Translate

Thursday 13 July 2017

শব্দশক্তি / Subhasis Chirakalyan Patra


শব্দের ত্রিবিধ শক্তির কথা এখানে প্রকাশ করা হচ্ছে। যিনি শব্দশক্তিকে করায়ত্ত করতে পারবেন তিনি ভাষার আলোয় বিশ্বরূপ দেখবেন।
অভি পূর্ব্বক ধারণ যাহাতে তাহাকে অভিধা কয়,কোনো শব্দের অভিধা অর্থ শব্দনিষ্ঠ হয়।অভিধা যাহাতে অন হয়ে যায় তাকে অভিধান বলে,ক্রিয়াভিত্তিক অভিধান পেলে পড়িব নিদ্রা ভুলে। ১।লক্ষণা লক্ষণের আধার, তাতে লক্ষণ রয়;লক্ষণার্থে আঁকোড়তলার মানে আদালত হয়।বিষ্ণুপুরের আদালতে আছে একটি আঁকোড় গাছ,চল ছুঁড়ি তোকে নিয়ে যাব সেই আঁকোড় গাছের কাছ। ২।ব্যঞ্জনা নামে আরও একখানি শব্দবৃত্তি রয়,সোজা কথাটির বাঁকা মানে হলে তাকে ব্যঞ্জনা কয়।ব্যঞ্জনার্থে অভিধাদি ছাড়া ভিন্ন অর্থ পাই;'স্নান করিয়াছি' মানে হতে পারে ' ভাত চাই।' ৩।---- 'বর্ণসঙ্গীত'।
টীকা
১. শব্দবৃত্তি মানে শব্দের অর্থ প্রকাশ করার শক্তি। বৃত্তি শব্দের অর্থ কাজ বা পেশা। অর্থকে প্রকাশ করাই শব্দের কাজ, তাই তাকে শব্দবৃত্তি বলে। শব্দের ত্রিবিধ বৃত্তি --- অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা। শব্দবৃত্তিকে শব্দশক্তিও বলে, যথা লক্ষণাবৃত্তিকে লক্ষণাশক্তি বলা যায়। এখানে শব্দশক্তি মানে Sound energy বুঝলে চলবে না।
শব্দকে ভেঙে যে আক্ষরিক অর্থ পাওয়া যায় তাকে অভিধা অর্থ (literal meaning) বলে। এই অর্থ ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক হয়। যে গ্রন্থে শব্দের অভিধা অর্থ বলে দেওয়া হয় তাকে অভিধান (=অভিধা অন হয় যাহাতে) বলে। শব্দের বানান কীভাবে তার অর্থকে ধরে রাখে তা অভিধানে ফুটে উঠার কথা, অবশ্য আধুনিক অভিধানকারেরা প্রায়ই এই দিকটাতে অবহেলা করেন। তারা শব্দের বানানের ব্যাপারে শুধু উচ্চারণকেই গুরুত্ব দেন। শু.বা.চ-এর বন্ধুদের অনুরোধ করব শব্দের অভিধার্থের দিকে সর্ব্বদা নজর রাখতে।
২. আমাদের পাঁচাল গ্রামের (জেলা বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ) মহিলারা ঝগড়ার সময় একে অন্যকে 'তোকে আঁকোড়তল দেখাবো লো!' বলে গালি দেয়। এখানে আঁকোড়তল শব্দের অর্থ হল বিষ্ণুপুর শহরের আদালত, যেখানে একটি আঁকোড় গাছ আছে। চোখ হলুদ হওয়া লক্ষ্য করে ডাক্তারবাবু যেমন ভাইরাল হেপাটাইটিস (viral hepatitis) রোগ ধরতে পারেন তেমনি আঁকোড় গাছটি লক্ষ্য করে আমাদের আদালতটি চেনা যায়। আদলত বুঝাতে আঁকোড়তল শব্দের প্রয়োগ লক্ষণার্থে প্রয়োগ হয়। প্রসঙ্গত, রোগলক্ষণগুলিকে ডাক্তারবাবুরা লক্ষ করেন বলেই সেগুলিকে লক্ষণ বলে।
শব্দকে প্রকৃতি-প্রত্যয় এবং প্রয়োজনে বর্ণে ভেঙে তার অভিধার্থ নিষ্কাশন করা যায় এবং একটু চেষ্টা করলেই লক্ষণার্থও বোঝা যায়। মৎপ্রণীত পদ্যাভিধান ''বর্ণসঙ্গীত''-এ বিষয়টা দেখানো হয়েছে। পাশ্চাত্যের পণ্ডিতেরা এই ব্যাপারটি ভাল করে না বুঝে শব্দার্থ যাদৃচ্ছিক (Word meanings are arbitrary) বলে ঘোষণা করেছেন।
জৈমিনি, যাস্ক, কালিদাস, ভর্তৃহরি, প্রমুখেরা বাক ও অর্থ পরস্পর সম্পৃক্ত বলে মনে করতেন। আজকের বাঙালী বিদ্বানরা সেসব ভুলে পশ্চিমের পো ধরছেন এবং তার ফলে বাংলা ভাষার শরীরে নানা রোগলক্ষণ (ভুল বানান, ভুল অর্থ করা ইত্যাদি) দেখা যাচ্ছে। এসব আমাদের পক্ষে খুবই পরিতাপের বিষয়। আমাদের উচিত হবে পশ্চিমকে শব্দার্থের নিয়ম বুঝিয়ে বলা। শব্দার্থের দর্শনে ভারতবর্ষের অর্জ্জন পাশ্চাত্যের তুলনায় অনেক বেশী। শব্দার্থ যাদৃচ্ছিক নয়, তা স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক --- 'বর্ণসঙ্গীত' গ্রন্থে ইহা দেখানো হয়েছে।
৩. অভিধা বা লক্ষণা বাদ দিয়ে শব্দের আরও ভিন্ন অর্থ হলে তাকে ব্যঞ্জনার্থ বলে। একে ভঙ্গীভাষণ বা বক্রোক্তিও বলা হয়।

No comments:

Post a Comment