Translate

Friday, 22 August 2014

শোন নদী কোথায় / ড. মোহাম্মদ আমীন

শোন নদীর কাহিনী

‘নদী-স্বপ্ন’ বুদ্ধদেব বসুর একটি বিখ্যাত কবিতা। এ কবিতার দুটো লাইন :
“আমারে চেনো না? আমি যে কানাই, ছোকানু আমার বোন
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা মেঘনা-পদ্মা-শোন।”
দ্বিতীয় সারিতে কবি তিনটা নদীর নাম বলেছেন। মেঘনা ও পদ্মা কোথায় তা অনেকের জানা কিন্তু ‘শোন’ নামের নদীটা কোথায় তা অনেকে জানেন না। দেখা যাক এটি কোথায় :

ভারতের মধ্যপ্রদেশের অনুপপুর জেলার অমরকন্টক একটি  প্রাচীন শহর। এখানে রয়েছে অসংখ্য মন্দির। অমরকণ্টকের আরেক নাম তীর্থরাজ। এখানে পর্বত বিন্ধ্য ও পর্বত সাতপুরা বিখ্যাত মৈকাল পর্বতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মহাকবি

শোন নদীর উৎসস্থল

কালিদাসের রচনায় অমরকন্টককে "অমরকূট" বা যে পাহাড়ের শৃঙ্গের বিনাশ হয় না কিংবা "আম্রকূট" বা যে পাহাড়ের চূড়া আমগাছের প্রাচুর্য্যে সমৃদ্ধ- বলা হয়েছে। এ অমরকন্টকের মৈকাল পর্বত  ‘নর্মদা’ এবং ‘শোন’ নদীর উৎপত্তি স্থল। নর্মদা নদীকে বলা হয় মৈকালকন্যা। শোন নদীর আর এক নাম শোনমুডা। ছোটবেলা থেকে যে মান্ধাতার কথা আমরা শুনে আসছি সে পৌরাণিক সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা আনুমানিক ৬০০০ বছর পূর্বে অমরকন্টকের নিকটবর্তী ঋক পর্বতের গায়ে রাজত্ব করতেন। কথিত হয়, মান্ধাতার পুত্র পুরুক্তসার-এর রাণী নদী নর্মদার নামকরণ করেছিলেন ।

শোনমুডা বা শোন নদীর উৎসমুখকে অমরকন্টকের স্বর্গ বলা হয়। ব্রহ্মার বরপুত্র শোন একটি অসাধারণ নদ। প্রকৃতির অনবদ্য বৈচিত্রের নিরূপম খেয়াল এর অন্যতম আকর্ষণ। অমরকণ্টক শহরের পাশে অবস্থিত একটি হনুমান মন্দিরের গায়ে শোনমুডা বা শোন নদীর উৎপত্তিস্থল। এখান থেকে অতি শীর্ণকায় শোন পাহাড়ের গা বেয়ে কিছুটা এগিয়ে তারপর   প্রেসিপিসের ওপর দিয়ে পাহাড় থেকে লাফ মেরে নীচের উপত্যকায় জলপ্রপাত হয়ে উত্তাল গতিতে বের হয়ে উত্তর দিকে সুদূর গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য বেরিয়ে গেছে।

নর্মদা ও শোন এর উৎপত্তিস্থল এবং জলপ্রবাহ এত নিকটে যে, দুটি প্রবাহ স্বাভাবিকভবে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এখানে প্রকৃতি দুটি জলপ্রবাহকে দুটি ভিন্নপথে ভিন্ন নামে প্রবলবেগে নিজ নিজ পথে সব স্বকীয়তা বজায় রেখে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সৃষ্টি হতে আপন লক্ষ্যে।  নর্মদা আরব সাগরের দিকে আর শোন উত্তরদিকে গঙ্গার মধ্যে দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত। এত নিকটে তবু কারও সঙ্গে কারও যোগ নেই। প্রকৃতির এ ভৌগোলিক খেয়ালকে পুরাণে এক  বেদনাদায়ক কাহিনীর মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হযেছে। পুরাণে বলা হয়েছে, নর্মদার সঙ্গে শোনের বিবাহ নাকি কোনও কারণে ভেঙে যায়। তাই আযুগ ধরে নর্মদা ও শোন একে অপর থেকে এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রয়েছে ।

No comments:

Post a Comment