Translate

Friday, 10 October 2014

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ইহুদি / ড. মোহাম্মদ আমীন



বিশ্বে ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। তন্মধ্যে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন প্রকৃতপক্ষে ২জন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে মিশরের নাগিব মাহফুজ (Naguib Mahfouz), ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে আলবার্ট ক্যামুস (Albert Camus) এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সাহিত্যিক ওরহান পামুক (Albert Camus) নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। আলবার্ট কামু মুসলিম বংশোদ্ভুত হলেও ইসলাম ধর্ম পালন করতেন না, বিশ্বাসও করতেন না। নিজেকে মুসলিম হিসেবে পরিচয়ও দিতেন না। এ হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী মুসলমানের সংখ্যা মাত্র দুই জন।

সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা যায়, বিশ্বে ইহুদির সংখ্যা মোট ইহুদির সংখ্যা ১,৩৭, ৪৬,২০০ জন। তন্মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪ জন ইহুদি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১১১জন ব্যক্তি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। 

প্রথম : জার্মান গীতিকবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও ছোটগাল্পিক পাউল ইয়োহান লুডভিগ ফন হেইনজে (Paul Heyse) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রথম ইহুদি। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। হেইনজে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ জার্মানির বার্লিন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ এপ্রিল তিনি মিউনিখে মারা যান।

দ্বিতীয় : বিশ শতকের প্রচণ্ড প্রভাবশালী ফ্রেন্স দার্শনিক হেনরি লুইস বেরগস সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বিতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ অক্টোবর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রিউ ল্যামারটিন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি তিনি প্যারিসে মারা যান।

তৃতীয় : ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সোভিয়েত ঔপন্যাসিক, বরিস পাস্তারনেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তৃতীয় ইহুদি। তিনি ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের মস্কো নগরে এক ধনাঢ্য ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মে তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

চতুর্থ ও পঞ্চম : জার্মান কবি ও নাট্যকার নেলি নেওনি স্যাকস  পোলিশ লেখক স্যামুয়েল ইয়োসেপ আগনন সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী  চতুর্থ পঞ্চম  ইহুদি। তাঁরা উভয়ে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেনি। নেলি নেওনি স্যাকস ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে মারা যান। অন্যদিকে  স্যামুয়েল ইয়োসেফ আগনন ৮১ বছর বয়সে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

ষষ্ঠ : কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মার্কিন-ইহুদি লেখক সাউল বোলো  সাহিত্যে নোবেলা পুরস্কার বিজয়ী ষষ্ঠ ইহুদি। তিনি ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সাউল বেলো ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন পূর্ব-কানাডার কুইবেক শহরের লাচিনে এক গোঁড়া ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল ৮৬ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসের ব্রুকলিনে  মারা যান।

সপ্তম : পোলিশ-মার্কিন সাহিত্যিক ও বিশ্বখ্যাত ছোটগাল্পিক আইজাক্‌ বসেভিস্ সিঙ্গার (Isaac Bashevis Singer) ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সপ্তম ইহুদি। আইজাক ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত কংগ্রেসে পোলান্ডের ওয়ারশো শঞরের কাছে লিউনিকে জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই তিনি মারা যান।

অষ্টম : ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বুলগেরিয়ান ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, স্মৃতিকার ও প্রাবন্ধিক  এলিয়াস কানেত্তি সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী অষ্টম ইহুদি। তিনি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই বুলগেরিয়ার নিম্ন ডানিয়ুব আপত্যাকার রিউজ শহরের রুসচুক নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অগাস্ট সুইজারল্যান্ডের জুরিখে মারা যান।

নবম: বিখ্যাত সাহিত্যিক জোসেফ ব্রডস্কি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নবম ইহুদি। তিনি ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রুশ-মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক ব্রডস্কি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে রাশিয়ার লেলিনগ্রাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক  শহরে মারা যান।

দশম :  ইংরেজিভাষী নেদাইন গার্ডিমার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দশম ইহুদি। তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে অবস্থিত স্প্রিং গুয়েটন এলাকার স্প্রিং নামক স্থানে এক অভিবাসী ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

একাদশ : ইমরে কাটেজ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয় একাদশ ইহুদি। হাঙ্গেরিয়ান নাগরিক ইমরে কাটেজ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর বুদাপেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বাদশ : ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অস্ট্রিয়ান নাগরিক এলফ্রিড জেলিনেক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দ্বাদশ ইহুদি। তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের  ২০ অক্টোবর অস্ট্রিয়ার স্ট্রাইরিয়া নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। 

ত্রয়োদশ : ইংলিশ নাট্যকার, স্ক্রিনরাইটার, অভিনেতা, থিয়েটার পরিচালক, রাজনীতিক কর্মী ও কবি হ্যারল্ড পিন্টার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ত্রয়োদশ ইহুদি। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর  পশ্চিম লন্ডনের ক্যাকনি নামক স্থানে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর তিনি লিভার ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্দশ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী চতুর্দশতম ইহুদি। প্যাত্রিক মোদিয়ানো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই প্যারিসের বুলন শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী পিতা আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন ইতালীয় ব্যবসায়ী এবং মা লুইজা কোলপেন ছিলেন বেলজিয়াম-অভিনেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মোদিয়ানো প্যারিসের লুসি অঁরি-৪ সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষক হিসাবে বিখ্যাত লেখক রেমো কুইনোর সঙ্গলাভের সুযোগ পান। কুইনোর উৎসাহ আর পরিচর্যা মোদিয়ানোর সাহিত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কুইনো নিজেই মোদিয়ানোকে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা গ্যালিমার সঙ্গে মোদিয়ানোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। মোদিয়ানো তরুণ বয়সে  প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মের আগের স্মৃতিও লেখার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে মোদিয়ানো বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, শুধু ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’

১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোমিনিক জাহফুসের সঙ্গে মোদিয়ানো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের দুই  মেয়ে যাথাক্রমে জিনা ও মারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে  মাত্র ২২ বছর বয়সে মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘লা প্লাস দো লেতোয়াল’ প্রকাশিত হয় । মোদিয়ানো মূলত ঔপন্যাসিক। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সমান দক্ষ। তাঁর উপন্যাসগুলো কমপক্ষে ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে রু দে বুতিক অবসকিউর (দ্য মিসিং পারসন), ভয়্যাজ দো নোস (হানিমুন), লা রন্দ দো নুই (নাইট রাউন্ডস), দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি (আউট অব দ্য ডার্ক), দোরা ব্রুদার (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ (রিং রোডস: অ্যা নোভেল)। লাকোম্ব লুসিয়াঁ নামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন মোদিয়ানো। তাঁর সাম্প্রতিক বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে।

সাহিত্যে নোবেল ২০১৪ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো / ড. মোহাম্মদ আমীন

সাহিত্যে নোবেল ২০১৪ : প্যাত্রিক মোদিয়ানো

২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন প্যাত্রিক মোদিয়ানোর। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে খ্যাতিমান ছোটগল্পকার এলিস মুনরো সাহিত্যে নোবেল পান। প্রাঞ্জল গদ্যে মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা ফুটিয়ে তোলার অনবদ্য মুনশিয়ানার জন্য তাঁকে ‘কানাডার
চেকভ’ বলা হয়। সুইডিশ অ্যাকাডেমি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১১তম লেখক হিসাবে ৬৯ বছর  বয়স্ক মোদিয়ানোর নাম ঘোষণা করে। উল্লেখ্য মোদিয়ানো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একাদশ ফরাসি সাহিত্যিক। প্যাত্রিক মোদিয়ানো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই প্যারিসের বুলন শহরতলিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী পিতা ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দোমিনিক জাহফুসের সঙ্গে মোদিয়ানো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের দুই  মেয়ে

মোদিয়ানো মূলত ঔপন্যাসিক। তবে শিশু-সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সমান দক্ষ। তাঁর উপন্যাসগুলো কমপক্ষে ৩০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ইংরেজিতে অনূদিত তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে রু দে বুতিক অবসকিউর (দ্য মিসিং পারসন), ভয়্যাজ দো নোস (হানিমুন), লা রন্দ দো নুই (নাইট রাউন্ডস), দু প্লু লোয়াঁ দো লুবলি (আউট অব দ্য ডার্ক), দোরা ব্রুদার (দ্য সার্চ ওয়ারেন্ট), লে বুলভার্দ দো সোন্তিউ (রিং রোডস: অ্যা নোভেল)। লাকোম্ব লুসিয়াঁ নামের একটি ফরাসি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য যৌথভাবে লিখেছেন মোদিয়ানো।   তাঁর সাম্প্রতিক বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে।

নোবেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ফ্রান্সে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জার্মান দখলদারির সময় সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প নিজের বিভিন্ন লেখায় মোদিয়ানো নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘স্মৃতির শিল্প’ দিয়ে তিনি মানুষের ভাগ্যের সে সব দিক বর্ণনা করেছেন, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে মুঠোয় ধরা সবচেয়ে কঠিন। কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, জাপানের লেখক

মোদিয়ানো ফ্রান্সে সবচেয়ে সমাদৃত লেখকদের একজন। তিনি দেশটির শীর্ষ সাহিত্য পুরস্কার প্রি গঁকুর পেয়েছেন ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী তিন দশক ধরে বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখে তিনি সাহিত্যিক হিসেবে নিজের কৃতিত্বকে বিশ্বমহলে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। নিজেকে তিনি প্রকাশ করেন এভাবে - ‘আসলে, আমি কখনো অন্য কিছু করার কথা ভাবিনি। আমার কোনও ডিপ্লোমা ছিল না, অর্জনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যও ছিল না। তবে তরুণ লেখক হিসেবে শুরু করাটা ছিল আসলেই কঠিন। আমি নিজের প্রথম জীবনের বইগুলো পড়তে পছন্দই করি না। তার মানে এই নয় যে আমি সেগুলো অপছন্দ করি, তবে এ সব লেখায় আমি নিজেকে চিনতে পারি না -নিজেকে তরুণ অবস্থায় দেখতে একজন প্রবীণ অভিনেতার যেমন অনুভূতি হয়।’

মূলত তিনি ঔপন্যাসিক। তবে শুধু উপন্যাস নয়, শিশুসাহিত্য, এমনকি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও  তিনি লিখেছেন। তবে তার সবচেয়ে পরিচিত কাজ সম্ভবত ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘রুই দে বুটিক অবসকিউর’ (ইংরেজি অনুবাদম মিসিং পারসন), যে উপন্যাসের জন্য তিনি সম্মানজনক ‘প্রি গুনকুয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। এ উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে এমন এক গোয়েন্দাকে ঘিরে, যিনি ঘটনাচক্রে স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন এবং জীবনের শেষ ‘কেইস’ হিসাবে নিজের পরিচয় উদ্ঘাটনের তদন্তে নেমেছেন। এই অন্বেষণে ইতিহাসের পাতায় তিনি অনুসরণ করে চলেছেন নিজেরই ফেলে আসা পদচিহ্ন। সুইডিশ
অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলান্দ বলেন, “আকারে ছোট, ১৩০ থেকে ১৫০ পৃষ্ঠার এক একটি বই। অধিকাংশ কাহিনীতেই ফিরে ফিরে এসেছে স্মৃতি, স্মৃতিলোপ, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট আর নিজের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা।”মোদিয়ানোর বহু উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে তার শৈশবের প্যারিসে। তারই জীবনের টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে গল্পের পরিণতির দিকে এগিয়েছে এক একটি চরিত্র। কখনও কখনও তিনি উপন্যাসের মাল-মসলা সংগ্রহ করেছেন মানুষের সাক্ষাৎকার থেকে, পত্রিকার নিবন্ধ থেকে, কখনও বা নিজের ডায়েরিতে লেখা নোট থেকে, বছরের পর বছর ধরে যা তিনি লিখে চলেছেন। কখনও আবার মোদিয়ানোর একটি উপন্যাসের গল্প থেকেই জন্ম নিয়েছে আরেকটি উপন্যাস, এক কাহিনীর চরিত্র অন্য  কোনও উপন্যাসে হাজির হয়েছে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে। 

স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলান্দ বলেন, অনবদ্য শৈল্পিক স্মৃতিগ্রন্থনার জন্য প্যাত্রিক মোদিয়ানোকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে তিনি মানব-ভাগ্যের দুর্বোধ্যতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, উন্মোচন করেছেন আগ্রাসনের বিশ্বে জীবনের বর্ণীল স্বরূপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দখলদার নাৎসি বাহিনীর অধীনে ফ্রান্সের মানুষের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা এবং নিজ শৈশবের বিভিন্ন দুঃসহ স্মৃতি তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সে সব ইতিহাস আর আপন অনুভূতির মিশেলে তিনি তরুণ বয়স থেকে একের পর এক সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য উপন্যাস। ফরাসিভাষী প্যাত্রিক মোদিয়ানোর ‘স্মৃতির শিল্প’ এ বছর সুইডেনের নোবেল কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি অর্জন করেছে বিরল মর্যাদায়। যা তাঁকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে মোদিয়ানোর হাতে পুরস্কার বাবদ তুলে দেয়া হবে ৮০ লাখ ক্রোনার। আমরা তাঁর স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

হারুকি মুরাকামি, বেলারুশের সাংবাদিক-লেখক সোয়েলনা এলেক্সিয়েভিচ এবং সিরিয়ার কবি আদোনিসকে পেছনে ফেলে প্যাত্রিক মোদিয়ানো ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জন্য নির্ধারিত সাহিত্য-নোবেল অর্জন করেন। সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব পিটার ইংলান্ড বলেন, মোদিয়ানোর অনেক বই যেন পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে, একটি অপরটির প্রতিধ্বনি করে। এ সব বইয়ে রয়েছে স্মৃতি, পরিচয় ও অনুসন্ধান। তাঁর লেখা ছোট ছোট বইয়ে নানা বৈচিত্র্যের মধ্যেও ঘুরেফিরে এসেছে একই আখ্যানবস্তু: স্মৃতির কথা, ক্ষয়ক্ষতির কথা, পরিচয়ের কথা, অনুসন্ধানের কথা। তাঁকে এই সময়ের বিখ্যাত ফরাসি লেখক বলা যেতে পারে।

যাথাক্রমে জিনা ও মারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে  মাত্র ২২ বছর বয়সে মোদিয়ানোর প্রথম উপন্যাস ‘লা প্লাস দো লেতোয়াল’ প্রকাশিত হয় । ফ্রান্সের পাঠকদের কাছে প্যাত্রিক মোদিয়ানো একটি পরিচিত নাম। তার বেশ কয়েকটি বই ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তবু অন্য ভাষার পাঠকবৃন্দ তার লেখার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন।
আলবার্তো মোদিয়ানো ছিলেন ইতালীয় ব্যবসায়ী এবং মা লুইজা কোলপেন ছিলেন বেলজিয়াম-অভিনেত্রী। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মোদিয়ানো প্যারিসের লুসি অঁরি-৪ সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি শিক্ষক হিসাবে বিখ্যাত লেখক রেমো কুইনোর সঙ্গলাভের সুযোগ পান। কুইনোর উৎসাহ আর পরিচর্যা মোদিয়ানোর সাহিত্য জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। কুইনো নিজেই মোদিয়ানোকে ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা গ্যালিমার সঙ্গে মোদিয়ানোর যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। মোদিয়ানো তরুণ বয়সে  প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছেড়ে দিয়ে লিখতে শুরু করেন। তাঁর দাবি, তিনি জন্মের আগের স্মৃতিও লেখার মধ্যে তুলে ধরতে পারেন। নিজের লেখার ধরন সম্পর্কে উনিশ শতকের ফরাসি লেখক স্তন্দালকে উদ্ধৃত করে মোদিয়ানো বলেন, ‘আমি ঘটনার বাস্তবতা দিতে পারি না, শুধু ছায়াটাকে উপস্থাপন করতে পারি।’

উপকারী গ্রুপ শুবাচ / ফজলে রাববি

উপকারী গ্রুপ শুবাচ

শুবাচ গ্রুপে জয়েন্ট করেছি খুব বেশি দিন হয়নি। প্রথমে অনেকটা গুরুত্ব না-দিয়েই যুক্ত হয়েছি। তবে যুক্ত থাকার কারণে নিউজফিডে নতুন পোস্টগুলো মাঝে মাঝেই চোখে পড়ত। কখনও বা দু’একবার শখ করে ঢুঁ মারতার। এরপর ধীরে ধীরে এর অসামান্য উপকারিতা অনুভব করি। এখন কেমন যেন নতুন পোস্টের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে থাকি। নতুন কোনও পোস্ট পেলেই বিশেষ করে ড. আমীন স্যারের পোস্ট গোগ্রাসে গিলতে থাকি। কিছু শেখার চেষ্টা করি। ফেসবুক এখন শুধু সময় কাটানোর জায়গা নয় শিক্ষা অর্জনের অন্যতম মাধ্যমও বটে। এ জন্য ’শুবাচ’এর কাছে কৃতজ্ঞ আমি। 
এর পুরো কৃতিত্ব অবশ্যই ড. আমীন স্যারের। ধন্যবাদ স্যার। ধন্যবাদ ’শুবাচ’এর সকল শুভানুধ্যায়ীদের।

Saturday, 4 October 2014

বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক / ড. মোহাম্মদ আমীন

বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে প্রাচীন মিশরের হ্যাটসেপসুট (Hatchepsut) বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক। হ্যাচহেপসুট শব্দের অর্থ সর্বোত্তম মহা-মহীয়ান রমণী। তদকালে সারা বিশ্বে তার মত প্রজ্ঞাময় কোন শাসক ছিলেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানময় মন, বিচক্ষণ দৃষ্টিভঙ্গী ও উদার মননশীলতার অধিকারী। বিশ্বখ্যাত ইজিপটোলজিস্ট জেম হেনরি ব্রিয়াস্টেডের (James Henry Breasted) মতে , হ্যাচহেপসুটই বিশ্বের প্রথম মহিলা শাসক। হ্যাচহ্যাপসুট খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৯- ১৪৫৮ পর্যন্ত ২১ বছর মিশর সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী (ফারাও) ছিলেন। তার পূর্বে বিশ্বে কোন মহিলা শাসক ছিলেন, এমনটি জানা যায়নি। তিনি ছিলেন প্রাচীন মিশরের পঞ্চম ফারাও। তাকে আলোকিত মিশর সাম্রাজ্যের মহান ফারাও বলা হয়ে থাকে। কারণ তিনি প্রাচীন ধর্মীয় গোঁড়ামি, অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, মনগড়া বিশ্বাস, অলীক দাবি ইত্যাদির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিশ্বকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ করার প্রয়াস শুরু করেছিলেন। নারী শাসক হওয়া সত্ত্বেও সে প্রায় অন্ধকার যুগে তার আলোকবর্তিকা বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশে অনিবার্য মাইল ফলক হিসেবে বিবেচিত।

হ্যাটসেপসুট ১৫০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রথম থুটমোজ ও তার প্রথম স্ত্রী আহমেজ এর কন্যা। তার স্বামী দ্বিতীয় থুটমোজ ছিলেন প্রথম থুটমোজ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুটনেপেরেট এর সন্তান। হ্যাচহেপসুটই বিশ্বে প্রথম নারী অধিকার সম্পর্কে প্রায়োগিক ধারণার জন্ম দেন। তিনিই বিশ্বে প্রথম নারীর মর্যাদাময় জীবনের দাবি প্রতিষ্ঠা করে এবং নারীও যে পুরুষের মত মানুষ সে সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা সৃষ্টি করেন। তার শাসনকালে কুসংস্কার ও কল্পিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আলোকিত মানুষের প্রথম প্রতিবাদের শুভ সূচনা ঘটে। তার শাসনামলে বিশ্বে প্রথম ভবনবিদ্যা ও স্থাপত্যকলার সূচনা ঘটে। তার সময় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্তচিন্তার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫৮ এর ১৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরন করেন। মমি পরীক্ষা করে জানা যায় তিনি বোন-ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। মহারাজকীয় সমাধিস্থল এস্পিওজ আর্টমিডজ এর দায়ার এল বাহরির টেম্পল অব কার্নাকে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এখনও সেখানে তার স্মৃতিসৌধ মহাগৌরবে দাঁড়িয়ে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক : সম্রাট অশোক / ড. মোহাম্মদ আমীন

পৃথিবীর প্রথম বৌদ্ধ শাসক সম্রাট অশোক পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। কারণ:
১. তিনিই বিশ্বের প্রথম শাসক, যিনি বিশ্বে প্রথম অহিংস নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার সূচনা ঘটান;
২. মানব ইতিহাসে তিনিই প্রথম শাসক, যিনি প্রথম দাসপ্রথা রহিত করেন;
৩. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি বিশ্বে প্রথম মৃত্যুদন্ড রহিত করেন;
৪. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি বনায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করে মরুকরণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেন;
৫. তিনিই প্রথম শাসক, যিনি মানব ইতিহাসে প্রথম নারীপুরুষ সমতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন;
৬. তিনিই প্রথম শাসক যিনি লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে রাষ্ট্রীয় নীতি ঘোষণা করেন;
৭. তিনিই প্রথম শাসক যিনি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের উপর পাঠদান ব্যবস্থা চালু করেন।

(বিন্দুসারের মৃত্যুর পর সম্রাট অশোক (জন্ম ৩০৪ খ্রিস্টপূর্ব, শাসনকাল ২৯৮-২৭২ খ্রিস্টপূর্ব) সম্রাট হন। তিনি পূর্বে আসাম ও বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্হান, উত্তরে পামীর গ্রন্থি থেকে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ-ভারত নিজের সাম্রাজ্যভূক্ত করে নেন। এরপর অশোক কলিঙ্গ প্রজাতন্ত্র দখলে উদ্যোগী হন। খ্রিস্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রিস্টপূর্ব ২৬৩) দয়া নদীর ধারে ধৌলি পাহাড়ের কাছে ভীষণ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে কলিঙ্গবাহিনীর ১,০০,০০০ সেনা ও মৌর্য সেনাবাহিনীর ১০,০০০ সেনা নিহত ও অসংখ্য নর-নারী আহত হয়। যুদ্ধের বীভৎসতা সম্রাট অশোককে বিষাদময় করে তোলে। তিনি যুদ্ধের পথ ত্যাগ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন ও অহিংস-নীতিতে সাম্রাজ্য পরিচালনার নীতি গ্রহণ করেন। অশোক দেশে-বিদেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে উদ্যোগী হন। তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রাকে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিনি শ্রীলংকা পাঠান। এছাড়া তিনি কাশ্মীর, গান্ধার, ভানাভাসী, কোংকন, মহারাষ্ট্র, ব্যাকট্রিয়, নেপাল, থাইল্যান্ড, ব্রহ্মদেশ, লাক্ষাদ্বীপ প্রভৃতি স্থানেও বৌদ্ধধর্ম প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।)

ক্ষুদ্রতম দেশ / ড. মোহাম্মদ আমীন


১. ভাটিক্যান সিটি
ভ্যাটিকান সিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র। স্থলবন্দি এ দেশটি ইটালির রাজধানী রোমের মাঝখানে অবস্থিত। এর আয়তন ১১০ একর এবং লোক সংখ্যা ৮৪০জন। ১৯২৯খ্রিস্টাব্দে দেশটি স্বাধীন হয়। St. Peter’s Basilica বিশ্বের বৃহত্তম ক্যাথলিক চার্চ। ভ্যাটিকানি মউজিয়ামে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সংগ্রহ। এ সংগ্রহগুলো পাশাপাশি সাজালে ৯ মাইল লম্বা হবে। যা পুরো ভ্যাটিকান সিটির চারিদেকে সাড়ে চার বার ঘুরিয়ে আনা যাবে। পোপ হচ্ছে ভ্যাটিকান সিটির প্রধান।

২. মোনাকো
পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত মোনাকো (Monaco) পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। এর আয়তন ২.০২ বর্গ কিলোমিটার (২৪৮-তম) এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩৬৩৭১ (২১৭-তম)। জনসংখ্যার মাত্র ৬০০০ মোনাকো পাসপোর্টধারী। বাকিরা বিদেশি ও রেজিস্টাটর্ড। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যা ঘনত্ব ১৮,০০৫। যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি। মোনাকের জনগণের মাথাপিছু আয় ১,৫৩,১৭৭ মার্কিন ডলার। যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে হতে মোনাকে আয়কর মুক্ত দেশ। জনগণকে কোন আয়কর দিতে হয় না। ক্যাসিনো এবং পর্যটন দেশের প্রধান আয়-খাত। পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রের ধনকুবেরগ উপভোগ ও অর্থ ব্যয়ের জন্য মোনাকোকে এক নম্বর স্থান হিসেবে বেছে নেয়। মোনাকের কোন নিজস্ব বিমান বহর নেই। 
৩. নাউরু
প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ নাউরু (Nauru) পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। নাউরুর আয়তন ২১ বর্গ কিলোমিটার (পৃথিবীর ২৩৯-তম) এবং লোকসংখ্যা ৯৭৮২ (২১৬-তম)। মাথাপিছু আয় ১৭১৪০ মার্কিন ডলার। শিক্ষিতের হার ১০০ ভাগ। কোন বেকার নেই। চাওয়ামাত্র যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেয়া হয়। এ দেশের জনগণকে কোন আয়কর দিতে হয় না।প্রতি ৩৪ জন লোকের জন্য একটি হাসপাতাল বেড। অথচ আমেরিকায় প্রতি ১৫২ জনের জন্য ১টি হাসপাতাল বেড।নাউরুর মোট জনসংখ্যার ৯৫ ভাগ অতিরিক্ত ওজনের ভার ন্যুজ। এ জন্য এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে মোটা লোকের দেশও বলা হয়। ফসফেট এবং সিবার্ড ম্যানউর সম্পন্ন দেশটির জনগণ অতিরিক্ত মাত্রায় পশ্চিমা ফাস্ট ফুড গ্রহণের কারণে বিংশ শতক থেকে অতি-ওজন মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রাচীন নাম ছিল Pleasant Island। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। নাউরুর সরকার ঘোষিত কোন রাজধানী নেই। এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশে যার কোন রাজধানী নেই। ইয়রেন দেশটির অঘোষিত রাজধানী। এ দেশের কোন নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী নেই। মাত্র ১০০ সদস্যের একটি নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।প্রস্থ বরাবর দেশটি অতিক্রম করতে মাত্র গড়ে ৫৬ মিনিট সময় লাগে। এ দেশে ১৫০০ ইহুদি রয়েছে।

৪. টুভালু
টুভালু (Tuvalu)পৃথিবীর চতুর্থতম ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র। এর প্রাচীন নাম ইলিস আইল্যান্ড (Ellice Islands)। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দেশটির আয়তন ২৬ বর্গ কিলোমিটার (২২৬-তম) এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দের আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১০,৮৩৭ (২২৮তম)। মাথাপিছু আয় ৩৪০০ মার্কিন ডলার। মুদ্রার নাম টুভালুয়ান ডলার। দেশটি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রাজধানীর নাম পুনাপুটি। দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি।

৫. স্যান ম্যারিনো
স্যান ম্যারিনো (san Marino) পৃথিবীর পঞ্চম ক্ষুদ্রতম দেশ। এর দাপ্তরিক নাম রিপাবলিক অব স্যান ম্যারিনো। ইতালিয়ান পেনিনসুলা অবস্থিত দেশটির চারিদিকে ইতালি। আয়তন ৬১.২ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩১,২৪৭। মুদ্রাইউরো এবং দাপ্তরিক ভাষা ইতালিয়ান। জনগণের মাথাপিছু আয় ৪৪২০৮ মার্কিন ডলার। ৩০১ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর দেশটি রোমান সাম্রাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর দেশটির সংবিধান গৃহীত হয়। স্যান ম্যারিনো পৃথিবীর প্রাচীনতম সার্বভৌম ও সাংবাধিনাকি প্রজাতন্ত্র ।

নিয়তি : বাহাদুর শাহ জাফর / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাহাদুর শাহ জাফর(অক্টোবর ২৪, ১৭৭৫ - নভেম্বর ৭, ১৮৬২)

মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ্ জাফর বা ২য় বাহাদুর শাহ্ ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর দিল্লির লালকেল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম আবুল মুজাফ্ফার সিরাজুদ্দীন মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ গাজী। তিনি দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ (১৮০৬-৩৭ খ্রি:) ও সম্রাজ্ঞী লাল বাঈর দ্বিতীয় পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর বাহাদুর শাহ (দ্বিতীয়) ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রকৃতপক্ষে পিতামহ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬ খ্রি:) এবং পিতা সম্রাট দ্বিতীয় আকবর শাহ উভয়ের মতো দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পেনশনভোগী ছিলেন। তিনি বার্ষিক ১ লাখ টাকা ভাতা পেতেন।


সিপাহী বিপ্লবের শেষে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকেরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠায়। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৭ অক্টোবর ৮৩ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল, দুই শাহজাদা, শাহজাদী এবং অন্য আত্মীয় ও ভৃত্যদের নিয়ে ইংরেজ গোলন্দাজ ও অশ্বারোহী বাহিনী দিল্লি ত্যাগ করে। ৯ ডিসেম্বর জাহাজ রেঙ্গুনে পৌঁছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট গ্যারেজে সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। সম্রাটকে শুতে দেয়া হয় একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। সম্রাট পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর, শুক্রবার ভোর ৫টায় সম্রাট মৃত্যুবরণ করেন।সম্রাটকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে দাফন করা হয়।