Translate

Thursday, 13 July 2017

বাংলা বানানে ভুল : কারণ ও প্রতিকার / ড, মোহাম্মদ আমীন

বানান ভুলের জন্য শাস্তির বিধানের অভাব ও প্রয়োগ বাংলা বানানে অস্থিরতা, ভুল ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রধান কারণ। প্রচলিত বিধি লংঘন করলে শাস্তি পেতে হয়, তিরস্কৃত হতে হয়; কিন্তু বানান-বিধি ভঙ্গ করলে কোনো সমস্যা হয় না।----- এখন নাকি বাংলা বানানে ভুল করলে উত্তরপত্রে নাম্বার কর্তনেরও বিধান তুলে দেওয়া হয়েছে। - - - বাঙালিরা সাধারণত শাস্তির ভয় বা প্রাপ্তির প্রত্যাশা না-থাকলে যে কোনো বিষয়ে অবহেলা দেখান এবং যথেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন। - - -
বাংলায় প্রচলিত প্রায় ৫৫ হাজার (মোট শব্দের তুলনায় অতি নগণ্য) শব্দের নামে বাংলায় সংস্কৃত ব্যাকরণ জিইয়ে রাখা হয়েছে।- - - - সংস্কৃত শব্দ- যেগুলো বাংলায় এসেছে তারা এখন বাংলার নিজস্ব শব্দ, সংস্কৃত নয়। তাই বাংলা ব্যাকরণের নিয়মেই তাদের লালন করা সমীচীন। - - - আমরা এগুলোকে সংস্কৃত নিয়মে লালন করছি, এটি আত্ম-মর্যাদা-বিসর্জন তুল্য। অতিথি স্বভাবতই নিমন্ত্রণকারীর- এবং বধু বা ঘরজামাই নিবাস-স্থলের রীতিই অনুসরণ করে, পূর্বরীতি নয়। কিন্তু বাংলায় দেখছি উল্টো। ----লন্ডনে এসে কোনো বাঙালি কি বাংলার আইনে চলবে? এবং তা কি আদৌ উচিত?
রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে যেভাবে লালন- ও মর্যাদা প্রদানের কথা, তা দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, ইউনিয়ন পর্যায় হতে শুরু করে সর্বোচ্চ কার্যালয় পর্যন্ত বাংলা বানান ও শব্দচয়নে ব্যাপক অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে। - - - অধিকন্তু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে নিজ নিজ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে ইচ্ছেমতো বানান, বিষয়টিকে আরও জটিল করে দিচ্ছে।----- কেউ লেখেন বাংলা, কেউ বা বাঙালা, বাঙলা, বাঙ্গালা - - -। ক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা বাংলাকে মহা অস্থির পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। -- করল, করলেম, করলুম, করলাম, করলেন, করলো, দেয়া, দেওয়া, দিলাম, দিলেম, দিচ্ছিলাম, দিচ্ছলুম, দিচ্ছিলেম ---। পৃথিবীর আর কোনো ভাষায় এমন দেখা যায় না।
---- ------- অভিধান না-দেখা এবং মাতৃভাষার শব্দ হিসাবে প্রচলিত ভুল-বানানকে যাচাই না-করে শুদ্ধ গণ্য করা ভুলের আর একটি কারণ। অনেকে সমধ্বনির বর্ণ, যুক্তাক্ষর প্রভৃতি উল্লেখ করে বাংলাকে কঠিন ভাষা আখ্যায়িত করে থাকেন। --- এসব অজুহাত মাত্র, ভাষার প্রতি দরদ থাকলে, একটু চর্চা করলেই হয়। পৃথিবীর অনেক ভাষা বাংলার চেয়েও জটিল। - - --। পৃথিবীর আর কোনো ভাষাভাষীকে নিজ ভাষার প্রতি এমন অশালীন মন্তব্য করতে দেখা যায় না।
---- আর্থ-সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে বাংলা ভাষার ক্রমবর্ধমান দূরত্ব, বাংলার প্রতি বাংলাভাষীর অবহেলা, বানানে ভুল ও যথেচ্ছাচারের আর একটি কারণ। বাংলা না-জানলেও চলে,- - --- চাকরি-বাকরি, সামাজিক-মর্যাদা কিছুই বাংলাকে ঘিরে আবর্তিত হয় না, যেমন হয় ইংরেজি, হিন্দি বা অন্য ভাষাকে ঘিরে। ---- বাংলা ভুল করলে লজ্জিত হওয়ার কারণ ঘটে না - এমন একটি উন্নাসিক ভাব ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ।----- বাংলা ভালো না-করলেও ভালো চাকরি পাওয়া যায়, তাই বাংলা মায়ের জন্য অত সময় দিয়ে লাভ কী! বরং পরের মায়ের গোলামি --- । মধুসূদনও করেছিলেন - - -।
তো- - - - - কেন বাংলা শিখব, হোক না মাতৃভাষা; তাতে কী! গরীব মায়ের চেয়ে সুন্দরী প্রেমিকার ধনী মায়ের সেবা করলে অনেক লাভ- এমন নিকৃষ্ট মানসিকতা আমাদের মজ্জাগত। এজন্য ভালো বাংলা জানেন না এমন অনেক পিতা-মাতা তাদের পুত্র-কন্যার বিয়েতে ইংরেজি ভাষায় দাওয়াতপত্র দেন। অথচ ওই বিয়েতে হয়তো একজনও ইংরেজ থাকেন না - - - - -।
(চলবে-)
[ এ যাত্রায় এটি স্যারের শেষ অভিভাষণ, অভিভাষণটি একটায় শেষ হয়েছে; তারপর স্যারকে বিদায় দিয়ে এটি অনুবাদ করে পোস্ট করা হলো, তাড়াহুড়ো ভুলের কারণ হতে পারে, মার্জনীয়]

No comments:

Post a Comment