয় করতে পারলে কষ্টকে জয় করা যায়। মৃত্যুকে কীভাবে জয় করা যায়?
আসলেই কী মৃত্যুকে জয় করা যায়?
যায়।
মরণকে বরণ করে মৃত্যুকে জয় করা যায়। দেহ না থাকলে আত্মাও থাকে না। তাহলে কষ্ট থাকবে কোথায়, শরীর ছাড়া কষ্ট বাঁচতে পারে না। এটি এক ধরণের ভাইরাস।
অন্যের হাসি দেখে কারও মুখের কষ্ট যদি মুছে যায় তখন মনে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় সেটিই সুখ। এটির প্রাণবন্ত স্বতস্ফূর্ততাই হচ্ছে শান্তি। সুতরাং শান্তির বাহন সুঃখ। কিন্তু শান্তি বলতে কষ্টের অনুপুস্থিতি বুঝায় না।
কষ্ট না থাকলেও কেউ সুখি হতে পারে তা নয়। কোন কষ্ট নেই এমন অনেক লোক আছে যাদের কোন সুখও নেই। কারণ তাদের স্বাভাবিকতা নিষ্প্রভ।
পাপ কষ্ট না সুখ এটি আপেকি প্রত্যয়। যা একজনের কাছে পূণ্যের তা আর একজনের কাছে পাপ। দূর্গা পুজা হিন্দুদের কাছে মহাপূণ্যের কিন্তু মুসলমানদের কাছে জঘন্য। মুসলিম মরলে ইহুদি আবার ইহুদি মরলে মুসলিমরা তৃপ্তি পায়।
অপরাধকে কষ্টের একটি প্রতিক্রিয়া বলা যায়। যার সাথে লোভ জড়িত। যে যত লোভী সে তত অসুখি। যে যত অখুশি তার কষ্ট তত বেশি। কষ্ট সুখকে বেদনার আড়ালে ঢেকে রাখে। তাই দুঃখী মানুষের যতই সুখ বা ঐশ্বর্য্য থাকুক না কেন, তা তার মনে শুধু কষ্টটাই জুড়ে থাকে। কষ্ট সমস্ত সুখকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। পীড়িত কোন ব্যক্তির নিকট যত লোভনীয় সম্পদ দেয়া হোক, আনা হোক না যত শোভনীয় খাবার; সবই বিতৃষ্ণার; কষ্ট বরং আরও বাড়িয়ে দেয়।
সুখ বহুবিধ। তবে সুখ বলতে শারীরিক ও মানসিক সুখকে বুঝায়। এ দুটো শান্তির ধারক, বাহক ও বর্ধক। সুতরাং শারীরিক ও মানসিক সুখ হচ্ছে সকল সুখের উৎস।
সুঃখ না থাকলে শান্তি থাকার প্রশ্নই আসে না। তবে শান্তি না থাকলেও সুখ থাকতে পারে। সুঃখের উপভোগে যখন কষ্টের ছোঁয়া লাগে তখন শান্তি আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে। কারণ শান্তি কষ্টকে মোটেও সহ্য করতে পারে না।
শান্তি একধরণের নিস্তব্ধতা। যেখানে প্রত্যাশা কম সেখানে শান্তির সম্ভাবনা তত বেশি। যার প্রত্যাশা যত বেশি তার ঝুঁকিও তত বেশি। ঝুঁকি কষ্টের প্রেমিকা। দেখলেই ঝাপিয়ে পড়তে চায়। যেখানে ঝুঁকি বেশি সেখানে প্রত্যাশাও বেশি। প্রত্যাশা ভঙ্গের সম্ভাবনাও বেশি। প্রত্যাশা ভঙ্গই তো কষ্টের প্রকাশ্য রূপ।
নয় কি?
যেখানে ঝুকি কম সেখানে কষ্টও কম। যেখানে ঝুকি কম সেখানে প্রত্যাশাও কম। সংগতকারণে শান্তিটা এ পরিবেশে বেশি নিরাপদ বোধ করে। কারণ এ পরিবেশে কষ্ট তেমন একটা সুবিধা করতে পারে না।
আশা আর ঝুকি সমার্থকবোধক। আশা শান্তির কার্বনডাই অঙ্াইড। যা লোভকে উসকে দেয় এবং শান্তিকে দমিয়ে রাখে। নির্লোভতা শান্তির অঙ্েিজন। নির্লোভতা শান্তির প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
যিনি যত নির্লোভ তিনি তত বেশি শান্তির নিশ্চিত প্রত্যাশী। যে যত লোভী সে তত দুখী, সে তত কষ্টে থাকে।
No comments:
Post a Comment