Translate

Sunday 24 August 2014

প্রথম পরিসংখ্যানবিদ / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলাদেশের প্রথম পরিসংখ্যানবিদ

বাংলাদেশের প্রথম পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দাবাড়ু এবং সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাত। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে ডাকতেন 'মোতিহার', ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-এর ভাষায় তিনি 'আপনভোলা নিরহংকার মানুষ, বিদ্বান ও গুণী'। গুণমুগ্ধ ভক্তদের কাছে তিনি শ্রদ্ধেয় 'কাজী সাহেব'। তৎকালীন নদীয়া জেলার ভালুকা (বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী) থানার অন্তর্গত লক্ষ্মীপুর গ্রামে ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই (বাংলা ১৩০৪ সালের ১৪ শ্রাবণ) শুক্রবার ভোরবেলা নানার বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী গওহরউদ্দীন আহমদ এবং মাতা তসিরুন্নেসা। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর শুক্রবার ঈদ-উল-আযহার দিনি সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

এম.এ. ক্লাসের ছাত্র অবস্থাতেই কাজী মোতাহার হোসেন ১৯২০ সালের ১০ অক্টোবর কলকাতার মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমান ও মুসলিমা খাতুনের কন্যা সাজেদা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শিল্প-সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী সাজেদা খাতুন ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেনের যোগ্য জীবনসঙ্গী। বৈষয়িক সকল দায়িত্ব একা হাতে সামলে তিনি নির্বিঘ্নে জ্ঞানসাধনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন জগৎ-সংসারের প্রতি উদাসীন কাজী সাহেবকে। সংস্কৃতিমনা এই দম্পতির চার পুত্র ও সাত কন্যা। সন্তানদের প্রায় সকলেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-ক্রীড়ার পারিবারিক ঐতিহ্যকে লালন করেছেন। প্রয়াত কন্যা যোবায়দা মির্যা অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে সরকারি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, প্রয়াত ওবায়দা সা'দ ময়মনসিংহের মেয়েদের মডেল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন, তৃতীয় কন্যা খোরশেদা খাতুন বিএ অনার্স পাঠকালে প্রয়াত হন। প্রয়াত তিন পুত্র কাজী মকবুল হোসেন, কাজী ইকবাল হোসেন এবং কাজী নূরুদ্দিন মাহবুব হোসেনের মধ্যে শেষোক্ত জন প্রতিশ্রুতিশীল দাবা ও টেবিল টেনিস খেলোয়াড় এবং সেই সঙ্গে লেখক ছিলেন। অপর পুত্র কাজী আনোয়ার হোসেন জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনী 'মাসুদ রানা' ও 'কুয়াশা' সিরিজের রচয়িতা ও সঙ্গীতশিল্পী। কন্যাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সনজিদা খাতুন, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ফাহমিদা খাতুন এবং চিত্রশিল্পী মাহমুদা খাতুন রবীন্দ্রসঙ্গীতের তিন খ্যাতিমান শিল্পী। পড়াশোনা ছাড়াও খেলাধুলা, গান-বাজনা ইত্যাদিতে কাজী মোতাহার হোসেনই ছিলেন সন্তানদের প্রথম ও প্রধান সহায়। ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে কাজী মোতাহার হোসেন ১৯৬৬ সালে সস্ত্রীক হজব্রত পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ জুন ৬৮ বছর বয়সে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্ত্রী সাজেদা খাতুনের পরলোকগমনের পর কাজী মোতাহার হোসেনের বাকি জীবন কেটেছে অনেকটা নিঃসঙ্গতা ও অসহায়ত্বের মধ্যে।

No comments:

Post a Comment