Translate

Friday 26 September 2014

ভুলের কবলে বাংলা বানান : এ লজ্জা রাখি কোথায় / ড. মোহাম্মদ আমীন

ভুলের কবলে বাংলা বানান : এ লজ্জা রাখি কোথায়

হোমিও দর্পণ, রেজিস্টার্ড নম্বর : ডিএ -৬৬৬, একটি মাসিক ম্যাগাজিন। এ ম্যাগাজিনের
চিত্র নম্বর -১
সেপ্টেম্বর ২০১৪ সংখ্যার সম্পাদকীয় দেখুন (চিত্র নম্বর ১)। তিনি একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। বাংলা বানান বিষয়ে একজন শিক্ষিত মানুষের এমন অবহেলা ও অজ্ঞতা কি মেনে নেওয়া যায়? ভুল ধরে কাউকে হেয় করার জন্য নয়, বরং বানান ও শব্দচয়নে ভুল ও বিভ্রাটসমূহ তুলে ধরে ‘হোমিও দর্পণ’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে ভবিষ্যতে এত ভুল আর না হয় সে বিষয়ে সজাগ করাই লেখাটির উদ্দেশ্য। আশা করি বিষয়টি তারা দেখবেন। মাতৃভাষা মায়ের মতো। মায়ের প্রতি এমন অবহেলা চরম লজ্জাকর।

এবার ‘সম্পাদকীয়’ শিরোনামের লেখার ভুলগুলো বিশ্লেষণ করা যাক। প্রথম লাইনে ‘কি’ এর স্থলে হবে কী। স্বাধীনতা উত্তর শুদ্ধ নয়, হবে স্বাধীন-উত্তর, স্বাধীনোত্তর, ম্রিয়মান বানানে মূর্ধন্য-ণ হবে। ‘ম্রিয়মাণ’ শব্দের পর লেখা পুরো বাক্যটি সংশয়াবৃত এবং সুনির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশে ব্যর্থ। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ভুল ‘এতকিছু’; মূলত এমন কোন শব্দ বাংলা ভাষায় নেই, হবে ‘এত কিছু’। ‘ধারার’ স্থলে হবে ধারায়, সর্বশেষ নয়; শেষ অথবা হালনাগাদ, সরকারী নয়, সরকারি; ‘অতিসম্প্রতি’ প্রমিত নয়,
চিত্র নম্বর২
হবে সম্প্রতি। ‘উল্লেখযোগ্য’ নামের কোন পদ বাংলাদেশে এখনও সৃজন করা হয়নি। সম্পাদক সাহেব সম্ভবত ‘উল্লেখযোগ্য পদে’ বাগ্‌ভঙ্গি দিয়ে ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদে’ প্রকাশ করতে চেয়েছেন। নিসন্দেহে শব্দটি উদ্ভট, এর ঠিক বানান হচ্ছে ‘নিঃসন্দেহে’। ‘হোমিও বান্ধব’ সমাসবদ্ধ পদ। তাই ি‘হোমিওবান্ধব’ হবে। একথার> এ কথার, রেজিস্টার সহ> রেজিস্ট্রারসহ। ‘সমস্ত’ পদটি অতিরিক্ত, একই বাক্যে একই বিষয়ে একই উদ্দেশ্যে প্রকাশে দুটো বহুবচনবাচক পদ নিষ্প্রয়োজন। ‘মেজিক্যাল অফিসারবৃন্দ’ নয়, হবে ‘মেক্যিাল অফিসার বৃন্দ’। এ অনু্েচ্ছেদে আরও কিছু ভুল দেখুন : বিষয় ভিত্তিক>বিষয়ভিত্তিক, স্বার্থক>সার্থক, তাছাড়া>তা ছাড়া; ডিগ্রীধারী>ডিগ্রিধারী, পোষ্টিং> পোস্টিং, বিশেষ ভাবে>বিশেষভাবে।  ‘জন্য’ শব্দটি আলোচ্য বাক্যের জন্য নিষ্প্রয়োজন। 
এবার শেষ অনুচ্ছেদ দেখা যাক। একট শব্দ ‘ইঞ্জিনিংয়ারিং’। এটি কোন ভাষার শব্দ তা বোধগম্য নয়। সম্ভবত ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ লিখতে ‘ইঞ্জিনিংয়ারিং’ লেখা হয়েছে। ইনষ্টিটিউট>ইন্সটিটিউট,সমাজসেবার ভবন মিলনায়তন>সমাজ সেবা ভবন মিলনায়তন, স্বার্থক>সার্থক,  হোমিওপ্যাথির বোর্ড> হোমিওপ্যাথি বোর্ড। ‘স্পিকার’ বলতে জাতীয় সংসদের ‘স্পিকার’কে বুঝানো হয়।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এমনই উল্লেখ আছে। সংগতকারণে এখানে অনুষ্ঠানের বক্তা বলতে ‘স্পিকার’ লেখা সমীচীন হয়নি। শৃংঙ্খলা>শৃঙ্খলা, শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য>শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

চিত্র নম্বর ৩
শুধু তাই নয়, পত্রিকায় লেখা আরও কয়েকটি প্রতিবেদন পড়েছি। সবকটি ভুল বানান ও হাস্যকর শব্দচয়নে ভর্তি। ম্যাগাজিনের জন্য দেওয়া বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় এর বাণীটি আরও মারাত্মক, আরও ভয়ানক ভুলে জর্জরিত (চিত্র নম্বর ২)। এ বাণীটি পড়লে লেখকের শিক্ষা ও মাতৃভাষা-জ্ঞান দুটোই নিয়ে লজ্জায় বিমূঢ় হয়ে যেতে হয়। একজন শিক্ষিত লোক অর্ধ পৃষ্ঠার একটি লেখায় মাতৃভাষায় এত ভুল করতে পারেন! একই ম্যাগাজিনে লেখা ডা. এ সোবহানের লেখা ‘রাঙা শিশু’ গল্পটির বানান ও ভাষা আরও বিদঘুটে। এক পৃষ্ঠার একটি গল্পে লেখক কয়টি বানান ভুল করেছেন দেখুন (চিত্র নম্বর-৩)। দেখে মনে হয়, ভুলের মহড়া দেওয়ার জন্য ম্যাগাজিনটা প্রকাশ করা হয়েছে। এ কেমন ম্যাগাজিন, এরা কেমন বাঙালি! বাংলা ভাষার প্রতি এত অবজ্ঞা কীভাবে একজন মাতৃভাষীর পক্ষে সম্ভব!
সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয় ও লেখা যদি এমন হয় তো বাংলা ভাষা এখন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে এবং এর অবস্থা এখন কত করুণ তা ভাবতে শরীর শিউরে ওঠে।
[ আমার এ লেখাতেও ভুল থাকতে পারে, সংশোধন কাম্য]

No comments:

Post a Comment