Translate

Tuesday 11 July 2017

মাতৃভাষা ও দেশপ্রেম / প্রমিতা দাস লাবণী


অন্য ভাষার বর্ণে যারা নিজভাষার বাক্য চয়ন করে, তারা অনেকটা জাত-পরিচয়হীন। চিন্তন মানসে স্বকীয়-ঐতিহ্য, কৃষ্টি, আত্মমর্যাদা, স্বাজাত্যবোধ, দেশপ্রেম, উৎস-নির্ধারক মূল্যবোধ প্রভৃতি গুণাবলীর মারাত্মক অভাব ঘটলে সে ব্যক্তি নিজের মাতৃভাষাকে অন্য ভাষার বর্ণ দিয়ে সাজায়। এমন ব্যবহার গর্ভধারিনীর সঙ্গে উপহাস করার চেয়েও লজ্জাকর ও অশালীন। মাতৃভাষা মায়ের মতন। কুলাঙ্গার ছাড়া কেউ মায়ের সঙ্গে উপহাস করে না। 
যে ব্যক্তি বাঙালি হয়েও বাংলা লিখতে জানেন না কিংবা যন্ত্রের দোহাই দিয়ে মাতৃভাষাকে অন্য ভাষায় প্রকাশ করতে কুণ্ঠিত হন না - তাদের মাতৃভক্তি ও দেশপ্রেম থাকার কথা নয়। ভাষাপ্রেম হচ্ছে দেশপ্রেমের অম্লজান। প্রকাশ যদি হৃদ্যিক অনুভূতির আলো হয় তাহলে এমন কুলাঙ্গার ব্যক্তির কাছে বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকতে পারে না। আলো ছাড়া যেমন দৃষ্টি নিষ্প্রভ তেমনি মাতৃভাষা ছাড়া ব্যক্তির স্বদেশপ্রেম নিষ্প্রভ। যার স্বদেশপ্রেম নিষ্প্রভ তার সবকিছু নিষ্প্রভ। ভাষাপ্রেম অন্তরে স্বাজাত্যবোধের অনুপ্রেরণা দিয়ে মানুষকে ঐতিহ্যের সঙ্গে একাকার করে দেয়। আর তখনই সৃষ্টি হয় জাতির । 
ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির সুমহান মর্যাদা আর অমিয় স্বাধীনতার উৎস ক্ষেত্র। বাংলা ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জন্মবীজকে বিশ্বব্যাপী মহাসম্মানে পরিব্যপ্ত করার সমুদয় প্রেরণা যুগিয়েছিল।তাই ভাষাপ্রেম ও দেশপ্রেম অভিন্ন। অন্তত বাঙালিদের জন্য এটি আরও বেশি সত্য। 
যে ব্যক্তি নিজের মাতৃভাষাকে অন্য ভাষার বর্ণ দিয়ে প্রকাশ করে তার মন সূর্যহীন পৃথিবীর মতো নিষ্প্রভ এবং তার বিদ্যমানতা অস্তিত্ব পরিচয়বিহীন প্রাণীর মতো হীন। সপ্তদশ শতকের কবি আবদুল হাকিম এদের লক্ষ করেই বলে গিয়েছেন-যে সব বঙ্গেত জান্মি হিংসে বঙ্গবাণীসে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।

সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বিচিন্তকথন।

No comments:

Post a Comment