Translate

Friday, 15 August 2014

প্রশাসন : পেটমোটা এলোমেলো আর টলোমলো / ড. মোহাম্মদ আমীন

 পেটমোটা প্রশাসন

বাংলাদেশে প্রশাসনের অবস্থা এখন টলোমলো। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট সচিব পর্যায়ে সাত জনকে পদোন্নতির পর জনপ্রশাসনে উপসচিব পর্যায়েও শিগগিরই পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্তরেও পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং উপসচিব পর্যায়ে নিয়মিত পদ আছে ১৩৬৭, যার বিপরীতে এখন নিয়োজিত আছেন ২৪৮৭ জন। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পর্যায়ে ১৫৬০ পদের বিপরীতে শূন্য আছে ৪৫২টি পদ। সহকারী সচিব পদেও প্রয়োজন প্রায় ৩০০ জন।বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ১০৭। আর কর্মরত আছেন ২৭৩ জন। অতিরিক্ত সচিব হওয়া বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তারাও সচিব হওয়ার চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে মধ্যম স্তরের তিনটি পদ উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা পদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। অথচ নিচের স্তরে সহকারী সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব কম। জনপ্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিচের স্তরে কর্মকর্তা কম হওয়ায় মাঠ প্রশাসনের কাজকর্মে সমস্যা হচ্ছে। আর মধ্যম স্তরে মাত্রাতিরিক্ত কর্মকর্তা হওয়ায় প্রশাসনে এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করছে।পদোন্নতি পেয়েও কর্মকর্তাদের অনেককে এক ধাপ নিচের পদে কাজ করতে হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত (ডিউটি) পদ আছে ৮৩০। আর এই পদে কর্মরত আছেন এক হাজার ২৯৫ জন। এখন আরও দুই শতাধিক কর্মকর্তার পদোন্নতি হওয়ার কথা। একইভাবে যুগ্ম সচিবের নিয়মিত পদ আছে ৪৩০। আর এই পদে কর্মরত আছেন ৯১৯ জন। এই পদে শেষবারের মতো ৭০ জনের পদোন্নতি হয়েছে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর। এখন ১৯৮৫ ব্যাচের যুগ্ম সচিবেরা পদোন্নতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।

 প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ঢালাও পদোন্নতির ফলে জনপ্রশাসনের আদর্শ কাঠামো (পিরামিড কাঠামো) ভেঙে গেছে। শুধু তা-ই নয়, পদোন্নতি পেয়েও কর্মকর্তাদের কাজ করতে হচ্ছে এক স্তর নিচে। সাধারণ কাঠামো অনুযায়ী, নিচের দিকে কর্মকর্তা থাকবেন বেশি এবং ধীরে ধীরে ওপরের স্তরে কর্মকর্তা হবেন কম। কিন্তু বর্তমানে মধ্যম স্তরে কর্মকর্তার সংখ্যা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এই অবস্থায় পদোন্নতির নতুন উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, পদ না থাকার পরও পদোন্নতির এই উদ্যোগ বেসামরিক প্রশাসনকে আরও বিপর্যস্ত করবে। পদ শূন্য হলেই শুধু পদোন্নতি দিতে হবে। ঢালাও পদোন্নতির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

এরশাদের শাসনামলে তিনটি বিসিএস-এ প্রায় ১৬৫০ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাই এখন উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হচ্ছেন। মূলত এর জের এখনও টানতে হচ্ছে এবং এটা আরও কয়েক বছর চলবে। এই তিনটি ব্যাচের কর্মকর্তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন। এরপর হয়তো এ সমস্যা কেটে যাবে। কর্মকর্তারা বলেন, যাঁরা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন, তাঁদের পদোন্নতি না-দিলে চাকরির প্রতি অনীহা সৃষ্টি হবে।

মধ্যম সারির তিন পদে পদোন্নতি হলেও কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন ধরে আগের পদেই কাজ করে যেতে হচ্ছে এবং হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে যে ৬৪৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই এখনও আগের পদেই কাজ করছেন। পরে যাঁরা পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদেরও প্রায় একই অবস্থা। প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তার সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ হাজার। গত পাঁচ বছরে কয়েক দফায় প্রায় আড়াই হাজার কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা পালন করেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা হলেন সহকারী সচিব (মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনার) ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদের। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদে এই পর্যায়ের কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব আছেন ১৫৬০ জন। কিন্তু পদ আছে প্রায় ১৮০০। আর সহকারী সচিব আছেন ১০৮৮ জন। এই পদে আর  আরও সাত-আট শ কর্মকর্তা প্রয়োজন। নিচের স্তরে কর্মকর্তার অভাবে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এর প্রায় ১০০ পদ শূন্য। বর্তমানে সচিব আছেন ৭৩। তম্মধ্যে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট সাতজনকে সচিব পদে উন্নীত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট পর্যন্ত ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজন সচিব, ৩৩ অতিরিক্ত সচিব, ১১৮ জন যুগ্ম সচিব, ৭৩ জন উপসচিব, ৩৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব  এবং ৫০ জন সহকারী সচিব।

সূত্র : প্রথম আলো, মোশতাক আহমেদ,

No comments:

Post a Comment