Translate

Sunday 24 August 2014

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম কার্টনিস্ট কাজী আবুল কাশেম / ড. মোহাম্মদ আমীন

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম কার্টুনিস্ট

উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম কার্টুনিস্ট, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও শিশুসাহিত্যিক কাজী আবুল কাসেম ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ মে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার পারকুলা গ্রামে। তার পিতা কাজী মকবুল আলী ছিলেন ঊনবিংশ শতকের প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্যশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের বন্ধু। মাতা মেহেরউন্নিসা খাতুন। কাজী আবুল কাসেম চার বছর বয়সে পিতা এবং পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারান। শৈশবেই চিত্রকলার প্রতি তার আকর্ষণ জন্মে। বড় ভাই কথা সাহিত্যিক কাজী আবুল হোসেন (১৯১১-১৯৭৪) ছিলেন তার একমাত্র উৎসাহদাতা।
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তার চিত্রকর্মে মুগ্ধ হয়ে ফরিদপুর শহরের এক পাদ্রী তাকে নিয়ে কলকাতা যান গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্যে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বয়স কম হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আসাম হয়ে পুনরায় কলকাতা যান। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন সম্পাদিত, বিখ্যাত মাসিক সওগাতে (বাংলা ১৩৩৭ সালের পৌষ সংখ্যা) প্রকাশিত হয় তার প্রথম কার্টুনচিত্র। এর মাধ্যমে কাজী আবুল কাসেম চিহ্নিত হন প্রথম বাঙালি মুসলিম কার্টুনিস্ট ও চিত্রশিল্পী হিসেবে।
 বহু দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকায় তার আঁকা একরঙা ও বহুরঙা চিত্র ও কার্টুন প্রকাশিত হতে থাকে। অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ ঘটে তার নিপুণ হাতে পরম আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততায়। কলকাতার কমার্শিয়াল আর্ট স্টুডিওতে তিনি সামান্য বেতনে চাকরিতে প্রবেশ করে অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠানের প্রধান চিত্রকর্মী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের শিল্প বিভাগে চাকরি নেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে শিল্প বিভাগের আওতায় ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ফর ডিমোবিলাইজড পার্সোনেলের বালিগঞ্জ শাখায় শিল্পী-শিক্ষকের পদে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্য ভাগে তিনি কলকাতা থেকে এসে প্রথমে কিছু দিন খুলনায় ছিলেন, পরে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কাজী আবুল কাসেম তার আঁকা ‘হরফ খেদাও’ কার্টুন চিত্রটির কারণে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে এক বছর অস্থায়ীভাবে টেকস্ট বুক বোর্ডের আর্ট রিভ্যুয়ার এবং ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামসের প্রধান শিল্প নির্দেশক ও শিশুসাহিত্যের বইয়ের রিভ্যুয়ার হিসেবে চাকরি করেছিলেন। এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবিভক্ত বাংলার একজন পথিকৃৎ চিত্রশিল্পী ও কার্টুনিস্ট ছাড়াও তিনি শিশু সাহিত্যিক, ছড়াকার, শৌখিন কণ্ঠশিল্পী, আধুনিক এক বিজ্ঞানমনা ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমী পদক, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।
২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে তিনি ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৯১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

No comments:

Post a Comment